আপনার কি স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে? যেভাবে বুঝবেন
ঘুমের মধ্যে নিশ্বাস বন্ধ হওয়াকে বলা হয় স্লিপ অ্যাপনিয়া, যা একটি গুরুতর চিকিৎসা সমস্যা। সঠিক সময়ে স্লিপ অ্যাপনিয়া চিকিৎসা না করলে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়তে পারে। বাংলাদেশে এর প্রচলন উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই নিবন্ধে আমরা স্লিপ অ্যাপনিয়া লক্ষণ, স্লিপ অ্যাপনিয়া পরীক্ষা এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া চিকিৎসার বিস্তারিত আলোচনা করব। বিভিন্ন লক্ষণ যেমন ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা, দম বন্ধ হওয়ার কারণ এবং দিনের বেলায় অতিরিক্ত ক্লান্তি নিয়ে আলোচনা হবে। স্লিপ অ্যাপনিয়া নির্ণয়ের জন্য কী কী উপায় রয়েছে এবং কীভাবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব, তা নিয়েও আমরা আলোকপাত করব।
যখন স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়, তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
স্লিপ অ্যাপনিয়া কী?
স্লিপ অ্যাপনিয়া হচ্ছে এমন এক অবস্থা যেখানে ঘুমানোর সময় রোগীর শ্বাসনালী বারবার অবরুদ্ধ হয়। স্লিপ অ্যাপনিয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী, এই অবস্থা অক্সিজেনের সরবরাহ ব্যাহত করে, ফলে একাধিকবার জেগে ওঠা প্রয়োজন হয়। এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত জটিলতার কারণ হতে পারে। কমপক্ষে ৭০% ভারতীয় এই ঘুমের সমস্যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি অনুসন্ধান করেছেন।
স্লিপ অ্যাপনিয়ার সময় শ্বাসরুদ্ধ হওয়ার ফলে, রোগীর হাইপারটেনশন, স্ট্রোক ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। ৫৪-৬০% মানুষ সিপ্যাপ মেশিন পড়ে ঘুমাতে পারেন না। স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসায় সিপ্যাপ মেশিন, স্লিপ স্টাডি এবং অপারেশন পদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গবেষণা অনুযায়ী, স্থূলকায় ব্যক্তিদের মধ্যে এই ঘুমের সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাঁদের জিভ পুরু হয়ে যায়, আলজিভ বড় হয়ে যায় এবং অ্যাডিনয়েড টনসিল ও ইউভিলা বড় হয়ে যায়। পুরুষদের মধ্যে ২০-৫০% এবং মহিলাদের মধ্যে ১৪-৩০% নাক ডাকেন। যদিও এই রোগটি পুরুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়, মহিলারাও স্লিপ অ্যাপনিয়ায় ভুগছেন।
স্লিপ অ্যাপনিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের গাড়ি চালানোর সময় দুর্ঘটনায় পড়ার আশঙ্কা দুটি বেশি। ৫-১০ বছরের বাচ্চাদের চিকিৎসকদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে পেডিয়াট্রিক স্লিপ অ্যাপনিয়া। এছাড়াও, স্লিপ অ্যাপনিয়া আক্রান্ত রোগীরা কাজে মনোযোগ দিতে কষ্ট পান, যার ফলে তাঁদের চাকরি থেকে বরখাস্ত হবার হার কিছুটা বেশি।
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হল সবচেয়ে সাধারণ ঘুম সম্পর্কিত শ্বাসকষ্টের ব্যাধি, যা সাধারণত ঘুমের সময় গলার পেশি শিথিল হয়ে গলা ব্লক হয়ে যাওয়ার ফলে ঘটে। এ সমস্যার ফলে একজন ব্যক্তি প্রতি ঘন্টায় কমপক্ষে ৫ থেকে ৩০ বার বা তার বেশিবার জেগে উঠতে পারে।
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া কিভাবে ঘটে
ঘুমের সময় গলার পেশির অতিরিক্ত শিথিলতার কারণে নিশ্বাসনালী আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়, যার ফলে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া দেখা দেয়। এই সমস্যা বেশি দেখা যায় যখন ঘুমের সমস্যা যেমন ক্রমাগত নাক ডাকা থাকে কিংবা দীর্ঘস্থায়ী নাসিকা ব্লক থাকে।
তথ্য অনুযায়ী, ক্রমাগত নাসিকা ব্লকের সমস্যার সাথে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা দ্বিগুণ হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রে, মহিলা-দের তুলনায় এই সমস্যা ২ থেকে ৩ গুণ বেশি হতে পারে। এছাড়াও মেনোপজের পর মহিলাদের মধ্যে এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া হলে সাধারণত জোরে নাক ডাকা, বাতাসের জন্য হাঁপাতে থাকা এবং দিনের ক্লান্তি অনুভব করা যায়। এছাড়াও, হঠাৎ করে শ্বাস নিতে না পারার কারণে রাতের বেলায় বাহ্যিক ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিশ্বে প্রায় ৯০% অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা এখনো নির্ণয় করা হয়নি। অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার উপসর্গগুলি মাঝে মাঝে অন্য ঘুমের ব্যাধির সমস্যাগুলির সাথে মিলিত হতে পারে, যেমন দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা ব্যাধি, যার ফলে সমস্যার গুরুত্ব বেড়ে যায়।
স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ
স্লিপ অ্যাপনিয়া একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা সময়মত শনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিচের কয়েকটি সাধারাণ লক্ষণের মাধ্যমে স্লিপ অ্যাপনিয়া উপসর্গগুলো বোঝা যায়:
অস্বাভাবিক নাক ডাকা
যদি আপনি হঠাৎ শুরু হওয়া নাক ডাকার সমস্যায় ভুগছেন, তবে এটি হতে পারে স্লিপ অ্যাপনিয়ার লযণ। এই অস্বাভাবিক নাক ডাকা হতে পারে আরও গুরুতর স্লিপ অ্যাপনিয়া উপসর্গের একমাত্র ইঙ্গিত। যারা নিয়মিত নাক ডাকা সমস্যায় ভুগছেন, তাদের উচিত দ্রুত চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া।
দিনের বেলায় হতাশা
স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণে ঘুমের গুণগতমান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে সারাদিন হতাশা অনুভূত হতে পারে। সারাদিন ক্লান্তি ও মনোযোগের অভাবের প্রভাবে দৈনিক অভ্যাস অনেকাংশে বিঘ্নিত হতে পারে। যাদের এ ধরনের সমস্যা আছে, তাদের স্লিপ অ্যাপনিয়া পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
মেজাজ পরিবর্তন ও মনোযোগের অভাব
স্লিপ অ্যাপনিয়া থেকে মেজাজ পরিবর্তন এবং মনোযোগের অভাব হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এসব উপসর্গ মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। স্লিপ অ্যাপনিয়া উপসর্গ শনাক্ত করতে এবং জীবনের দৈনিক অভ্যাস আরও কার্যকর করার জন্য সচেতন থাকা জরুরি।
কেন স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে?
স্লিপ অ্যাপনিয়া ঝুঁকি বাড়ানোর বিভিন্ন কারণ রয়েছে যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে। প্রথম এবং প্রধান কারনগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে অতিরিক্ত ওজন। ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে গলার পেশি শিথিল হয় এবং শ্বাসনালী বারবার বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও জেনেটিক প্রবণতাও স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; বয়স বাড়ার সাথে সাথে গলার পেশি দুর্বল হয়ে যায় এবং শ্বাসনালীর প্রতিবন্ধকতা বৃদ্ধি পায়।
ধূমপান এবং অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন করা স্লিপ অ্যাপনিয়া ঝুঁকির কারণ। ধূমপান শ্বাসনালীর প্রদাহ তৈরি করে, যা নিশ্বাস নিতে বাধা দেয় এবং এভাবে অ্যাপনিয়া সৃষ্টি করে। অ্যালকোহল শিথিল করে দেয় গলার পেশি, ফলে শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যায় ঘুমের সময়।
বাংলাদেশে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রাদুর্ভাব ৪.৪৯% পুরুষ এবং ২.১৪% নারীকে আক্রান্ত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্পন্ন এক গবেষণায় দেখা গেছে যে অপ্রয়োজনীয় ওজন নারী ও পুরুষ উভয়েরই স্লিপ অ্যাপনিয়া ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। পুরুষদের ক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় স্লিপ অ্যাপনিয়া ঝুঁকি দ্বিগুণ বেশি কারণ তারা হূদযন্ত্র বা যকৃত ব্যর্থতায় ভুগতে পারে।
যেখানে অন্যান্য রোগ যেমন হার্ট ফেইলিউর বা লিভার ফেইলিউরের প্রেক্ষিতে স্লিপ অ্যাপনিয়া ঝুঁকি বাড়ায়, সেখানে কর্মস্থলে দূর্ঘটনা এবং ঘুমাতে গিয়ে যানবাহন দূর্ঘটনার ঝুঁকিও থাকে। তাছাড়া, ওজন নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত ব্যায়াম, এবং সুষম খাদ্যাভাস যেন মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করে তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
স্লিপ অ্যাপনিয়া ঝুঁকির কারণগুলি যত স্বীকৃতি পাবেই, ততই বিপদের আশঙ্কা কমানো সম্ভব। সঠিকভাবে অ্যাপনিয়া নির্ণয় এবং চিকিৎসা গ্রহণ করা বাংলাদেশেও সম্ভব।
How to Tell if I Have Sleep Apnea
স্লিপ অ্যাপনিয়া শনাক্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই অবস্থাটি দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। এখানে কিভাবে আপনি আপনার নাক ডাকার প্যাটার্ন এবং শ্বাসনালীর বন্ধ হওয়ার কারণগুলো লক্ষ্য করতে পারেন তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
নাক ডাকার প্যাটার্ন
স্লিপ অ্যাপনিয়া হওয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল নাক ডাকার ধরন। যদি আপনি বা আপনার পার্টনার লক্ষ্য করেন যে আপনি রাতে উচ্চ আওয়াজে নাক ডাকছেন এবং মাঝে মাঝে শ্বাস গ্রহণে বাধা পাচ্ছেন, তাহলে এটিকে হালকাভাবে নেবেন না। এটি একটি সংকেত হতে পারে যে আপনার শ্বাসনালী বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হোকি I Have Sleep Apnea সম্পর্কে তথ্য অবশ্যই বিশ্লেষণ করা উচিত, এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া পরীক্ষা করার প্রয়োজন হতে পারে।
দম বন্ধ হওয়ার কারণ
রাতের বেলা বারবার দম বন্ধ হয়ে আসা স্লিপ অ্যাপনিয়ার আরেকটি গুরুতর লক্ষণ। শোবার ঘরে ঘুমানোর পরিবর্তে যেন আপনার ঘুম নষ্ট হয়, তখন দম বন্ধ হওয়া বা বারবার বাহির থেকে জাগ্রত হওয়া নিয়ে চিন্তা করবেন। এই সমস্যা মুখোমুখি হলে, অবিলম্বে চেকআপ করানো উচিত এবং একটি স্লিপ অ্যাপনিয়া পরীক্ষা করার মাধ্যমে শ্বাসনালীর বিভিন্ন অবস্থা যাচাই করা উচিত।
আপনার কি গভীর রাতে নাক ডাকার ধরন লক্ষ্য করেছেন বা বারবার শ্বাস বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটছে? তাহলে দ্রুত একজন পালমোনোলজিস্ট পরামর্শ নিন এবং স্লিপ অ্যাপনিয়া পরীক্ষা করার জন্য প্রস্তুতি নিন। এটি আপনার স্বাস্থ্যকে রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
স্লিপ অ্যাপনিয়ার পরীক্ষা-নিরীক্ষা
স্লিপ অ্যাপনিয়ার নির্ণয়ে যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরীক্ষার মাধ্যমে স্লিপ অ্যাপনিয়া ডায়াগনোসিস করা সম্ভব হয় ও তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু করা যায়। এই বিভাগের আলোচনায় আমরা গুরুত্বপূর্ণ দুটি পরীক্ষা ও দক্ষতার কথা বলব যা স্লিপ অ্যাপনিয়া নির্ধারণে কার্যকর।
পলিস মনোগ্রাফি পরীক্ষা
স্লিপ অ্যাপনিয়া ডায়াগনোসিসের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা হচ্ছে পলিসোগ্রাফি। এটি ঘুমের সময় রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের প্যাটার্ন, অক্সিজেনের মাত্রা এবং হৃদস্পন্দনের পরিমাপ করে।
- পলিসোগ্রাফি পরীক্ষায় রোগীর শরীরের বিভিন্ন অংশে সেন্সর স্থাপন করে ঘুমের সময় সেসব অংশে কীভাবে কাজ করছে তা নিরীক্ষণ করা হয়।
- এই পরীক্ষার মাধ্যমে ঘুমের অবস্থান এবং রোগীর আচরণ পর্যবেক্ষণ করা যায়, যা স্লিপ অ্যাপনিয়ার সঠিক মূল্যায়নে সহায়ক।
- পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় রোগী ঘুমের মধ্যে কতবার শ্বাস বন্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটে এবং তার সারা রাতের ঘুম কতটা বিভ্রান্ত হয়।
অন্যান্য দক্ষতা এবং পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা
স্লিপ অ্যাপনিয়া নির্ধারণে আরো কিছু পরীক্ষা ও দক্ষতা প্রয়োজন। নিম্নলিখিত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পরীক্ষা হল:
- ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের রেকর্ডিং দ্বারা ঘুমের পরীক্ষা করা হয় যা ঘরে বসেই করা যায়। এটি মূলত এক রকম পোর্টেবল পলিসোগ্রাফি পরীক্ষা।
- রক্তের অক্সিজেনের মাত্রা নিরীক্ষণ করা, যা পালস অক্সিমেট্রি দ্বারা করা যায়। এটি সহজ ও দ্রুত প্রাপ্ত ফলাফল দেয়।
- ঘুমনোর সময় শরীরের বিভিন্ন পেশির কর্মক্ষমতা যাচাই করার জন্য ইলেকট্রোমায়োগ্রাফি (ইএমজি) এর ব্যবহারও কার্যকর।
এই সব পরীক্ষার মাধ্যমে স্লিপ অ্যাপনিয়া ডায়াগনোসিস নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি প্রশস্ত এবং যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি নিতে সহায়ক হয়। ঘুমের পরীক্ষা ও নিরীক্ষার মাধ্যমে স্লিপ অ্যাপনিয়া ডায়াগনোসিস নিশ্চিতকরণ ও সঠিক চিকিৎসা গ্রহণে সহায়তা করে, যা রোগীর জীবনের মান উন্নয়নে অবদান রাখে।
কীভাবে স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা করা হয়
স্লিপ অ্যাপনিয়া চিকিৎসা নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাথমিক শিথিলতা থেকেই এই সমস্যা শুরু হয়, তবে যদি সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এটি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষতি করতে পারে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি সমস্যা এবং ডিপ্রেশনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। স্লিপ অ্যাপনিয়া সমস্যাটি খুবই গুরত্বপূর্ণ এবং সঠিকভাবে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসার মধ্যে অন্যতম কার্যকর পদক্ষেপ হল সিপিএপি (কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার) থেরাপি। এই পদ্ধতিতে একটি মেশিন ব্যবহার করা হয় যা সারারাত প্রেশারযুক্ত বাতাস সরবরাহ করে, যাতে শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে। এছাড়াও, ম্যান্ডিবুলার অ্যাডভান্সমেন্ট ডিভাইস এবং লেজার অপারেশনও স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসার একটি জনপ্রিয় উপায়।
অতি মাত্রায় ওজন হ্রাস, ধূমপান ত্যাগ এবং নিয়মিত ব্যায়ামও স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীদের জন্য উপকারী হতে পারে। এছাড়াও, বিশেষজ্ঞরা পলিস মনোগ্রাফি পরীক্ষা বা হোম স্লিপ অ্যাপনিয়া টেস্টিং এর মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করেন, যার দ্বারা স্লিপ সময়ের শ্বাস-প্রশ্বাস এবং অক্সিজেন লেভেলের মূল্যায়ন করা হয়। এর ফলে, সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা সহজ হয়।
শিশুদের ক্ষেত্রে স্লিপ অ্যাপনিয়া সমস্যাটি অস্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস এবং হাইপারঅ্যাকটিভিটির লক্ষণগুলো প্রদর্শন করতে পারে। সময়মত এবং সঠিক চিকিৎসা নেতৃত্ব দিতে পারে বেশ সুস্থ এবং অতিরিক্ত নিরাপদ জীবন যাপনে। সঠিক সচেতনতা এবং ঘুমের স্বাস্থ্য বজায় রাখলেই সম্ভব স্লিপ অ্যাপনিয়া সমস্যার সমাধান।
FAQ
স্লিপ অ্যাপনিয়া কী?
স্লিপ অ্যাপনিয়া ঘুমের মধ্যে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা যেখানে রোগীর শ্বাসনালী বারবার অবরুদ্ধ হয়। এটি একটি গুরুতর চিকিৎসা সমস্যা এবং এর ফলে নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতা হতে পারে।
অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া কীভাবে ঘটে?
ঘুমের সময় গলার পেশি শিথিল হয়ে নিশ্বাসনালী বন্ধ হওয়ার কারণে অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া ঘটে। এর ফলে শ্বাসনালী বারবার বন্ধ হয়ে অক্সিজেনের সরবরাহ ব্যাহত হয়।
স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ কী কী?
অস্বাভাবিক নাক ডাকা, দিনের বেলায় হতাশা, মেজাজ পরিবর্তন, এবং মনোযোগের অভাব স্লিপ অ্যাপনিয়ার সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম।
স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে কেন?
স্লিপ অ্যাপনিয়ার ঝুঁকি বাড়ায় অতিরিক্ত ওজন, জেনেটিক প্রবণতা, বয়স, ধূমপান, এবং অত্যধিক অ্যালকোহল সেবন। এসব কারণ গলার পেশি শিথিল করে শ্বাসনালীর অবরুদ্ধতার সৃষ্টি করে।
কিভাবে বুঝবো আমার স্লিপ অ্যাপনিয়া আছে কিনা?
নাক ডাকার প্যাটার্ন এবং বারবার দম বন্ধ হওয়ার কারণগুলো লক্ষ্য করুন। যদি এ ধরনের লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে পালমোনোলজিস্টের পরিদর্শন করা অত্যন্ত জরুরি।
স্লিপ অ্যাপনিয়া পরীক্ষার পদ্ধতি কী?
স্লিপ অ্যাপনিয়ার নির্ণয়ের জন্য পলিস্মোনোগ্রাফি পরীক্ষা অতি কার্যকর। এটি ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের প্যাটার্ন, অক্সিজেনের মাত্রা এবং হার্ট রেটের পরিমাপ করে।
কীভাবে স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসা করা হয়?
স্লিপ অ্যাপনিয়ার চিকিৎসায় সাধারণত সিপিএপি (CPAP) ব্যবহৃত হয়, যা শ্বাস-প্রশ্বাসকে নিয়মিত রাখে এবং নিশ্বাসনালীর বাধা দূর করে।