প্ল্যান্টার ফ্যাসিইটিস চিকিৎসার উপায়
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস মূলত হিলের পিছনে এবং পায়ের তলার ব্যথা নিয়ে আসে, যা অনেকের জন্য খুবই কষ্টদায়ক হতে পারে। প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস সমস্যাতে ভুগলে, প্রাথমিকভাবে বিশ্রাম, বরফ প্রয়োগ, এবং ননস্টেরয়েডাল ওষুধ ব্যবহারের মাধ্যমে হিল ব্যথা চিকিৎসা করা যেতে পারে। প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস চিকিৎসা পায়ের পাতার ব্যথা নিরাময় করতে সাহায্য করে এবং সাধারণত কয়েক মাসের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
হিল ব্যথা চিকিৎসা হিসেবে ফিজিক্যাল থেরাপি, নাইট স্প্লিন্ট, এবং অর্খোটিক্স ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। প্রয়োজনে এক্সরে, এমআরআই, অথবা আল্ট্রাসাউন্ড করে অন্যান্য কারণগুলোও পরীক্ষা করা হয়। শক ওয়েভ থেরাপি এবং আল্ট্রাসনিক টিস্যু রিপেয়ার এমন কিছু চিকিৎসা পদ্ধতি যা ক্রনিক প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস নিরাময়ে সহায়ক হতে পারে। সেভিয়ার ক্ষেত্রে, সার্জারি করেই এই সমস্যার সমাধান করা যায়।
পরে আপনাকে এটি নির্ণয়ের জন্য একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে হতে পারে। যেমন পায়ের তিনি ডাক্তার বা স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস চিকিৎসা সম্পর্কে আরও জানার জন্য এবং নিজেকে সুস্থ রাখতে গেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, সাপোর্টিভ জুতা পরা, আচড় স্ট্রেচিং ব্যায়াম করা প্রয়োজন।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস কি এবং কেন হয়?
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস একটি সাধারণ সমস্যা যা পায়ের নীচের দিকে প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়া নামক টিস্যুর প্রদাহের কারণে হয়। এটি সাধারণত অতিরিক্ত হাঁটা-চলা, দৌড়ানো, বা হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়ার কারণে হতে পারে।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস এর কারণ
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস কারণ বিভিন্ন হতে পারে, যেমন ভুল জুতা পরিধান, অতিরিক্ত ওজন, বা অতিরিক্ত হাঁটা। অতিরিক্ত শারীরিক কার্যকলাপ, যেমন দৌড়ানো বা লাফানোর ফলে প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস হতে পারে। এছাড়াও, ভুলভাবে পড়া জুতা বা পায়ে সঠিক সমর্থন না থাকলে এই সমস্যাটি দেখা দিতে পারে।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস এবং বোন স্পার্সের সম্পর্ক
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস এবং বোন স্পার এর মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। অনেক সময় বোন স্পার, যা হাড়ের ছোট প্রবৃদ্ধি, প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের সাথে সম্পর্কিত থাকতে পারে এবং হিল পেইন বাড়াতে পারে। এক্সরে বা এমআরআই’র মাধ্যমে এই দুটি সমস্যার নির্ণয় করা যায়।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস এর উপসর্গ
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস উপসর্গগুলি বেশ বৈচিত্র্যময় এবং প্রতিটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে একটু ভিন্ন হতে পারে। এই রোগের সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো হিল ব্যথা। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে পায়ের ভুমির সংস্পর্শে আসার সময় এই ব্যথার অনুভূতি বেশি প্রকট হয়।
প্রায় ১১% থেকে ১৫% পায়ের সমস্যা প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস উপসর্গের জন্য দায়ী। যারা প্রায়ই দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন, দৌড়ান কিংবা অতিরিক্ত ওজন বয়ে বেড়ান, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। এই ব্যথা দিনের অন্তর্গত সমস্ত সময় চলতে পারে এবং দিনের শেষে বাড়তে পারে।
অনেক ক্রীড়াবিদ, বিশেষত যারা দৌড়বিদ, তারা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন এবং একে কেবল “রানার্স হিল” বলা হয়। একটি গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রায় ৭.৮% খেলাধুলাজনিত আঘাত প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের সাথে সম্পর্কিত।
এছাড়াও কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন বারসাইটিস, ক্যালকেনিয়াল অ্যাপোফিসাইটিস, প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়া টিয়ার প্রভৃতি হিল ব্যথার কারণ হতে পারে, যা প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটি উপসর্গের সাথে মিল থাকে।
আপনার পায়ের ব্যথা, হিল ব্যথা বা অন্যান্য প্ল্যান্টার ফ্যাসিইটিস উপসর্গ থাকলে, একটা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত কারণ সময়মত চিকিৎসা উপকারী হতে পারে।
কিভাবে প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস নির্ণয় করা হয়
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস নির্ণয় করার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট পরীক্ষার মাধ্যমে রোগের তীব্রতা এবং ক্ষতির অবস্থান নির্ধারণ করা হয়। এই পরীক্ষা গুলি পায়ের পাতার প্রদাহের মাত্রা সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে সহায়ক। নিম্নলিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস নির্ণয় করা যেতে পারে:
এক্সরে
এক্সরে পরীক্ষার মাধ্যমে প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস নির্ণয় করার ক্ষেত্রে পায়ের হাড়ের উপর যেকোনো বিভ্রান্তিকর বৃদ্ধি বা স্পারস চিহ্নিত করা হয়। প্রায় ৫৯% চিকিৎসার ক্ষেত্রে, এক্সরের মাধ্যমে হিলের হাড়ে স্পারস দেখা যায়। এক্সরে পদ্ধতিটি হাড়ের অবস্থা নির্ধারণে অত্যন্ত কার্যকরী।
এমআরআই
এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) পরীক্ষার মাধ্যমে পায়ের টিস্যুর বিশদ চিত্র পাওয়া যায়, যা প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস নির্ণয় করতে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। পায়ের টিস্যুর কোন অংশে প্রদাহ হয়েছে এবং টিস্যুর কি মাত্রায় ক্ষতি হয়েছে তা নির্ধারণে এমআরআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আল্ট্রাসাউন্ড
আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষাও প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস নির্ণয় করার জন্য ব্যবহৃত হয়। আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে পায়ের নরম টিস্যুর অবস্থা এবং হাড়ের কোনও বৃদ্ধি বা স্পারস চিহ্নিত করা যায়। এটি একটি দ্রুত এবং দক্ষ পদ্ধতি যা রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করে।
প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা করা
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের প্রাথমিক চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি দ্রুত আরোগ্য নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এই চিকিৎসা সাধারণত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপে সম্পন্ন হয়: বিশ্রাম, বরফ প্রয়োগ এবং ননস্টেরয়েডাল ওষুধ সেবন।
বিশ্রাম
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে বিশ্রাম নেওয়া অপরিহার্য। প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়ার উপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে এটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অতএব, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
বরফ প্রয়োগ
ব্যথার স্থানটিতে বরফ প্রয়োগ একটি প্রমাণিত উপায়। বরফ প্রয়োগ গোড়ালির ব্যথা এবং ফোলা কমাতে সাহায্য করে। এটি দিনে একাধিকবার, বিশেষত কাজ বা ব্যায়ামের পরে প্রয়োগ করা উচিত।
ননস্টেরয়েডাল ওষুধ
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস প্রাথমিক চিকিৎসায় ননস্টেরয়েডাল এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ (NSAIDs) অনেক সময় কার্যকর প্রমাণিত হয়। এগুলি ব্যথা এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। তবে, ওষুধ গ্রহণের পূর্বে সবসময় একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
এই তিনটি ধাপ প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে কার্যকর পদ্ধতি। সঠিক সাপোর্টিভ জুতা পরা এবং পায়ের সঠিক ভঙ্গি বজায় রাখা দীর্ঘমেয়াদী আরোগ্য প্রাপ্তিতে সহায়ক হতে পারে।
শারীরিক চিকিৎসা এবং ব্যায়াম
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের ক্ষেত্রে শারীরিক চিকিৎসা এবং ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেন যে রক্ষণশীল চিকিৎসা পদ্ধতি এই সমস্যার জন্য অত্যন্ত কার্যকরী, যা কয়েক মাস পরে বেশিরভাগ মানুষকে আরাম দেয়। এছাড়াও, পেশীর স্থিতিস্থাপকতা এবং কার্যক্ষমতা উন্নত করতে কিছু নির্দিষ্ট ব্যায়াম এবং স্ট্রেচিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বাছুর এবং পায়ের স্ট্রেচিং
বাছুর এবং পায়ের স্ট্রেচিং প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস উপশমে সহায়ক হতে পারে। প্ল্যান্টার ফ্যাসিয়া এবং অ্যাকিলিস টেন্ডনের উপর টান দিতে এই স্ট্রেচিং করে হয়। এটি হিলের নিচে স্থিতিস্থাপকতার উন্নতি করে এবং ব্যথা হ্রাস করে। সকালের প্রথম দিকে মৃদু স্ট্রেচিং শুরু করে তা ধীরে ধীরে বাড়িয়ে নিন। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে এই স্ট্রেচিং অনুশীলন করলে, পায়ের ফ্যাসিয়া এবং পেশীগুলোর স্থিতিস্থাপকতা বাড়ে এবং ব্যথা কমে।
পরি
পরিমাপ এবং সমন্বয় ব্যায়াম প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। পায়ে এবং গোড়ালিতে ঠিকঠাক সমন্বয় রাখতে বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন যেমন পায়ের আঙ্গুলের তুলো ধরা, পায়ের আঙ্গুল দিয়ে আস্তে আস্তে প্রেস করা এবং গোড়ালি নিয়মিত স্ট্রেচিং করা। প্রতিটি ব্যায়ামের সময় অবশ্যই দ্রুত নয়, বরং আস্তে আস্তে এবং নিয়মিত পাল্লায় করতে হবে।
এছাড়া, এক্সট্রাকর্পোরিয়াল শক ওয়েভ থেরাপি (ESWL) দীর্ঘস্থায়ী প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের জন্য এক জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি। প্ল্যান্টার হিল পেইন ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণাও আরও বিভিন্ন পদ্ধতির উপর গুরুত্ব দেয়, যা রক্ষণশীল চিকিৎসা ব্যর্থতার পর ব্যবহার করা যেতে পারে।
FAQ
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস কি এবং কেন হয়?
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস হিলের পিছনে এবং পায়ের তলার ব্যথা নিয়ে আসে। এই ধরনের ব্যথা সাধারণত চাপের বাড়বাড়ন্তের ফলে হতে পারে, যা চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময় সম্ভব। প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস সাধারণত ওভারইউজ, ভুল জুতা পরিধান, অতিরিক্ত ওজন, বা খুব বেশি হাঁটা-চলা করলে হতে পারে।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস এবং বোন স্পার্সের সম্পর্ক কি?
বোন স্পার্স হল হাড়ের ছোট ছোট প্রবৃদ্ধি যা প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের সাথে সম্পর্কিত থাকতে পারে এবং যন্ত্রণা বাড়াতে পারে। প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের অন্যতম উপসর্গ হল সকালে প্রথম পা ভুমির সংস্পর্শে আসার সময় ব্যথার অনুভূতি।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস এর উপসর্গ কি কি?
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের অন্যতম উপসর্গ হল সকাল বেলা প্রথম পা মাটির সাথে সংস্পর্শে আসার সময় ব্যথা অনুভব করা। বিছানা থেকে উঠানোর সাথে সাথে পায়ের পাতার ব্যথা বোঝা যায়।
কিভাবে প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস নির্ণয় করা হয়?
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের নির্ণয়ের জন্য এক্সরে, এমআরআই, এবং আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এগুলির মাধ্যমে পায়ের পাতার প্রদাহের মাত্রা এবং টিস্যুর ক্ষতির অবস্থান নির্ধারণ করা হয়।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের প্রাথমিক চিকিৎসা কি?
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের প্রাথমিক চিকিৎসার মধ্যে বিশ্রাম নেওয়া, ব্যথার স্থানে বরফ লাগানো এবং ননস্টেরয়েডাল এন্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ গ্রহণ করা অন্যতম।