ইন্দিরা গান্ধী: ভারতীয় রাজনীতির প্রধান চিত্র

ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে ইন্দিরা গান্ধী এক উজ্জ্বল নাম। ইন্দিরা গান্ধী বায়োগ্রাফি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে ১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর শাসনামলে ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবন বহু মাইলফলক গড়ে ওঠে। উজ্জ্বল ছাত্র জীবনের সুবাদে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে বিশেষভাবে সম্মান জানিয়েছে। এছাড়া, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গেও তিনি নিজেকে যুক্ত রেখেছিলেন।

ইন্দিরা গান্ধী ১৯৩০ সালে অসহযোগ আন্দোলনের সময় ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে ‘বানর সেনা’ গড়ে তোলেন কংগ্রেসকে সাহায্য করার জন্য। এরপর তিনি ভারতের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৬৭-১৯৭৭ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে নিজের প্রতিভা প্রমাণ করেন। ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক জীবনের উপর ভিত্তি করে বহু গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস রচনা হয়েছে, যা আজও ভারতের প্রগতিশীল ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায়।

Contents show

জীবনের প্রাথমিক পর্যায়

ইন্দিরা গান্ধী ১৯১৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন, একটি বিশিষ্ট রাজনৈতিক পরিবারে। পিতা পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতাদের একজন, যা ইন্দিরা গান্ধীর শৈশব থেকেই তাঁকে রাজনৈতিক ভাবাদর্শে অনুপ্রাণিত করেছিল।

পরিবারের পটভূমি

ইন্দিরা গান্ধীর শৈশব কাটে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তেজনাপূর্ণ সময়ে। তাঁর বাবার নেতৃত্ব এবং দাদার দেশভক্তির প্রভাব তাঁর উপর ব্যাপকভাবে পড়েছিল। পরিবার থেকে পাওয়া এই শক্তিশালী রাজনৈতিক চেতনা তাঁকে পরবর্তী জীবনে বৃহত্তর ভারতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ করতে সহায়তা করেছিল।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশ

শিক্ষা এবং প্রভাব

ইন্দিরা গান্ধীর শিক্ষা ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ। তিনি প্রথমে শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা করেন এবং পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। বিদেশের এই শিক্ষাজীবন তাঁর রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক চেতনা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

রাজনৈতিক জাগরণের শুরু

ইন্দিরা গান্ধীর শৈশবে রাজনৈতিক চেতনার বিকাশের সূচনা হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেখে। তাঁর পিতা এবং অন্যান্য কংগ্রেস নেতাদের সাথে থাকতে থাকতে তিনি রাজনীতিকে সরাসরি দেখতে পান এবং সেই সময়েই ইন্দিরা গান্ধীর রাজনীতিতে পদার্পণ ঘটে।

রাজনৈতিক জীবনের সূচনা

ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন ভারতীয় রাজনীতির অন্যতম প্রধান চিত্র এবং তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার রাজনৈতিক জীবনে ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস যোগদান ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক, যা পরবর্তীতে তাকে ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

কংগ্রেসের সাথে যুক্ত হওয়া

১৯৫৯ সালে, ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। এই সময়ে তিনি কংগ্রেসের নীতি এবং প্রকল্প সম্প্রসারণে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেন। ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস যোগদান শুধু তার নিজের রাজনৈতিক জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, বরং কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্যও তা ছিল গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তার প্রজ্ঞা এবং ন্যায় পরায়ণতা কংগ্রেসকে আরও শক্তিশালী করে।

প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত

ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৭ সালে প্রথমবারের মতো রায়বারেলির লোকসভা সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এই নির্বাচনে তার সাফল্য শুধুমাত্র তার রাজনৈতিক জনপ্রিয়তার প্রমাণ ছিল না, বরং তার নেতৃত্বের দক্ষতারও পরিচয় দেয়। ইন্দিরা গান্ধী লোকসভা সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরই তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ প্রশস্ত করেন। তার এই পদক্ষেপ দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী

ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী, যিনি ১৯৬৬ সালে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর এই পদে অধিষ্ঠিত হন। তিনি ছিলেন ভারতীয় রাজনীতির প্রধান চিত্র এবং ‘আয়রন লেডি’ নামে পরিচিত। ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রিত্ব ১৯৬৬ সাল থেকে ১৯৭৭ এবং ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

পদ গ্রহণের প্রক্রিয়া

ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রিত্ব শুরু হয় কংগ্রেস পার্টির অভ্যন্তরীণ বিবাদ এবং রাজনৈতিক চাপে। তার বাবা, জওহরলাল নেহেরুর মৃত্যুর পরের বছরই তিনি কংগ্রেস পার্টির সভাপতি হন এবং দলের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ইন্দিরা গান্ধী এর আগে ১৯৬৪ সালে সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। তার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় তিনি বিভিন্ন অর্থনৈতিক এবং সামাজিক নীতি প্রয়োগ করেন।

রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জসমূহ

ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছিল বহুল এবং জটিল। তার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রাজনৈতিক বিভাজন এবং বিরোধী দলগুলির চাপের মুখে থাকতেন। বিশেষত, ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন, যা তার জনপ্রিয়তা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতাকে তীব্র প্রভাবিত করেছিল। তার ছেলে, রাজিব গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের পর, তিনি আবারও রাজনৈতিক জীবনে কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। ইন্দিরা গান্ধীর রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা এখনও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে ব্যাপক চর্চার বিষয়।

বঙ্গবন্ধুর সাথে সম্পর্ক

ইন্দিরা গান্ধী এবং শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে সম্পর্কের সূচনা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে। ভারতের সমর্থনের কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে দিল্লিতে পৌঁছান। ইতিমধ্যে, ভারত এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয়-আহার-চিকিৎসা দেবার ব্যবস্থা করেছে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ

১৯৭১ সালের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ইন্দিরা গান্ধী তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং ভারতের সেনাবাহিনী পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। এই যুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন এবং বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটে। তবে, ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারত পাকিস্তানকে পরাজিত করে ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। ঢাকায় মুক্তিযুদ্ধের পর ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়।

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রভাব

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র সংঘাত হয় যা ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে শেষ হয়। যুদ্ধের পর ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। ১৯৭২ সালে ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম সাক্ষাৎটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল। এই সাক্ষাতটি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করেছিল। সেই সময়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ভালো থাকলেও শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর পরবর্তী বছরগুলোতে এই সম্পর্ক নানান চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়।

আরও পড়ুনঃ  লালবাগের কেল্লা

FAQ

ইন্দিরা গান্ধী কে ছিলেন?

ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী এবং জননেত্রী ছিলেন। তিনি তাঁর কর্ম ও নীতি দ্বারা দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রগুলোতে বড় প্রভাব ফেলে ছিলেন।

ইন্দিরা গান্ধী কখন জন্মগ্রহণ করেন?

ইন্দিরা গান্ধী ১৯ নভেম্বর, ১৯১৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন।

ইন্দিরা গান্ধীর বাবা কে ছিলেন?

ইন্দিরা গান্ধীর বাবা পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু, যিনি ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন মূল চরিত্র ছিলেন এবং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

ইন্দিরা গান্ধী কোথায় পড়াশোনা করেছিলেন?

ইন্দিরা গান্ধী অক্সফোর্ড ও কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে তিনি মহান শিক্ষা ও মূল্যবোধ লাভ করেন।

ইন্দিরা গান্ধী কবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন?

ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৬ সালে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর মৃত্যুর পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন।

কি কারণে ইন্দিরা গান্ধী বিখ্যাত?

ইন্দিরা গান্ধী তাঁর কঠোর নেতৃত্ব, দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বিদেশ নীতি সংক্রান্ত অভাবনীয় কার্যক্রমের জন্য বিখ্যাত। তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সাহায্য করেন এবং এই কারণে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের প্রভাবেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ইন্দিরা গান্ধী কত বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন?

ইন্দিরা গান্ধী ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৭ এবং ১৯৮০ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত মোট ১৬ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button