জাহাঙ্গীরনগর

জাহাঙ্গীরনগর, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে অবস্থিত একটি সমৃদ্ধশালী অঞ্চল, যা বিশেষত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পরিচিত। ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। বিশ্ববিদ্যালয়টি ৬৯৭.৫৬ একর জায়গার উপর বিস্তৃত এবং ৩৬টি বিভাগসহ ৬টি অনুষদ নিয়ে গঠিত।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংক্ষেপে “জাবি”, সামাজিক বিজ্ঞান, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, আইন, কলা এবং জীববিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চতর শিক্ষা এবং গবেষণা প্রদান করে আসছে। এখানে শিক্ষার্থীরা স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরাল প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির অনন্য গবেষণা-উন্মুখ শিক্ষার পরিবেশ এবং সকল ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে দৃঢ় মিথস্ক্রিয়া অধ্যয়নের জন্য একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত।

Contents show

জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

জাহাঙ্গীরনগর, ঢাকার প্রাচীন নাম, মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামানুসারে প্রাথমিকভাবে পরিচিত হয়েছিল। জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাস এবং এর সাংস্কৃতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর ন্যায় এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে গুরুত্বের সাথে তুলে ধরে।

প্রাচীন ইতিহাস

১৯৬৭ সালে, ঢাকার ৩২ কিলোমিটার উত্তরে ৭৫০ একর স্থান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি তার যাত্রা শুরু করে ১৯৭০ সালের আগস্ট মাসে এবং আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি। প্রথম দিকে মাত্র ১৫০ জন ছাত্র এবং ২১ জন শিক্ষক নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান গঠন করা হয়, যা অর্থনীতি, ভূগোল, পরিসংখ্যান এবং গণিত বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৫টি বিভাগ ছয়টি অনুষদ এবং চারটি ইনস্টিটিউটের অধীনে রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা

সংবাদমাধ্যম জাহাঙ্গীরনগরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এর অবদান সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। মেজর সংবাদপত্র এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলি নিয়মিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য

জাহাঙ্গীরনগরের সাংস্কৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্র করে এখানে নিয়মিত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক এবং শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিশেষত, বসন্ত উৎসব এবং অন্যান্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ইভেন্টগুলি এখানে বিশাল পরিমাণ দর্শকের আকর্ষিত করে। জাহাঙ্গীরনগরের সাংস্কৃতি, ঢাকার প্রাচীন নাম এবং এর ইতিহাস একত্রে মিলে এই অঞ্চলের শিক্ষা এবং সংস্কৃতিকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। এটি ঢাকা থেকে ৩২ কিলোমিটার উত্তরে প্রায় ৬৯৭.৫৬ একর জমির উপর অবস্থিত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল উচ্চমানের শিক্ষা ও গবেষণা প্রদানের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখা।

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির সূচনা শিক্ষার মান উন্নত করার প্রত্যাশায় ও আধুনিক গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে। শুরু থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি স্বীকৃত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

অঙ্গীকার ও উদ্দেশ্য

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীকার হল প্রথাগত শিক্ষার বাইরে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের সৃজনশীল, উদ্ভাবনী ও সংকীর্ণ মানসিকতা মুক্ত করা। প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য হল সমস্যার সমাধান, সামাজিক উন্নয়ন এবং জাতীয় অগ্রগতির সঙ্গে যুক্ত করে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা। প্রতিষ্ঠানটি নারী শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে, যেখানে মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৫০% আসন নারী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত।

বিশেষ কার্যক্রম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন, বৃত্তি প্রদান, এবং বিভিন্ন শিক্ষামূলক ওয়ার্কশপ। এসব কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের জ্ঞান-ভিত্তিক ও গবেষণামূলক শিক্ষায় উদ্দীপিত করে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে তাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চারটি বিশেষায়িত গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রয়েছে, যা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রকে আরও বিস্তৃত করে।

আরও পড়ুনঃ  কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

স্থাপত্য ও প্রকৃতি

জাহাঙ্গীরনগর তার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যপট এবং ঐতিহাসিক স্থাপত্যের জন্য সারা দেশজুড়ে খ্যাত। বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার আশপাশের উদ্যান, হ্রদ এবং বিস্তৃত সবুজ এলাকা এই স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অপ্রতিরোধ্য করেছে। এছাড়াও, এখানে কিছু নির্মাণশৈলী এবং কাঠামো রয়েছে যা ঐতিহাসিক গুরুত্বের বাহক।

প্রাকৃতিক দৃশ্য

জাহাঙ্গীরনগরের প্রাকৃতিক দৃশ্য সপ্তাহের প্রতিদিন দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। এখানে থাকা বিশাল উদ্যান এবং হ্রদগুলি একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে, যেখানে গাছপালার সমাহার প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক স্বর্গ সরূপ। জাহাঙ্গীরনগরের গাছপালা ছায়ামুখর পরিবেশ সৃষ্টিতে বিশেষ অবদান রাখে। প্রকৃতিপ্রেমীরা গ্রীষ্ম এবং শীতকালে দিনের বিভিন্ন সময়ে এই স্থানগুলি উপভোগ করতে পারেন।

উল্লেখযোগ্য হ্রদ এবং উদ্যানগুলোতে শীতকালে অতিথি পাখিরাও দেখা যায়, যা প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ।

ঐতিহাসিক স্থাপত্য

জাহাঙ্গীরনগরের ঐতিহাসিক স্থাপত্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে রয়েছে মুঘল আমলের দুর্গ এবং মসজিদ যা ইতিহাসের পাতায় জাহাঙ্গীরনগরকে বিশেষ স্থান দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যগুলি হলো:

  • শহীদ মিনার (স্থাপিত ২০০৪ সালে, উচ্চতা ৭১ ফুট)
  • অমর একুশে (স্থাপিত ১৯৯১ সালে)

শহীদ মিনার ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সালের জাতির স্বাধীনতার সংগ্রামের বিভিন্ন ধাপকে প্রতিনিধিত্ব করে। আটটি পিলারের স্থানীয় বৈশিষ্ট্য জাতির সংগ্রাম, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি নিবেদন প্রকাশ করে।

শিক্ষা ও গবেষণা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অন্যতম প্রতিভাশালী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। শিক্ষার গুণগত মান বজায় রেখে, এই বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার সুবিধা প্রদান করে আসছে প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে। এখানে শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণা সুযোগকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ কারণেই দেশের সেরা মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা এখানে পড়াশোনা করতে আগ্রহী।

শিক্ষা ব্যবস্থা

জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতমানের। বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, এবং বর্তমানে এতে ৬টি অনুষদ, ৩৪টি বিভাগ, এবং ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। ১৪০০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে উচ্চশিক্ষার সুবিধা প্রদান করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১ লক্ষাধিক বইয়ের সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির মাধ্যমে জ্ঞানার্জনের সুবর্ণ সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য ক্যাম্পাসে ১৩টি আবাসিক হল রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের আরামদায়ক পরিবেশে পড়াশোনার সুবিধা দেয়।

আরও পড়ুনঃ  জওহরলাল নেহেরু

গবেষণার সুযোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগও যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান। ড. মো. কামরুল হাসান, যিনি বন্যপ্রাণি গবেষণায় অগ্রগামী, তিনি একশোর বেশি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের বন ও বন্যপ্রাণির উপর ৭টি বই রচনা ও সহ-রচনা করেছেন এবং ১৪টি নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। শিক্ষার্থীদের মাস্টার্স এবং পিএইচডি গবেষণা পরিচালনার ক্ষেত্রেও তাঁর বিশাল অবদান রয়েছে। এই কারণেই জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা গবেষণার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করে চলেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, মানবিক ও সমাজ বিজ্ঞানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। একাধিক গবেষণা প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এখানকার উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা ও গবেষণা সুযোগগুলো শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি করে।

FAQ

জাহাঙ্গীরনগর কোথায় অবস্থিত?

জাহাঙ্গীরনগর, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে অবস্থিত।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭০ সালের ২০ আগস্ট।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য কি?

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য হল উচ্চমানের শিক্ষা ও গবেষণা প্রদান করা।

জাহাঙ্গীরনগরের ইতিহাস কীভাবে শুরু হয়?

মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নামানুসারে ঢাকার নাম প্রাচীনকালে জাহাঙ্গীরনগর রাখা হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কি ধরনের সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান হয়?

এখানে অনেক সাংস্কৃতিক ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান যেমন বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন, বৃত্তি প্রদান, ও বিশেষ ওয়ার্কশপ হয়।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ কার্যক্রম কি?

বিশেষ কার্যক্রমের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলন, বৃত্তি প্রদান, এবং বিশেষ শিক্ষাগত ওয়ার্কশপ।

জাহাঙ্গীরনগরে কোন কোন ঐতিহাসিক স্থাপনা আছে?

জাহাঙ্গীরনগরে মুঘল আমলের দুর্গ এবং মসজিদসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগরের প্রাকৃতিক দৃশ্য কেমন?

জাহাঙ্গীরনগর তার বিশাল উদ্যান, হ্রদ এবং বিস্তৃত সবুজ এলাকার জন্য বিখ্যাত।

জাহাঙ্গীরনগরে কোন গবেষণার সুযোগ আছে?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চমানের গবেষণার সুযোগ পাওয়া যায়।

জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার ব্যবস্থা কেমন?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষদের অধীনে বিবিধ শিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button