কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে স্টেশন। এটি দেশের বৃহত্তম এবং ব্যস্ততম পরিবহণ অবকাঠামোগুলির মধ্যে একটি। ঢাকার মধ্যমাঞ্চলীয় রেলস্টেশন হিসেবে পরিচিত এই স্টেশনটি, বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রী পরিবহন কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু।

এই স্টেশনটি ১৯৬৮ সালের ১ মে উদ্বোধন করা হয় এবং তার ঠিক পরের বছরেই প্রদেশের রেলওয়ে মেইল সেবার সদর দপ্তর এখানে স্থানান্তরিত হয়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনটি প্রায় ৪ কোটি যাত্রী পরিবহন করে থাকে প্রতি বছর এবং এটি ১১টি প্ল্যাটফর্ম এবং ১০টি ট্র্যাক নিয়ে গঠিত। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্থানাঙ্ক: ২৩°৪৩′৫৫″ উত্তর ৯০°২৫′৩৪″ পূর্ব এবং এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত।

Contents show

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন পরিচিতি

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশে রেলপথের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। এর অবস্থান এবং উচ্চতাগত বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরার মাধ্যমে এই স্থানটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

অবস্থান এবং জায়গা

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনটি মতিঝিল থানার আউটার সার্কুলার রোডে অবস্থিত। স্টেশন অবস্থান হিসেবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মাধ্যমেই ঢাকা শহরের বিভিন্ন অংশে দ্রুত সংযোগ স্থাপন করা যায়। স্টেশনটির জিওগ্রাফিক স্থানাঙ্ক হল ২৩.৭৩২০° উত্তর এবং ৯০.৪২৬২° পূর্ব, যা এটি একটি নির্দিষ্ট এবং সহজেই চিহ্নিত জায়গায় সৃষ্টি করেছে।

উচ্চতা এবং স্থানাঙ্ক

কোনো স্থাপনার উচ্চতা এবং স্থানাঙ্ক এর ভৌগলিক পরিচিতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এর উচ্চতা ১২ মিটার, যা প্রধান সড়ক স্তরের উপরে অবস্থিত। স্টেশন অবস্থান বিবেচনায়, এর উচ্চতা এবং জিওগ্রাফিক স্থানাঙ্ক নির্ধারণ করে যে এটি শুধুমাত্র একটি যাত্রী পরিবহন কেন্দ্র নয়, বরং একটি স্থাপত্য নিদর্শনও।

ইতিহাস এবং নির্মাণ

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ইতিহাস তিনটি প্রধান পর্যায়ের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি এক ঐতিহাসিক মর্মস্পর্শী গন্তব্য যা দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

প্রাক-মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল

১৯৬০এর দশকের শুরু থেকেই প্লান ও ডিজাইন করার কাজ শুরু হয়েছিল রেলওয়ে স্টেশনের। তবে সে সময়কার রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার জন্য নির্মাণের সময়কাল বেশ দীর্ঘ হয়েছিল। যখন স্থাপনাটি নির্মাণের আদেশ আসে, তখন এর মূল লক্ষ্য ছিল দেশের কেন্দ্রস্থলে একটি অত্যাধুনিক রেলওয়ে বাহন কেন্দ্র স্থাপন করা যা বিভিন্ন বিবিধ রাস্তার সংযোগ তৈরি করবে।

প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ

প্রথম পর্যায়ে স্টেশনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৬০ এর দশকের মাঝামাঝিতে। এই সময়কালের মধ্যে, প্রকৌশলীরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ অগ্রসর করেন। রেলওয়ে স্টেশনের ইতিহাসে এই নির্মাণ সময়কাল ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কারণ এসময়ে স্টেশনের মূল অবকাঠামো তৈরি হয়, যা পরবর্তীতে অন্যান্য অংশের উন্নয়নকে সহজতর করেছিল।

উদ্বোধন এবং প্রাথমিক কার্যাবলী

১৯৬৮ সালে সম্পূর্ণ নির্মাণ শেষ হওয়ার পর, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন উদ্বোধন করা হয়। উদ্ভোধনের সময়কাল ছিল অত্যন্ত মহৎ, বিশেষ করে যেহেতু এটি ঢাকায় সর্ববৃহৎ রেলওয়ে স্টেশন হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিল। যাত্রীরা পরবর্তী কয়েক বছর ধরে স্টেশনটি ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ এবং সুশৃঙ্খল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পান। উদ্বোধনের পর থেকেই স্টেশনটিতে সেবা দিতে গিয়ে এক আলাদা পরিচিতি লাভ করেছিল যা ঢাকার নগরজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়।

আরও পড়ুনঃ  রংপুর রেলওয়ে স্টেশন

স্থাপত্যশৈলী ও নকশা

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন কেবলমাত্র গণপরিবহন কেন্দ্র নয়, বরং বাংলাদেশের স্থাপত্যশৈলী এবং নকশার এক অনন্য নিদর্শন। এই স্টেশনটি নব্য ইসলামি স্থাপত্যশৈলী এবং আধুনিক স্থাপত্যের একটি সুনিপুণ সংমিশ্রণ।

স্থপতি এবং তাদের অবদান

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্থাপত্যশৈলী প্রণয়ন করেছিলেন মার্কিন স্থপতি রবার্ট বাউগি ও তার দল। নিউ জার্সি ভিত্তিক বার্গার কনসালট্যান্টস কোম্পানির স্থপতিরা জলবায়ুগত অবস্থার নিরিখে নকশা করেন, যা বায়ু চলাচল এবং বৃষ্টির প্রতিরোধে বিশেষভাবে গড়া হয়। এই প্রতিনিধি দল নকশায় ৩৬টি কনক্রিট সেগমেন্ট এবং ৪৯টি পিলার ব্যবহার করেন, যা স্টেশনের ছাদকে সমর্থন করে।

নব্য ইসলামি স্থাপত্যশৈলী

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের নব্য ইসলামি স্থাপত্যশৈলী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি একটি আধুনিক স্থাপত্যের সংমিশ্রণ যা স্থানীয় সাংস্কৃতির সাথে মিল রেখে গড়া হয়েছে। স্টেশনটির খোলা পরিবেশ এবং কংক্রিট শেল কানোপি এর স্থাপত্যশৈলীতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই স্থাপত্যশৈলীটি সময়ের সঙ্গে সাথে একটি স্থায়ী স্মারক হিসেবে গণ্য হয়ে উঠেছে, যা স্টেশনের প্রতিটি কোণায় আন্তরিকতাপূর্ণ নজর আকর্ষিত করে।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের এই বিশেষ নকশা এবং স্থাপত্যশৈলী বাংলা স্থাপত্য ইতিহাসের গর্বিত অংশ হয়ে উঠেছে, এবং এটি প্রতিদিনের যাত্রী অভিজ্ঞতায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

যোগাযোগ এবং পরিবহন সুবিধা

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনটি ঢাকা শহরের অন্যতম প্রধান পরিবহন কেন্দ্র। এখানে যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিবহন সুবিধা প্রদান করা হয় যা যাতায়াতকে সহজ এবং আরামদায়ক করে তোলে। বাসস্ট্যান্ড এবং এমআরটি লাইন সহ অন্যান্য পরিবহন মাধ্যমের সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

বাসস্ট্যান্ড ও এমআরটি লাইন

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের কাছে অনেকগুলি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে যা শহরের বিভিন্ন স্থানের সাথে সংযোগ রক্ষা করে। এর পাশাপাশি, এমআরটি লাইন ও রেল যোগাযোগ ব্যাবস্থার সুবিধা রয়েছে। কমলাপুর থেকে এমআরটি লাইন ১, ২, ৪, এবং ৬ এর মাধ্যমে বিভিন্ন গন্তব্যে সহজেই যাতায়াত করা যায়। এই আধুনিক পরিবহনব্যবস্থা যাত্রীদের জন্য সময় বাঁচানোর অন্যতম মাধ্যম হয়েছে।

অন্যান্য পরিবহন মাধ্যম

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুধুমাত্র এমআরটি লাইন নয়, অন্যান্য বিভিন্ন পরিবহন মাধ্যমের সুবিধাও রয়েছে। যেমন:

  • নগর পরিবহনের বাস
  • অটোরিকশা ও ট্যাক্সি
  • অনলাইন রাইড শেয়ারিং সেবা

এই সব পরিবহন ব্যবস্থা যাত্রীদের জন্য অধিকতর সুবিধা প্রদানে সহায়ক। যাত্রীদের সুবিধার জন্য এখানেই পরিবহন সুবিধা কেন্দ্রগুলোর প্রাচুর্য রয়েছে।

আধুনিক সুযোগসুবিধা

কমলাপুর রেলস্টেশন দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের একটি বৃহৎ পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে, যা যাত্রীদের জন্য বিভিন্ন আধুনিক সুযোগসুবিধা নিয়ে এসেছেন। এখানে একাধিক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যা প্রতিটি ট্রেনের জন্য নির্ধারিত।

যাত্রীদের সুবিধার্থে, স্টেশনটিতে উপলব্ধ রয়েছে:

  • বেশ কয়েকটি টিকিট কাউন্টার
  • এটিএম
  • লাগেজ স্টোরেজ
  • ফ্রি ওয়াই-ফাই সংযোগ

স্টেশনের পরিষ্কার এবং সু-পরিচালিত বিশ্রামাগারগুলি যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ প্রদান করে। পাশাপাশি, খাবারের স্টল তে বিভিন্ন ধরনের স্ন্যাকস এবং জলখাবার সরবরাহ করা হয়, যাতে যাত্রীরা তাদের অপেক্ষার সময়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

আরও পড়ুনঃ  কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের স্থপতি কে?

নিরাপত্তার জন্য স্টেশনটিতে সুসজ্জিত নজরদারি ক্যামেরা এবং নিয়মিত টহল ব্যবস্থা রয়েছে, যা যাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে।

অন্তঃনগর এবং এক্সপ্রেস ট্রেনের বিভিন্ন সময়সূচী যাত্রীদের সুবিধার্থে উল্লেখ করা হয়েছে, যা তাদের ভ্রমণের পরিকল্পনায় সহায়ক। আধুনিক সুযোগসুবিধা এবং দক্ষ পরিষেবা নিশ্চিত করে স্টেশনটি যাত্রীদের নির্বিঘ্ন ভ্রমণের সুবিধা দেয়।

যাত্রীসংখ্যা এবং যাত্রীর নিরাপত্তা

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঢাকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিবহন হাব। প্রতিদিন এই স্টেশন প্রায় ৩,৬০,০০০ যাত্রী পরিবেশন করে। এটি বাংলাদেশে অন্যতম ব্যস্ততম স্টেশন গুলির মধ্যে একটি। দৈনিক যাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

প্রতিদিনের যাত্রী সংখ্যা

কমলাপুর স্টেশনে প্রতিদিন প্রায় ৩,৬০,০০০ যাত্রী চলাচল করে। এই দৈনিক যাত্রী সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যা স্টেশনের অবকাঠামোর উপর চাপ সৃষ্টি করছে। স্টেশনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ও টিকিট কাউন্টারে লম্বা সারি দেখা যায়, যা যাত্রীদের জন্য সময়সাপেক্ষ ও বিরক্তিকর হতে পারে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও চ্যালেঞ্জ

যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। স্টেশনে নিরাপত্তা ক্যামেরা, মেটাল ডিটেক্টর এবং বিশেষ প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা কর্মী নিয়োজিত আছে। তবে, যাত্রীদের কিছু অসুবিধা ও অভিযোগ রয়েছে যেমন:

  • ডিজিটাল স্ক্রিনের সংখ্যা যথেষ্ট নয়
  • আডিও তথ্য অপরিস্কার, যাত্রীদের বিভ্রান্তি
  • স্ক্রিনগুলো প্রায়ই বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে, যা সময় মতো তথ্য প্রদান করে না

যাত্রীদের স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াতে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে স্টেশনের ডিজিটাল অবকাঠামো বৃদ্ধির প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো সমাধানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

মাল্টিমোডাল পরিবহন হাব প্রকল্প

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনকে একটি আধুনিক মাল্টিমোডাল পরিবহন হাব হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে যাত্রী সেবা এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে এই প্রকল্পটি শুরু করা হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবহন খাতে কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য

মাল্টিমোডাল প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হল ২০৩০ সালের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ পরিবহন হাব তৈরী করা যা বাস, ট্রেন এবং মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন পরিবহন মাধ্যমের সমন্বয় করবে। এটি ঢাকার অভ্যন্তরে এবং বাইরের সমস্ত গন্তব্যগুলির মধ্যে সহজ এবং সুচারু যাতায়াত নিশ্চিত করবে।

  • কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে উন্নত পরিষেবা প্রদান
  • ঢাকার ট্রাফিক জ্যামে কমানো
  • যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থার বৃদ্ধি এবং উন্নতি

প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা

২০১৮ সালে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কমলাপুর মাল্টিমোডাল পরিবহন হাব প্রকল্প অনুমোদন করে। বাংলাদেশ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জাপানের সঙ্গে একটি চুক্তি করে। হাব নির্মাণের জন্য কাজিমা কর্পোরেশনকে নিয়োগ করা হয়েছে। ১০ কোটি বর্গমিটার আয়তনে নির্মিত হবে প্রস্তাবিত কমলাপুর বহুমুখী স্টেশন।

সরকার বর্তমানে ভারতীয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে এই প্রকল্পের লেনদেন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিলেও সন্তোষজনক প্রতিবেদন না পাওয়ায় নতুন লেনদেন উপদেষ্টা নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পের জন্য $১.০৯ বিলিয়ন ঋণ মঞ্জুর করেছে। প্রকল্পের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ করা।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এর পরিবহন ব্যবস্থা আরো উন্নত করতে, মাল্টিমোডাল প্রকল্পটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। একাডেমিক গবেষণা, প্রযুক্তিগত পর্যবেক্ষণ এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে এটিকে ঢাকার একটি প্রধান পরিবহন হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হচ্ছে।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন-এর ভবিষ্যত পরিকল্পনা

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বিভিন্ন স্তরে কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ২০১৯ সালের নির্দেশনায় স্টেশনটির বৃহত্তর সম্প্রসারণের পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। রেলওয়ে স্টেশনের ভবিষ্যত পরিকল্পনা অনুযায়ী, স্টেশনটি অতিরিক্ত ১৩০ মিটার উত্তরের দিকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো কমলাপুর এমআরটি লাইন ৬-এর সিজর ক্রসিং ব্যাবস্থা নিশ্চিত করা।

আরও পড়ুনঃ  সান্তাহার জংশন রেলওয়ে স্টেশন

সর্বশেষ সভা অনুযায়ী, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে একটি অত্যাধুনিক মাল্টিমোডাল পরিবহন হাব নির্মাণ করার পরিকল্পনা প্রচলিত হয়েছে। এই পরিকল্পনার আওতায় থাকছে বহুতল আবাসন ভবন, হোটেল, শপিং মল, পাতাল ও উড়ালপথ। ২০২৬ সালের মধ্যে এমআরটি লাইন ৬-এর তৃতীয় পর্যায় চালু হবে, যা স্টেশনটির নতুন কাঠামোতে অর্ন্তভুক্ত করা হবে।

বিশ্বমানের পরিষেবা প্রদান নিশ্চিত করতে, কমলাপুর স্টেশনের নতুন নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের জন্য কাজিমা কর্পোরেশন এবং অন্যান্য ঠিকাদার সংস্থার অংশগ্রহণ বিবেচনা করা হয়েছে। ২০২৩ সালের ১৩ জানুয়ারি, মেট্রোরেলের কমলাপুর অংশের নির্মাণকাজ উদ্বোধন হয়েছে, যা স্টেশনটির সম্প্রসারণে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত। সম্পূর্ণ পরিকল্পনাটি নিশ্চিত হওয়ার পরে, এটি শহরের পরিবহন ব্যবস্থার মান বাড়াতে বিশাল ভূমিকা পালন করবে।

জরুরি সেবা এবং অন্যান্য সুবিধা

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রীদের বিভিন্ন জরুরি সেবা এবং স্টেশন সুবিধা প্রদান করা হয়। এখানে নিষ্ঠার সাথে জরুরি সেবা প্রদান করা হয় যা যাত্রীর আরাম ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

হাসপাতাল এবং চিকিৎসা সুবিধা

স্টেশনে একটি ছোট হাসপাতাল রয়েছে যা যাত্রীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করে। এই হাসপাতালটি জরুরি সেবা প্রদানে সক্ষম এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত। স্টেশন সুবিধা হিসেবে এখানে একটি আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু আছে, যা ২৪/৭ সময় জুড়ে জরুরি পরিস্থিতিতে সহায়তা প্রদান করে।

মসজিদ এবং অন্যান্য সেবা

যাত্রীদের ধর্মীয় চাহিদা পূরণের জন্য স্টেশনে একটি মসজিদ রয়েছে। যাত্রীরা এখানে তাদের নামাজ আদায় করতে পারেন। এছাড়াও, অন্যান্য স্টেশন সুবিধা যেমন বিশ্রামাগার, খাওয়ার জায়গা, এবং টয়লেট সুবিধা এখানে উপলব্ধ রয়েছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন সর্বদা তার যাত্রীদের সর্বোত্তম পরিষেবা প্রদানের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।

সমাপ্তি

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঢাকা শহরের এক অপরিহার্য অংশ হিসাবে তার ঐতিহ্য এবং সেবা ধরে রাখতে অবিরামভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই স্টেশনটি বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থা এবং এর গতিশীলতার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের অনেক আধুনিক পরিষেবা যেমন উন্নত অটোমেটিক সিগনালিং সিস্টেম, যা নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-জয়দেবপুর শাখায় ৫-১০ মিনিটের ব্যবধানে ট্রেন পরিচালনার সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। এছাড়াও, মডার্ন মাল্টিমোডাল হাব প্রকল্পের প্রেক্ষাপটে, স্টেশনের উদ্ধার ও পরিকল্পনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পের আওতায়, ১৪টি নতুন রেলওয়ে স্টেশন তৈরি এবং ৬টি পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন সংস্কার করা হবে। এই প্রকল্পের জন্য নির্মিত হবে ৩১০টি রেল ব্রিজ, যার মধ্যে ৬৬টি হচ্ছে মেজর ব্রিজ এবং ২৪৪টি মাইনর ব্রিজ। এছাড়া, নির্মাণাধীন নিমতলা রেলওয়ে স্টেশন, যা ঢাকা–ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে ১০০ একর এলাকাজুড়ে অবস্থিত, সম্পূর্ণ স্থাপনের জন্য অপেক্ষায় আছে।

আধুনিক যোগাযোগ এবং উন্নত সেবার মাধ্যমে প্রতিদিনের যাত্রীদের নির্ভরতা ও নিরাপত্তার মান আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে, ভবিষ্যতের উদ্ধার এবং পরিকল্পনার লক্ষ্য বাস্তবায়িত করতে মাল্টিমোডাল হাব প্রকল্পের জন্য প্রাথমিক খরচ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কাজিমা কর্পোরেশনের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়েছে এবং বাহ্যিক স্টেশনের স্থানান্তর এবং প্রকল্প পরিধি নিয়ে পরিকল্পনা করা হয়েছে। সবমিলিয়ে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে পা বাড়াচ্ছে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button