কর্ণফুলী টানেল

কর্ণফুলী টানেল, যা বঙ্গবন্ধু টানেল নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের প্রথম নদী তলদেশের সড়ক টানেল। চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত এই চট্টগ্রাম টানেল প্রকল্পটি দেশের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক অভূতপূর্ব নতুনত্ব এনেছে। এই টানেলের মোট দৈর্ঘ্য ৯.৩৯ কিলোমিটার, যার মধ্যে মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩১৫ কিলোমিটার এবং এপ্রোচ রোডের দৈর্ঘ্য ৫.৩৫ কিলোমিটার।

এই দুই লেনের দ্বৈত কর্ণফুলী টানেল, যা চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এবং নেভি কলেজের কাছে শুরু হয়ে আনোয়ারা এলাকায় চিনি মিলের কাছে শেষ হয়, তা নিঃসন্দেহে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য একটি মাইলফলক। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের জন্য ৮,০০০ কোটি টাকা বাজেট ধরা হলেও বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১০,৬৮৯ কোটি ৭১ লাখ টাকায়। কর্ণফুলী টানেল বিবরণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে, এটি চট্টগ্রাম শহরের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কর্ণফুলী টানেলের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

কর্ণফুলী টানেল, যা কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মিত হচ্ছে, এটি বাংলাদেশের প্রথম নির্ধারিত জলমুখী সড়ক টানেল। কর্ণফুলী টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার, যা এটি দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম জলমুখী টানেলে পরিণত করেছে। কর্ণফুলী টানেলের অবস্থান চট্টগ্রাম শহরের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমির কাছাকাছি থেকে শুরু হয়ে আনোয়ারা প্রান্তে শেষ হয়েছে।

এই টানেল প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় এবং ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর সম্পন্ন হওয়ার জন্য নির্ধারিত হয়েছিল। এটি চট্টগ্রাম এবং আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করবে। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পটির সম্পূর্ণ ব্যয় প্রায় ১০,৬৮৯ কোটি টাকা। কর্ণফুলী টানেলের দৈর্ঘ্য এবং এর অবস্থান বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে উন্নত করবে।

নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর, প্রতিদিন আনুমানিক ১৭,০০০ যানবাহন এই টানেল ব্যবহার করবে। এটি দেশের বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। কর্ণফুলী টানেলের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ তৈরি হবে যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত করবে।

এই টানেল প্রকল্পটি শুধু চট্টগ্রাম শহর এবং আশেপাশের এলাকার মানুষদের জন্যই নয়, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্ণফুলী টানেলের অবস্থান এবং দৈর্ঘ্য তার বাস্তবায়নে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের প্রেক্ষিত

কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের নির্মাণ প্রক্রিয়া ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে শেষ হয়। এই প্রকল্পটি শুরু করতে গিয়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম ছিল কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব। এই মহামারির কারণে প্রকল্পের মেয়াদকাল কয়েকবার বাড়াতে হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  মহাখালী উড়ালসেতু

টানেল নির্মাণ প্রক্রিয়া চলাকালীন, ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (CCCC) এই টানেলটি তৈরি করেছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য তিন দশমিক ৩২ কিলোমিটার এবং পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে রয়েছে পাঁচ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে।

মিরসরাই অর্থনীতিক অঞ্চলে ১৫২ প্রতিষ্ঠান ৪১০ একর জমিতে কারখানা স্থাপন করে এক দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে, যেখানে ৫২ হাজার ২৩৮ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। ইজারা চুক্তির মাধ্যমে নিবন্ধিত ১৫২ প্রতিষ্ঠানের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং প্রত্যাশিত কর্মসংস্থান সাত লাখ ৭৫ হাজার ২২৮ জনের।

২০২০ সালের মধ্যে মিরসরাইয়ে ৫৩৯ প্লট বরাদ্দ সম্পন্ন করার পরে উৎপাদনে গেলে মোট বিনিয়োগ আরও কয়েকগুণ বাড়বে, যা সৃজন করবে ১৫ লক্ষাধিক কর্মসংস্থান। উপরন্তু, কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মিত টানেলের মাধ্যমে মেরিন ড্রাইভের সাহায্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর এবং মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে সংযুক্ত হবে।

এই প্রকল্পের ফলে মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দীর্ঘ পথটি দেশের বৃহত্তম শিল্প করিডরে পরিণত হবে। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি আরো গতিশীল হবে এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

নির্মাণ কাজ ও উদ্বোধন

কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ কাজের প্রথম ধাপ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই উদ্যোগটি ছিল দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

নির্মাণ কাজ শুরু

টানেল নির্মাণ সময়সূচি অনুযায়ী, প্রকল্পটির মূল কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে এবং প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়। প্রথম টিউব তৈরির কাজ শেষ করতে প্রায় এক বছর সময় লেগেছিল এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ৮৭ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়। টানেলটির নির্মাণকে বাংলাদেশের ইতিহাস সৃষ্টিকারী পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

উদ্বোধন

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী টানেলের উদ্বোধন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত ছিলেন এবং দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা রাখতে কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। টানেল উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছিল দেশের নতুন সম্ভাবনার সূচনা যা দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের যোগাযোগ ব্যস্থা সহজতর করবে।

Karnaphuli tunnel এর টোল হার

কর্ণফুলী টানেল দিয়ে ভ্রমণের জন্য বিভিন্ন যানবাহনের জন্য নির্ধারিত টোল হার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দৈনিক এই টানেল দিয়ে অসংখ্য পণ্যবাহী ট্রাক, বাস, মোটরগাড়ি এবং অন্যান্য যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে, এবং তাদের জন্য বিভিন্ন যানবাহন শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। টানেল টোল হার অনুযায়ী, যানবাহনের ধরন অনুযায়ী শুল্ক বিভিন্নভাবে নির্ধারিত হয়েছে।

যানবাহনের ধরন অনুযায়ী টোল হার

  • ব্যক্তিগত গাড়ি বা জিপের জন্য টোল ২০০ টাকা।
  • পিক-আপ ট্রাকের জন্য টোল ২০০ টাকা।
  • মাইক্রোবাসের জন্য টোল ২৫০ টাকা।
  • ৩১ আসনের কম বাসের জন্য টোল ৩০০ টাকা।
  • ৩২ আসনের বেশি বাসের জন্য টোল ৪০০ টাকা।
  • ‘৩ অ্যাক্সেল’ বাসের জন্য টোল ৫০০ টাকা।
  • ৫ টন পর্যন্ত ট্রাকের জন্য টোল ৪০০ টাকা।
  • ৫.০১ থেকে ৮ টন পর্যন্ত ট্রাকের জন্য টোল ৫০০ টাকা।
  • ৮.০১ থেকে ১১ টন পর্যন্ত ট্রাকের জন্য টোল ৬০০ টাকা।
  • ৩ অ্যাক্সেলের বেশি ট্রাকের জন্য টোল ৮০০ টাকা।
  • ৪ অ্যাক্সেল পর্যন্ত ট্রেলার জন্য টোল ১,০০০ টাকা।
  • ৪ অ্যাক্সেলের বেশি হলে প্রতি অতিরিক্ত অ্যাক্সেল জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা টোল।
আরও পড়ুনঃ  গণভবন

কর্ণফুলী টানেলে এই যানবাহন শুল্ক নিয়ে টানেল টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে যা দৈনিক রাজস্ব বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।

অর্থায়ন ও ব্যয়

কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পটি স্বপ্নপূরণের পথে যেতে অর্থায়ন ও ব্যয় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। প্রকল্পের খরচ বারবার পরিবর্তিত হয়েছে বিভিন্ন কারণের ফলে।

মোট ব্যয়

মূলত ২০১৫ সালে প্রকল্পের বাজেট ছিল ৮,৪৪৬.৬৩ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত সম্পন্ন হওয়ার লক্ষ্য ছিল। প্রথম সংশোধনীর সময় ব্যয় বাড়িয়ে ১০,৩৭৪.৪২ কোটি টাকা করা হয় এবং এই সময়সীমা ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সংশোধনীর মধ্যে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ১০,৬৮৯.৭১ কোটি টাকা করা হয়েছে এবং সমাপ্তির সময়সীমা ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

চীনের অর্থায়ন

টানেল প্রকল্পের খরচের বড় একটি অংশের অর্থায়ন চীন করতে সহায়তা করেছে। চায়না এক্সিম ব্যাংক থেকে ৬,০৭০ কোটি টাকার ঋণ প্রদান করা হয়েছে, যা প্রকল্পের সফল সম্পন্নের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই অর্থায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের অংশগ্রহণ

বাংলাদেশ সরকারও টানেল প্রকল্পের খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখত এবং অর্থায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মোট ৪,৬১৯.৭০ কোটি টাকার অর্থায়ন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে হয়েছে। তবে প্রচুর উপায় ব্যবস্থাপনায় নানা রকম পরিবর্তনের দরুন প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি এই অংশগ্রহণ সূচক হয়েছে আন্তঃসংযোগের উন্নতিতে, যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগের প্রভূত উন্নতি।

কর্ণফুলী টানেলের কারিগরি বৈশিষ্ট্য

কর্ণফুলী টানেল বাংলাদেশের প্রথম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম পানির নিচের সড়ক টানেল হিসেবে বিবেচিত। এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এবং শেষ হবার সময় নির্ধারিত হয় ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর। কর্ণফুলী টানেলের দৈর্ঘ্য, টানেলের প্রস্থ এবং গভীরতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে নিচে।

দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ

টানেলের দৈর্ঘ্য ৩.৩২ কিলোমিটার, যা পানির নিচে চলছে। এর প্রস্থ হচ্ছে ১০.৮ মিটার, যা দুটি লেনে বিভক্ত। এর সীমিত দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় ১৭,০০০ যানবাহন চলাচল করতে সক্ষম। কর্ণফুলী টানেলের দৈর্ঘ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে যাত্রাকাল ও সংযোগের ওপর। এছাড়াও, টানেলের প্রস্থের কারণে বড় ও ছোট সব ধরনের যানবাহনের যাতায়াত সহজ হয়।

আরও পড়ুনঃ  কুড়িল উড়ালসেতু

গভীরতা

কর্ণফুলী টানেলের গভীরতা ১৮ থেকে ৩১ মিটার পর্যন্ত, যা জলের পৃষ্ঠ থেকে নিচে রয়েছে। এর স্থাপনাগুলি জলের উচ্চ দিক এবং প্রস্তাবিত গভীরতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এই টানেলের গভীরতা যাত্রাযোগাযোগের জন্য একটি বড় সুবিধা প্রদান করে, কারণ এটি জলের নিচে স্থিতিশীল চলাচলে সহায়ক।

প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা

কর্ণফুলী টানেলের প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য অনেক অত্যাধুনিক এবং উপযোগী। এই টানেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এবং যানবাহন পরিচালনা সহজ করতে এখানে নিখুঁত প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়েছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

কর্ণফুলী টানেলের টানেল নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যাধুনিক এবং সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়। এখানে ব্যবহৃত হয়েছে উন্নত স্ক্যানার, জরুরী উদ্ধার প্ৰণালী, এবং অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা। এছাড়াও, টানেলের অভ্যন্তরে ২৮টি জেট ফ্যানের মাধ্যমে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ এবং নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা রয়েছে।

এপ্লিকেশন ও ব্যবহৃত প্রযুক্তি

কর্ণফুলী টানেলে ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলির মধ্যে অন্যতম হল উন্নত আলো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আলো ও অন্ধকারের স্তর নিয়ন্ত্রণ করা হয় বাহ্যিক আবহাওয়া পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে। টানেলের যে পর্যবেক্ষণ স্টেশনগুলো রয়েছে, তারাও একই সাথে সমস্ত কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, এই টানেলের রাস্তা নিরাপত্তা আরামপ্রদ করতে এখানে অগ্রণী প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে।

এছাড়াও, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত টানেল ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালে ১৫০ মিলিয়ন মানুষ এই টানেল ব্যবহার করলেও, ২০১৯ সালে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৬২ মিলিয়ন হয়েছে। একই সময়ে টানেলের রাজস্বও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে এটি প্রমাণিত হয় যে কর্ণফুলী টানেলের টানেল নিরাপত্তা এবং প্রযুক্তিগত বৈশিষ্ট্য সত্যিই কার্যকরী ও নিরাপদ।

কর্ণফুলী টানেলের গুরুত্ব

কর্ণফুলী টানেল যেন দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগ কাঠামোয় এক নয়া দিগন্ত সূচনা করেছে। চট্টগ্রামের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত অনুসারে, কর্ণফুলী টানেলের নির্মাণ দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম সুড়ঙ্গপথের সম্ভাবনাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেছে। টানেলের কারণে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন উদ্যোক্তারা এবং শিল্পোন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ হবে।

যোগাযোগে ভূমিকা

কর্ণফুলী টানেলের ভূমিকা যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বিশাল পরিবর্তন এনে দিচ্ছে। এটি ঢাকাকে চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজারের মধ্যে আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে। পাশাপাশি, দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্থাও উন্নত হবে, যা শিল্পায়ন ও পর্যটনে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন

কর্ণফুলী টানেলের ভূমিকা শুধু যোগাযোগেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টানেল নির্মাণের ফলে চট্টগ্রামে নতুন নতুন শিল্পকারখানা সৃষ্টি হচ্ছে এবং অধিবাসীরা বেকারত্ব দূর করতে উদ্যোক্তারা নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এছাড়াও, টানেল চালু হলে শিল্পায়ন, পর্যটনশিল্পের বিকাশ এবং সহজ যোগাযোগব্যবস্থার কারণে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

টানেলের প্রেক্ষাপটে ১০,৩৭৪ কোটি টাকার বিনিয়োগে যোগাযোগ অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে, যা অর্থনীতি ও ব্যবসায়ের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। কক্সবাজার-বাঁশখালী সড়কের দ্বারা চট্টগ্রাম ও আশপাশের অঞ্চলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে এবং জাতীয় জ্বালানির চাহিদা মেটাতে সমর্থ হবে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button