কৃতি স্যানন
কৃতি স্যানন একজন প্রতিষ্ঠিত বলিউড অভিনেত্রী যিনি মূলত হিন্দি ও তেলুগু ভাষার চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। তাঁর বহুমুখী প্রতিভা ও মনোমুগ্ধকর অভিনয়ের জন্য তিনি বলিউড চলচ্চিত্রাঙ্গনে এক বিশিষ্ট নাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। ১৯৯০ সালের ২৭ জুলাই, নতুন দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করা কৃতি স্যাননের জীবনী হলো অনুপ্রেরণার প্রতীক।
কৃতি স্যানন তার শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন করেছেন জায়পি তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট থেকে, যেখানে তিনি ইলেকট্রনিক্স এবং টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ব্যাচেলর অফ টেকনোলজি ডিগ্রি অর্জন করেন। বলিউডের এই প্রতিভাবান অভিনেত্রীর উচ্চতা ১৭৭ সেমি (৫ ফুট ৯ ½ ইঞ্চি), যা তার মোহনীয় ব্যক্তিত্বকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে।
প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষাগত যোগ্যতা
কৃতি স্যাননের প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা তাঁর কেরিয়ার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। চলুন জেনে নিই বিস্তারিতভাবে তাঁর জন্ম, পারিবারিক পটভূমি, এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে।
জন্ম এবং পারিবারিক পটভূমি
কৃতি স্যানন ২৭ জুলাই ১৯৯০ সালে নতুন দিল্লি তে জন্মগ্রহণ করেন। কৃতি স্যাননের পারিবার একটি পাঞ্জাবি হিন্দু পরিবার। তাঁর মা গীতা স্যানন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিষয়ে অধ্যাপনা করেন, এবং তাঁর পিতা রাহুল স্যানন একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট।
শিক্ষাগত যোগ্যতা
কৃতি স্যাননের শিক্ষা নতুন দিল্লি তে অবস্থিত দিল্লি পাবলিক স্কুল, আর.কে. পুরম থেকে শুরু হয়। স্কুল জীবন শেষ করার পর, তিনি জায়পি ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনলজি থেকে ইলেক্ট্রনিক্স ও টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন।
মডেলিংয়ে সূচনা
কৃতি স্যাননের মডেলিং ক্যারিয়ার শুরু হওয়ার পেছনে তার অসম্ভব দায়িত্ববোধ এবং পরিশ্রমী মনোভাব বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। কলেজ জীবনের শেষ পর্বে, তিনি তার প্রথম বড় কনসার্টে অংশ নেন এবং সেখানে তার মডেলিং প্রতিভা পরিচিতি লাভ করে।
প্রাথমিক জীবনে মডেলিং
জায়পি কলেজ সমাপ্তির পরেই কৃতি স্যানন মডেলিং জগতে প্রবেশ করেন। তার অধ্যবসায় এবং অনন্যতায় মুগ্ধ হয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ড এবং ফ্যাশন ডিজাইনাররা তাকে তাদের ব্র্যান্ডের জন্য মডেল হিসেবে নির্বাচন করেন। কৃতি স্যাননের মডেলিং ক্যারিয়ারের শুরুর দিকটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হলেও তিনি তার কঠোর পরিশ্রম এবং প্রতিভার মাধ্যমে তা প্রতিহত করেন।
প্রথম বড় কনসার্ট
কৃতি স্যাননের প্রথম বড় কনসার্ট ছিল দুবাইতে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক ফ্যাশন শো। এই কনসার্টে, তিনি অনেক বিখ্যাত আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের জন্য রানওয়েতে হাঁটেন। তার এই অভিজ্ঞতা মডেলিং জগতে তাকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। এই কনসার্টে অংশগ্রহণের মাধমে কৃতি স্যাননের মডেলিং ক্যারিয়ার এক ধাপ এগিয়ে যায় এবং তা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হয়ে ওঠে।
চলচ্চিত্র জগতে অভিষেক
কৃতি স্যাননের চলচ্চিত্র অভিষেক হয় ২০১৪ সালে, যখন তিনি তেলুগু চলচ্চিত্র ‘১: নেনোক্কাদিন’ এ প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয় করেন। এই সাইকোলজিক্যাল অ্যাকশন থ্রিলার ছবিতে তিনি মহেশ বাবুর বিপরীতে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রটি ছিল কৃতি স্যাননের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়, কারণ এটি তেলুগু চলচ্চিত্র শাখায় তাঁর দক্ষতাকে প্রমাণ করে।
এই ভূমিকার জন্য কৃতি স্যানন ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেন এবং তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা করেন দর্শক এবং সমালোচকরা। ১: নেনোক্কাদিন তেলুগু চলচ্চিত্র হিসেবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এবং কৃতি স্যাননের চলচ্চিত্র অভিষেক-এ এটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকে।
এই অভিজ্ঞতা তাঁকে বলিউড তথা অন্যান্য চলচ্চিত্র শিল্পের জগতে প্রবেশ করার পথ সুগম করে। কৃতি স্যাননের চলচ্চিত্র অভিষেক তেলুগু চলচ্চিত্রে হওয়ায়, তাঁর প্রতিভার বিস্তৃতি এবং বৃত্তিকারীর দক্ষতার পরিসর আরও প্রমাণিত হয়।
বলিউডের প্রথম সাফল্য
কৃতি স্যাননের বলিউড অভিষেক হয়েছিল হিরোপন্তি ছবির মাধ্যমে, যেখানে তিনি টাইগার শ্রফের বিপরীতে অভিনয় করেন। এই ছবি কৃতির জন্য সুপারহিট হয়েছিল এবং তাঁকে বিবেচনা করা হয়েছিল একই চলচ্চিত্রের জন্য সেরা নবাগত অভিনেত্রীর ফিল্মফেয়ার পুরস্কার প্রাপ্তির জন্য। চলুন দেখি, শুরুতেই তাঁকে কোন কোন সাফল্যের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
হিরোপন্তি এবং ফিল্মফেয়ার পুরস্কার
হিরোপন্তি ছবি কৃতির বলিউড অভিষেককে মুকুটমণি হিসাবে সজ্জিত করেছে। ছবি মুক্তির পর পরই কৃতি তার অসাধারণ অভিনয় দক্ষতার জন্য প্রশংসিত হন এবং দ্রুত জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান। তাঁর এই অভিষেক অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জয় করেন, যা তাঁর ক্যারিয়ারের একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।
অন্যান্য প্রথম দিকের প্রজেক্ট
ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জেতার পর, কৃতি স্যানন আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রজেক্টে কাজ করেন। দিলওয়ালে ছবিতে তিনি শাহরুখ খান এবং কাজলের সাথে অভিনয় করেন, যা তাঁর ক্যারিয়ারে আরও প্রশংসা এনে দেয়। একইভাবে, বরেলি কি বরফি ছবিতে তাঁর অভিনয় ভক্ত এবং সমালোচকদের প্রায় সকলের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এই প্রজেক্টগুলির মাধ্যমে কৃতি তার বলিউডের স্থান আরও সুসংহত করতে সক্ষম হন।
প্রধান চলচ্চিত্র এবং ক্যারিয়ারের উন্নতি
কৃতি স্যাননের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে তার কিছু প্রধান কাজ এবং বড় বাজেটের চলচ্চিত্র। তার অভিনয় দক্ষতা এবং বক্স অফিস সাফল্য তাকে বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে স্থান দিয়েছে।
দিলওয়ালে এবং বড় বাজেটের চলচ্চিত্র
কৃতির একটি বড় মাইলফলক ছিল দিলওয়ালে, যা বিশ্বব্যাপী ২.৪৫ বিলিয়ন ডলার আয় করে। এটি একটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্র ছিল এবং এতে শাহরুখ খান এবং কাজলের সাথে কৃতি অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রটি তার ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য উন্নতি নিয়ে আসে এবং তাকে বলিউডের একটি অন্যতম জনপ্রিয় মুখ করে তোলে।
বরেলি কি বরফি এবং অভিনয়ের প্রশংসা
কৃতি স্যাননের আরও একটি সাফল্য ছিল বরেলি কি বরফি, যেখানে তিনি একজন স্বাবলম্বী ছোট শহরের নারীর চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছবিতে তার অভিনয়ের জন্য তিনি সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেন। তার প্রভাবশালী অভিনয় এবং চরিত্র উপলব্ধিকরণের জন্য কৃতি প্রচুর প্রশংসা পান। এটি তার অভিনয় জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠে।
Kriti Sanon-এর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজ
কৃতি স্যানন তাঁর অভিনয় জীবন নিয়ে একাধিক উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তথাপি, বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য দুটি কমেডি ফিল্ম ‘লুকা ছুপি’ ও ‘হাউসফুল ৪’, যেখানে কৃতির অনবদ্য পারফরমেন্স দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
লুকা ছুপি এবং ঘরোয়া কমেডি
২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘লুকা ছুপি’ কমেডি ফিল্মে কৃতি স্যাননের অনন্য অভিনয় সকলের মন জয় করেছে। লুকা ছুপি এই চলচ্চিত্রে কৃতি এবং কার্তিক আরিয়ান প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। এ সিনেমাটি ‘লিভ ইন রিলেশনশিপ’ এর গল্প উপস্থাপন করেছে যা কৃতির কমিক টাইমিং এবং স্বাভাবিক হাস্যরস প্রকাশ করেছে। দর্শক এবং সমালোচকদের প্রশংসা পেয়ে ছবিটি বক্স অফিসে বেশ সফল হয়।
হাউসফুল ৪ এবং পুনর্জন্ম কমেডি
২০১৯ সালেই মুক্তিপ্রাপ্ত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ফিল্ম হল ‘হাউসফুল ৪’। এটি কমেডি ফিল্ম ঘরানার এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ এবং পুনর্জন্মের কাহিনীর উপস্থাপনা পাঠকেদের ভিন্নধর্মী মজাদার অভিজ্ঞতা প্রদান করেছে। হাউসফুল ৪ কৃতি স্যাননের জন্য ছিল একটি বিশেষ প্রকল্প যেহেতু এটি একটি মাল্টি-স্টারার চলচ্চিত্র এবং বক্স অফিসে বড়সড় হিট পেয়েছিল। কৃতি তাঁর কমিক ট্যালেন্ট এতে আদর্শভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
মিমি এবং জাতীয় পুরস্কার অর্জন
কৃতি স্যাননের অভিনয় জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বল মুহূর্তগুলির মধ্যে একটি হলো “মিমি” ছবিতে তার সরোগেট মায়ের চরিত্রে অভিনয়। এই চলচ্চিত্রে তার অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার জিতে নেন। “মিমি” ছবিটি তাকে আরোও জনপ্রিয়তা এবং প্রশংসা এনে দিয়েছে।
চরিত্রের জন্য প্রস্তুতি
মিমি ছবির জন্য কৃতি স্যানন ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সরোগেট মায়ের জটিল এবং আবেগময় চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি গভীর গবেষণা এবং প্রশিক্ষণে সময় দিয়েছিলেন। চরিত্রের শারীরিক এবং মানসিক রূপান্তর ফুটিয়ে তুলতে কৃতি একনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন।
প্রতিক্রিয়া এবং স্বীকৃতি
মিমি চলচ্চিত্রে কৃতি স্যাননের অভিনয় সমালোচক এবং দর্শকদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা লাভ করে। তার মানসিক এবং শারীরিক প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি জাতীয় পুরস্কার সহ বেশ কয়েকটি পুরস্কার অর্জন করেন। মিমি চরিত্রে তার অভিনয় ক্যারিয়ারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে উঠেছে এবং এটি প্রমাণ করেছে যে কৃতি স্যানন একজন প্রতিভাশালী অভিনেত্রী।
ব্যক্তিগত জীবনে উত্থান-পতন
কৃতি স্যাননের ব্যক্তিগত জীবন সবসময়ই মিডিয়ার আলোচনায় থাকে। বলিউডের এই জনপ্রিয় তারকা তাঁর ক্যারিয়ারের পাশাপাশি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে খুব যত্ন সহকারে পরিচালনা করেন। কিন্তু সম্পর্ক এবং বন্ধুত্বের বিষয়টি তাঁর জন্য নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে।
সম্পর্ক এবং বন্ধুত্ব
কৃতি স্যাননের সম্পর্ক নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে, কিন্তু তিনি সব সময়ই তা খুব ভালোভাবে সামাল দিয়েছেন। তাঁর বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম হলেন অভিনেতা টাইগার শ্রফ এবং বরুণ ধাওয়ান, যাদের সাথে কাজ করার পাশাপাশি তিনি ব্যক্তিগত জীবনেও ভাল বন্ধু হিসাবে পরিচিত। কৃতির সাথেই তাঁর বোন নূপার স্যাননও বলিউডে পা রেখেছেন এবং তাঁদের বন্ধনও অত্যন্ত নিবিড়।
ব্যক্তিগত অনুপ্রেরণা
কৃতি স্যাননের অনুপ্রেরণা বরাবরই তাঁর পরিবার এবং বন্ধু মহল। ব্যক্তিগত জীবনের উত্থান-পতনের মধ্যেও তিনি সবসময় তাঁর অনুপ্রেরণার জন্য পরিবারের কাছে ফিরে যান। তাঁর মা ও বাবার সমর্থন এবং তাঁর বোন নূপার স্যাননের সাথে তার সম্পর্ক তাঁকে আরও দৃঢ় করেছে। বড় পর্দায় তাঁর শক্তিশালী উপস্থিতির পিছনে এই পরিবারের অবদান অপরিসীম।
কৃতি স্যাননের ব্যক্তিগত জীবন ও অনুপ্রেরণা তাঁর পেশাগত জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এই সম্পর্ক এবং বন্ধুত্বের মাধ্যমে তিনি বরাবরই মানসিকভাবে শক্তিশালী থেকেছেন। তাঁর যাত্রা আমাদের শেখায় কী ভাবে ব্যক্তিগত উত্থান-পতনকে মোকাবেলা করে সফলতার দিকে এগিয়ে যেতে হয়।