লিওনেল মেসি: ফুটবলের অনন্য কিংবদন্তি
লিওনেল মেসি, যিনি ফুটবল দুনিয়ায় পরিচিত তার অসামান্য দক্ষতা ও অনন্য কৃতিত্বের জন্য, জন্মগ্রহণ করেন ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে। মাত্র ১৩ বছর বয়সে, মেসি বার্সেলোনার যুবদলে যোগ দেন, এবং ১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনার প্রধান দলে তার অভিষেক ঘটে। মেসির ক্যারিয়ার এই ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত থেকে এমন এক উচ্চতায় পৌঁছায় যেখানে তিনি ৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২ গোল দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। বার্সেলোনার হয়ে মেসি ৩৫টি ট্রফি জয় করেছেন, যার মধ্যে ১০টি লা লিগা ও ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা উল্লেখযোগ্য।
মেসির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার তার সাফল্যের ঝুলি আরও সমৃদ্ধ করেছে, যেখানে তিনি আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে ১৩টি বিশ্বকাপ গোল করে জাতীয় দলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা। কাতার ২০২২-এর আগে চারটি বিশ্বকাপে ১৯ ম্যাচে অংশ নেয়া মেসি এখন সারা বিশ্বের সামনে নতুন ভাবে নিজেকে তুলে ধরছেন। মেসি যখন ইউরোপীয় ফুটবলের বিতর্কিত ফুটবল কিংবদন্তি, তখন তিনি প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে নতুনভাবে তার ক্যারিয়ার শুরু করেছেন। তার সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স এবং অসংখ্য রেকর্ড তাকে ফুটবল দুনিয়ার অন্যতম আইকন হিসেবে উপস্থাপন করে।
লিওনেল মেসির শৈশব এবং শুরু
লিওনেল মেসির জন্ম হয় আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের প্রতিভা নিয়ে বেড়ে ওঠা মেসি দ্রুতই সকলের নজরে আসেন।
আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরের জন্ম
মেসির জন্ম হয় ১৯৮৭ সালের ২৪শে জুন রোসারিও শহরে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল ছিল তার জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের সহায়তায় মেসি তার শৈশবের ফুটবল ক্যারিয়ারে প্রাথমিক সাফল্য লাভ করেন। রোসারিওতে বড় হওয়ার তার সংগ্রাম এবং তার ব্যক্তিগত জীবন যথেষ্ট অনুপ্রেরণাদায়ক।
ছোটবেলার রোগ ও বার্সেলোনায় যাত্রা
মেসির শৈশব কিন্তু বেশ সহজ ছিল না। অল্প বয়সেই তার হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সমস্যা ধরা পড়ে। এটি তার উচ্চতা এবং শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করছিল। তবে এর পরও মেসির ব্যক্তিগত জীবন এবং আত্মবিশ্বাস তাকে কোন বাধা অতিক্রম করতে সাহায্য করে। তার পরিবার সিদ্ধান্ত নেয়, মেসির চিকিৎসার জন্য স্পেনের গন্তব্য হবে।
এভাবেই শুরু হয় মেসির বার্সেলোনায় যাত্রা। এক মুহূর্তেই যে শিশু ছিল একটি ছোট শহরের প্রতিভা, তিনিই হতে লাগলেন ফুটবলবিশ্বের মহাতারকা। বার্সেলোনায় এসে তিনি ক্লাবটির সঙ্গের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলেন ও সংগঠনের সহযোগিতায় তার শারীরিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন। মেসির এই অনুপ্রেরণামূলক যাত্রা তাকে বিশ্ব সেরা ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
বার্সেলোনা ক্লাবে প্রথম দিনগুলি
লিওনেল মেসি যখন বার্সেলোনার বিখ্যাত লা মাসিয়া একাডেমিতে যোগদান করেন, তখন তার বয়স মাত্র ১৩ বছর ছিল। মেসির ক্লাব ক্যারিয়ার শুরু হয় এখান থেকে, যা পরবর্তীতে তাকে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
তরুন প্রতিভা থেকে শুরু
মেসি বার্সেলোনায় আসার পর থেকেই তার প্রতিভা সবার কাছে চোখে পড়েছিল। তার অসাধারণ দক্ষতা এবং বলের উপর নিয়ন্ত্রণ দেখে তিনি দ্রুতই লা মাসিয়ার একজন প্রধান ক্রীড়াবিদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
মেসির ক্লাব ক্যারিয়ার সত্যিকারের উত্থান ঘটে যখন তিনি মাত্র ১৬ বছর বয়সে ২০০৪ সালে বার্সেলোনার সিনিয়র দলে অভিষেক করেন। এ তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের খেলা দেখে সব কোচ এবং সমর্থক মুগ্ধ হন।
প্রথম দলে অন্তর্ভুক্তির গল্প
বার্সেলোনার প্রথম দলে মেসির অন্তর্ভুক্তির গল্পটি বেশ রোমাঞ্চকর। ২০০৪ সালে এস্পানিওলের বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচে তিনি বাল্য খেলার জগৎ থেকে পেশাদার ফুটবলে প্রবেশ করেন। সেই থেকে মেসি বার্সেলোনায় একটি অমূল্য সম্পদে পরিণত হন।
আগামী বছরগুলোতে মেসি নিজের মেধা, কঠোর পরিশ্রম এবং অসাধারণ প্রদর্শনীর মাধ্যমে বার্সেলোনার হয়ে শীর্ষস্থানীয় গোল স্কোরারে পরিণত হন, যেখানে তিনি মোট ৬৭২ টি গোল করেন এবং ৭৭৮ ম্যাচে খেলেন।
মেসির বানানো এই অনন্য ক্যারিয়ার রেকর্ড এবং অর্জন মিলে তাকে শুধু বার্সেলোনায় নয়, পুরো ফুটবল বিশ্বের একটি অমূল্য রত্নে পরিণত করেছে।
মেসির পেশাদার ক্যারিয়ার
লিওনেল মেসির পেশাদার ক্যারিয়ার ফুটবল বিশ্বের অন্যতম স্মরণীয় একটি গল্প।
বার্সেলোনায় সাফল্য
এফসি বার্সেলোনায় মেসির সাফল্য অবিশ্বাস্য। তিনি বার্সেলোনার হয়ে 35টি শিরোপা জিতেছেন, যার মধ্যে আছে 10টি লা লিগা শিরোপা, 4টি ইউইএফএ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, এবং 7টি কোপা দেল রে শিরোপা। মেসি বার্সেলোনায় 778 ম্যাচে 672 গোল এবং 303 সহযোগিতা করেছেন, যা তাকে বার্সেলোনার ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা বানিয়েছে। মেসির সাফল্য শুধুমাত্র তার গোল স্কোরিংয়ে নয়, তার অসাধারণ প্লেমেকিং দক্ষতায়ও প্রতিফলিত। বার্সেলোনায় তার সময়কালে, তিনি লা লিগায় সর্বাধিক 408 গোল করেছেন এবং এক মৌসুমে সর্বাধিক 50 গোল করার রেকর্ড গড়েছেন।
প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে স্থানান্তর
২০২১ সালে বার্সেলোনা থেকে বিদায়ের পর, লিওনেল মেসি প্যারিস সেন্ট জার্মেইনে যোগ দেন। প্যারিসে তার প্রথম মৌসুমে, মেসি প্রায় 53 ম্যাচ খেলে 23 গোল করেন এবং 29টি সহযোগিতা প্রদান করেন। তিনি লিগ ১ এবং ফরাসি সুপার কাপে সাফল্য অর্জন করেছেন। মেসির প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের সাথে চুক্তি তাকে €110 মিলিয়ন আয়ের সুযোগ দিয়েছে তিন বছরে। প্যারিসে তার সংক্ষিপ্ত সময়ে মেসির সাফল্য ফুটবল প্রেমীদের কাছে আরেকটি চমকপ্রদ অধ্যায় হিসেবে গৃহীত হয়েছে। মেসির সাফল্য যে নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে তা আমাদের দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।
ইন্টার মায়ামিতে নতুন শুরু
প্যারিসের পর, মেসি তার ক্যারিয়ারকে ইন্টার মায়ামিতে নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। ইন্টার মায়ামিতে তার আগমন নতুন শুরু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মেসির নতুন ক্লাবে যোগ দেওয়ার খবরে তার হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তিত্বর প্রতিফলন দেখা যায়। মেসির সাফল্য প্রমাণ করে যে, নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কিভাবে নিজের ক্যারিয়ারকে আরও উজ্জ্বল করা যায়। তার নতুন ক্যারিয়ারে মেসির কী অবদান থাকে, তার ওপর ফুটবল প্রেমীদের নজর থাকবে।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার ও অর্জন
লিওনেল মেসি শুধুমাত্র বার্সেলোনা এবং ইন্টার মায়ামি ক্লাবে সাফল্যের জন্য পরিচিত নয়, তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারও অত্যন্ত গৌরবময়। মেসি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার, আর্জেন্টিনা ফুটবলের ইতিহাসে এক বিশেষ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত। তিনি অসংখ্যবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুলেছেন এবং অর্জন করেছেন নানা সম্মান।
জাতীয় দলে মেসির অবদান
আর্জেন্টিনার জাতীয় দলে মেসির ভূমিকা অবিস্মরণীয়। ২০১৪ ও ২০২২ সালের মেসি বিশ্বকাপ আসরে মেসি সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার অর্জন করেছেন। কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে মেসি ৭ গোল করেন এবং মোট ৩টি অ্যাসিস্ট করেন। মেসি এখন মেসি বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে আছেন, পেলের রেকর্ড ভেঙে ১৩টি গোল করেন।
বিশ্বকাপ ও অন্যান্য টুর্নামেন্ট সাফল্য
মেসি দুইবার গোল্ডেন বল জয় করেছেন, যা বিশ্বকাপ ইতিহাসে একমাত্র রেকর্ড। ২০২১ সালের কোপা আমেরিকায় মেসি গোল্ডেন বুট লাভ করেন। আর্জেন্টিনার হয়ে খেলায় তার অবদান যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা জাতীয় দলের প্রতিটি ম্যাচে স্পষ্ট।আর্জেন্টিনা ফুটবল-এর জন্য মেসি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই আধুনিক ফুটবলের প্রতীক হিসেবেও তিনি পরিচিত।
২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপে মেসির অনন্য পারফরম্যান্স আর্জেন্টিনাকে সেমিফাইনালে পৌঁছে দেয়। মেসির উপস্থিতি সবসময়ই তার দলের আত্মবিশ্বাসের সোপান হিসেবে কাজ করেছে। আন্তঃব্যক্তিগত দক্ষতা এবং গোল স্কোরিং, এই দুইয়ে মিলে মেসি একটি ছায়াময় অধ্যায় তৈরি করেছেন আর্জেন্টিনা ফুটবল-এর ইতিহাসে।
Lionel Messi এর অসাধারণ গোল স্কোরিং
বিশ্ব ফুটবলে লিওনেল মেসির নাম শুনলেই প্রথম আলোচনায় আসে তার অনন্য গোল স্কোরিং রেকর্ড। মেসি গোল স্কোরিং এর পরিসংখ্যান শুধু তার ভক্তদেরই নয়, পুরো ফুটবল বিশ্বের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। ২০১২ সালের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের কথা মনে আছে যখন মেসি এক বছরে ৯১ টি গোল করে একটি অবিশ্বাস্য রেকর্ড স্থাপন করেছিলেন। তার এসব উদাহরণ ফুটবলপ্রেমীদের মনে এখনো অম্লান।
লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা
লা লিগায় গোলদাতা মেসি এক কথায় অবিস্মরণীয়। বার্সেলোনার হয়ে খেলার সময়, তিনি লা লিগায় সর্বোচ্চ ৪৪০ গোল করে একটি নয়া লা লিগা রেকর্ড গড়েছিলেন। এই রেকর্ড ভেঙে তাকে ছাপিয়ে যাওয়া সত্যিই কঠিন। শুধুমাত্র লা লিগা নয়, ইউরোপের যেকোনো লিগের মধ্যে তার এই গোল সংখ্যা এখনো অপ্রতিরোধ্য।
এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল রেকর্ড
এক মৌসুমে মেসি গোল স্কোরিং এর অদ্বিতীয় নজির স্থাপন করেছেন। বার্সেলোনার ২০১১-১২ মৌসুমে, মেসি লা লিগায় করেছেন ৫০ গোল, যা ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোতে এখনো সর্বোচ্চ। শুধু লা লিগায় নয়, সেই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতায় মিলিয়ে মেসির গোল সংখ্যা ছিল ৭৩, যা এখনো একক মৌসুমে সর্বাধিক গোলের একটি স্বকীয় রেকর্ড।
ব্যালন ডি’অর এবং অন্যান্য পুরস্কার
লিওনেল মেসি তার অসাধারণ প্রতিভা এবং ফুটবল দক্ষতার জন্য বহুবার বিশ্ব মাতিয়েছে। ব্যালন ডি’অর এবং অন্যান্য পুরস্কার এর ক্ষেত্রে মেসির অর্জন রীতিমতো কিংবদন্তি হয়ে উঠেছে।
ব্যালন ডি’অর জয়ের ইতিহাস
মেসি ব্যালন ডি’অর জয়ের ইতিহাস অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। তিনি সর্বমোট আটবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন, যা বিশ্ব ফুটবলে একমাত্র রেকর্ড। ২০২৩ সালে সর্বশেষ জয় সহ, এর আগে ২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫, ২০১৯ এবং ২০২১ সালে তিনি এই মহিমান্বিত পুরস্কার অর্জন করেন। এর অতিরিক্ত তিনি ২০০৯, ২০১৯ এবং ২০২২ সালে ফিফা ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার অফ দ্য ইয়ার পুরস্কার জিতেছেন।
ইউরোপীয় সোনালী জুতো
মেসির ইউরোপীয় সোনালী জুতো অর্জনের গল্পও কম নয়। ইউরোপীয় সোনালী জুতো নামক এই পুরস্কার তিনি বহুবার নিজের ঝুলিতে ভরেছেন। এটি তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা এবং গোল স্কোরিং দক্ষতার প্রতিফলন। মেসি যা করেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লা লিগার সর্বোচ্চ গোলদাতা (৪৭৪ গোল), যা তাকে অন্য ফুটবলারদের থেকে অনন্য করে তুলেছে।
মেসির ফুটবল পুরস্কার এর তালিকা এতটাই দীর্ঘ যে তা শেষ করা অসম্ভব। তার দক্ষতা এবং প্রতিভা দিয়ে তিনি বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ফুটবল প্রেমীদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তাঁর অসাধারণ পরিসংখ্যান এবং অর্জনগুলো ফুটবল মাঠে তাঁর অমর অবস্থানের প্রমাণ।
নতুন দল ইন্টার মায়ামি
লিওনেল মেসির নতুন দল ইন্টার মায়ামি এখন ফুটবল বিশ্বে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বহু বছরের সফলতার পর বার্সেলোনা এবং প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের মধ্যে সময় কাটানোর পর, মেসি এখন তার নতুন যাত্রা শুরু করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এই স্থানান্তর নিয়ে মেসির ভক্তরা যেমন উচ্ছসিত, তেমনি পুরো দলও প্রস্তুত তার অসাধারণ স্কিল এবং অভিজ্ঞতা থেকে উপকার নিতে।
মায়ামিতে মেসির আগমন
মেসি মায়ামিতে এসে নতুন রোমাঞ্চকর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। ইন্টার মায়ামি মেসি এর আগমনের সাথে সাথে দলের প্রচেষ্টা আরও বেড়েছে, এবং দেখা যাচ্ছে যে মেসির জন্য সবার মধ্যে একটি সদ্গুণ চাঙ্গা হয়েছে। তাকে স্বাগত জানাতে মায়ামির শত শত ফ্যান ভিড় জমায়, যা পুরো দলকে আরও উদ্দীপ্ত করেছে।
মেসির বর্তমান পারফর্মেন্স
মেসির বর্তমান পারফর্মেন্স ইতিমধ্যেই ইন্টার মায়ামির জন্য উপকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। মাঠে তার উপস্থিতি এবং পেশাদারিত্ব দলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। মেসির নতুন দল তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পুরোদমে চেষ্টা করছে। তার খেলা দেখে বোঝা যায়, মেসি মায়ামিতে নতুন করে প্রমাণ করেছেন কেন তিনি এক কিংবদন্তি ফুটবলার হিসেবে বিশ্বজুড়ে ভক্তদের হৃদয়ে রাজ করে আছেন।
মেসির পরিবার ও ব্যক্তিগত জীবন
লিওনেল মেসির জন্ম ১৯৮৭ সালের ২৪ জুন আর্জেন্টিনার রোসারিও শহরে। মেসির পরিবারে তার বড় দুইভাই রদ্রিগো এবং মাতিয়াস, এবং ছোট বোন মারিয়া সল রয়েছে। মেসির শৈশবের শুরুর দিকে তার পরিবারের সম্পৃক্ততা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা তার পেশাদার ফুটবল ক্যারিয়ারের ভিত্তি গড়ে তোলে।
মেসি পারিবারিক জীবনে বিবাহ করেছেন তার ছোটবেলার প্রণয়িনী আন্তোনেলা রোকুজ্জোকে। ২০১৭ সালে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়, আর বর্তমানে তাদের তিন সন্তান থিয়াগো, মাতিও ও সিরো রয়েছে।
মেসির পারিবারিক জীবন বেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ, যার প্রমাণ মেলে যখন মেসি তাঁর পরিবারকে সময় দেন এবং সন্তানদের সাথে খেলার মুহূর্তগুলো শেয়ার করেন। মেসির ব্যক্তিগত জীবন অত্যন্ত সুসংগঠিত, যেখানে তিনি প্রফেশনাল জীবন এবং পারিবারিক জীবনকে আলাদা রাখেন এবং দুই জীবনই সমভাবে পরিচালনা করেন।
মেসির ব্যক্তিগত জীবন আরও একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, তিনি কখনোই তার পরিবারকে মিডিয়া থেকে আলাদা রাখার ব্যাপারে সচেতন থাকেন। তিনি সর্বদা চেষ্টা করেন যাতে তার সন্তানেরা সাধারণ, সুখী এবং নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারে। মেসির পারিবারিক জীবন তার ব্যক্তিগত জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক যা তাকে মানবিক দিকগুলোতে শক্তিশালী করে তোলে।
বার্সেলোনা থেকে বিদায়
মেসির বার্সেলোনা থেকে বিদায় একটি দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায় ফুটবল ইতিহাসে। ফুটবল বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি, যিনি প্রায় দুই দশক ধরে বার্সেলোনায় খেলে এসেছেন, মঙ্গলবার দল থেকে তার প্রস্থান সম্পর্কে কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রধান কারণগুলির মধ্যে একজন ছিলেন ক্লাব প্রেসিডেন্ট জোসেপ বার্থোমেউ-এর সাথে মেসির মতবিরোধ।
বার্সেলোনার সিদ্ধান্ত ও প্রভাব
বার্সেলোনা সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে মেসির বিদায় নেওয়ার আরও কিছু কারণ ছিল। প্রাক্তন স্পোর্টিং ডিরেক্টর এরিক আবিদালের সাথে মেসির সম্পর্কের তিক্ততা ছিল এর মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও, মেসির ঘনিষ্ঠ বন্ধু লুইস সুয়ারেজকে দল ছাড়তে বলা হয়েছিল, যা মেসির অসন্তোষ আরও বাড়িয়ে তোলে।
মেসির বার্সেলোনা থেকে বিদায় বার্সেলোনা সিদ্ধান্তের একটি প্রত্যক্ষ ফল। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, ইন্টার মিলান এবং পিএসজি-সহ বিভিন্ন দৃঢ় দল মেসিকে দলে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। মেসির বিদায় সমস্ত ফুটবল দুনিয়ায় তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং এটি ফুটবলের ইতিহাসে একটি বিশাল প্রভাব ফেলেছে। এই প্রস্থান থেকে বোঝা যায় কিভাবে সম্পর্ক এবং দলীয় সিদ্ধান্তগুলি একজন খেলোয়াড়ের ভবিষ্যত প্রভাবিত করতে পারে।
মেসির এই বার্সেলোনা থেকে বিদায় ঘটনাটি ফুটবল ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ফুটবল সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ছিল তীক্ষ্ণ এবং তাৎক্ষণিক, মেসির মতো একজন কিংবদন্তি খেলোয়াড়ের যে কোনো সিদ্ধান্তই যথেষ্ট প্রভাব ফেলে। বার্সেলোনার সাথে যারা বেড়ে উঠেছে তারা নিশ্চিতভাবেই মেসির প্রস্থানকে একটি যুগের সমাপ্তি হিসাবে দেখে।
মেসি-রোনালদো প্রতিদ্বন্দ্বিতা
লিওনেল মেসি এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, দুই জনই ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার অনন্য নাম। মেসি বনাম রোনালদো নিয়ে পৃথিবীর নানা প্রান্তে আলোচনা খুবই সাধারণ বিষয়। এই দুই ফুটবল কিংবদন্তি মিলিতভাবে তাদের সিনিয়র কারিয়ারে মোট ৭৬টি গুরুত্বপূর্ণ ট্রফি জিতেছেন (মেসি ৪২ এবং রোনালদো ৩৪)।
দুই কিংবদন্তির মধ্যে তুলনা
মেসি এবং রোনালদো দুজনেই প্রতি মৌসুমে ৫০টিরও বেশি গোল করার একটি অদম্য রেকর্ড বজায় রেখেছেন। এছাড়াও, তারা ৭০০টি বা তার বেশি কেরিয়ার গোল করেছেন ক্লাব এবং দেশের জন্য। যদিও রোনালদো সর্বাধিক কেরিয়ার সরকারি গোলের রেকর্ড ধরে রেখেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই যে উভয় খেলোয়াড়ই ফুটবল কিংবদন্তি হিসাবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মেসি এবং রোনালদোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা আলী বনাম ফ্রেজিয়ার বক্সিং বা ফেডেরার বনাম নাদালের টেনিস প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাথে তুলনা করা যেতে পারে।
ফ্যানদের প্রতিক্রিয়া
মেসি এবং রোনালদো উভয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল ইউইএফএ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল এবং কোপা ডেল রে। ২০২৩ সালে রিয়াদে নির্ধারিত একটি প্রদর্শনী ম্যাচে তারা খেলেছিল, যেখানে মেসির দলের পক্ষে ৪-৫ এর স্কোরলাইন দিয়ে ম্যাচটি শেষ হয়। দুজনে পৃথক পৃথকভাবে ফুটবল দুনিয়ায় যে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছেন, তা তাদের ফ্যানদের মধ্যে উত্তেজনা এবং আবেগ সৃষ্টি করে। যদিও মিডিয়া মাঝে মাঝে তাদের মাঝে শত্রুতা দেখানোর চেষ্টা করে, মেসি নিজে যেকোনো ব্যক্তিগত শত্রুতার কথা অস্বীকার করেছেন, বরং তিনি মিডিয়ার প্রদর্শনকে দায়ী করেছেন।
মেসির সেরা মুহূর্তসমূহ
লিওনেল মেসি তার ফুটবল ক্যারিয়ারে এমন বহু মুহূর্ত তৈরী করেছেন যা সকলের মন মাতিয়েছে। তার অনন্য দক্ষতা ও মনমুগ্ধকর খেলায় তিনি সর্বদা ছিলেন সবার চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। এখানে মেসির সেরা মুহূর্ত, ফুটবল হাইলাইট এবং তার অনন্য পারফর্ম্যান্সগুলো আপনাকে জানাতে চলেছি।
ম্যাচের হাইলাইটস
মেসির ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বিখ্যাত মুহূর্তগুলির মধ্যে একটি হলো ২০১১ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে গোল। বার্সেলোনার হয়ে এই ম্যাচে তার অভিনব পারফর্ম্যান্স সারা বিশ্বকে মুগ্ধ করেছিল। আরও একটি অমলিন মুহূর্ত হল ২০০৭ সালের কোপা দেল রে-তে গেটাফের বিরুদ্ধে তার দুর্দান্ত ড্রিবলিং গোলে। তার ফুটবল হাইলাইট যে কোন ফুটবলপ্রেমীর কাছে একটি সুবর্ণ সংগ্রহ।
অমর মুহূর্তগুলো
মেসির ক্যারিয়ারে এমন অনেক অমর মুহূর্ত রয়েছে যা অসংখ্য ফুটবলপ্রেমীর হৃদয়ে রয়ে যাবে। ২০১২ সালে একটি বছরে সবচেয়ে বেশি গোল করার বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করাটা নিঃসন্দেহে অন্যতম। এ ছাড়াও, আর্জেন্টিনার হয়ে ২০২১ সালের কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে জয় মেসির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। এসব মেসির অ্যাচিভমেন্ট তাকে ফুটবলের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় করে তুলেছে।