পলিসিস্টিক ওভারি থেকে মুক্তির পদ্ধতি?

বিশ্বজুড়ে ১৮ থেকে ৪৪ বছরের মহিলাদের এক বিস্ময়কর শতাংশের পিসিওএসের সমস্যা দেখা গিয়েছে, যা তাদের জীবনযাত্রার মানের উপর গভীর প্রভাব ফেলে। হরমোনের অসামঞ্জস্যতা সাধারণত এই শারীরিক অবস্থার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দেয়, যার ফলে উর্বরতা কমে যাওয়া সহ বিভিন্ন উপসর্গে মহিলারা ভুগতে থাকেন। পলিসিস্টিক ওভারি নিরাময় এবং সঠিক পিসিওডি চিকিৎসা খুঁজে পাওয়া, এবং তা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা মহিলাদের মহিলা স্বাস্থ্য উন্নয়নে অত্যাবশ্যক।

প্রাকৃতিক উপায়ে সমাধান অনুসন্ধানে মহিলারা অধিক সচেতন হচ্ছেন, যদিও জেনেটিক কারণের জন্য পুরোপুরিভাবে এড়ানো সম্ভব না হলেও। আপনি কি জানেন, পিসিওএসে আক্রান্ত প্রায় এক চতুর্থাংশ মহিলাদের মধ্যে উচ্চ আন্ড্রোজেনের মাত্রা থাকে যা বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় পরিণত হতে পারে? এই অবস্থান থেকে বেরোনোর জন্য সম্পূর্ণ এবং ব্যাপক চিকিৎসার পাঠ অত্যন্ত জরুরী।

পলিসিস্টিক ওভারি কি?

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) মহিলাদের একটি হরমোন ব্যতিক্রম যা পলিসিস্টিক ওভারি বিস্তারিত জনিত বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। এই অবস্থাটি বিশেষ করে প্রজনন বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে দেখা যায়, যার ফলে ওভারিতে ছোট ছোট সিস্ট তৈরি হয় এবং এতে পিসিওএস লক্ষণ প্রকাশ পায়।

পলিসিস্টিক ওভারি কীভাবে ঘটে?

PCOS সাধারণত হয় যখন একজন মহিলার শরীরে মহিলাদের হরমোন ব্যতিক্রম ঘটে, যার ফলে অতিরিক্ত পুরুষ হরমোন বা এন্ড্রোজেন উৎপন্ন হয়। এই হরমোনের অসামঞ্জস্যতা ডিম্বস্ফোটনে ব্যাঘাত ঘটায় এবং অনিয়মিত মাসিক চক্রের কারণ হয়।

পলিসিস্টিক ওভারির লক্ষণ

  • অনিয়মিত মাসিক চক্র
  • অধিক মাত্রায় মুখে ও শরীরে চুল গজানো (hirsutism)
  • ওজন বৃদ্ধি
  • ত্বকে ব্রণ দেখা দেওয়া
আরও পড়ুনঃ  ভরা পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল?

উপরোক্ত পিসিওএস লক্ষণ গুলি মুখ্যত যৌবন প্রাপ্তির পর প্রকাশিত হতে থাকে এবং এই লক্ষণগুলির সাথে ওজন বাড়লে আরও প্রকট হয়ে উঠে।

চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা

সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে PCOS অন্যান্য জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা, যেমন টাইপ ২ ডায়াবেটিস, স্থূলতা, অবরোধকারী ঘুমাপন্যাস, হৃদরোগ, মনোবিকার এবং এন্ডোমিট্রিয়াল ক্যান্সারের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই মহিলাদের হরমোন ব্যতিক্রম সচেতনতা এবং প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা গ্রহণ অপরিহার্য।

জীবনশৈলীর পরিবর্তন

পিসিওডি ও পিসিওএস সমস্যায় জীবনশৈলীর পরিবর্তন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাত্র ৫% ওজন হ্রাস পাওয়াই পারে এই অবস্থার উপসর্গ কমাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে। এখানে কিছু স্বাস্থ্যকর জীবনের উপায় তুলে ধরা হলো যা পিসিওএস গাইড অনুযায়ী কার্যকর।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

বিশেষজ্ঞরা বলেন, উচ্চ মাত্রার কার্বোহাইড্রেট খাবার ইনসুলিন এর মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে যা পিসিওডি রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। তাই ফল, সবজি এবং পুরো শস্য জাতীয় খাবারে জোর দেওয়া উচিৎ।

নিয়মিত ব্যায়াম

নিয়মিত শারীরিক কসরত ইনসুলিন প্রতিরোধিতা হ্রাস করতে এবং সুস্থ ওজন বজায় রাখতে সহায়ক। এটি রক্ত সুগার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।

পর্যাপ্ত নিদ্রা

পর্যাপ্ত নিদ্রা হরমোন ব্যবস্থাপনা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য। এটি মানসিক চাপ কমানোর সঙ্গে সঙ্গে সামগ্রিক স্বাস্থ্যকর জীবনে ভূমিকা রাখে।

এই সহজ কিন্তু ফলপ্রসু পিসিওডি জীবনশৈলী পরিবর্তনগুলি অবলম্বন করে আপনি আপনার পিসিওএস এর প্রভাব কার্যকরভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন।

ডায়েট পরিবর্তন

পিসিওএস ডায়েট উন্নতির জন্য ডায়েট পরিবর্তন আবশ্যক। সুস্থ খাদ্যাভ্যাসলো গ্লাইসেমিক ডায়েট এসব ধারণাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। প্রথমে, ধীরে ধীরে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনা উচিত।

সবজির গুরুত্ব

পিসিওএস ডায়েটে বিভিন্ন ধরনের সবজি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি ক্যালোরি কম এবং ফাইবার সমৃদ্ধ, যা ইনসুলিনের স্তর নিয়ন্ত্রণে রাখার সাহায্য করে। ভাজা বা চর্বিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে তাজা সবজি গ্রহণ করা উচিত।

চিনিযুক্ত খাবার এড়ানো

লো গ্লাইসেমিক ডায়েট অনুযায়ী, চিনিযুক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলি ইনসুলিন প্রতিরোধ তৈরি করে এবং পিসিওএসের উপসর্গগুলি বৃদ্ধি করে।

আরও পড়ুনঃ  মাসিক ব্লিডিং দ্রুত বন্ধ করার উপায়

প্রোটিনের সমৃদ্ধ খাদ্য

  • প্রাকৃতিক প্রোটিন সোর্স যেমন চিকেন, মাছ এবং ডাল রাখা উচিত ডায়েটে।
  • এগুলো সহজে হজম হয় এবং পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে।

পাশাপাশি, সুস্থ খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এই ধরনের ডায়েট অনুসরণ করে ক্রমান্বয়ে শারীরিক অবস্থা উন্নত হতে পারে এবং উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

প্রাকৃতিক চিকিৎসা

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম (PCOS) যেমন বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতির দাবী করে, তেমনি অনেকে প্রাকৃতিক উপচার অনুসরণে বিশ্বাসী। এটি শুধুমাত্র দেহের সাথে ইতিবাচকভাবে সংযোগ স্থাপনে সাহায্য করে না, বরং মন ও আত্মার জন্যও উপকারী হতে পারে।

ভেষজ পণ্য

পিসিওডি জন্য ভেষজ চিকিৎসা এগুলি রক্তের শর্করা এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে পারে, যার ফলে হরমোনের ভারসাম্য আনতে সাহায্য করে। মেথি, দারুচিনি‌ ও নানা রকমের বীজ এবং মূল এই ধরনের চিকিৎসায় অন্তর্ভুক্ত।

অ্যাকুপ্রেসার

অ্যাকুপ্রেসার শরীরের নির্দিষ্ট পয়েন্টগুলিতে চাপ প্রয়োগ করে, যা শরীরের স্বাভাবিক শক্তির প্রবাহকে পুনর্ব্যবস্থাপনা করতে পারে এবং হরমোনের বিনিময়কে সহায়তা করতে পারে।

যোগব্যায়াম

যোগ থেরাপি শরীর এবং মনের সংযোগকে বিকশিত করে থাকে, যা উদ্বেগ এবং স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ করে, এই সমস্যাগুলির সাথে জড়িত নারীদের জন্য বিশেষ করে উপযোগী। নিয়মিত যোগ চর্চা অবশ্যই পিসিওডি পরিচালনার একটি মৌলিক অংশ হতে পারে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button