নেটওয়ার্ক মার্কেটিং?

প্রাক্তন সময়ের অভিজ্ঞতা এবং আধুনিক যুগের সংশ্লেষণ তৈরি করেছে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবস্থাকে—একটি বিশেষ বাণিজ্য পদ্ধতি যা ব্যক্তিগত পরিচয় এবং পরিচিতির মাধ্যমে পণ্য বা সেবার প্রসারণের মূল মন্ত্র। এর মধ্যে ডিরেক্ট সেলিং এবং মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং (MLM) যেমন শব্দগুচ্ছ প্রমুখভাবে প্রতিধ্বনিত হয়। এভন, টাপারওয়্যার থেকে শুরু করে এমওয়ে পর্যন্ত বহু প্রতিষ্ঠান এই ধারণাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছে, যা ১৯শ শতাব্দীর থেকে বাজার সম্প্রসারণের একটি অভিনব উপায় হিসেবে কাজ করে আসছে।

ফেডারেল ট্রেড কমিশনের (FTC) তদারকিতে পরিচালিত এই ব্যবস্থা, মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং সম্পর্কিত নানা চুক্তি এবং নিয়ম অনুসারে গড়ে ওঠে। হারবালাইফের মতো প্রতিষ্ঠানও ২০০ মিলিয়ন ডলারের বড় পরিমাণ অর্থ গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করে। এই MLM ব্যবস্থায়, বিক্রেতারা শুধুমাত্র পণ্য বিক্রয় আয়ের ওপর নির্ভর না করে, নিজেদের আয়ের বৃদ্ধির জন্য নতুন বিক্রেতাদের নিয়োগ দানের মাধ্যমে আরো ভালো আর্থিক অবস্থানে উন্নীত হয়। সুতরাং, আমরা দেখতে পাই যে এই উপায়ে, শীর্ষ এবং মধ্যমানের বিক্রেতারা বেশি কমিশনের সুযোগ পায়, যা তাদের উদ্যম এবং উন্নতির প্রতি উদ্বুদ্ধ করে।

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কি?

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং, অন্যান্য মার্কেটিং মডেল থেকে স্বতন্ত্র একটি বিপণন পদ্ধতি যেখানে বিক্রেতারা নিজেরা পণ্য বিক্রি করে এবং নতুন বিক্রেতাদের সংগ্রহ করে বিক্রয় পরিকল্পনা বৃদ্ধি করে।

সংজ্ঞা

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যাখ্যা করা হলো, একটি ব্যবসায়িক কৌশল হিসেবে যেখানে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা নিজের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা বিক্রি করে এবং নতুন সদস্যদের আকর্ষণ করে।

ইতিহাস

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর মার্কেটিং ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে আমরা 1934 সালের ক্যালিফোর্নিয়া ভিটামিন কোম্পানির কথা বলতে পারি, যা পরবর্তীতে Nutrilite নামে পরিচিত হয় এবং তা Amway সাফল্যে পরিণত হয়।

আরও পড়ুনঃ  মার্কেটিং কাকে বলে?

মূল উদ্দেশ্য

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দক্ষ ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে সরাসরি পণ্য পৌঁছে দেওয়া। ব্যবসায়ীরা কম বিনিয়োগ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেন এবং দীর্ঘমেয়াদে আয়ের সুযোগ তৈরি করতে পারেন।

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কাজ করে কিভাবে?

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং, যা মাল্টি-লেভেল মার্কেটিং (MLM) নামেও পরিচিত, এক ধরনের সরাসরি বিক্রয় কাঠামো যেখানে সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করে ব্যক্তিগত নেটওয়ার্কের উপর। এর কাঠামো, প্রক্রিয়া এবং আয় উৎস তিনটি প্রধান অংশ নিয়ে গঠিত।

কাঠামো

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর বিক্রয় কাঠামো হয় বহুস্তরীয়, যেখানে প্রতিটি স্তরে বিক্রেতারা থাকেন। নতুন বিক্রেতাদের যোগ দেওয়া হলে, তারা যে বিক্রয় করে, তার একটি অংশ তার উপরের স্তরের বিক্রেতাকে যায়, এভাবে একটি পিরামিড কাঠামো তৈরি হয়।

প্রক্রিয়া

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর বিক্রয় প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করে পণ্য পরিবেশনা, ক্রেতাসেবা, নতুন সদস্য যোগ করা এবং তাদের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান। এই প্রক্রিয়া মাধ্যমে, বিক্রেতারা তাদের বিক্রয় এবং নেটওয়ার্কের বিস্তার দ্বারা কমিশন অর্জন করে।

আয়ের উৎস

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং মডেলে, আয় উৎস হল ব্যক্তিগত বিক্রয় থেকে প্রাপ্ত কমিশন এবং অধীনস্থদের বিক্রয় থেকে অর্জিত কমিশন। একজন বিক্রেতা যত বেশি বিক্রয় এবং নেটওয়ার্ক গঠন করতে পারবেন, তত বেশি কমিশন অর্জনের সুযোগ পাবেন।

এই ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে সফল হতে গেলে উচ্চ মানের পণ্য, কার্যকর নেটওয়ার্ক বিল্ডিং এবং সঠিক মানসিকতা অত্যন্ত জরুরী। এই মাধ্যমে অনেকেই তাদের ক্যারিয়ারে সফলতা অর্জন করেছেন, যা এই সেক্টরের ব্যপ্তি এবং গুরুত্ব দুইই বাড়িয়ে তুলেছে।

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর সুবিধা

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং মাধ্যমে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে অভিনব ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিভিন্ন সুবিধা উপলব্ধি করা সম্ভব। প্রথমত, এটি ব্যবসায়ীদের কর্মস্বাধীনতা প্রদান করে এবং দ্বিতীয়ত, এই ধরনের ব্যবসায়ে কম বিনিয়োগে উচ্চ রিটার্ন পাওয়া সম্ভব। তৃতীয়ত, ব্যবসায়ীরা তাদের সময়ের স্বাধীনতা এবং অবস্থানের স্বাধীনতা নির্ধারণ করে নিজেদের মতো করে কাজ করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ  আউটসোর্সিং কি?

স্বায়ত্তশাসিত ব্যবসা

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং মাধ্যমে কর্মস্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব। ব্যবসায়ীদের নিজেদের কর্ম ঘণ্টা, কর্ম কৌশল ও বিক্রয়ের লক্ষ্য নির্ধারণে পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে, যা তাদের কর্মজীবনে উন্নত সম্ভাবনা ও আনন্দ এনে দেয়।

বিনিয়োগের গুরুত্ব

কম বিনিয়োগে ব্যবসা নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের একটি আকর্ষণীয় দিক। প্রায়শই ছোট বিনিয়োগের মাধ্যমে এই ব্যবসায়িক মডেলে যোগ দেওয়া সম্ভব এবং দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগের রিটার্ন অনেক বেশি হতে পারে।

সময় এবং স্থান সম্পর্কে স্বাধীনতা

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সময়ের স্বাধীনতাঅবস্থানের স্বাধীনতা মূখ্য ভূমিকা রাখে। ব্যবসায়ীরা বিশ্বের যেকোন প্রান্তে বসে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারেন, যা বিশেষ করে স্বাধীন পেশাজীবীদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক।

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর চ্যালেঞ্জ

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর চ্যালেঞ্জগুলি বুঝতে গেলে প্রথমে এর খুঁটিনাটি অবস্থান জানা প্রয়োজন। এই খাতের ব্যবসায়িক প্রক্রিয়াতে বাজারের প্রতিযোগিতা, নৈতিক বিতর্ক এবং বাজারের চাহিদা পরিবর্তন অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ।

প্রতিযোগিতা

গ্রাহকদের কাছে ধরা দেওয়ার জন্য প্রতিযোগীদের মধ্যে যে প্রতিনিধি উদ্যোগ নেয়, তা অনেক সময়ে বিভ্রান্তিকর হতে পারে। বাজারের প্রতিযোগিতা প্রচণ্ড হওয়ায়, প্রত্যেককে নিজের স্ট্র্যাটেজি আরও সুগভীরভাবে উন্নত করতে হয়

নৈতিকতা

নৈতিক বিতর্ক সবচেয়ে প্রায়ন্ত সংক্ষেপে বিষয় হলো পন্জি স্কিম এবং অবাস্তব প্রতিশ্রুতি। এই ধরনের দূর্নীতি শিল্পের সম্মান এবং বৈধতা ক্ষুণ্ন করে।

বাজার পরিবর্তন

বাজারের চাহিদা পরিবর্তনের কারণে পণ্যের চাহিদা এবং গ্রাহকের প্রবণতা বিভিন্ন দিকে ঝুঁকে। এর ফলে, বিক্রয় কমিশন এবং সার্থকতা সহজেই প্রভাবিত হতে পারে।

সফল নেটওয়ার্ক মার্কেটারদের গুণাবলী

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং শিল্পে সফলতা অর্জন করার জন্য কিছু মৌলিক গুণাবলী অপরিহার্য। এই পেশায় অগ্রগতি লাভ করতে গেলে দৃঢ় যোগাযোগের শৈলী, অসামান্য নেতৃত্বের গুণ এবং চমৎকার টিম ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা থাকা চাই।

যোগাযোগ দক্ষতা

একজন নেটওয়ার্ক মার্কেটার হিসেবে সফল হতে গেলে প্রথমে দক্ষ যোগাযোগের শৈলী গড়ে তোলা জরুরি। ভালো যোগাযোগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্রাহকদের সাথে সংযোগ স্থাপন, তাদের প্রয়োজন বুঝতে পারা এবং তার উপর ভিত্তি করে পণ্য বা সেবা প্রদান করা সম্ভব হয়।

আরও পড়ুনঃ  বিক্রয়.কম

স্থায়িত্ব

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও স্থায়িত্ব হলো নেটওয়ার্ক মার্কেটিং অঙ্গনে আরেকটি অত্যাবশ্যকীয় গুণ। সফলতা হঠাৎ করে আসে না, বরং নিরন্তর চেষ্টা ও ধৈর্যের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। শিল্পে প্রবেশের পর প্রথম কয়েক মাস বা বছরে চ্যালেঞ্জ সামলানোর সময় ধৈর্য ধরে কাজ করে যাওয়া জরুরি।

নেতা হওয়ার ক্ষমতা

শেষমেশ, একজন নেতা হিসেবে গুণাবলী বিকশিত করা অপরিহার্য। নেতা হিসেবে দলের প্রত্যেককে উৎসাহিত করা, গাইড করা এবং তাদেরকে সফল হতে সাহায্য করা প্রধান কাজ। এছাড়াও, নেতা হিসেবে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান এবং টিম ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে দলের কার্যকারিতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ।

এই গুণাবলীগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করলে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে সফলতা অনেক বেশি নিশ্চিত হতে পারে।

নেটওয়ার্ক মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম গুলি

শতাব্দী প্রাচীন এই শিল্পে, প্রধান নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানি-গুলি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাদের বিপণন কৌশল বাস্তবায়ন করে থাকে। Avon, Amway, Herbalife এবং Mary Kay এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলি ই-কমার্স শাখা এবং সরাসরি বিপণন মডেলের মাধ্যমে অসামান্য বিকাশ এবং সুনাম কুড়িয়েছে।

পপুলার কোম্পানি

বাংলাদেশে, ১৯৯৮ সাল থেকে নেটওয়ার্ক মার্কেটিং শুরু হয়েছে এবং সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে বহু কোম্পানি বেকারত্ব হ্রাস বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম

ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের উদ্ভব এবং বিকাশের ফলে এসেছে স্বচ্ছন্দ্য ও নতুন বিপণনের সুযোগ। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য এবং পরিষেবাগুলি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রি করছে, যা গ্রাহকদের জন্য সহজ এবং বিশ্বজুড়ে অ্যাক্সেসেবল করে তোলে।

সামাজিক মিডিয়া

সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং নেটওয়ার্ক মার্কেটিংয়ের এক অন্যতম মজবুত প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে, যা পণ্য এবং পরিসেবার ব্র্যান্ডিং এবং গ্রাহক সংযোগকে আরো নিবিড় এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে আসছে। বিশেষত ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, এবং লিঙ্কডইনের মতো প্ল্যাটফর্মগুলি এতে বিশেষভাবে অবদান রাখছে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button