পিৎজা
পিৎজা এমন একটি খাবার যা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এর সুস্বাদু স্বাদ এবং বিভিন্ন ধরনের টপিংয়ের সম্ভার এটিকে যে কোনো খাদ্যরসিকের প্রিয় খাবারে পরিণত করেছে। ইতালির নাপলী হতে উৎপত্তি হয়ে আজ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে এর হদিস পাওয়া যায়।
পিৎজা তৈরি এবং উপভোগের প্রক্রিয়াটি এতই জনপ্রিয় যে মাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার ত্রিশ শতাংশ লোক প্রতিদিন পিৎজা খায়। পিৎজা রেস্টুরেন্টগুলো যেমন পিৎজা হাট, ডোমিনো’স পিৎজা, হান্ট ব্রাদার্স পিৎজা এবং পাপা জন্স দেশজুড়ে সহজে উপভোগ করার সুযোগ করে দিয়েছে। এই অসাধারণ ডিশটির পিৎজা ইতিহাস এবং এর পরম্পরা জানলে আপনার মনেও পিৎজার প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাবে।
পিৎজার ইতিহাস
পিৎজার সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে কারণ এর প্রাচীন উৎস এবং বিবর্তনের ওপর উপকূলের কাহিনি তুলে ধরে।
প্রাচীন উত্স
প্রাচীন পিৎজা ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, পিৎজার উৎস খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে পর্যন্ত যায়। এই সময়কালীন গ্রিক এবং রোমান সভ্যতার ফ্ল্যাটব্রেড ভিত্তিক খাবার হিসাবে পিৎজার ভিত্তি তৈরি হয়। প্রথম পিৎজা সম্পর্কিত উল্লেখ পাওয়া যায় দক্ষিণ ইতালির ৯৯৭ খ্রিস্টাব্দের এক দলিলে, যেখানে এটি “পিজা” নামে পরিচিত ছিল। রাফায়েল এসপোসিতো নামে এক বেকারের গুরুত্বপূর্ণ অবদানও পিৎজার ইতিহাসে সম্মানিত।
নেপোলিটান পিৎজার উত্পত্তি
নেপোলিটান পিৎজা, যা আধুনিক পিৎজার রূপ, তার জন্মস্থান হলো নাপলস। নেপোলিটান পিৎজার উত্পত্তি ১৮ এবং ১৯ শতকের নাপলসে শুরু হয়েছিল, যেখানে এটি দৈনিক খাদ্যের অংশ হয়ে ওঠে। পিৎজার ওপর টমেটো এবং অন্যান্য টপিংস ব্যবহার এর জনপ্রিয়তায় নতুন মাত্রা যোগ করে।
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা
আজ, পিৎজা জনপ্রিয়তা সব মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। নেপোলিটান পিৎজা থেকে শুরু করে প্রতিটি অঞ্চলে বিভিন্ন ধরণের পিৎজা প্রবর্তিত হয়েছে। পিৎজা প্রেমিকরা প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি ৯ তারিখে বিশ্ব পিৎজা দিবস উদযাপন করে। অধিকন্তু, একটি সমীক্ষা অনুসারে ৯৩% আমেরিকান মাসে একবার হলেও পিৎজা খান। অন্যদিকে, স্কটল্যান্ডে “ডিপ-ফ্রায়েড” পিৎজা বিখ্যাত, যেখানে পুরো পিৎজা তেলে ভাজা হয়।
নেপলসের নেপোলিটান পিৎজা
নেপোলিটান পিৎজার প্রসিদ্ধি তার সরল উপাদান এবং উচ্চমানের প্রস্তুতি পদ্ধতির কারণে।
রান্নার বৈশিষ্ট্য
নেপলসে পিৎজা প্রস্তুতির ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা একটি আচার যা যত্ন এবং আবেগের সাথে প্রয়োজন। নেপোলিটান পিৎজা এর জন্য পাতলা, নরম ভিত্তি এবং উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা প্রয়োজন।
- এটি উনুনে খুব কম সময় পাকানো হয়।
- পদটি প্রায়ই ময়দা, টমেটো, জলপাই তেল, তাজা বাসিল এবং মোজারেলা দিয়ে তৈরি।
প্রসিদ্ধ রেসিপিগুলি
নেপোলিটান পিৎজার মধ্যে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ রেসিপিগুলি হল মার্গারিতা এবং মেরিনারা।
- মার্গারিতা: ১৮৮৯ সালে উদ্ভাবিত এই পিৎজা, যার প্রধান উপাদান হল টমেটো সস, মোজারেলা, এবং বাসিল।
- মেরিনারা: এটি সাধারণত টমেটো সস, রসুন, এবং অরিগানো দিয়ে প্রস্তুত।
এই পিৎজা রান্না সহযোগে, জনপ্রিয় ইতালিয়ান পিৎজা এতই বিখ্যাত যে ২০১৭ সালে ইউনেস্কো এটি একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
একটি অতুলনীয় নেপোলিটান পিৎজা তৈরির জন্য, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শেফদের দক্ষতা প্রয়োজন যাতে তারা সঠিক তাপমাত্রায় এবং সুনির্দিষ্ট কারুকাজে পিৎজা প্রস্তুত করতে পারে।
বিভিন্ন প্রকারের পিৎজা
পিৎজার বিভিন্ন প্রকার আছে যা উপাদান এবং টপিংসের মিশ্রণে ভিন্ন। প্রতিটি প্রকারের নিজস্ব স্বাদ এবং বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা মানুষকে আকৃষ্ট করে। এখানে তিনটি জনপ্রিয় পিৎজা প্রকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
মার্গারিটা
মার্গারিটা পিৎজা এর সাধারণত টমেটো, মোজারেলা চিজ, এবং তুলসী পাতা দিয়ে তৈরি হয়। এটি তার সরলতা এবং তাজা স্বাদের জন্য জনপ্রিয়। এই পিৎজায় টমেটো সস এবং মোজারেলা চিজের মিশ্রণ একটি অবিস্মরণীয় স্বাদ তৈরি করে, যা সত্যিই এক কল্পনার আনন্দ দেয়।
পেপেরোনি
পেপেরোনি পিৎজাতে ব্যবহার হয় স্পাইসি বিফ সসেজ। এটি প্রায়শই মেজাজকে উত্তেজিত করে এবং ঠান্ডা পানীয়ের সাথে চমৎকার সাক্ষাৎ প্রদান করে। এই পিৎজার মশলাদার ও সাহসী স্বাদ বলেই এটি বহুল প্রচলিত।
বারবিকিউ চিকেন
বারবিকিউ চিকেন পিৎজা চিকেন, বারবিকিউ সস, এবং বিভিন্ন মসলাযুক্ত সবজি দিয়ে তৈরি। এর উল্লেখযোগ্য উপাদানগুলি হলো চিকেন বা বিফের কিমা, ২ কাপ পেঁয়াজ, ২ কাপ টমেটো সস, এবং আধা চা চামচ রসুন পেস্ট। সাধারণত ৬-৭ টা কাঁচা মরিচের প্রয়োজন হয় এই পিৎজাতে। এই পিৎজায় বারবিকিউ সস এবং মসলাযুক্ত সবজি মিলে একটি বিশেষ ধরণের স্বাদ তৈরি করে যা সত্যিই মুখরোচক।
- ২ কাপ কাটা চিকেন বা বিফ
- পেঁয়াজ: ২ কাপ
- টমেটো সস: ২ কাপ
- আধা চা চামচ রসুন পেস্ট
- আধা চা চামচ আদা পেস্ট
- ১ টেবিল চামচ কনডেন্সড দুধ
- আধা চা চামচ গোলমরিচের গুঁড়া
- অপ্রয়োজনীয় তেল ও লবণ
- মোজারেলা চিজ
- কাঁচা মরিচ: প্রায় ৬-৭ টা
- ক্রিম চিজ অথবা মেয়োনিজ
- আধা ডিম
- ১ টেবিল চামচ গোলমরিচ পাউডার
- মশলাযুক্ত শুকনা মরিচ বা গোলমরিচ মেপে
- যথাযথ পরিমাণে মাখন
- আধা টেবিল চামচ গরম মসলা পাউডার
- ২ টেবিল চামচ সয়া সস
এগুলি ছাড়া, পিৎজা তৈরি করার জন্য আটা, খামির, ডিম, কনডেন্সড দুধ, এবং সাক্ষাতে লবণের মিশ্রণ থাকা প্রয়োজন। সেই সাথে তেল এবং উষ্ণ পানি দিয়ে মণ্ড প্রস্তুত করতে হবে। এরপর, সসেজ বা মাংসের মিশ্রণ প্রস্তুত করুন এবং শেষে পিৎজা বেইসের উপর সবকিছু সাজিয়ে ওভেনে বেক করুন।
পিৎজা তৈরির সহজ রেসিপি
অনেকের জন্য, ঘরে পিৎজা তৈরি করা একটি আনন্দময় অভিজ্ঞতা। এটি সহজ পিৎজা রেসিপি ব্যবহারে আরোও মজাদার হয়ে ওঠে, যা তাজগন্ধযুক্ত এবং সেরা স্বাদের পিৎজা তৈরি করবে। প্রথমে, আমাদের প্রয়োজন হবে কিছু সাধারণ উপকরন যা প্রতিটি গৃহেই সাধারণত পাওয়া যায়।
উপকরন
- ময়দা: ৩৫০ গ্রাম অর্গানিক ময়দা অথবা ১৫০ গ্রাম ময়দা মিশানো ২০০ গ্রাম গমের ময়দা
- কুসুম গরম পানি (প্রয়োজন অনুযায়ী)
- ইস্ট: ১ চামচ
- লবণ: এক চিমটি
- সাদা তেল: ১৫০ গ্রাম
- মাকা ময়দা: ১ টেবিল চামচ
- চিনি: ১ চা চামচ
প্রস্তুত করার পদ্ধতি
প্রথমে ময়দা, ইস্ট, লবণ, চিনি এবং পানি মিশিয়ে মাখুন। তারপর এতে সাদা তেল যোগ করে এবং আরও মাখুন। খামিরটি উষ্ণ স্থানে ১৫-২০ মিনিট রাখুন, যাতে এটি ভালোভাবে ওঠে। এরপর খামিরটি ৫ মিনিট পর্যন্ত মাখুন যাতে এটি ইলাস্টিক হয়। খামিরটির আকার দ্বিগুণ হতে প্রায় ১-৪ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি সহজ পিৎজা রেসিপির সময় বাঁচায় এবং স্বাদ বাড়ায়।
বেক করার নির্দেশনা
- পিজার বেইকিং এ, ওভেনকে ২০০-২৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ৫-৭ মিনিট ধরে প্রি-হিট করতে হবে।
- এরপর টপাইংস সহ পিজা ওভেনে রেখে দিতে হবে ২০-২৫ মিনিটের জন্য।
- পিৎজা প্রস্তুত হলে, গরম গরম পরিবেশন করুন।
এই সহজ রেসিপি অনুযায়ী পিৎজা বেকিং করতে পারলে, আপনি ঘরে পিৎজা তৈরি করার মজা উপভোগ করতে পারবেন।
পিৎজা ক্রাস্ট তৈরির কৌশল
পিৎজার মূল আকর্ষণ হলো তার ক্রাস্ট। সঠিক ক্রাস্ট তৈরি করতে জানতে হবে সঠিক পিৎজা ক্রাস্ট রেসিপি। আটা, ইস্ট, তেল এবং পানি দিয়ে তৈরি করা হয় এই ক্রাস্ট।
একটি নিখুঁত ক্রাস্ট তৈরির টিপস হলো গ্রাটের পানি এবং তেলের পরিমাণের উপর নির্ভর করে খাবারের গুণমান নির্ধারণ করা। ক্রাস্ট বেলতে শুরু করার আগে এটিকে ভালভাবে উঠতে দেয়া উচিত। এছাড়াও, পিৎজা বেজ তৈরির পর এটি ভাল করে বেলন দিয়ে গোল আকারে বিছিয়ে নিতে হয়।
- আটা: ভাল মানের আটা ক্রাস্টের গুণগত মান বাড়ায়।
- ইস্ট: ইস্ট ক্রাস্ট ফোলাতে সাহায্য করে, যার ফলে ক্রাস্ট হয় নরম।
- তেল: তেল ক্রাস্টকে আরও মৌলিক এবং খাস্তা করে।
- পানি: পানি সব উপাদান গুলা মিশাতে সহায়ক হয়।
ক্রাস্ট তৈরির পরে তা কিছুক্ষণ রাখার পর বেলন দিয়ে সেটি ছড়ানো উচিত। এরপর পিৎজা বেজ এর উপর পছন্দের টপিংস যোগ করে বেক করতে হবে। ওভেনে বেক করার সময়, উপরের অংশে ডিমের মিশ্রণ ব্রাশ করে নিন। এটি একটি স্বাদ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং পিৎজা আরও খাস্তা করে তোলে। পিৎজা ক্রাস্ট রেসিপি ঠিক ঠিকভাবে অনুসরণ করলে সুস্বাদু এবং মুচমুচে পিৎজা ক্রাস্ট পাবেন।
তির্যক, অ্যালুমিনিয়াম মাদুলি এবং আরামদায়ক কাস্ট আয়রন পিজা বেকিং মাদুলি প্রায়ই ব্যবহৃত হয় নিউ ইয়র্ক স্টাইলের পাতলা ক্রাস্ট পিৎজা তৈরির জন্য। এই পিৎজা ক্রাস্ট বেকিং এর জন্য খসখসে ও মুচমুচে হয়। পাইপলাইন সুবিধা থাকতে পারে বেক করার সময়ে বিশেষ করে নিউপোলিটান স্টাইলে পিৎজা তৈরির সময়। ANKO এর উৎসাহ নিয়ে ব্যবস্থাগুলি খাদ্য স্বাস্থ্য বিধিমালা অনুসারে চলে।
টপিং এর বিভিন্নতা
পিৎজা টপিং এর বিভিন্নতা পিৎজাকে আরও সুস্বাদু এবং আকর্ষণীয় করে তোলে। মূলত, পিৎজা টপিং হিসেবে সবজি এবং মাংসের টপিং ব্যবহৃত হয়। নিচে এই টপিংগুলির বিভিন্নতা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
সবজির টপিং
সবজি টপিং পিৎজার স্বাদ এবং পুষ্টিগুণের মান বৃদ্ধি করে। সাধারণত ব্যবহৃত কিছু সবজি টপিং হল:
- শসা – পিৎজাতে শসার ক্রাঞ্চি টেক্সচার একটি নতুন অভিজ্ঞতা দেয়।
- টমেটো – এটি পিৎজাতে তেঁতো এবং রসালো স্বাদ যোগ করে।
- পেয়াজ – পেয়াজের মিষ্টি স্বাদ এবং তীব্রতা পিৎজা টপিং হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়।
- ধনে পাতা – পিৎজাতে তাজা সবুজের স্বাদ যোগ করতে ধনে পাতার ব্যবহার হয়।
মাংসের টপিং
মাংসের টপিংগুলো পিৎজাতে প্রোটিন এবং রিচ ফ্লেভার যোগ করে। বেশ কিছু জনপ্রিয় মাংস টপিং হল:
- চিকেন – চিকেন পিৎজাতে সুস্বাদু এবং সপকল্পস্ত টপিং হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- বিফ – মাংস প্রেমিকদের জন্য বিফ একটি গুরুত্বপূর্ণ পিৎজা টপিং।
- বেকন – বেকনের ক্রিস্পি টেক্সচার এবং সল্টি ফ্লেভার পিৎজাকে অন্য ধরণের স্বাদ দেয়।
উল্লেখ্য, প্রতিটি অঞ্চল এবং পিৎজার দোকানগুলি তাদের নিজস্ব পিৎজা টপিং বৈচিত্র্য এবং সংমিশ্রণ উপস্থাপন করতে সমর্থ, যা পিৎজা প্রেমিকদের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
বিশ্বের পিৎজার দোকান গুলির পরিচিতি
পিৎজা পৃথিবীর সর্বত্র জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ইতালি থেকে শুরু হয়ে, এটি উত্তর আমেরিকা এবং ইউরোপ সহ বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের প্রিয় খাদ্যে পরিণত হয়েছে। এখন আমরা ঘুরে দেখব, কীভাবে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের পিৎজার দোকানগুলি তাদের নিজস্ব বিশেষত্ব ও স্বাদে মানুষকে মুগ্ধ করছে।
ইতালির পিৎজা পার্লার
ইতালির পিৎজা পার্লারগুলি তাদের ঐতিহ্যবাহী রেসিপি এবং শিল্পীসত্তায় ভরা স্টাইলের জন্য অত্যন্ত প্রকৃষ্ট। বিশেষ করে ন্যাপলসে, “পিৎজেরিয়া দা মিশেল” এবং “পিৎজেরিয়া পোর্ট’আলবা” এর মত বিখ্যাত জায়গাগুলি তাদের ন্যাপোলিটান পিৎজার জন্য সুপরিচিত। পিৎজার মূল উপাদানগুলির সঠিক মিশ্রণ এবং পারফেক্ট কুকিং টেকনিক এদের পৌঁছে দিয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিৎজা শপ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিৎজা শপগুলি ভিন্ন ভিন্ন রকমের পিৎজা উপভোগের সুবিধা দেয়, যা তাদের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিরুচির বৈচিত্র তুলে ধরেছে। “পিৎজা হাট,” “ডোমিনো’স পিৎজা,” “হান্ট ব্রাদার্স পিৎজা” এবং “পাপা জন্স”-এর মত বৃহত্তম পিৎজা চেইনগুলি তাদের নিজস্ব বৈচিত্রময় পিৎজার জন্য বিখ্যাত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার ত্রিশ শতাংশ মানুষ প্রতিদিন পিৎজা খায়, যা প্রমাণ করে পিৎজার জনপ্রিয়তা কতটা বিস্তৃত।
ইউরোপের পিৎজা রেস্তরাঁ
ইউরোপের পিৎজা রেস্তরাঁগুলিতে পিৎজা দুপুর ও রাতের খাবারের মূল খাদ্য হিসেবে পরিচিত। ফ্রান্স, জার্মানি এবং স্পেন সহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলিতে, পিৎজার বৈচিত্র এবং সৃষ্টিশীলতা প্রদান করে খাবারের আনন্দ আরও বাড়িয়ে তোলে। অতএব, বিবিধ উপাদান এবং টপিং দিয়ে সজ্জিত পিৎজা খুব সহজে পাওয়া যায়।
ভিন্নধারার পিৎজা এবং সংমিশ্রণ
বিশ্বজুড়ে পিৎজার প্রচলিত ধরনগুলির বাইরে, ভিন্নধারার এবং সংমিশ্রণের পিৎজাগুলি এখন ক্রমবর্ধমান হারে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। স্থানীয় উপাদান এবং সৃজনশীল ধারণার মিশ্রণে তৈরি এই বিশেষ পিৎজাগুলি তাদের স্বাদে এবং ভিন্নতায় আলাদা।
ফিউশন পিৎজা
ফিউশন পিৎজা তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী স্টাইলের সাথে স্থানীয় উপাদানের মিশ্রণে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু পিৎজায় ভারতীয় মশলার ব্যবহার দেখা যায়, যা পিৎজাকে দেয় এক নতুন বেঞ্জামিন অনুভূতি। এই ধরনের পিৎজা খাওয়ার সময় আপনি খুব সহজেই পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের স্বাদ এক পাত্রে উপভোগ করতে পারেন। সাম্প্রতিক একটি স্ট্যাটিসটিক অনুসারে, ফিউশন পিৎজার বিক্রয় গত বছর তুলনায় ২০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
লোকাল স্বাদের পিৎজা
লোকাল স্বাদের পিৎজাগুলি স্থানীয় রুচি এবং উপাদান অনুযায়ী তৈরি হয়, যা গ্রাহকদের বিভিন্ন রুচির মিলনস্থল হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকায় কাস্টমাইজড পিৎজার একটি সাধারণ ধরন হচ্ছে যার উপরে শুটকি মাছ এবং স্থানীয় মসলার ব্যবহার দেখা যায়। স্থানীয় পুষ্টি উপাদানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরী এই পিৎজাগুলি উচ্চ জনপ্রিয়তা অর্জন করছে, যা লোকাল পিৎজার ৩০% বাজার অংশীদারিত্বে প্রমাণিত। অসাধারণ স্বাদের এবং বিভিন্ন ধরণের সংমিশ্রণে এই পিৎজাগুলি খাদ্যপ্রেমিদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতার দুয়ারে নিয়ে এসেছে।
পিৎজা এবং পুষ্টিগুণ
পিৎজা, বিশেষ করে ফাস্ট ফুড হিসেবে যে পিৎজা বেশি প্রচলিত, দেহের পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যের ওপর একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫ সালে শিশুদের মধ্যে ফাস্ট ফুডের সাথে পিৎজা খাওয়ার ফলে তারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ক্যালোরি, স্যাচারেইটেড ফ্যাট এবং সোডিয়াম গ্রহণ করে থাকে। এই অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদানগুলির ফলে স্থূলতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
তবে স্বাস্থ্যকর পিৎজা তৈরি করা সম্ভব যা পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ এবং স্বাস্থ্যকর। পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে পিৎজা সাথে বেশি করে সালাদ খাওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে পিৎজা পুষ্টিতত্ত্বের ক্ষেত্রে একটি সুষম খাবার হিসেবে সম্পূর্ণতা পায়। এর পিছনে লুকানো বৈজ্ঞানিক কারণ হলো, টমেটো গরম করলে তার ক্যারটিনয়েড বাড়ে এবং ফলে এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উত্পাদন বাড়াতে সাহায্য করে।
প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ মানুষ যেভাবে পিৎজা খাওয়া পছন্দ করেন, সেই তুলনায় প্রায় ৮১ শতাংশ শিশু নতুন ধরনের পিৎজা ব্যাপকভাবে সুস্বাদু বলে দাবি করেছেন। স্বাস্থ্যকর পিৎজা তৈরিতে হোল গ্রেইন, তাজা সবজি এবং কম লবণের ব্যবহার করা যেতে পারে। এভাবে প্রস্তুত করা পিৎজা পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের অংশ হতে পারে।