রংপুর রেলওয়ে স্টেশন

রংপুর রেলওয়ে স্টেশন, রংপুর বিভাগের অন্যতম প্রধান একটি পরিবহন কেন্দ্র, এটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ২ জুলাই, ১৮৭৮ সালে। বংশ পরম্পরায় রেলের সঙ্গে যুক্ত থেকে প্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী রেল সুবিধা প্রদানের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। রংপুর স্টেশনে বর্তমানে ৬টি লাইন সহ একটি প্লাটফর্ম, একটি ছোট আইল্যান্ড প্লাটফর্ম, একটি মেইন লাইন, দুইটি লুপ লাইন এবং ৩টি ইয়ার্ড লাইন রয়েছে।

ব্রিটিশ ব্যবসায়ীর নামানুসারে রবাটর্সগঞ্জ হিসাবে পরিচিত এই অঞ্চলে, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন হয় ১৯৪৪ সালে। ১৯০১ সালে কাউনিয়ায় মহিগঞ্জ থানায় নির্মিত তিস্তা রেল সেতু এবং ১৯০৫ সালে এটি বোনারপাড়া থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত হওয়ার মাধম্যে রংপুর রেলওয়ে স্টেশন অঞ্চল ব্যাপৃত হতে থাকে। বর্তমানে এখানে দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস সহ মোট ১১টি ট্রেন সার্ভিস প্রদান করা হয়, যা রংপুরের মানুষের যাত্রা সেবায় অমূল্য ভুমিকা রাখছে।

প্রথম রংপুর রেলওয়ে স্টেশন প্রতিষ্ঠা

রংপুর রেলওয়ে স্টেশন প্রতিষ্ঠা বছর এবং স্থান দিয়ে শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে। ১৮৭৮ সালের ২য় জুলাই প্রথম রংপুর রেলওয়ে স্টেশন উদ্বোধন করা হয়। এর প্রতিষ্ঠা তৈরী হয় ব্যবসা প্রসারের উদ্দেশ্য নিয়ে, যার জন্য ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ কলকাতা থেকে রংপুর পর্যন্ত রেলপথ সম্প্রসারণ করতে শুরু করে।

প্রথম রেলপথ সম্প্রসারণের জন্য, ব্রিটিশরা বোমরা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদীর সংযোগ স্থাপন করেন ১৯০৭-০৮ সালে, যা বাণিজ্যকে আরো বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে করা হয়েছিল। এই নৌপথ রংপুর থেকে ঢাকা ও খুলনার সাথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ সুগম করেছিল।

  • রংপুর-হরগাছ থেকে সুন্দরগঞ্জ নৌপথে ঢাকা-খুলনার সাথে সংযোগ ছিল।
  • রংপুর থেকে কলকাতা এবং আসামের সাথে রেলযোগাযোগ উন্নত করার জন্য, প্রথম দিকে ছোট ও বড় নৌকায় পণ্য পরিবহন করা হত।
আরও পড়ুনঃ  তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন

রংপুর রেলওয়ের এই রেলপথের প্রসারিত পথ পার্বতীপুর থেকে রংপুর-কাউনিয়া-ডুবারি থেকে সান্তাহার-বগুড়া-বনরপাড়া থেকে ফুলছড়ি ঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ১৮৯৩ সালে, রংপুর রেলওয়ে স্টেশন প্রতিষ্ঠার স্থান পাঁচটি রেলওয়ে স্টেশনের একটি হিসেবে এবং প্রতিষ্ঠা বছর এবং স্থান ভিত্তিক রেলপথের এক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে থাকে।

রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের অবস্থান

রংপুর রেলওয়ে স্টেশন রংপুর শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। স্টেশনের অবস্থান বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলপথের সংযোগস্থলগুলোর মধ্যে একটি। রংপুর শহরের কেন্দ্রস্থল নিকটস্থ এলাকায় বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস এবং কামালাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চলাচল করা ট্রেনের মাধ্যমে সহজেই পৌঁছানো যায়।

রংপুর এক্সপ্রেস সপ্তাহে ৬ দিন পরিষেবা দিয়ে থাকে এবং এর চলন গতি সর্বোচ্চ ৮৫ কিলোমিটার/ঘণ্টা। এই রেলপথটি বুড়িমারি-লালমনিরহাট-পার্বতীপুর লাইনের মাধ্যমে রংপুরের পাশাপাশি অন্যান্য গন্তব্যে যোগ্য সংযোগ প্রদান করে।

রংপুর এক্সপ্রেসের ট্রেন ভাড়ার পরিমাণ ২ টাকা থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত হয়। যাত্রাপথে ঢাকা থেকে রংপুর প্রায় ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা সময় লাগে, রোলপথে ছুটে যাওয়া তে প্রায় ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। স্টেশনে প্রবেশের জন্য ২০ বাংলাদেশী টাকা ফি নেওয়া হয় এবং ভ্রমণের পথে বিভিন্ন সুবিধাসহ রাতেপ্রীতি থাকার জন্য বিভিন্ন হোটেল সুবিধা প্রদান করা হয়, যেখানে প্রায় ৩০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়ায় কক্ষগুলি পাওয়া যায়।

রংপুর কেন্দ্রস্থল থেকে রেলযোগাযোগ, বাস এবং মাইক্রোবাসের সহজলভ্যতা স্থлиш্নের স্থানকে কার্যকর ভাবে সংযুক্ত করেছে। অন্যান্য গন্তব্যে ব্যক্তিগত গাড়ির ভাড়া প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা এবং মাইক্রোবাসের ভাড়া প্রতি ৮ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

প্রবেশ মূল্যবান সুবিধাসহ একটি ব্যক্তিগত প্রাসাদ, নৈনিদ্রা এবং ধনভোজন সামগ্রী, গাড়ি ভাড়া এবং রাতের থাকার সুবিধা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। রংপুর রেলওয়ে স্টেশনটি সুরক্ষা ব্যবস্থায় নিয়োজিত কর্মীবর্মীদের মাধ্যমে বিশ্রামের স্থান নিশ্চিত করে থাকে।

রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের ইতিহাস

রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৮৭৮ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে রংপুর জেলা সদরে এই স্টেশনটির সূচনা হয়। সেই সময় থেকেই এটি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  আগারগাঁও

প্রথম ধাপে, ১৮৭৮ সালে রংপুরে রেলপথ চালু হয়। রংপুরের বর্ধিত রেলপথ শহর এবং আশেপাশের গ্রামীণ এলাকার জন্য অবিশ্বাস্য সুবিধা প্রদান করেছিল।

১৯০১ সালে রংপুর জেলা সাঘাটা থানার বোনারপাড়া থেকে মাহিগঞ্জ থানার কাউনিয়া পর্যন্ত রেলপথ চালু করা হয়। এতে রংপুরের মানুষদের জন্য দূর-দূরান্ত ভ্রমণ করা আরও সহজ হয়ে যায়।

১৯৪৪ সালে রংপুর স্টেশনে বড় পরিসরে সংস্কার করা হয়েছিল। এই সংস্কারের ফলে স্টেশনের অবকাঠামো শক্তিশালী হয় এবং ট্রেন সার্ভিস আরও উন্নত হয়।

১৯৪৪ সালের সংস্কারের পর থেকে রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস সহ বিভিন্ন ট্রেন পরিষেবা চালু হয়।

রংপুর রেলওয়ে স্টেশন বর্তমানে প্রথম প্লাটফর্ম, ছোট আইল্যান্ড প্লাটফর্ম এবং ৬টি লাইনের সহ একটি মেইন লাইন ধারণ করে।

রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের বর্তমান স্থাপনা

রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের বর্তমান পরিকাঠামো প্রচুর উন্নতির মধ্য দিয়ে চলেছে। স্টেশনটি ১৮৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, তবে সাম্প্রতিক বিতর্কিত কারিগরি উন্নয়ন এবং প্রতিনিমাণ কাজ ২০২১ সালে শুরু হয়। স্টেশনে বর্তমানে ৩টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যা প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার যাত্রী পরিবহন সুবিধা প্রদান করছে।

প্ল্যাটফর্ম ও রেলপথ উঁচুকরণের কাজ চলছে যাত্রী সুবিধা পরিষ্কার ও উন্নত করার লক্ষ্যে। উত্তরাঞ্চলে রেল যোগাযোগ সুবিধা বাড়াতে ব্রডগেজ লাইন নির্মাণের কাজ চলছে। প্ল্যাটফর্ম গুলো উন্নত করার মাধ্যমে যাত্রীদের ভ্রমণ আরো আরামদায়ক ও দ্রুততর হবে।

তবে রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে মাদকসেবী এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে আসছে, বিশেষ করে রাতে। এই সমস্যাগুলি ঠেকাতে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসন সক্রিয় ভাবে কাজ করছে।

নারী-পুরুষদের জন্য শৌচাগারের সমস্যাটিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দীর্ঘ সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে শৌচাগার ব্যবহার করতে। এ জন্য দ্রুত সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন।

রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রী সেবা

রংপুর রেলওয়ে স্টেশনে যাত্রী সেবার মান বাড়াতে বিভিন্ন আধুনিক সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে স্টেশনে টিকেট বুকিং এবং তথ্য কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে যাত্রীরা সহজেই টিকেট ক্রয় এবং ট্রেনের তথ্য পেতে পারেন। এই কেন্দ্রগুলোতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা যাত্রীদের সহায়তা করে, যা যাতায়াতকে করে তুলেছে সহজ এবং ঝামেলামুক্ত।

আরও পড়ুনঃ  খুলনা রেলওয়ে স্টেশন

প্রতিবন্ধী যাত্রীদের সুবিধার জন্যও রংপুর রেলওয়ে স্টেশন বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। স্টেশনে হুইলচেয়ার এবং বিশেষ প্রবেশপথের সুবিধা রয়েছে যাতে তারা নিরাপদে এবং সুবিধাজনকভাবে স্টেশনে প্রবেশ করতে পারেন। এছাড়াও, স্টেশনে প্রশিক্ষিত স্টাফ দ্বারা তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়।

যাত্রী সেবায় রংপুর রেলওয়ে স্টেশন আরও অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৯ সালে চালু হওয়া কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস এবং ২০১১ সালে চালু হওয়া রংপুর এক্সপ্রেস যাত্রীদের যাতায়াতের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। গত বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে রংপুর থেকে ১৭৯,৬৬১ জন যাত্রী রেলপথ ব্যবহার করেছেন, যা থেকে টিকেট বিক্রির মাধ্যমে ৩৯,৬৭১,৩৯১ টাকা আয় হয়েছে। এটি স্পষ্টতই যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধির এক প্রমাণ।

তবে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ১৪ টি ট্রেনের চলাচল বন্ধ হওয়ায় যাত্রীদের জন্য কিছুটা অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে রংপুর ডিভিশনাল ডেভেলপমেন্ট ফোরাম নতুন ট্রেন চালু এবং বিদ্যমান ট্রেনগুলোর কোচ সংখ্যা বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে, যা যাত্রীদের আরও সুবিধাজনক যাত্রা নিশ্চিত করবে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button