এস আলম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠান হিসেবে এস আলম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ একটি উল্লেখযোগ্য নাম। ১৯৮৫ সালে মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ বছর ধরে শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। চট্টগ্রামে অবস্থিত প্রধান দপ্তরসহ প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন খাত যেমন ব্যাংক, বিদ্যুৎ, খাদ্য ও সম্পর্কিত পণ্য, সিমেন্ট, ইস্পাত প্রভৃতিতে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে।
বর্তমানে এস আলম গ্রুপে ১৮০,০০০ জনের বেশি কর্মী কর্মরত আছে এবং বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ৪০ বিলিয়ন টাকার বেশি (প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। দেশের শিল্প উন্নয়নে এই প্রতিষ্ঠানের অবদান সত্যিই অনস্বীকার্য, যা শুধু আর্থিক লক্ষ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে মানসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।
প্রতিষ্ঠানের প্রথম বছর এবং ইতিহাস
এস আলম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের শুরু এবং প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ নিয়ে আমাদের আলোচনাটি আজকের নিবন্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ ১৯৮৫ সালে টিনের এজেন্ট হিসেবে ব্যবসা শুরু করেন। এরপরে তিনি সাফল্যের ধাপে ধাপে পরিবহন, সিমেন্ট, এবং ইস্পাত সেক্টরে ব্যবসা বিস্তার করেন।
এস আলম গ্রুপের প্রথম বছরগুলোতে তারা মূলত উৎপাদন ও ব্যবসায় কেন্দ্রীভূত ছিল। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন শিল্প এবং উৎপাদন খাতের অন্তর্ভুক্ত হয়ে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত করে।
শুরু থেকে তাদের লক্ষ্য ছিল মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ করা এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে অবদান রাখা।
এস আলম গ্রুপ এবং তার প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ প্রথম বছরগুলিতে অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করেছেন।
তাদের প্রাথমিক উৎপাদনের মধ্যে অন্যতম ছিল টিন, যা তারা সারা দেশে ব্যাপকভাবে সরবরাহ করতেন।
সময়ের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানটি আরও বেশিসংখ্যক খাতে নিজেদের কৌশলগতভাবে বিস্তার করে।
- পরিবহন খাত
- সিমেন্ট উৎপাদন
- ইস্পাত শিল্প
এস আলম গ্রুপের সফলতার মূলে রয়েছে তাদের শুরু থেকে কড়া ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসায়িক দূরদর্শিতা।
প্রতিনিধিত্বকারী মোহাম্মদ সাইফুল আলম মাসুদ প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছেন, যিনি একাধারে একজন উদ্ভাবনী ব্যবসায়ী এবং দক্ষ নেতৃস্থানীয় ছিলেন।
এস আলম গ্রুপের কাহিনী আমাদেরকে দেখায় কিভাবে কঠোর পরিশ্রম এবং সঠিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে শুরু এবং প্রতিষ্ঠাতা নিজেদের স্বপ্নকে সফলতায় রূপান্তরিত করতে পারেন।
এস আলম গ্রুপের ব্যবসায়ের ধরন
এস আলম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপরিচিত। সর্বপ্রথম খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি তার কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে, এই গ্রুপটি বিভিন্ন শিল্প ও উৎপাদন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এস আলম গ্রুপের প্রধান ব্যবসায়িক খাতগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত:
- খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ: এখানে অত্যাধুনিক খাত রয়েছে যা ভোজ্য তেল, ইউএইচটি দুধ, এবং অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্যের উত্পাদন করে থাকে।
- কাগজ ও কাগজজাত পণ্য: প্রতিষ্ঠানের কাগজ ও কাগজজাত পণ্যের মান অত্যন্ত উচ্চমানের এবং ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
- চা পাতা: গ্রুপটি চা পাতার উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণে বিশেষ পারদর্শীতা অর্জন করেছে।
এস আলম গ্রুপের অধীনে বর্তমানে ১৭ টি কারখানা রয়েছে, যা Goolini এবং Muskann ব্র্যান্ডের অধীনে পরিচালিত। ২০২২ সালে, প্রতিষ্ঠানটির মোট কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ২,৫০০। প্রতিষ্ঠানটি সর্বপ্রথম খাত হিসেবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ব্যাংকিং ও অন্যান্য উৎপাদন খাতে নিজের অবস্থান দৃঢ় করেছে।
এস আলম গ্রুপ সর্বদা উৎকৃষ্ট মানের পণ্য ও সেবা প্রদান করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। ২০২৩ সালে, নতুন পরিশোধিত চিনি প্রকল্পের জন্য একটি প্রধান প্রকল্পের প্রধান নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। চাকরির জন্য আবেদন গ্রহণ শুরু হয়েছিল ২৯ এপ্রিল এবং শেষ হয় ২৭ মে।
শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং উৎপাদন খাত
বাংলাদেশের উন্নত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এস আলম গ্রুপ উল্লেখযোগ্য। এ গ্রুপের বিভিন্ন খাতের মধ্যে স্টিল, সিমেন্ট, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, এবং পাওয়ার প্লান্টস উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বাড়ানোর লক্ষ্যে এস আলম গ্রুপের উদ্যোগ ও বিনিয়োগ প্রশংসনীয়।
এস আলম গ্রুপের শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহ দেশের উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। এর মধ্যে স্টিল এবং সিমেন্ট শিল্প উৎপাদন খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণেও এ গ্রুপ অগ্রণী, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে অবদান রাখে।
- স্টিল উৎপাদন: এ খাতের মাধ্যমে দেশের অবকাঠামো নির্মাণে মূল্যবান অবদান রাখছে।
- সিমেন্ট শিল্প: দেশের ব্যপক নির্মাণ কাজে সিমেন্টের চাহিদা পূরণ করে থাকেন।
- খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ: দেশের বিভিন্ন খাদ্য পণ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে খাদ্যের মূল্য সংযোজন করেন।
- পাওয়ার প্লান্টস: দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন।
এস আলম গ্রুপের মাধ্যমে উৎপাদন খাতের যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ ঘটছে, তা দেশের অর্থনৈতিক দৃঢ়তায় সহায়ক। শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপের অবদান সর্বত্র প্রশংসিত।
S Alam Group of Industries এর বাণিজ্য ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান
S Alam Group of Industries এর ব্যাপক বাণিজ্য এবং ব্যাংক ও আর্থিক সংস্থা কার্যক্রম দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রেখেছে। এই গ্রুপটি ব্যাংকিং, ঋণ সেবা এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যবসায়ি ও উদ্যোক্তাদের সহায়তা করে আসছে। তারা বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক সংস্থা পরিচালনা করে থাকে, যেমন ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক।
গ্রুপের ঋণ এবং বিনিয়োগ সেবা উন্নয়নের মাধ্যম হয়ে দাঁড়ালো এক বছরের বেশি পুরোনো। S Alam Group এর বহু ব্যাংক ও আর্থিক সংস্থা মালিকানা রাখে। তারা বিভিন্ন আর্থিক সেবা প্রদান করে যাতে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা পেতে ব্যবসায়ি ও উদ্যোক্তারা অনেক সুবিধা নিতে পারেন।
এস আলম গ্রুপের আর্থিক অবদান:
- ১৬ বিলিয়ন টাকা বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে স্থানান্তর করেছে।
- দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের সাথে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন Summit Group, Union Group, United Group, Beximco Group, East-Coast Group, এবং Orion Group জড়িত ছিল।
- প্রধান দেশগুলি যেখানে অর্থ পাচার করা হয়েছিল, যেমন কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ, সৌদি আরব, দুবাই, কাতার, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, রোমানিয়া, এবং সাইপ্রাস।
- এস আলম গ্রুপের অর্থ পাচারের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন আবদুস সামাদ লাবু, আভিভা ফাইন্যান্সের মুস্তাফিজ রহমান, ভূ-সম্পদ পরিচালক নাসির উদ্দিন, নির্বাহী পরিচালক সুব্রত, এবং আভিভা ফাইন্যান্সের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হারুন।
S Alam Group অন্যান্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ঋণ নিয়েছে। তাদের মোট ব্যাংকিং এবং আর্থিক সংস্থা সংখ্যা নয়টির বেশি, যেখানে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন স্তরের চাকরি এবং বাণিজ্যিক সুযোগসুবিধার সঙ্গে এই গ্রুপের যোগসূত্র দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
স্বাধীন ও সঠিক আর্থিক ব্যবস্থাপনা:
- মোট ৫৪৮ বিলিয়ন টাকা অসমর্থিত দাবি করার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছিলেন আখিজ উদ্দিন, যা আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যেই নিষ্পত্তি করা হয়েছিল।
- নাম মারা গেছেন এমন ব্যক্তিদের নামে আনা লোন প্রস্তুতির অভিযোগ রয়েছে, যা সততা ও নৈতিকতার অভাবের দৃষ্টান্তস্থাপন করেছে।
S Alam Group of Industries এর এইসব ব্যাংক ও আর্থিক সংস্থা কার্যক্রম দেশের আর্থিক খাতে দীর্ঘ মেয়াদে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়।
কৃষি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ
এস আলম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ কৃষি উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াকরণ খাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। এই খাতের অধীনে তাদের মোট ৩৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিস্তৃত।
এস আলম গ্রুপ বৈচিত্র্যময় কৃষি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন এবং পণ্যের বিস্তৃতি করে চলেছে। তাদের ভেজিটেবল ওয়েল, সুপার এডিবল অয়েল এবং সয়াসিড এক্সট্র্যাকশন প্লান্টের উত্পাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে, গোষ্ঠীটির মোট ৬৫টি সংস্থা রয়েছে, যার মধ্যে ৪২% খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং ২৩% কৃষি রাসায়নিক এবং পণ্যের উৎপাদনে নিয়োজিত রয়েছে।
খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে এস আলম গ্রুপের স্থায়ী অবদান রয়েছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, তারা হানি বি ফার্মিং, পোলট্রি ফার্মিং এবং ডেইরি ফার্মিং এর মধ্যে সবগুলোতেই প্রতিনিয়ত উন্নতি করে চলেছে। এছাড়াও, প্রতিষ্ঠানটি ৪টি খাদ্য পণ্য উৎপাদন কেন্দ্রে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ এবং ভোক্তা পণ্য বিতরণে কার্যনির্বাহী করে যাচ্ছে।
এস আলম গ্রুপ অপারগ গতিতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে বাজার এবং বিপণন ক্ষেত্রেও সফলতা অর্জন করেছে। তাদের উন্নত প্রযুক্তি এবং আধুনিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াকরণ আরও সহজ ও দ্রুত হয়েছে, যা গ্রাহকদের কাছে উচ্চ মানের পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করেছে। তাদের সমস্ত কর্মসূচী মূলত সাতক্ষীরা অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত, যেখানে একক মালিকানাধীন ২২টি শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদন করে আসছে। এটি স্থানীয় অর্থনীতিতেও উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখছে।