সস
সস হল রান্নায় ব্যবহৃত এক ধরনের তরল বা লেই সংকরণ, যা বিভিন্ন খাবারের সাথে যোগ করা হয় খাবারের স্বাদ, সুগন্ধ এবং চেহারা বাড়াতে। বাংলাদেশে সসের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে, এবং তা শুধুমাত্র গ্রাহকদের রসনাকেও তৃপ্ত করছে। খাবারে সসের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে, কারণ এটি সাধারণ খাবারকেও অতুলনীয় স্বাদ দেয়। ‘Shezan Hot Tomato Sauce’ বাংলাদেশের বাজারে একটি জনপ্রিয় পণ্য, যা তার ঝাঁঝালো টমেটো স্বাদ এবং ঔজ্জ্বল্য পূর্ণ করে তুলেছে।
সসের ইতিহাস প্রচুর পুরনো, এবং কথিত আছে যে “সস” শব্দটি ফরাসি এবং ল্যাটিন শব্দ স্যালসুস থেকে এসেছে যা লবণ যুক্ত বোঝায়। আজকে, আমরা Shezan Hot Tomato Sauce এর মত নানা স্বাদ এবং গুণ সম্পন্ন সস দেখতে পাই। এই সসটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি, যা স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তাদের জন্য একটি দুর্দান্ত পছন্দ। এটি একটি পানীয়, মেরিনেড বা রান্নার উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যায়। বাংলাদেশে সসের ব্যবহারে বিভিন্নতা এবং স্বাদের গুরুত্বের বিবেচনা করতে গেলে এটি একটি অপরিহার্য খাত হিসেবে উঠে আসে।
সস কি?
সস কি তা বোঝার জন্য আমাদের সসের সংজ্ঞা সম্পর্কে জানা দরকার। সস সাধারণত রান্নায় সস হিসেবে ব্যবহৃত হয় যা বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ মিশ্রিত করে তৈরি করা হয়। এই সস খাবারকে মুখরোচক, দৃষ্টিনন্দন এবং সুগন্ধিত করে তোলে।
বিশ্বজুড়ে সস একাধিক নামে পরিচিত এবং এর ব্যবহারও বেশ বিস্তৃত। যেমন ইতালীয় রন্ধনশৈলীতে পাশ্তার সঙ্গে সসের ব্যবহার অত্যন্ত জনপ্রিয়। এছাড়াও রোলস এবং পাউরুটিও সস শোষণ করতে ব্যবহৃত হয়।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে সস প্রস্তুতির সময় স্বাস্থ্যগত সমস্যাও হতে পারে, যেমন অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে সস তৈরি হওয়া। তবুও, রান্নায় সসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারনে তা অধিকাংশ খাদ্য উপকরণ এ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
সসের ইতিহাস
সসের ঐতিহ্য অনেক পুরনো এবং এর ইতিহাস বহু বছর আগে থেকে শুরু হয়েছে। প্রাচীনকালে বিভিন্ন ধরনের সস ব্যবহার হতো, যা খাবারের স্বাদ ও বৈচিত্র্য বাড়াতে সহায়ক ছিল। মধ্যযুগের রান্না ও ঐতিহাসিক সস বর্তমানে আমাদের রান্নার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
মধ্যযুগের সস
মধ্যযুগের সময়কাল ছিল সসের ঐতিহ্যবাহী রান্নার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। মধ্যযুগের রান্নায় বিভিন্ন ধরনের সস ব্যবহৃত হতো। ফরাসী রান্নাতে সস ছিল খুবই অপরিহার্য এবং এটি খাদ্য প্রস্ত্ততির একটি প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচিত হতো। ঐতিহাসিক সসগুলি প্রধানত বেঁচে যাওয়া উপকরণ থেকে প্রস্তুত হতো যেমন:
- হাড়
- জল
- মিরপোয়া (পেঁয়াজ, গাজর, সেলারি)
- বুকে গার্নি (থাইম, বে লিফ, পার্সলে)
এই সময়ে সস প্রস্তুতিতে *Beurre manié*, *Roux*, *Slurry*, এবং *Liaison* প্রকারের উপকরণগুলো প্রচলিত ছিল।
তারপর পশ্চিমা সসের ইতিহাসে বিভিন্ন পরিবর্তন আসে। যেমন:
- বেচামেল সস, যা মাখন, ময়দা, দুধ দিয়ে তৈরি এবং সাধারণত পাস্তা ডিশে ব্যবহৃত হয়।
- ভেলুটে সস, মাখন, ময়দা এবং মুরগী, মাছ বা ভেলুটে স্টক দিয়ে প্রস্তুত হয়।
- এসপানিয়ল সস, যা ব্রাউন স্টক, রোস্টেড হাড় এবং টমেটো পেস্ট দিয়ে প্রস্তুত।
- হল্যান্ডাইস সস, ডিমের কুসুম, মাখন এবং লেবুর রস দিয়ে তৈরি।
এই সসগুলি মধ্যযুগের রান্নার উপকরণ এবং আজও জনপ্রিয়। আধুনিক রান্না বিজ্ঞান এবং মান্ষিকতায় সসের ভূমিকা অপরিসীম এবং বিভিন্ন জনপ্রিয় খাবার প্রস্ত্ততির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিভিন্ন প্রকারের সস
সস বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে এবং এটি খাবरोंকে আরও মজাদার করে তোলে। এই অংশে, আমরা মাতৃসস এবং ছোট সস সম্পর্কে আলোচনা করব।
মাতৃসস
মাতৃসস হলেন আধুনিক সসের পিতা। শেফ অ্যান্থোনিন কেয়ারমি সসকে চার ভাগে ভাগ করেন যার প্রত্যেকেই একটি মাতৃসস।
- বেচামেল সস: মাখন ও ময়দার সংমিশ্রণে তৈরি করা রুয়ের সাথে দুধ মিশিয়ে তৈরি হয়।
- হল্যান্ডাইস সস: ক্রিমি এবং টক স্বাদের, ডিমের কুসুম এবং গলানো মাখনের মিশ্রণে তৈরি।
- ভেলুতে সস: সাপের তৈরি সস যা আলেমনড সস ও নরম্যান্ডি সসের উৎস।
ছোট সস
ছোট সসগুলো সাধারণত মাতৃসস থেকে উদ্ভাবিত হয়ে থাকে। ছোট সস গুলো খাবারের সাথে মিশে বিভিন্ন স্বাদ ও গন্ধ তৈরি করে, যা খাবারকে আরও উপাদেয় করে তোলে।
- টমেটো সস: টমেটো পিউরির সাথে বিভিন্ন মসলা মিশিয়ে তৈরি।
- তামারিন্ড সস: তেঁতুলের মিশ্রণে তৈরি এই সসটি টক-মিষ্টি স্বাদের।
- চিমিচুরি সস: হরিতকীর সাথে মিশিয়ে তৈরি এই সসটি প্রধানত গ্রিল করা মাংসের সাথে ব্যবহার করা হয়।
স্বাস্থ্য উপকারিতা
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সস অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা। সসের উপকারিতা বিশেষ করে টমেটো সসের ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
নিয়মিত টমেটো সস খাওয়া চোখ, চামড়া, হাড় ও দাঁতের গঠনে ভালো কাজ করে। এতে ভিটামিন এ এবং লাইকোপিন উপস্থিত থাকায় এটি ক্যান্সার এবং হৃদরোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া, সসের মধ্যে থাকা পুষ্টি উপাদান যেমন ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, এবং ফাইবার শরীরের সব অংশ সুস্থ রাখতে সহায়ক।
প্রচলিত সসগুলো সাধারণত সোডিয়াম সমৃদ্ধ, যেমন এক চামচ সয় সসে প্রায় ৮৭৮ মিলিগ্রাম সোডিয়াম থাকে, যা সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিনে নির্ধারিত সর্বোচ্চ মাত্রার এক তৃতীয়াংশ। তবে, স্বাস্থ্য বান্ধব সস হিসাবে নারিকেলের অ্যামিনস একটি ভালো বিকল্প হতে পারে, কারণ এটি কম সোডিয়াম সমৃদ্ধ এবং গ্লুটেন ও সয় মুক্ত।
গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, ফারমেন্টেড সস হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং পাকস্থলীর জন্য উপকারী। তবে খেয়াল রাখতে হবে, অতিরিক্ত সসের ব্যবহার নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ওজন বৃদ্ধি এবং অম্লতা বর্ধন। তাই, সবকিছুর পরিমিতি মেনে সসের উপকারিতা পেতে হবে।
বাজারে প্রাপ্ত সস বনাম ঘরোয়া সস
সস খাওয়ার রূপান্তরিত স্বাদানুভূতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যখন বাজারজাত সস এবং ঘরোয়া সস নিয়ে তুলনা করা হয়, প্রত্যেকের নিজস্ব আভিজাত্য এবং সুবিধা রয়েছে।
বাজারে প্রাপ্ত সস
বাজারজাত সস সাধারণত প্রিজারভেটিভ যুক্ত থাকে যা সসকে দীর্ঘদিন তাজা রাখে। অনেক বিখ্যাত ব্র্যান্ড যেমন Heinz, McCormick যাদের সসগুলি জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে। এই সস সাধারণত স্বাস্থ্যকর উপাদানের সাথে প্রস্তুত হলেও, প্রিজারভেটিভের কারণে কিছু স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকতে পারে। বাজারজাত সসে প্রাকৃতিক উপাদানের সমাহার কম থাকে এবং স্বাদের ক্ষেত্রে মান ধ্রুব থাকে।
ঘরোয়া সস
ঘরে তৈরি সস অনেকেই পছন্দ করেন কারণ এটি সম্পূর্ণভাবে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে তৈরি হয়। ঘরোয়া সস সাধারণত প্রিজারভেটিভ মুক্ত থাকে, যা স্বাস্থ্যকর এবং তাজা খাওয়ার অভিজ্ঞতা প্রদান করে। পরিবারের সদস্যদের স্বাদের প্রতি নজর দিয়ে নির্দিষ্ট মশলা এবং উপাদান যোগ করা যায়। বিভিন্ন রেসিপির মাধ্যমে সসের স্বাদকে পরিবর্তন করা সম্ভব।
সুতরাং, স্বাস্থ্য এবং আস্বাদনের মিশ্রণ খুঁজতে হলে, ঘরে তৈরি সস একটি চমৎকার বিকল্প হতে পারে, যেখানে বাজারজাত সস সুবিধার জন্য প্রিয়।