তাজমহল বাংলাদেশ
বাংলাদেশে অবস্থিত তাজমহল, যা আধুনিক স্থাপত্যের একটি অনন্য নিদর্শন, আগ্রার ঐতিহ্যবাহী তাজমহলের এক অনন্য রেপ্লিকা। সোনারগাঁও তাজমহল নামক এই প্রতিরূপটি সোনারগাঁওয়ের পেরাব গ্রামে স্থাপিত। তাজমহল বাংলাদেশ পর্যটন আকর্ষণের জন্য এটি একটি প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে স্বীকৃত।
বেশ কয়েক বছর কঠোর পরিশ্রমের পর এবং প্রায় ৫৮ মিলিয়ন ইউএসডি বিনিয়োগের মাধ্যমে, এই বাংলার তাজমহল নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০০৮ সালে। ১৮ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত সোনারগাঁও তাজমহল বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষদের জন্য তৈরি করা হয়েছে, যারা ভারতে গিয়ে প্রকৃত তাজমহল দেখার সামর্থ্য রাখেন না। শোভন পরিবেশ, আরো কিছু আকর্ষণীয় সুবিধা এবং বিশাল এলাকাজুড়ে এই প্রতিরূপটি পৃথিবীর এক অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।
তাজমহল বাংলাদেশের অবস্থান
তাজমহল বাংলাদেশ দেশের নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। এটি সোনারগাঁ পৌরসভার প্যানেল চেয়ারম্যান আহসানউল্লাহ মনি কর্তৃক উদ্বোধন করা হয় ২০০৮ সালে।
অনেকেই জানতে চান, কোথায় অবস্থিত এই তাজমহল? সোনারগাঁয়ের পিলকিরি গ্রামে, যা ঢাকা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভ্রমণকারীরা ঢাকা থেকে সড়ক পথে খুব সহজেই সোনারগাঁ পৌঁছাতে পারেন।
পর্যটন সংক্রান্ত সকল সুযোগ সুবিধা এখানে মজুদ রয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল প্রায় ১৮ বিঘা জমির ওপর নির্মিত বিশালাকৃতি সৌধটি। এটি নির্মাণ করতে ৫ বছর লেগেছে এবং ব্যবহার করা হয়েছে ১৭২টি কৃত্রিম ডায়মন্ড।
তাজমহলে পৌঁছানোর জন্য, আপনি ঢাকা থেকে সিএনজি, বাস অথবা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। কোথায় অবস্থিত এই স্থাপনাটি জানতে গিয়ে ভয় না পেয়ে নিশ্চিত থাকুন, স্থানীয়রা আপনাকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেবেন। এছাড়াও গুগল ম্যাপের সাহায্যে আপনি সহজেই পঁছানোর রাস্তা খুঁজে নিতে পারেন।
তাজমহল সাপ্তাহিক কোন বন্ধ নেই, সকাল ১০(দশ) ঘটিকা থেকে সন্ধ্যা ০৬(ছয়) ঘটিকা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রতিদিন হাজার হাজার ভ্রমণকারী এখানে ভিড় করেন। টিকেট মূল্য ১৫০ টাকা, যা দিয়ে আপনি অপর একটি স্থাপনা, মিশরের পিরামিড এর ন্যায় তৈরি পিরামিডও দেখতে পারবেন।
তাজমহল বাংলাদেশ নির্মাণের ইতিহাস
তাজমহল বাংলাদেশের নির্মাণের ইতিহাস অত্যন্ত চমৎকার এবং আকর্ষণীয়। নির্মাণকারীর পরিচিতি হিসেবে আমরা জানি যে নির্মাণ প্রকল্পটি ২০০৮ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা আহসানুল্লাহ মনি দ্বারা উদ্বোধন করা হয়। ইতিহাসের এক বিশাল পূর্বাণুসরণে এ প্রকল্প নিঃসন্দেহে এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। এই তাজমহলটি নির্মাণের জন্য প্রায় ৫০ মিলিয়ন টাকা খরচ হয় এবং এটি সম্পূর্ণ করতে ২০ বছর সময় লাগে। এ সময়ের মধ্যে ২২,০০০ শ্রমিক অক্লান্ত পরিশ্রম করেন।
তাজমহল নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সাদা মার্বেল পাথরের পাশাপাশি জেড, ক্রিস্টাল, নীলকান্ত এবং ফিরোজা পাথরের মতো অত্যন্ত মূল্যবান পাথর ব্যবহার করা হয়। নির্মাণকারীর পরিচিতি দিয়ে জানা যায় যে শাহজাহান তাঁর প্রিয় স্ত্রী মমতাজের স্মৃতিতে এই সৌধ নির্মাণ করেন।
তাজমহলের নির্মাণে আরও ১৭২টি হীরার ব্যবহার করা হয় যা আধুনিক প্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত ছিল। চমৎকার স্থাপত্যের এই সৌন্দর্যকে আরও মনোমুগ্ধকর করতে, সমগ্র চাপড়টি মোট চারভাগে বিভক্ত করে প্রতিটি অংশে উঁচু দেয়াল দ্বারা ১৬টি ফুলের বাগান তৈরি করা হয়। এ স্থাপনার মাধ্যমে মনি ও তাঁর স্ত্রী বিশেষ শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন এবং তাঁদের কবর এই তাজমহলের চত্বরে অবস্থান করছে।
আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করায় নির্মাণকারীর পরিচিতি আজ বিশ্বব্যাপী আলোচিত। আহসানুল্লাহ মনির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইউনেস্কো তাজমহল বাংলাদেশকে একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ফলে এই তাজমহল সোনারগাঁ-এর গৌরব এনে দিয়েছে এবং পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল হয়ে উঠেছে।
গঠন ও নকশা
তাজমহল বাংলাদেশের মূল ভবনের গঠন ও নকশা অত্যন্ত চমকপ্রদ এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এটি নির্মাণের জন্য বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন চীন থেকে গ্রানাইট, ভারত থেকে টাইলস এবং ইতালি থেকে মার্বেল। মূল ভবনটির নির্মাণ পয়লা বৈশাখ ১৪২১ সালে শুরু হয়। মোট সাত বছর ধরে চলে এই বিশাল প্রোজেক্টের কাজ।
তাজমহল মূল ভবনে রয়েছে তিনটি তলা, যার প্রতিটি তলায় প্রায় ৫,০০০ মানুষ নামাজ পড়তে পারেন। ভবনের অভ্যন্তরে ধর্মীয় গবেষণা এবং আলোচনার জন্য একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ও সেমিনার হলের পরিকল্পনা রয়েছে।
নকশার ক্ষেত্রে, মূল ভবনে ৩২টি ছোট মিনার রয়েছে যা ১৬টি স্তম্ভে স্থাপন করা হয়েছে, প্রতিটি মিনারের উচ্চতা ৯৭ ফুট। আর মিনার ও বাগানের সাধারণ বিন্যাস এ ভবনের সৌন্দর্যকে আরও বৃদ্ধি করেছে।
মোট ১ বিঘা জমির ওপর নির্মিত এই তাজমহলের নকশা মূলত ভারতীয়, পার্সিয়ান এবং ইসলামী স্থাপত্যের সংমিশ্রণ। তাজমহলের প্রতিটি লোককীর্ণ স্থাপনা সুন্দর কারুকাজ দ্বারা সজ্জিত হয়েছে, যা সবাইকে মোহিত করে।
তাজমহল বাংলাদেশের আলাদা বৈশিষ্ট্যগুলি
তাজমহল বাংলাদেশের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে অন্যতম হল ব্যবহৃত উপকরণ। এই প্রকল্পটি ২০০৩ সালে শুরু হয় এবং ২০০৮ সালে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়। সিনেমা নির্মাতা আহসানুল্লাহ মনি এই প্রকল্পটি ঘোষণা করেছিলেন। প্রায় ৫০ মিলিয়ন টাকা ব্যয়ে এই প্রতিলিপিটি নির্মিত হয়েছে।
মূল তাজমহলের স্থাপত্যশৈলীর একটি সুন্দর অনুকৃতি হলো এই তাজমহল বাংলাদেশ প্রকল্প। এখানে ব্যবহৃত উপকরণগুলির মধ্যে সাদা মার্বেল পাথর এবং অন্যান্য মহামূল্যবান পাথর অন্তর্ভুক্ত। স্থাপত্যের প্রভাবগুলির মধ্যে পারসিয়ান, তুর্কি, ভারতীয় ও ইসলামী শৈলীর মিশ্রণ দেখা যায়।
- প্রতিরূপ তাজমহল তৈরির জন্য মূল তাজমহলের সম্ভাব্য সমস্ত স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করা হয়েছে।
- মূল তাজমহলের মতো বাংলাদেশ তাজমহলের প্রধান গেটেও মার্বেল এবং জ্যামিতিক নকশা ব্যবহার করা হয়েছে।
- বিশেষ করে, এখানে মোজাইক এবং মার্বেল জাল স্ক্রীনের ব্যবহৃত উপকরণগুলি উল্লেখযোগ্য।
- এছাড়াও, প্রধান গোম্বুজের উচ্চতা প্রায় ৩৫ মিটার যে এর আভিজাত্য ও গঠনশৈলী প্রতিফলিত করে।
- বাগানগুলি সম্পূর্ণভাবে সুশোভিত যা মূল তাজমহলের চারবাগ নকশার আদলে তৈরি করা হয়েছে।
তাজমহল বাংলাদেশের অন্যতম আলাদা বৈশিষ্ট্য হল এর নির্মাণ প্রক্রিয়া এবং ব্যবহৃত উপকরণ। মূল তাজমহলের মতোই, এটি ভ্রমণকারীদের জন্য এক বিশাল আকর্ষণ হয়ে উঠেছে এবং এটির নির্মাণের সময়কালীন স্থাপত্য শৈলী ও ব্যয়ের গুরুত্বকে সম্পূর্ণরূপে সম্মান জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রি�
তাজমহল বাংলাদেশের প্রতিলিপি আন্তর্জাতিক মহলে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। $৫৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে নির্মিত এই দর্শনীয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি বহু মানুষকে আকর্ষণ করেছে। এই প্রকল্পে প্রতি ধাপেই বিস্তারিত পরিকল্পনা এবং দক্ষতা প্রয়োগ করা হয়েছে, যা অনেক দর্শকের প্রভাব ফেলেছে।
তাজমহল বাংলাদেশের ছবির রেজুলিউশন অপশনগুলি হল ৭৫০ × ৬০০ পিক্সেলেস, ৩০০ × ২৪০ পিক্সেলেস, ৬০০ × ৪৮০ পিক্সেলেস, ৯৬০ × ৭৬৮ পিক্সেলেস, এবং ১,২৮০ × ১,০২৪ পিক্সেলেস। ছবি এবং ভিজ্যুয়াল ডেটা সবই পাবলিক ডোমেইনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যা এই প্রকল্পকে আরও জনপ্রিয় করেছে।
এই নিদর্শনটি যে হারে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, তা থেকেও বোঝা যায় যে এটি বাংলাদেশের নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে। ঢাকার মাত্র ২০ মাইল দূরের এ স্থাপনাটি সাধারণ মানুষ সহজেই পৌঁছতে পারছেন। যদিও প্রবেশমূল্য একটু বেশি, যা ১০০ টাকা, তবুও স্থানীয়দের আগ্রহ তাতে কোনও প্রভাব পড়ছে না।
আন্তর্জাতিক মহলে, বিশেষ করে ভারত এবং অন্যান্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলির মধ্যে এই প্রতিলিপি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে এই প্রতিলিপি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং বৈশিষ্ট্যগুলি তুলে ধরছে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের শিল্প এবং নির্মাণ ক্ষমতা প্রদর্শন করছে।