তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন ঢাকা জেলার তেজগাঁও থানায় অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন। এই স্টেশনটি ঢাকা রেল স্টেশন এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে-এর একটি প্রধান কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত। এখানে একটি প্লাটফর্ম এবং ডুয়াল গেজ-এর দুটি ট্র্যাক রয়েছে, যা বিভিন্ন রুটের ট্রেনগুলোর জন্য ব্যবহৃত হয়।

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনটি ১৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এবং এটি বানানী থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার ও কমলাপুর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে। যাত্রীদের জন্য এখানে ১৫ আসনের একটি বিশ্রামাগার এবং তিনটি টিকিট কাউন্টার রয়েছে, যার মধ্যে দুটি পুরুষদের জন্য এবং একটি নারীদের এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন যাত্রীদের জন্য বরাদ্দ।

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনটি বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে আসে এবং নারায়ণগঞ্জ-বাহাদুরাবাদ ঘাট লাইনে অবস্থিত। এই রেলস্টেশন বিবরণ অনুযায়ী, স্টেশনটি তেজগাঁও রেল পরিসেবা এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

স্টেশনটির একটি মূল প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যা অনেক যাত্রীদের সেবা প্রদান করে। এখানে তিতাস কমিউটার ট্রেন সহ বিভিন্ন গন্তব্যের জন্য ট্রেন পরিচালনা করা হয়। ট্রেন নং ৩৩-৩৬ ঢাকা–আখাউড়া জংশন পর্যন্ত যাত্রা করে।

ঢাকা–ব্রাহ্মণবাড়িয়া রুটেও তেজগাঁও রেল পরিসেবা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যেখানে ৩৪ ও ৩৫ নং ট্রেন চলাচল করে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা থেকে ভোর ৫টা ১০ মিনিটে ৩৩ ট্রেন চলাচল শুরু করে। দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে ৩৫ ট্রেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌঁছে এবং সন্ধ্যা ৫টা ৪৫ মিনিটে ৩৬ ট্রেন আখাউড়া পৌঁছে।

এছাড়াও, তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের মাধ্যমে আখাউড়া-কুলাউড়া-ছাতক রেলপথ, নরসিংদী-মদনগঞ্জরেলপথ এবং ময়মনসিংহ-গৌরীপুর-ভৈরব রেলপথের যাত্রীরা অনেক সুবিধা পান।

অবস্থান এবং উপাত্ত

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনটি ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় অবস্থিত। এটি যাত্রীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে, যা বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে। নিচে তেজগাঁও লোকেশন এবং দূরত্ব তথ্য প্রসঙ্গে কিছু উপাত্ত আলোচনা করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  হাতিরঝিল

অবস্থান

স্টেশনটি ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় অবস্থিত, এর উচ্চতা ১৪ মিটার। এটি বনানী থেকে প্রায় ৪ কিমি এবং কমলাপুর থেকে প্রায় ৫ কিমি দূরত্বে অবস্থিত। তেজগাঁও লোকেশন সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া গেলে যাত্রীদের জন্য স্টেশনটি খুঁজে পাওয়া সহজ হয়।

উপাত্ত

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে একটিমাত্র প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। যাত্রীদের সেবার জন্য দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগারে ১৫টি আসন রয়েছে। এছাড়া স্টেশনে তিনটি টিকিট কাউন্টার রয়েছে; দুটি পুরুষদের জন্য এবং একটি নারীদের ও বিশেষ চাহিদাযুক্ত যাত্রীদের জন্য।

Tejgaon Railway Station-এর সেবা ও সুবিধাসমূহ

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন তার যাত্রীদের নানাবিধ সুবিধা এবং সেবাবলী প্রদান করে থাকে। এই সুবিধাগুলি যাত্রীদের ভ্রমণে আরামদায়ক ও সহজতর করে তোলে। বিশেষত বিশ্রামাগার এবং টিকিট কাউন্টার সংক্রান্ত সুবিধাগুলি বেশ উল্লেখযোগ্য।

বিশ্রামাগার

স্টেশনে যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য বিষ্রামাগার রয়েছে, যেখানে ১৫টি আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির বিশ্রামাগারে যাত্রীরা নিরাপদ এবং আরামদায়কভাবে অপেক্ষা করতে পারবেন। এই রেলস্টেশন সুবিধা যাত্রীদের ভ্রমণকালীন সময়ে মানসিক স্বস্তি প্রদান করে।

টিকিট কাউন্টার

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে মোট তিনটি টিকিট কাউন্টার রয়েছে, যার মধ্যে দুটি নির্দিষ্টভাবে পুরুষদের জন্য এবং অপরটি মহিলাদের ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন যাত্রীদের জন্য রাখা হয়েছে। টিকিট বুকিং প্রক্রিয়াটি এখানে সহজ এবং সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয় যাতে যাত্রীরা কোনোরকম অসুবিধার সম্মুখীন না হন। টিকিট কাউন্টারে প্রবেশ সুবিধা এবং কার্যকরী কর্মকাণ্ড যাত্রীদের জন্য আরো সুবিধাজনক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের রুট এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিভিন্ন রেল লাইনট্রেন রুট মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সাথে সংযুক্ত। এই স্টেশনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জংশন হিসেবে কাজ করে, যার ফলে যাতায়াতের সুবিধা অনেক বেড়েছে।

লাইন

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন নারায়ণগঞ্জ–বাহাদুরাবাদ ঘাট রেল লাইন ও আরও অন্যান্য রেল লাইনের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। এই রেল লাইনগুলোর মাধ্যমে যাত্রীরা ঢাকার বিভিন্ন স্থান এবং নারায়ণগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় যাতায়াত করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ  কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন

দূরত্ব

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন থেকে নারায়ণগঞ্জ এর দূরত্ব এবং ঢাকার অন্যান্য অংশে যাতায়াতের সময়সূচি উল্লেখযোগ্য। নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা ট্রেন রুটের মাধ্যমে প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী এই স্টেশনের সুবিধা নিচ্ছেন। এছাড়াও, শনি-রবি ও সরকারি ছুটির দিনগুলোতে সময়সূচির পরিবর্তনগুলো যাত্রীদের সুবিধাজনক হিসাবে তৈরি হয়েছে।

ইতিহাস এবং পূর্ব নাম

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন বাংলাদেশের অন্যতম পুরাতন রেলস্টেশনগুলির একটি হিসাবে গর্বিত। এটি প্রাচীন সময়ে ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ের অংশ ছিল এবং সেই সময়ে মূলত কুষ্টিয়া জগতি রেলওয়ে স্টেশন চূড়ান্ত হয়। কুষ্টিয়া থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ার পিছনে ছিল ব্যবসা ও বাণিজ্যের প্রসারের আকাঙ্ক্ষা।

১৮৬২ সালে কুষ্টিয়া জগতি পর্যন্ত ৫৩.১১ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেললাইন শাখার সৃষ্টি হয়, যা ব্রিটিশ শাসনের অধীনে নির্মিত হত। এই রেলস্টেশনের আবির্ভাবের ফলে ব্যবসা ও বাণিজ্যের একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন হল এবং তেজগাঁও একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠল। দৈনন্দিন রেল চলাচল এবং যাত্রীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, যা এই অঞ্চলটির ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায় হয়ে দাঁড়ায়।

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনটি ১৯৬৮ সালের এপ্রিলে নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং এটি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৮৭ সালের ১১ই এপ্রিল উদ্বোধন করা হয়। বর্তমানে এটি দৈনিক ১,১৫,০০০ যাত্রী সেবা প্রদান করে, যার জন্য এটিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলস্টেশন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। স্টেশনটির উচ্চতা ১২ মিটার (৩৯ ফুট), এবং ১১টি প্ল্যাটফর্মসহ এটি বিভিন্ন সেবা ও সুবিধা প্রদান করে থাকে। ভবিষ্যতে, এখানে একটি মাল্টিমোডাল ট্রান্সপোর্ট হাব নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে যা ২০৩০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে।

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন এর অতীত ইতিহাস এবং পূর্ব নামের সঙ্গে বর্তমানের সংযোগ থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। অতীতে এখানকার কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ২৫-২৬ জন, কিন্তু এখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। এই স্টেশন কেবলমাত্র একটি পরিবহন কেন্দ্র নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে বাংলার রেল যোগাযোগের উন্নতির প্রত্যক্ষদর্শী।

আরও পড়ুনঃ  হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনাল স্থপতি কে?

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button