রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো কি কি?

বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অপরিহার্য ভূমিকা রয়েছে। দেশের অর্থনীতির গতিপথ নির্দেশনা স্থির করে এমন বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলোর সংখ্যা হলো মোট ছয়টি, যেগুলো মুখ্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের দায়িত্ব পালন করে। উপরন্তু, দেশে আরো ৪৪টি বেসরকারি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ৩টি বিশেষায়িত ব্যাংক এবং নাগদ সহ একটি ডিজিটাল ব্যাংক এবং ৯টি বিদেশি ব্যাংক অপারেশন চালাচ্ছে। এই সব সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোতে গত বছরের ডিসেম্বরে মোট খেলাপি অর্থের পরিমান ছিল ৭৮ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের তালিকা আলোচনা করা যাক, যেখানে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ১২৩১টি শাখার মাধ্যমে সেবা প্রদান করছে। আর বেসরকারি খাতে পুবালী ব্যাংক লিমিটেড ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ৪৯৮টি শাখার মাধ্যমে ক্রিয়াকলাপ চালাচ্ছে। ইসলামিক ব্যাংকিং ক্ষেত্রে ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এবং ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যথাক্রমে ৩৪৯ এবং ২৪৫টি শাখার মাধ্যমে অপারেশন চালাচ্ছে। এই সব তথ্য আমাদেরকে জানান দেয় যে বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলি কিভাবে জনসাধারণের অর্থনীতি এবং সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংজ্ঞা

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, যা সরকারি ব্যাংকের সংজ্ঞা হিসেবে পরিচিত, একটি ব্যাংক যা মূলত সরকার কর্তৃক পরিচালিত হয়। এদের প্রধান কাজ হচ্ছে মানুষের আর্থিক উন্নতি এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করা।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক কি?

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক হলো এক ধরনের সরকারি প্রতিষ্ঠান যার মূল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের উদ্দেশ্য হলো জনসাধারণের আর্থিক কল্যাণ নিশ্চিত করা। এগুলি বিভিন্ন ঋণ ও সাশ্রয়িক সেবা প্রদান করে থাকে যা ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক উভয় সেক্টরের জন্য উপকারী।

আরও পড়ুনঃ  লাগামহীন নেতৃত্ব কি?

এর প্রয়োজনীয়তা

ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা প্রধানত একটি সুস্থ অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য। এই ব্যাংকগুলো সরকারের আর্থিক নীতি বাস্তবায়নে মূল ভূমিকা পালন করে থাকে, যেমন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বেকারত্ব হ্রাস, এবং রপ্তানি বৃদ্ধি।

ব্যাংকগুলোর উদ্দেশ্য

  • অর্থনীতির টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
  • জনসাধারণের মধ্যে আর্থিক সাক্ষরতা বাড়ানো।
  • ছোট ও মাঝারি উদ্যোগগুলিকে আর্থিক সহায়তা প্রদান।
  • রাষ্ট্রীয় আর্থিক নীতির সংহত বাস্তবায়ন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলোর ভূমিকা এবং তাদের অবদান দেশের অর্থনীতির ক্ষেত্রে অপরিসীম। এই ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস থেকে শুরু করে তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে।

প্রধান ব্যাংক গুলি

  • সোনালী ব্যাংক লিমিটেড
  • জনতা ব্যাংক লিমিটেড
  • আগ্রানী ব্যাংক লিমিটেড
  • রূপালী ব্যাংক লিমিটেড
  • বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক

ইতিহাস এবং প্রতিষ্ঠা

ব্যাংকগুলোর ইতিহাস সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময়। প্রতিষ্ঠাকালের পর থেকেই কৃষি, শিল্প ক্ষেত্র সহ বিভিন্ন সেক্টরে এগুলোর অবদান প্রশংসনীয়। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৭২ সালে এবং ধীরে ধীরে এই ব্যাংকটি ব্যাংকের কার্যক্রমর মধ্যে অন্যতম।

ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম

বাংলাদেশের সরকারি ব্যাংকগুলি দেশের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনে সহায়তা করে। এগুলি সঞ্চয়ী হিসাব, ঋণ প্রদান সহ বিভিন্ন ব্যাংকিং সেবা উপলব্ধ করে। হারের দিক থেকে ভিন্নতা থাকলেও মোটামুটি ০.২৫% থেকে ১২.৫০% পর্যন্ত সুদের হার নির্ধারণ করা হয়।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সুবিধাসমূহ

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সাধারণ মানুষের জন্য আর্থিক সেবা সুলভ করে তোলে, যা বহুমুখী ও গ্রহণযোগ্য। এই ব্যাংকগুলোর প্রদান করা নানান সুবিধা সাহায্য করে অর্থনীতির সুস্থ বৃদ্ধিতে।

সস্তা ঋণ সুবিধা

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সস্তা ঋণ সুবিধার মাধ্যমে ব্যবসা প্রসার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে। জনসাধারণের সুবিধা হিসেবে এটি প্রত্যাশিত মূল্য অনুযায়ী সেবা নিশ্চিত করে।

সরকারী সহায়তা

সরকারি সহায়তা থেকে পাওয়া অর্থায়নের ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিভিন্ন সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্রিয় হয়। এতে করে শিল্প সাহায্যে ও ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

আরও পড়ুনঃ  এস আলম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ

সাধারণ জনগণের জন্য সুবিধা

  • রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সাধারণ জনগণের সুবিধা সামনে রেখে অধিক সুবিধাজনক ও নাগরিক-বান্ধব পরিষেবা প্রদান করে।
  • শিক্ষার ঋণ, গৃহনির্মাণ ঋণ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের জন্য সহজ ঋণ পদ্ধতি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
  • বিনা জামানতে ঋণের সুবিধা, যা অধিকাংশীর জন্য অধিগম্য।

সুতরাং, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলি সাধারণ জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপরিহার্য ভূমিকা রাখছে, এবং তাদের প্রদত্ত সুবিধা দীর্ঘমেয়াদী সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অসুবিধাসমূহ

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা থাকলেও, কিছু অসুবিধা এখানে প্রকট ভাবে বিদ্যমান। এই ব্যাংকগুলির ব্যাংক প্রশাসনের জটিলতা এবং ঋণ প্রদানের বিলম্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

প্রশাসনিক জটিলতা

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের প্রশাসনিক কার্যক্রমে অতিরিক্ত ধাপ ও জটিলতা অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে। এই জটিলতা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীনস্থ অফিসের মধ্যে পরস্পরের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পায়, যা সেবা প্রদানে বিলম্ব ঘটায়। ফলে, বিল ভাউচার সময়মতো না পাওয়া গেলে বেতন ও ভাতা প্রদানে বিলম্ব হয়।

দেরিতে ঋণ প্রদানের সমস্যা

ব্যাংক প্রশাসনের জটিলতা ঋণ প্রদানে বিলম্বের এক বড় কারণ। বিল স্বাক্ষর ও জারি করার বিলম্ব, মানবশক্তির অভাব এবং বিভিন্ন আয়-ব্যয় অফিস থেকে মূল ইও অফিসে মাসিক হিসাব পৌঁছাতে দেরি হওয়া ঋণ প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এছাড়াও, সরকারি কোষাগার থেকে ফান্ড ট্রান্সফারে ভুল কোডিংয়ের জন্য বারবার নিশ্চিতকরণ কাজে দেরি হয়, যা ঋণ ও অগ্রিমের সুদ নির্ধারণে ব্যাপক বিলম্ব ঘটায়।

এই অসুবিধাগুলি সমাধানের জন্য অবশ্যই ব্যাংক প্রশাসনের জটিলতা নিরসন এবং দ্রুত ঋণ প্রদানের পদ্ধতি প্রণয়নে মনোনিবেশ করতে হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক এবং বেসরকারি ব্যাংক

বাংলাদেশের ব্যাংকিং বাজারে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ও কার্যকারিতার পার্থক্য রয়েছে, যা গ্রাহক সেবা থেকে শুরু করে ঋণ প্রদানের মান পর্যন্ত বিবিধ ক্ষেত্রে নজরে আসে।

মূল পার্থক্য

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সাধারণত সরকার মালিকানাধীন থাকে, ফলে এরা সরকারের আর্থ-সামাজিক মূল্যবোধ অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। বেসরকারি ব্যাংক, অপরদিকে, মুনাফার উদ্দেশ্যে চালিত হয়ে থাকে এবং তারা আরও উদ্যোগশীল ও নতুনত্বের পথ অনুসরণ করে নিজেদের ব্যবসায় বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে।

আরও পড়ুনঃ  মুদ্রা কি?

পরিষেবার তুলনা

বেসরকারি ব্যাংক অধিকাংশ সময় পরিষেবার মান এবং গ্রাহক অভিজ্ঞতা উন্নত করার দিকে নজর দেয়, যাতে একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তারা ভালো অবস্থানে থাকতে পারে। অন্যদিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক অধিকাংশ সময় সামগ্রিক জাতীয় উন্নতির দিকে কাজ করে, এবং এমনকি লাভজনক না হলেও কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করা হয়।

ব্যবহারকারীদের মন্তব্য

বাজারের বিবিধ অংশে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের শাখা বিস্তার এবং সেবা নিয়ে গ্রাহকরা ভিন্ন মতামত রাখেন। অনেকে মনে করেন যে বেসরকারি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠানগুলো অধিক উদ্ভাবনী ও গ্রাহক বান্ধব, তবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বড় অনুবাদ ঋণ ও আর্থিক সমর্থনের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button