শিশু অধিকার গুলো কি কি?
প্রতিটি শিশুর জন্য সঠিক বিকাশ ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা দিতে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে বিভিন্ন মৌলিক অধিকার নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৯৮৯ সালের ২০শে নভেম্বরে ১৪০ দেশ দ্বারা স্বাক্ষরিত এই সনদে আঠারো বছরের নিচের যে কোনো ব্যক্তিকে শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, যদি না কোনো দেশে আয়ু প্রাপ্তি অন্যরকম নির্ধারণ করা হয়।
এই শিশু সুরক্ষাজ্ঞাপনে শিশুদের জীবন, মানসিক বিকাশ, সামাজিক উন্নতি এবং সাংস্কৃতিক অধিকারের জন্য বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে এই শিশুর অধিকার সনদে সাক্ষর করেছে এবং তখন থেকে শিশু অধিকারের উন্নতি ঘটাতে সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। শিশুদের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এখনও এক চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, তবে অগ্রগতির লক্ষণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শিশুর অধিকার ও তাৎপর্য
শিশুরা সমাজের ভবিষ্যত এবং তাদের কল্যাণের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। শিশু অধিকারের গুরুত্ব বিবেচনায়, আমরা দেখতে পাই যে, বিশ্বব্যাপী শিশু সুরক্ষা নিশ্চিত করা আমাদের সমাজের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। UNCRC-এর মতো আন্তর্জাতিক চুক্তি এই দায়িত্ব পালনে অবিচ্ছিন্ন পাথ প্রদর্শন করে।
শিশুর অধিকার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
শিশুদের দাবি আদায়ের ক্ষমতা সীমিত হলেও তাদের অধিকার অবহেলিত হতে পারে না। এজন্য, বাবা-মা এবং অভিভাবকদের উচিত শিশু কল্যাণের ব্যাপক দিকগুলি সম্মান ও রক্ষা করা। এসব অধিকারের মধ্যে রয়েছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে স্থান নেওয়া, শোষণ থেকে সুরক্ষা, এবং গুণগত শিক্ষা প্রাপ্তি।
শিশু অধিকার সনদ (UNCRC)
UNCRC হলো একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত চুক্তি যা শিশুদের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ড স্থাপন করে। এই সনদ শিশুদের বিভিন্ন অধিকার যেমন বিপজ্জনক কর্মসংস্থান থেকে সুরক্ষা, বিকাশের অধিকার, অংশগ্রহণের অধিকার এবং পরিচয়ের অধিকারের প্রতি জোর দেয়। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে এই সনদে সম্মতি জানিয়েছে এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে এর বিধান বলবৎ করছে।
শিশুর মৌলিক অধিকার
প্রতিটি শিশুর জীবন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কিত মৌলিক অধিকার নিরাপদ ও সুস্থ বেড়ে ওঠার জন্য অপরিহার্য। এই অধিকারগুলি শিশুদের ব্যক্তিত্ব ও সক্ষমতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জীবন ও সুরক্ষা
শিশু জীবন ও সুরক্ষা মৌলিক অধিকারের অন্তর্গত, যা প্রতিটি শিশুর নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করে। জরুরী সুরক্ষা এবং অবহেলা থেকে রক্ষা এই অধিকার অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশের জাতীয় শিশু নীতিমালা অনুযায়ী, শিশুদের জলবায়ুগত প্রভাব, দুর্ঘটনা এবং অপরাধ থেকে রক্ষা করা হয়।
শিক্ষা অধিকার
মৌলিক অধিকারের অন্যতম হলো শিক্ষা। রাষ্ট্র প্রতিটি শিশুকে বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদানের জন্য বাধ্য হয়েছে এবং এই নীতি বাংলাদেশে জাতীয় শিক্ষা নীতির অংশ বানানো হয়েছে। বানিজ্যিক মানের শিক্ষার প্রসারের জন্যও এই অধিকার গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাস্থ্য অধিকারের গুরুত্ব
স্বাস্থ্য সেবা শিশুদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। উন্নত স্বাস্থ্য সেবা এবং উপযুক্ত পুষ্টি নিশ্চিত করা বাংলাদেশের জাতীয় শিশু নীতিমালা অনুযায়ী মাতৃত্বকালীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও শিশু মৃত্যু হার কমানো এর মূল লক্ষ্য। অনুরূপভাবে, দেশের ইমিউনাইজেশন প্রোগ্রাম সফলভাবে বহু শিশুর জীবন রক্ষা করছে।
শিশুরের মানসিক ও সামাজিক অধিকার
শিশুদের উন্নয়নে মানসিক সুরক্ষা এবং সামাজিক অধিকার যে কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, তা মাঝে মাঝে উপেক্ষা করা হয়। একটি সুস্থ পারিবারিক বন্ধনের মাধ্যমে শিশুরা যখন নিরাপদ অনুভূতি পায়, তখন তাদের সামাজিক ও আবেগিক বিকাশ সুন্দরভাবে ঘটে।
পরিবার ও ঘরবাড়ির নিরাপত্তা
পরিবার ও ঘরবাড়ির নিরাপত্তা শিশুদের জীবনে একটি মৌলিক প্রয়োজন। নিরাপদ পরিবেশে বেড়ে ওঠা শিশুদের মানসিক সুরক্ষা ও সামাজিক অধিকার অর্জনে এগিয়ে থাকে।
বন্ধুত্ব ও সামাজিক সংযোগ
সহপাঠী ও বন্ধুদের সঙ্গে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলা শিশুদের আত্মবিশ্বাস ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধি করে। এতে পারিবারিক বন্ধনও আরও মজবুত হয়।
খেলার অধিকার
খেলাধুলা শিশুদের শারীরিক ও সামাজিক দক্ষতা বৃদ্ধির এক অনন্য মাধ্যম। খেলাধুলার মাধ্যমে শিশুরা দলবদ্ধভাবে কাজ করা, নেতৃত্ব দেওয়া এবং সামাজিক মেলবন্ধন স্থাপনে দক্ষ হয়।
এই তিনটি মৌলিক অধিকার শিশুদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশকে নিরঙ্কুশভাবে প্রভাবিত করে। সামাজিক অধিকার, পারিবারিক বন্ধন, খেলাধুলা এবং মানসিক সুরক্ষার গুরুত্ব বুঝতে হলে এই অধিকারগুলির প্রতি মনোযোগ দেওয়া অপরিহার্য।
শিশুদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ
বাংলাদেশে শিশু অধিকার সমতা নিশ্চিত করা এবং সকল প্রকার বৈষম্য দূরীকরণ একটি জরুরী কর্তব্যে পরিণত হয়েছে। শিশুদের প্রতি লিঙ্গভিত্তিক ও সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের জন্য জাতীয় শিশু নীতি ২০১১ এবং বিভিন্ন আইন ও কর্মসূচির প্রতি জোর দেয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত শিক্ষা, সুস্থ সমাজে বেড়ে ওঠা এবং সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণের পথে এগিয়ে চলা এর প্রধান লক্ষ্য।
লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য
বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে ইউনাইটেড ন্যাশন্স কনভেনশন অন দ্যা রাইটস অফ দ্যা চাইল্ড -এ স্বাক্ষর করেছে, যা বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের প্রতি বৈষম্য এবং সহিংসতা বন্ধের প্রতিশ্রুতি নিয়েছে। লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যমূলক প্রবণতা দূরীকরণের জন্য জরুরী হলো লিঙ্গভিত্তিক নীতির প্রচলন এবং বাস্তবায়ন।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য
মোট জনসংখ্যার ৪৫ শতাংশ হলো ১৮ বছরের নিচের শিশুরা, যাদের জীবনযাত্রা ও ভবিষ্যৎ এখনও সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের ছায়াতলে রয়ে গেছে। এই অবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এবং চাইল্ড রাইটস এডভোকেসি কোয়ালিশন বাংলাদেশের মতো সংস্থাগুলো শিশু অধিকার সমতার জন্য নীতি প্রণয়নে গঠনমূলক পরামর্শ দিচ্ছে এবং শিশুদের প্রতি সহনশীলতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে কাজ করছে।