মুড সুইং কী? মেজাজের পরিবর্তনের ব্যাখ্যা
মেজাজের আচমকা ও বারবার পরিবর্তনকে আমরা ‘মুড সুইং কী’ বলে অভিহিত করে থাকি এবং এটি বেশিরভাগ সময় মানসিক চাপ, হরমোনের পরিবর্তন, পুষ্টির অভাব কিংবা বিভিন্ন মানসিক অবস্থার কারণে ঘটে। ডক্টর লিন্ডা সামাদ্দার এর অনুযায়ী, মুড সুইং বিভিন্ন মানসিক অবস্থা ও রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে, যেমন মেজাজের পরিবর্তন, মন খারাপ এবং মুড ডিজঅর্ডারের মতো অবস্থান। মেয়েরা মাসিকের সময় শরীরে বেশি পরিমাণে আয়রন হারায় যা সঠিকভাবে পূরণ না করা হলে দীর্ঘ মেয়াদের মুড সুইংয়ের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
জীবনযাত্রা, কর্মচাপ, মানসিক স্ট্রেস, খাদ্যাভ্যাস এবং কিশোর বা কিশোরীদের মধ্যে হরমোনাল পরিবর্তন উভয় লিঙ্গের ব্যক্তিদের মুড সুইংয়ের জন্য দায়ী। হরমোনের ওঠানামা মনের স্থিতি বদলাতে পারে এবং এই পরিবর্তন এমনই এক প্রক্রিয়া যা আমাদের অনুভূতি ও আচরণে পরিস্ফুটিত হয়ে থাকে। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মাইন্ডফুলনেস এই সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে মুড সুইং কীভাবে পরিচালিত হয় সে বিষয়ে আমাদের জ্ঞান বাড়ানো এবং এর সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন।
মুড সুইংয়ের সংজ্ঞা
মানসিক স্বাস্থ্যের আলোচনায় মুড সুইং একটি প্রধান ধারা। এটি বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো মানসিক অবস্থার একটি বিশিষ্ট লক্ষণ যা মুড ডিজঅর্ডার হিসেবেও পরিচিত। মুড সুইং হল মানসিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন যা ব্যক্তির ভাবনা ও আচরণে প্রভাব ফেলে।
মুড সুইংয়ের পরিচালনা ও প্রভাব
মনোবিজ্ঞানীরা মুড সুইং পরিচালনায় বিভিন্ন পদ্ধতি প্রস্তাব করে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, সার্বজনীন শিক্ষা এবং পেশাদার চিকিৎসা। হরমোনাল পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার উপাদানগুলি যেমন খাদ্যাভ্যাস এবং মনস্তাব যত্ন নিই, এগুলি মুড সুইং নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ক্ষণস্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি মুড সুইং
মুড সুইং হতে পারে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন বা সপ্তাহের জন্যও। দীর্ঘমেয়াদী মুড সুইং প্রায়শই মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাধির লক্ষণ হিসাবে দেখা দেয়, যেমন মানসিক চাপ এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডার। অত্যধিক রাগ বা হতাশার মুহূর্ত সম্পর্কিত এই সমস্যাগুলি সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
মুডের পরিবর্তনের কারণ
- বিষণ্ণতা এবং অতিরিক্ত রাগ মানসিক স্বাস্থ্যের প্রভাব সৃষ্টি করে।
- হরমোনাল পরিবর্তন, যেমন মেনোপজ বা পিরিয়ডের সময় নারীদের হরমোনাল বিষয়গুলি।
- পরিবেশগত আর্দ্রতা, যেমন কাজের চাপ এবং সামাজিক চাপের কারণে মুডের পরিবর্তন ঘটে
- নিউরোডিজেনারেটিভ ডিজিজ, যেমন পার্কিনসন রোগ, আলঝাইমার রোগ এবং হান্টিংটনের রোগ মুড সুইং সৃষ্টি করতে পারে।
মুড সুইংয়ের কারণসমূহ
মনের মেজাজের আকস্মিক পরিবর্তন কেবল অন্তর্নিহিত বা পরিবেশগত কারণেই ঘটে না, বরং এটি বিভিন্ন মানসিক উত্থান-পতন ও হরমোনাল পরিবর্তনের ফলে ঘটে। এমন কিছু স্থান আছে যেখানে এই পরিবর্তনগুলি প্রকট হয়, যেমন বাইপোলার মেজাজ এবং সাইক্লোথিমিয়া নামক অবস্থাগুলির মধ্যে। এই অধ্যায়ে আমরা কয়েকটি প্রধান কারণ অন্বেষণ করব, যা মুড সুইং ঘটাতে পারে।
হরমোনাল পরিবর্তন
হরমোনাল পরিবর্তন বিশেষ করে নারীদের জীবনে নিয়মিত মুড সুইংয়ের একটি বড় কারণ। মাসিক চক্রের দৌলতে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মাত্রা ওঠানামার কারণে মুড সুইং দেখা দিতে পারে। প্রেগন্যান্সি এবং মেনোপজের সময়েও মুড সুইং প্রকট হতে পারে। এই সময়ের হরমোনাল পরিবর্তনগুলি ব্যক্তিকে মানসিকভাবে অস্থির ও ক্লান্ত করে তোলে।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা
বাইপোলার ডিজঅর্ডার এবং সাইক্লোথিমিয়া মতো মানসিক অবস্থাগুলির মধ্যে মুড সুইং একটি প্রধান লক্ষণ। এই ধরণের অবস্থায় ব্যক্তির মেজাজ তীব্রভাবে হাসি থেকে কান্না, উত্সাহ থেকে অবসাদে পরিবর্তিত হতে পারে। এই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং উত্থান-পতনের পর্যাপ্ত চিকিত্�া প্রয়োজন।
পরিবেশগত প্রভাব
পরিবারিক চাপ, কর্মক্ষেত্রের চাপ এবং সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে সংঘাত অথবা দুঃখজনক ঘটনা মেজাজের প্রভাবে অনেক বার মুড সুইং ঘটাতে পারে। এসব বাহ্যিক প্রভাব প্রায়শই মানসিক স্থিতিশীলতা প্রভাবিত করে এবং মুড সুইংয়ের ঘটনা বাড়াতে পারে।
মুড সুইং কিভাবে কাজ করে?
মেজাজের পরিবর্তন হঠাৎ ঘটে থাকে কিভাবে? এই পরিবর্তনের পিছনে রয়েছে মস্তিষ্কের রসায়ন এবং বিভিন্ন হরমোনাল স্তরের উঠানামা। এক কথায়, মুড ডিজঅর্ডার এবং মানসিক অবস্থার কার্যকালাপ এই বিষয়কে ঘিরে আবর্তিত হয়।
মস্তিষ্কের রসায়ন
মস্তিষ্কের যে প্রক্রিয়ায় নিউরোট্রান্সমিটারগুলি রাসায়নিক সংকেত প্রেরণ করে থাকে, তা আমাদের মুড নির্ধারণ করতে প্রভাব ফেলে। ডোপামিন, সেরোটোনিন, এবং এন্ডোরফিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারগুলি যখন স্বাভাবিকভাবে কাজ করে, আমরা আনন্দিত বা শান্ত অনুভব করি। তবে, এদের মধ্যে কোনো অসমঞ্জস ঘটলে মুড ডিজঅর্ডারের সম্ভাবনা বাড়ে।
অনুভূতির প্রভাব
মানসিক অবস্থার সাথে সাথে ব্যক্তিগত অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়া মুড সুইং ঘটানোর পেছনে একটি বড় ভূমিকা রাখে। স্ট্রেস, দুঃখ, আনন্দ বা বিস্ময় সহ বিভিন্ন অনুভূতি আমাদের হরমোনাল ব্যালেন্সে পরিবর্তন আনে, যা মুড সুইংকে প্রভাবিত করে। এর ফলে মানসিক উদ্বেগ বা আশাবাদ বাড়াবাড়ি দেখা দিতে পারে।
পুরুষ ও নারীদের মধ্যে মুড সুইং
পুরুষ এবং নারী, উভয়েই মুড সুইং অনুভব করে থাকেন, তবে এর কারণ এবং প্রকাশভঙ্গি ভিন্ন হতে পারে। গবেষণা নির্দেশ করে যে, নারীরা পুরুষের তুলনায় মুড সুইংয়ে বেশি প্রবণ হন। শরীরের হরমোনাল পরিবর্তন এবং মানসিক চাপ এই মুড সুইংএর প্রধান কারণসমূহের মধ্যে অন্যতম।
নারীদের হরমোনাল প্রভাব
নারীরা প্রতি মাসে মাসিক চক্রের আগে, চক্রের সময় এবং পরে হরমোনাল পরিবর্তনের শিকার হন, যা মুড সুইং ঘটাতে পারে। এছাড়াও, স্ট্রেস, পুষ্টির অভাব, এবং বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাও মুড সুইংকে প্রভাবিত করতে পারে। নারী মুড সুইং মোকাবিলায় জীবনযাপনের নিয়মিত ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় অনুশীলনের গুরুত্ব রয়েছে।
পুরুষদের মানসিক চাপ
পুরুষ মুড সুইং সম্ভবত হরমোনাল পরিবর্তন, বিশেষ করে টেস্টোস্টেরনের কমে যাওয়া এবং মানসিক চাপ দ্বারা প্রভাবিত হয়। ৩৫-৪০ বছরের মধ্যে পুরুষের শরীরে এই হরমোনের মাত্রা কমতে শুরু করে, যা মেজাজে পরিবর্তন এবং ইরিটেবল মেল সিন্ড্রোম ঘটাতে পারে। নিয়ন্ত্রণে থাকতে, পরিমানে জল পান, সুষম ডায়েট এবং নিয়মিত ব্যায়ামসহ প্রতিদিনের স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গঠন করা জরুরি।