সর্বনাম কাকে বলে?

বাংলা ব্যাকরণের এক অনন্য অনুষঙ্গ হলো সর্বনাম। আমরা যখন সর্বনামের সংজ্ঞা কথা বলি, তখন আমাদের বোঝানো হচ্ছে সেই সকল পদ, যা বাক্যে বিশেষ্য পদের পুনরাবৃত্তি এড়িয়ে চলে এবং সংক্ষিপ্ত ও সৌন্দর্যপূর্ণ বাক্য নির্মাণে সহায়ক। একজন ভাষাবিজ্ঞানীর মতে, সর্বনাম শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা, এটি ভাষার নিয়ম মেনে চলার এক উত্তম নিয়ম।

যেমন বাক্যে, ‘সে’ বা ‘তারা’ মতো শব্দগুলি বিশেষ্যের স্থলাভিষিক্ত হয়ে তার প্রতিনিধিত্ব করে থাকে। এই ধরনের ব্যবহার ভাষাকে অসাধারণ রূপ প্রদান করে, এবং ব্যাকরণের অনুষঙ্গ হিসেবে তা মূল্যবান। আমরা জানি যে, সর্বনাম প্রয়োগ এবং পদার্থ বিন্যাসের সঠিক জ্ঞান ভাষাকে আরও সজীব ও প্রাণবন্ত করে তোলে।

সর্বনামের সংজ্ঞা কী?

বাংলা ভাষায় সর্বনামের পরিচয় গভীরভাবে জড়িত আছে এর ব্যাপক ব্যবহার এবং ভাষাগত ভূমিকা নিয়ে। সর্বনাম হলো সেই পদ, যা বিশেষ্য বা বিশেষ্য বাক্যাংশের স্থলাভিষিক্ত হয়ে বাক্যে কোনো ব্যক্তি, জিনিস, স্থান, বা ধারণাকে নির্দেশ করে। এটি বাক্যগঠন সহজ করে তুলতে সাহায্য করে এবং পুনরাবৃত্তি এড়াতে সক্ষম করে।

সর্বনামের ভূমিকা

বাক্যে সর্বনামের ব্যবহার মূলত ভাষাকে কোমল ও সংক্ষিপ্ত করার লক্ষ্যে করা হয়। এই পদটি বাক্যে মূল বিশেষ্যটিকে বারবার উল্লেখ না করেও যথাযথ তথ্যের প্রদান নিশ্চিত করে। এর ফলে, বাক্যের গঠন আরও অনায়াস ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠে।

ব্যবহারিক উদাহরণ

ধরা যাক, “সুমন বই পড়ছে এবং সুমন খুব বুদ্ধিমান” এই বাক্যটি “সুমন বই পড়ছে এবং সে খুব বুদ্ধিমান” এইভাবে বললে, ‘সে’ শব্দটি সর্বনাম হিসেবে কাজ করে এবং বাক্যটির বাক্যে সর্বনাম প্রয়োগ বাক্যকে সহজ ও সাবলীল করে তোলে। একইভাবে, ‘ইনি’ বা ‘উনি’ শব্দগুলোও সম্মানজনক পরিস্থিতিতে প্রযোগ করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  ট্রান্সক্রিপ্ট মানে কি?

সর্বনাম এবং পদার্থ

ভাষায় পদার্থের গঠন সুনিপুণতার সাথে বিশেষ্য এবং সর্বনামের মিশ্রণ নির্ভর করে। সর্বনাম একটি অপরিহার্য উপাদান যা বাক্যগুলিতে বিশেষ্যের পুনরাবৃত্তি এড়িয়ে সংক্ষেপ ও সাবলীলতা আনয়ন করে। এটি বিশ্লেষণপার্থক্যের ধারণা বুঝতে সাহায্য করে, যা বিশ্লেষণাত্মক লেখায় অপরিহার্য।

বিন্যাসের বৈশিষ্ট্য

সর্বনাম বাক্যের বিন্যাসে মৌলিক ভুমিকা পালন করে, কারণ এটি বাক্যের পদক্ষেপ এবং মেজাজ নির্দিষ্ট করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি সরল বাক্যয় সর্বনামের ব্যবহার, যেমন ‘সে যায়’ এবং ‘তারা খেলছে’ অনায়াসে বিশেষ্যের পুনরাবৃত্তি এড়ায় এবং সঙ্গতিপূর্ণ যোগাযোগ সাধিত হয়।

পার্থক্য বোঝা

বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিশেষ্য এবং সর্বনাম ও বিশেষ্যের মধ্যে ব্যবহারিক ও গঠনগত পার্থক্য রয়েছে। যেমন, একজন বক্তা যখন একই বিষয়বস্তু কয়েকবার উল্লেখ করেন, তখন সর্বনামের প্রয়োগের মাধ্যমে বাক্যটি আরও সংক্ষিপ্ত ও আকর্ষণীয় হয়। পদার্থের গঠনের এই অভ্যাসগুলি বাক্যকে আরো প্রাণবন্ত ও সহজবোধ্য করে তোলে।

সর্বনামের বিভিন্ন প্রকার

বাংলা ব্যাকরণে সর্বনামের ব্যবহার ও তার বিভিন্ন রূপ ভাষার অন্তর্গঠনে অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচিত। এই অধ্যায়ে আমরা ব্যক্তিবাচক সর্বনাম, নির্দেশক সর্বনাম এবং প্রতিশব্দ সর্বনামের ব্যবহার ও নির্দিষ্টকরণের দিকগুলি আলোচনা করবো।

ব্যক্তি সর্বনাম

ব্যক্তিবাচক সর্বনাম সেগুলি হয় যা সাধারণত প্রথম পুরুষ, দ্বিতীয় পুরুষ এবং তৃতীয় পুরুষের নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলা ভাষায় ‘আমি’, ‘তুমি’, ‘সে’ প্রথম পুরুষের অন্তর্গত। এই প্রকারের সর্বনাম পরিচয় বিনিময়ে অপরিহার্য রূপে ব্যবহার হয়।

নির্দেশক সর্বনাম

নির্দেশক সর্বনাম হলো তা যা কোনো ব্যক্তি, জিনিস বা পরিস্থিতিকে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে ব্যবহৃত হয়, যেমন ‘এই’, ‘ওই’, ‘সেই’, ‘ঐ’। এগুলি কোনো বিষয়কে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে, যা বাক্য গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

প্রতিশব্দ সর্বনাম

প্রতিশব্দ সর্বনাম সাধারণত বাক্যে বিশেষ্যের পুনরাবৃত্তি এড়াতে ব্যবহৃত হয় এবং এর ফলে বাক্যের গঠনে সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য আসে। ‘যা’, ‘যে’, ‘যিনি’ এই ধরনের সর্বনামগুলি বাংলা ভাষায় প্রচলিত। এগুলি বাক্যের ভিতরে বিশেষ্যের সংক্ষেপিত প্রকাশ সৃষ্টি করে।

আরও পড়ুনঃ  ত্রিভুজ কাকে বলে?

এই বিভাগে আমরা দেখেছি যে সর্বনামের প্রকারভেদ বাংলা ভাষায় বাক্যের সৌন্দর্য ও গঠনের প্রেক্ষাপটে কীভাবে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

ব্যক্তি সর্বনাম

বাংলা ভাষায় ব্যক্তি সর্বনাম ব্যবহৃত হয় বাক্যের সংক্ষিপ্ততা এবং স্পষ্টতা অর্জনের জন্য। এই অধ্যায়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো প্রথম, দ্বিতীয়, এবং তৃতীয় ব্যক্তি সর্বনামের উপর।

প্রথম ব্যক্তি

প্রথম ব্যক্তি সর্বনামের অন্তর্ভুক্ত আমি এবং আমরা, যা আত্মপরিচয় সর্বনাম হিসাবে পরিচিত। এই সর্বনামগুলো বক্তাকে নিজেকে বা নিজের দলকে নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, “আমি বই পড়ি” বা “আমরা সিনেমা দেখতে যাই”

দ্বিতীয় ব্যক্তি

দ্বিতীয় ব্যক্তি সর্বনাম হল তুমি, তোমরা, আপনি, এবং আপনারা, যা শ্রোতা পরিচয় সর্বনাম হিসেবে পরিগণিত। এই সর্বনামগুলো শ্রোতাদের নির্দেশ করে এবং সম্বোধনে ব্যবহার হয়, উদাহরণস্বরূপ, “তুমি কেমন আছো?” বা “আপনি সভায় আসবেন কি?”

তৃতীয় ব্যক্তি

তৃতীয় ব্যক্তি সর্বনাম হল সে, তিনি, এবং তারা, যা বক্তা এবং শ্রোতা উভয়ের বাইরে অন্য কাউকে বা কোনও গোষ্ঠীকে নির্দেশ করে। এই সর্বনামগুলো বাক্যের বোঝার স্পষ্টতা বাড়াতে সাহায্য করে, যেমন “সে গান গায়” বা “তারা খেলতে যায়”বাক্যে অন্যান্য তথ্যের সাথে এই সর্বনামগুলো ব্যবহার ভাষাকে আরও অন্তর্নিহিত করে তোলে।

নির্দেশক সর্বনাম

বাংলা ভাষায় নির্দেশক সর্বনাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক ধরনের সর্বনাম, যেগুলি কোনো ব্যক্তি বা জিনিস নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে। নির্দেশক পরিচয় তুলে ধরে এই এবং সেই রূপের সর্বনামগুলি যেগুলি বাক্যে প্রয়োগ করা হয়।

সংজ্ঞা ও ব্যবহার

নির্দেশক সর্বনামের মৌলিক উদাহরণ হল ‘এই’, ‘তা’, ‘ইহা’, ও ‘সেই’, যা কোনো জিনিস বা ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট করে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। উদাহরণ ও ব্যবহারের মাধ্যমে নির্দেশক প্রকারের সর্বনামগুলির ব্যবহার আমাদের ভাষায় যেমন সহজ করে তোলে, তেমনি কথোপকথনকে আরো পরিষ্কার ও স্পষ্ট করে তোলে।

বিভিন্ন নির্দেশক সর্বনাম

  • ‘এই’‘সেই’ সর্বনামগুলি সাধারণত কাছাকাছি বা দূরে থাকা ব্যক্তি বা বস্তুকে নির্দেশ করে।

  • যেমন ‘ও’, ‘ওই’, ও ‘ঐ’ সর্বনামগুলি মূলত আরও দূরে থাকা ব্যক্তি বা বস্তুকে সূচিত করতে ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুনঃ  মুদ্রাস্ফীতি কী - অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

সুতরাং, উদাহরণ ও ব্যবহার সহায়ক, নির্দেশক সর্বনাম ভাষাকে সমৃদ্ধ করে থাকে। এগুলি নির্দেশক প্রকার অনুসারে প্রযোগ ও বোঝা সহজ হয়, যা ভাষা শিক্ষার জন্য জরুরি। প্রতিটি ব্যবহারকারী যাতে সহজেই ভাষার এই দিকটি উপলব্ধি করতে পারে, সেজন্য একটি পরিষ্কার ও বোধগম্য উপস্থাপন অপরিহার্য।

প্রতিশব্দ সর্বনাম

কোনো লেখায় ‘সর্বনামের পরিবর্ত’ অর্থাৎ বিশেষ্যের পুনর্ভাবনা এবং বিশেষণের পুনর্ভাবনা যখন ঘটানো হয়, তখন শব্দের প্রকৃত অর্থ বোঝাতে প্রতিশব্দ সর্বনামের আশ্রয় নেওয়া হয়। এই সর্বনামের ব্যবহার বাক্যে অতি নিপুণভাবে করা হয়, যাতে বাক্যের অর্থ নির্ভুল ও পরিষ্কার হয়।

সংজ্ঞা এবং উদাহরণ

সহজ কথায়, প্রতিশব্দ সর্বনাম হল সেই সর্বনাম যা পূর্ববর্তী বিশেষ্য বা বিশেষণের স্থানে বাক্যে ‘প্র’ করে। যেমন, ‘সেই’, ‘এই’, ‘উক্ত’ এগুলি প্রতিশব্দ সর্বনামের উদাহরণ। ধরুন, ‘সেই বইটি আমি পড়েছি’ এই বাক্যে ‘সেই’ শব্দটি বিশেষ্যের পরিবর্তে আসা একটি প্রতিশব্দ সর্বনাম।

প্রতিশব্দের প্রয়োগ

বাক্যে যখন একই বিশেষ্য বা বিশেষণ বারবার আসার প্রয়োজন হয়, তখন সেগুলির ‘সর্বনামের পরিবর্ত’ ঘটিয়ে প্রতিশব্দ সর্বনামের ব্যবহার ঘটে। এর ফলে বাক্য হয় সুগঠিত এবং সুন্দর। ‘এই পোশাকটি আমার, উক্ত পোশাকটি তোমার’ – এই উদাহরণে ‘উক্ত’ হল প্রতিশব্দ সর্বনাম, যা আমাদের বোঝায় যে পোশাকটি আগে উল্লেখিত।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button