কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কাকে বলে?

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা সেই প্রতিষ্ঠানের কথা বলে, যা নিজ নাগরিকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণকে নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে। এই ধরনের রাজ্য বিভিন্ন সামাজিক সেবাদান যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান এবং খাদ্যের সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকে, যাতে করে তার নাগরিকরা একটি নিশ্চিন্ত ও সমৃদ্ধ জীবনযাপন করতে পারে। এই কল্যাণ রাজ্য ব্যবস্থা জন্ম দিয়েছে এক নতুন সামাজিক ন্যায়বিচারের ধারণাকে, যা সবার মাঝে সুখের সমান বিন্যাস ও সমান সুযোগ প্রদানে বিশ্বাসী।

সমীক্ষা অনুযায়ী, মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে যে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কেবল বিলাসিতা নয়, বরং সমাজের অগ্রগতির এক অপরিহার্য উপাদান। ৫৩% মানুষ মনে করেন যে এটা আমাদের সামাজিক স্বাস্থ্য ও আর্থিক উন্নতির জন্য জরুরি এবং ৬২% সমাজবিদ বিবেচনা করেন যে এটা সমান অধিকার ও সাম্যের বিকাশে সাহায্য করে। তাই এই ধারণা কল্যাণ রাজ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তার জন্য কীভাবে অভিজাত পরিকাঠামো নির্মাণ করে, সে বিষয়ে আমাদের সুদৃষ্টি দেয়।

Contents show

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সংজ্ঞা

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলতে বোঝায় এমন একটি সরকারি ব্যবস্থা, যেখানে সরকার নাগরিকদের সামাজিক কল্যাণ এবং জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য অগ্রাধিকার দেয়। এর মূল উদ্দেশ্য হল সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একটি ন্যায্য ও সুখী জীবন প্রদান করা।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মূল উদ্দেশ্য

একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো নাগরিকদের বাসিক চাহিদা পূরণ করা। এর মাধ্যমে, রাষ্ট্র নিশ্চিত করতে চায় যে প্রত্যেক নাগরিকের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষা— সকল মৌলিক চাহিদা সঠিকভাবে মেটানো হয়েছে। একটি কল্যাণ রাজ্যের ধারণা এই বিষয়গুলিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য

একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো সমস্ত নাগরিকের সামাজিক নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক ন্যায্যতা নিশ্চিত করা।

  • এই ধরণের রাষ্ট্র সরকারি সাহায্য ও সবস্তরের শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে শিক্ষা উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দেয়।
  • আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল সামাজিক সুরক্ষা যেমন বৃদ্ধ ভাতা, বিধবা ভাতা, শিশু ভাতা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা, যা সমাজের দুর্বল ও বঞ্চিত শ্রেণীর মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে সাহায্য করে।

এই বৈশিষ্ট্যগুলি মিলে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রকে সামাজিক ন্যায্যতা ও সার্বিক ভালোর জন্য কাজ করা একটি আদর্শ মডেলে পরিণত করে। এর মাধ্যেমে রাষ্ট্র তার সকল নাগরিকের জন্য একটি সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করে দেয়।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ইতিহাস

ইতিহাসে কল্যাণ রাষ্ট্র সামাজিক অগ্রগতির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত ছিল। এর ধারণা প্রাচীন সভ্যতাগুলিতেও প্রতিষ্ঠিত ছিল, যেখানে শাসকগণ নাগরিকদের ভালোথাকার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতেন।

আরও পড়ুনঃ  ঘরে বসে কিভাবে স্পোকেন ইংলিশ শিখবেন

প্রাচীন কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উদাহরণ

প্রাচীন মিশর ও রোম সাম্রাজ্যে নাগরিকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক প্রকল্প চালু ছিল, যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা ও খাদ্য সরবরাহ। এগুলি ইতিহাসে কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রথম দিকের উদাহরণ হিসেবে ধরা হয়।

আধুনিক কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সংকল্প

আধুনিক যুগে, বিশেষত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় কল্যাণ রাষ্ট্রের বিস্তারতত্ত্ব গবেষণার আলোকে বেশ পরিমাণে সামাজিক অগ্রগতি হয়েছে। এই ধারণা গণহিতৈষী সরকারি নীতিমালা প্রবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, যেমন সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, ও শিক্ষা।

সমগ্রভাবে, সামাজিক অগ্রগতি এবং ইতিহাসে কল্যাণ রাষ্ট্র এর ধারণা বিভিন্ন কালপর্বে পৃথিবীর নানান অঞ্চলে বিকশিত হয়েছিল এবং আজও এই ধারণা সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণের আশ্বাস প্রদানে প্রাসঙ্গিক।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের উপাদান

সামাজিক সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং শিক্ষা সেবা একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মূল উপাদান হিসাবে পরিগণিত হয়। এই তিনটি সেবা মিলে নাগরিকদের জীবনযাত্রায় যে সুরক্ষা ও উন্নতি নিশ্চিত করে তা সামাজিক নীতির প্রতিফলন করে। বিশেষত, নাগরিকের সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সেবার মাধ্যমে সকলের জন্য সুস্থ ও শিক্ষিত সমাজের প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।

সামাজিক সুরক্ষা

নাগরিকের সুরক্ষা সামাজিক সুরক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। এটি বেকারত্ব, বয়োজ্যেষ্ঠতা, বা রোগজনিত কারণে কর্মক্ষমতা হারানোর ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।

স্বাস্থ্যসেবা

স্বাস্থ্যসেবা সেবা হলো নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার একটি প্রধান উপায়। এই সেবা প্রদানে রাষ্ট্র নিশ্চিত করে যে প্রত্যেক নাগরিকের স্বাস্থ্যের যত্ন সামাজিক নীতির অংশ হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে।

শিক্ষা সেবা

শিক্ষা সেবা শিক্ষার মাধ্যমে নাগরিকদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভিত্তি প্রস্তুত করে। এটি শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে নিশ্চিত করে যে প্রতিটি নাগরিক ক্ষমতাবান ও আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠতে পারে।

সামাজিক নীতির মাধ্যমে বিস্তারিত এই তিনটি সেবা নাগরিকদের জন্য একটি সুসংহত জীবনযাত্রা নিশ্চিত করে থাকে, যা সামগ্রিকভাবে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের লক্ষ্য।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সুবিধা

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সুবিধা বহুমুখী এবং গভীর প্রভাব রাখে নাগরিক জীবনের প্রতিটি দিকে। এই রাষ্ট্রব্যবস্থাটি মূলত নাগরিকের অধিকার এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়।

নাগরিকের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতকরণ

কল্যাণ যুক্তিসংগত পরিকল্পনা অনুযায়ী, নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়, যা খাদ্য, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদাগুলি অন্তর্ভুক্ত করে। এর ফলে, প্রতিটি নাগরিক যাতে একটি সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারে তা সুনিশ্চিত করা হয়।

  • অধিকার প্রাপ্তির সার্বিক পদ্ধতি
  • স্বাস্থ্যসেবার জন্য উম্মুক্ত অ্যাক্সেস
  • শিক্ষা প্রাপ্তির সুযোগ বৃদ্ধি

অর্থনৈতিক উন্নয়ন

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং সমস্যাগুলোর সমাধান করে। এর মাধ্যমে, বৈধব্য এবং বেকারত্বের মতো সামাজিক সংকটগুলি হ্রাস পায়।

  1. বেকারত্ব হ্রাস
  2. জনসংখ্যার বাড়বাড়ন্ত নিয়ন্ত্রণ
  3. অর্থনৈতিক কার্যক্রমের উন্নয়ন

উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং নাগরিকের অধিকারের উন্নয়নে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র এক অনন্য ভূমিকা পালন করে। এই সিস্টেমের মাধ্যমে নাগরিকদের জীবনমান উন্নতি ও সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রচেষ্টা অনেকাংশে প্রশংসনীয় হলেও, এর পথে অসংখ্য বাধা রয়েছে যা একজন নীতি নির্ধারকের জন্য চিন্তার খোরাক যোগায়।

আরও পড়ুনঃ  মৌলিক রং কাকে বলে?

অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা

অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা এমন একটি বাধা যা প্রায়শই সামাজিক কল্যাণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অর্থের অভাবে সরকারী পরিকল্পনাগুলি প্রায়শই পূর্ণ বাস্তবায়নের আগেই থেমে যায়, যা জনগণের প্রত্যাশা ও আশাবাদকে ব্যাহত করে। উদাহরণস্বরূপ, বিশাল পরিবারের জন্য প্রস্তাবিত স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পটি বারবার অর্থের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

রাজনৈতিক প্রভাব

রাজনৈতিক প্রভাব প্রায়ই সামাজিক কল্যাণে বাধা সৃষ্টি করে, যেখানে ব্যক্তিগত বা দলীয় স্বার্থসিদ্ধি জনকল্যাণের উদ্দেশ্যকে ছাপিয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গের তদন্ত কমিটি যেভাবে কিছু নার্সিংহোমের অন্যায় কার্যকলাপ ফাঁস করেছে, তা রাজনৈতিক প্রভাবের অপব্যবহারের এক রূপ।

এই সকল বাধা পার হয়ে কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের এবং জনগণের নিরলস প্রচেষ্টা একমাত্র পথ হতে পারে।

বিভিন্ন দেশের কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মডেল

বিভিন্ন দেশের কল্যাণ রাজ্যের মডেলের প্রকারভেদ গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তাদের সামাজিক কাঠামো ও নীতিমালার উপর। এসব মডেলের মধ্যে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ও ব্রিটিশ মডেল সবচেয়ে পরিচিত।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান মডেল

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান মডেল একটি উদাহরণে কল্যাণ রাজ্য, যা সামাজিক সমতা এবং সার্বিক কল্যাণে গুরুত্ব দেয়। এই মডেলের অন্তর্গত দেশগুলি যেমন সুইডেন, ডেনমার্ক, এবং নরওয়ে উচ্চ করের মাধ্যমে ব্যাপক সামাজিক সেবা প্রদান করে থাকে, যাতে করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

ব্রিটিশ মডেল

ব্রিটিশ মডেল, যা প্রায়শই বেভারিজ মডেল নামে পরিচিত, তা ১৯৪২ সালে সার উইলিয়াম বেভারিজের প্রতিবেদনের পরে উন্নত হয়। এই মডেলটি বিনামূল্যের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, এবং বেকারত্ব ভাতা সহ সার্বজনীন সুবিধাদি প্রদানের ওপর জোর দেয়।

এই বিভিন্ন মডেলের প্রকারভেদগুলি দেখা যায় যে সমাজের উন্নতি এবং সকলের কল্যাণ সাধনের জন্য কল্যাণ রাজ্য পদ্ধতির গুরুত্ব অপরিসীম। এই উদাহরণে কল্যাণ রাজ্যগুলি বিশ্বের বিভিন্ন অংশে কল্যাণমূলক নীতি এবং জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছে।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ও সামাজিক ন্যায়

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের মূল অঙ্গীকার হল সামাজিক ন্যায় এবং বৈষম্য মুক্ত সমাজ গঠন। এই উদ্দেশ্যে, নীতিপ্রণীত রাজ্য ব্যবস্থা গঠন অপরিহার্য হয়ে ওঠে, যা সমাজের সকল স্তরে ন্যায়বিচারের অধিকার সুনিশ্চিত করে।

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, এবং স্বাস্থ্য সেবা সহ নানা সেবা প্রদানের মাধ্যমে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে। এটি বৈষম্য মুক্ত সমাজ গঠনের প্রাথমিক ধাপ।

বৈষম্য বিমোচন

সামাজিক ন্যায়ের প্রসার ঘটাতে গিয়ে একটি নীতিপ্রণীত রাজ্য বিভিন্ন সামাজিক বৈষম্য, যেমন লিঙ্গ, শ্রেণী, এবং জাতিসত্তার ভিত্তিতে বৈষম্য, দূর করার জন্য পদক্ষেপ নেয়। এর মাধ্যমে সকল নাগরিকের সম্মানজনক জীবনযাপন নিশ্চিত হয়।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ও অর্থনীতি

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের সার্বিক সমৃদ্ধি এবং উন্নতি সাধনে অর্থনীতির কাঠামো এবং রাষ্ট্রীয় বাজেট অপরিহার্য। এই ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থায় কর নীতি এর ভূমিকা রাজস্ব আদায় এবং সামাজিক নিরাপত্তার সুনিশ্চিতকরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কর ব্যবস্থার গুরুত্ব

প্রগতিশীল কর নীতির মাধ্যমে ধনীদের উপর উচ্চতর করের প্রয়োগ, অর্থাৎ আয় যত বেশি ততবেশি কর আদায়, এমন নীতি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রগুলির অন্যতম ভিত্তি। এর ফলে সামাজিক বৈষম্য কমে এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

আরও পড়ুনঃ  সংহতি অর্থ কি?

বাজেট ও বরাদ্দ

  • রাষ্ট্রীয় বাজেট পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রসমূহে পর্যাপ্ত বরাদ্দ অত্যন্ত জরুরি।
  • বরাদ্দ করা অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে, এটি রাষ্ট্রের অর্থনীতির মজবুতি যোগায় এবং সামগ্রিকভাবে নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হয়।

সুতরাং, কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে অর্থনীতির কাঠামো, কর নীতি এবং রাষ্ট্রীয় বাজেট এর উপর নির্ভর করে পুরো সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থাপনা। এই তিনটি উপাদানের মজবুত ভিত্তি থাকলে একটি রাষ্ট্র তার নাগরিকদের কল্যাণ সাধনে অধিকতর সক্ষম হয়।

কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ

প্রযুক্তির আগমন এবং সামাজিক যোগাযোগের ব্যবহার আমাদের কাছে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের চিত্রকে যেভাবে পরিবর্তন করেছে, তা অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য। আগামী দিনের কল্যাণ রাষ্ট্রের উন্নয়নে প্রযুক্তির এই ভূমিকা কেবল বৃদ্ধি পাবেই, এবং সমাজের সীমানালোধি পরিবর্তন হবে।

প্রযুক্তির প্রভাব

ভবিষ্যতের কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনে প্রযুক্তির আগমন অন্যতম একটি ক্রান্তিকালীন উপাদান। ডিজিটাল প্লাটফর্মগুলো সরকারি সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, যা নাগরিকদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সুরক্ষা সেবা প্রাপ্তি সহজ করে তুলেছে। এর ফলে, ধারাবাহিকভাবে জনগণের জীবনমান উন্নত হচ্ছে।

সমাজ সংযোগের ভূমিকা

সামাজিক যোগাযোগের প্রসার সমাজের প্রত্যেকের মধ্যে আরও বেশি অন্তর্বর্তিতা এনে দিয়েছে। এই প্রক্রিয়াটি নাগরিক সমাজের আকাঙ্ক্ষা এবং অংশগ্রহণের স্কোপ বৃদ্ধি করে, যা তাদের সরকারি নীতি নির্মাণে অধিক সক্রিয় রূপে অংশ নিতে উৎসাহিত করে। এতে করে, সম্পূর্ণ সমাজের মানসিক ও কর্মস্পৃহা প্রান্তিক মানুষের ভালোর দিকে পরিচালিত হয়।

একটি সক্ষম ও সংহত সমাজ গড়ে তোলার মাধ্যমে, প্রযুক্তির আগমন এবং সামাজিক যোগাযোগ মিলে ভবিষ্যতের কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের যাত্রাপথে অবদান রাখবে।

কল্য

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের জিডিপি অনুযায়ী সামাজিক খরচের পরিমাণে বিস্তর পার্থক্য দেখা যায়, যা OECD-এর তথ্যানুযায়ী নির্ধারিত। কল্যাণমূলক রাজ্যগুলি সামাজিক কর্মসূচী প্রশাসন ও পরিবেশনের জন্য বেসরকারি-সরকারি অংশীদারিত্ব দেখায়। এই ধরণের সেবা সরকারের বিভিন্ন স্তরে প্রদান করা হয়।

১৮৮০-এর দশক থেকে পশ্চিমা শিল্পায়নকারী দেশগুলিতে পাবলিক পেনশন এবং সামাজিক ইনশিওরেন্সের মত কল্যাণমূলক রাজ্যের বিকাশ শুরু হয়েছিল। এই ধারণা, যেমন বিশ্বযুদ্ধ, মহামন্দা, এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মত ঘটনাবলীর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ উদ্ভূত হয়েছিল। জার্মানি ১৮৭০ সালে “Sozialstaat” শব্দটি রাষ্ট্র সমর্থিত প্রোগ্রামের সাথে অভিহিত করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে অ্যাংলিকান আর্চবিশপ উইলিয়াম টেম্পল ইংরেজিতে “welfare state” শব্দটি জনপ্রিয় করে তোলেন।

আজকের দিনে, অ্যানা উলফে ২০২২ সালের গোল্ডস্মিথ প্রাইজের জন্য মিসিসিপির কল্যাণ ব্যবস্থায় পাবলিক অফিসিয়ালদের দুর্নীতির উপর অনুসন্ধানমূলক রিপোর্টিংয়ের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন। অনুসন্ধানে অনুমোদিত ২%-র কম নগদ সাহায্য অনুপ্রবেশের মধ্য দিয়ে প্রায় ৯০ মিলিয়ন ডলার প্রতি বছর অপ্রাপ্য থেকে যাওয়ার বিষয়টি তার অনুসন্ধানে উঠে আসে। এই অনুসন্ধান অপরাধজনিত মামলা ও গ্রেফতারের পাশাপাশি সেইসব নীতিমালা উন্মোচন করে যা ব্যবস্থায় সামাজিক সেবা প্রয়োজনের দিকে অগ্রাধিকার না দেয়। অনুসন্ধানের ফলাফল আশা করা হচ্ছে যে মিসিসিপিয়ানদের উপকার করার সঠিক অর্থ বরাদ্দ নিয়ে উন্নত সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করবে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button