পদার্থ কাকে বলে? জানুন পদার্থের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য
পদার্থ সম্বন্ধে জ্ঞান বিস্তারের ক্ষেত্রে বিজ্ঞান অব্যাহতভাবে মৌলিক ধারণা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্প্রসারিত করে চলেছে। “পদার্থ কি” এই জিজ্ঞাসার উত্তর একটি সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যায় প্রকাশ পায় এইভাবে যে, পদার্থ বলতে এমন সবকিছুকে বোঝায়, যা আয়তন ও ভর দ্বারা নির্দিষ্ট করা যায় এবং যা মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে অবস্থান করে। রাসায়নিক বিজ্ঞানে ১১৮ টিরও বেশি মৌলিক উপাদানের পরিচিতি প্রদান করা হয়েছে, যা বিভিন্ন পারমাণবিক কণার সংযোগ এবং অন্যান্য প্রাথমিক কণার বিন্যাস দ্বারা পদার্থের অস্তিত্ব উদ্ভাসিত হয়। সঠিক পদার্থের ধরন ও বৈশিষ্ট্য চিনে নেওয়া বিজ্ঞানের এক আশ্চর্য অধ্যায়।
মহাকাশে দৃশ্যমান বস্তুর মাত্র ৪.৬% বিভিন্ন প্রাথমিক কণার সমন্বয়ে গঠিত। অন্ধকার মহাকাশের বিশাল অংশে অন্ধকার জগৎ (ডার্ক ম্যাটার) ও অন্ধকার শক্তি (ডার্ক এনার্জি) বিরাজমান। প্রায় ২৬.৮% ডার্ক ম্যাটার ও ৬৮.৩% ডার্ক এনার্জি দ্বারা গঠিত। এইসব ক্রিয়াকলাপ ও অস্তিত্ব পদার্থের বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞাকে সৃষ্টি করে, যা বিজ্ঞানের বহু রহস্য উন্মোচন করে এবং পদার্থের বৈশিষ্ট্যের গভীরতা প্রকাশ করে। কঠিন, তরল এবং গ্যাসীয় – এই তিন অবস্থা সবচেয়ে প্রচলিত, যেখানে পদার্থের গঠন, চাপ, তাপমাত্রা এবং আয়তনের বিচিত্রতা ফুটে ওঠে। জ্ঞানের এই অন্বেষণে, পদার্থের সংজ্ঞা ও পদার্থের বৈশিষ্ট্য বুঝে নেওয়া বিজ্ঞানীদের ও আগ্রহী পাঠকদের জন্য অত্যন্ত সার্থক ও উপকারী।
পদার্থের সংজ্ঞা কি?
পদার্থের সংজ্ঞা নির্ণয় করা মৌলিক বিজ্ঞানের একটি অপরিহার্য অংশ। প্রতিটি পদার্থের পরিচয় তার আয়তন ও ভরের মাধ্যমে পরিমাপ করা যায়, এবং এটি জীবনের চারপাশের পরিবেশে অবস্থিত হয়ে আমাদের পরিচিত চেয়ার, টেবিল, খাদ্য, এবং অন্যান্য বস্তুর উদাহরণ প্রদান করে।
পদার্থের মৌলিক ধারণা
পদার্থ হচ্ছে এমন কিছু যা জায়গা দখল করে এবং জড়তা প্রদর্শন করে, যাকে আমরা পদার্থ বলে থাকি। পদার্থ চার প্রধান অবস্থান যেমন কঠিন, তরল, গ্যাস, এবং প্লাজমা অবস্থায় থাকতে পারে। এছাড়াও, পদার্থকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়: মৌলিক পদার্থ এবং যৌগিক পদার্থ। মৌলিক পদার্থ গুলো হল এমন অভিন্ন ধর্মের পদার্থ যা আরও সাধারণ পদার্থ দ্বারা গঠিত নয়।
পদার্থের বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞা
বিজ্ঞানে, পদার্থ সংজ্ঞা আরও গভীরভাবে বর্ণনা করা হয়। পদার্থকে তার মূল গুণাবলী যেমন ভর, আয়তন, ঘনত্ব, ও জড়তা অনুসারে বিবেচনা করা হয়। বিজ্ঞানীরা যেসব মৌলিক পদার্থ আবিষ্কার করেছেন, তাদের মধ্যে 118টি মৌল রয়েছে, যাদের মধ্যে 98টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, এবং বাকি গবেষণাগারে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই পদার্থের পরিচয় বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার সাথে সংযোগ রেখে চলে।
পদার্থের প্রধান ধরনের পরিচয়
প্রতিটি পদার্থ কোন না কোন অবস্থায় বিদ্যমান। এই অবস্থাগুলো হলো কঠিন পদার্থ, তরল পদার্থ, এবং গ্যাসীয় পদার্থ। এই তিন অবস্থা বৈজ্ঞানিকভাবে পদার্থের তিন অবস্থা হিসেবে পরিচিত।
কঠিন পদার্থ
কঠিন পদার্থ সাধারণত নির্দিষ্ট আকৃতি এবং ভলিউম ধারণ করে। এদের অণুগুলি ঘনিষ্ঠভাবে বিন্যস্ত থাকে, যা এদেরকে স্থায়িত্ব এবং দৃঢ়তা প্রদান করে। এই বিশেষত্বের কারণে কঠিন পদার্থগুলি ভাঙ্গা বা ছিঁড়ে ফেলা কঠিন হয়।
তরল পদার্থ
তরল পদার্থের আকৃতি সাধারণত তাদের ধারণকারী পাত্রের আকৃতির অনুরূপ। এদের অণুগুলি কঠিন পদার্থের তুলনায় কম ঘনিষ্ঠভাবে বিন্যস্ত থাকে, যার ফলে এগুলো সহজেই গতিশীল থাকে। তরল পদার্থ তাদের আকৃতি পরিবর্তন করতে সক্ষম, তবে ভলিউম পরিবর্তন করে না।
গ্যাস পদার্থ
গ্যাসীয় পদার্থ সর্বাধিক গতিশীল অবস্থা বলা যায়। এর অণুগুলি খুবই দ্রুত এবং এলোমেলোভাবে চলাচল করে থাকে, যার ফলে এগুলো যেকোনো পাত্রের ভলিউম অনুযায়ী প্রসারিত হয়। গ্যাসীয় পদার্থ সবচেয়ে কম ঘনত্বপূর্ণ এবং তাদের আকৃতি বা ভলিউম নির্দিষ্ট নয়।
এই তিন অবস্থার পার্থক্য বোঝার মাধ্যমে পদার্থ বিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা সম্পর্কে আরও গভীর বোঝা যায়। পরিবেশ ও চাপের পরিবর্তনে পদার্থের এই তিন অবস্থা এক থেকে অন্য অবস্থায় পরিণত হতে পারে, যা বিজ্ঞানের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
পদার্থের মৌলিক বৈশিষ্ট্য
পদার্থ তার স্বরূপ ও স্থিতি প্রকাশ করার জন্য বিভিন্ন মৌলিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে গঠিত। এই বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে পদার্থের ভর, আয়তন এবং ঘনত্ব অন্যতম।
ভর
পদার্থের ভর হচ্ছে তার মৌলিক অণুগুলোর মোট দ্রব্যমান। এটি পদার্থের অবস্থান ও মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবকে বুঝতে সহায়ক। পদার্থের ভরের ওপর ভিত্তি করে তার গমনাগম্ন ক্ষমতা ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয়।
আয়তন
পদার্থের আয়তন হচ্ছে তার একটি বিশেষ পরিমাণ যা দ্বারা ওই পদার্থটি স্থান দখল করছে। এটি একটি ত্রিমাত্রিক পরিমাপ যা দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার গুণফলে নির্ধারিত হয়। আয়তনের পরিমাপকে ঘনত্ব নির্ণয়ে কাজে লাগানো হয়।
ঘনত্ব
ঘনত্ব হল পদার্থের ভর এবং আয়তনের অনুপাত। এটি একটি মাত্রাণুগ পরিমাণ যা দ্বারা পদার্থের ভরের পরিমাণ এর আয়তন অনুযায়ী ব্যাখ্যা করা হয়। পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের ঘনত্ব ভিন্ন হওয়ায় তাদের ভাসমান বা ডুবন্ত স্বভাব নির্ভর করে।
মোট কথা, পদার্থের ভর, আয়তন এবং ঘনত্ব পদার্থের প্রাথমিক ও মৌলিক বৈশিষ্ট্য হিসাবে গণ্য করা হয় এবং এগুলি আমাদের চারপাশের বিভিন্ন পদার্থের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য ও প্রকৃতি বোঝাতে সহায়তা করে।
পদার্থের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য
পদার্থের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য বোঝায় এর অন্যান্য পদার্থের সাথে প্রতিক্রিয়াশীলতাকে। এই প্রতিক্রিয়াগুলির প্রকারভেদ এবং প্রক্রিয়ার ফলাফল পদার্থের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যকে গঠন করে। আমরা যখন মৌলিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য এবং যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য নিয়ে কথা বলি, তখন এটি প্রাথমিকভাবে মৌল ও যৌগের ক্ষমতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার উপর নির্ভর করে।
রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া
রাসায়নিক প্রতিক্রিয়াগুলি মৌলিক পদার্থের প্রকৃত গুণাবলী পরিবর্তন করে। যেমন, অক্সিজেন এবং আয়রনের সংযোগে মরিচা তৈরি হয়, যা এক ধরনের আয়রন অক্সাইড। এই প্রকারের প্রতিক্রিয়া পদার্থের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যগুলির সুস্পষ্ট উদাহরণ।
মৌল ও যৌগ
মৌলিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য এবং যৌগিক পদার্থের বৈশিষ্ট্য নির্দিষ্ট করে যে, মৌলগুলি যখন রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যৌগে পরিণত হয়, তখন তারা নতুন গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য লাভ করে। যেমন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সংমিশ্রণে জল তৈরি হয়, যা উভয় মৌলের অবদান নিয়ে একটি নতুন যৌগিক বৈশিষ্ট্য উপস্থাপন করে।
পদার্থের ভৌত বৈশিষ্ট্য
পদার্থের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করতে গিয়ে বিভিন্ন ভৌতিক দিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দিকগুলির মধ্যে পদার্থের রঙ, পদার্থের তাপমাত্রা, এবং অস্থিতিশীলতা অন্যতম। এগুলি নিম্নলিখিত বিস্তারিত আলোচনায় পরিচিত হোন।
রঙ
পদার্থের রঙ আমাদের অনুভবী জগতে একটি পদার্থকে চিনতে সাহায্য করে। রং পদার্থের পৃষ্ঠতলে আলোর প্রতিফলন ও শোষণ হার নির্ভর করে। উদাহরণ স্বরূপ, আলো স্বচ্ছ পদার্থ যেমন জল দিয়ে বিনা বাধায় পাস হয়ে যেতে পারে এবং রং প্রভাবিত না করে। বিপরীতে, কঠিন বস্তু যেমন লোহা আলোকে শোষণ করে এবং নির্দিষ্ট রং প্রদর্শন করে।
তাপমাত্রা
পদার্থের তাপমাত্রা তার গঠন এবং পদার্থের ভৌত অবস্থা নির্ধারণ করে। জলের তাপমাত্রা যখন 0°C পৌঁছায় তখন সেটি বরফে পরিণত হয় এবং 100°C এ গিয়ে বাষ্প হয়ে যায়। এই পরিবর্তনগুলি তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল।
অস্থিতিশীলতা
একটি পদার্থের ভৌত বৈশিষ্ট্যগুলি এর অস্থিতিশীলতা দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তরল পদার্থের ভ্রমণশীলতা এর ঘনত্ব ও আকার পরিবর্তনে সাহায্য করে।
পদার্থের পরিবর্তন
পদার্থ যে কোনো সময়ে দুই প্রকারে পরিবর্তিত হতে পারে: ভৌতিক এবং রাসায়নিক। এই দুই পরিবর্তনের প্রক্রিয়া পদার্থের গঠন ও বৈশিষ্ট্যে স্পষ্ট পার্থক্য সৃষ্টি করে। পদার্থের পরিবর্তন সনাক্ত করার মাধ্যমে আমরা তাদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক গুণাগুণ অধিক গভীরভাবে বুঝতে পারি, যা বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ও বৈজ্ঞানিক কার্যক্রমে তাদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে।
ভৌতিক পরিবর্তন
ভৌতিক পরিবর্তন হচ্ছে যে প্রক্রিয়াতে পদার্থের মৌলিক রাসায়নিক গঠনে কোনো পরিবর্তন ঘটে না, কিন্তু এর বাহ্যিক গুণাবলী—যেমন আকৃতি, আয়তন, রঙ—পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বরফ গলে জলে পরিণত হলে তার রাসায়নিক গঠন পরিবর্তিত হয় না; শুধু তার শারীরিক অবস্থা পরিবর্তিত হয়। এটি ভৌত পরিবর্তনের একটি উদাহরণ।
রাসায়নিক পরিবর্তন
রাসায়নিক পরিবর্তনে, পদার্থের অভ্যন্তরীণ গঠন বদলে যায়, ফলে নতুন রাসায়নিক যৌগ সৃষ্টি হয়। এই পরিবর্তন সাধারণত ঊষ্ণতা, চাপ, অথবা ক্যাটালিস্টের উপস্থিতিতে ঘটে। উদাহরণস্বরূপ, লোহার মরিচা পড়া – যা লোহার ও অক্সিজেনের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে নতুন যৌগ লোহিত অক্সাইড সৃষ্টি করে। এ ক্ষেত্রে পদার্থের অভ্যন্তরীণ স্বভাব পরিবর্তন পায়।
পদার্থের মৌলিক অংশ
পদার্থের সূক্ষ্ম গঠনকে বুঝতে হলে আমাদের অবশ্যই পরমাণু এবং অণু সম্পর্কে জানতে হবে। এগুলি হলো যে কোনো পদার্থের গঠনের মূল কণা। পদার্থের কণা গুলি বিভিন্ন ধরনের পরমাণু এবং অণু দ্বারা গঠিত হয়।
পরমাণু
পরমাণু হলো মৌলের সর্বনিম্ন বিভাজ্য ইউনিট যা মৌলিক ধর্ম বজায় রাখে। প্রকৃতি ও গবেষণাগারে মোট ১১৮টি মৌল আবিষ্কৃত হয়েছে, এর মধ্যে ৯৮টি প্রাকৃতিক ও ২০টি কৃত্রিম মৌল। এগুলোর অন্তর্ভুক্ত পরমাণু পদার্থের গঠনে ব্যাপকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
অণু
একটি অণু হলো এক বা একাধিক পরমাণুর সংযোগ যা বিশেষ রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য সম্বলিত। যেমন, কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO₂) একটি যৌগিক পদার্থ যা কার্বন (C) ও অক্সিজেন (O) পরমাণু দ্বারা গঠিত। এই যৌগিক অণুগুলো যে কোনো পদার্থের রাসায়নিক পরিবর্তন ও ভৌত বৈচিত্র্যের পীছনে মূল কারণ।
- পদার্থের কণা বিশ্লেষণে পরমাণুর গতিকে বোঝা।
- অণুর মাধ্যমে পদার্থের রাসায়নিক সম্পর্ক উপলব্ধি।
পরমাণু ও অণু মিলেই পদার্থের অসামান্য গুণাবলী নির্মাণ করে, যা আমাদের প্রতিদনের জীবনযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
পদার্থের অবস্থান্তর
পদার্থের অবস্থান্তরের প্রক্রিয়া হলো এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তনের এক জটিল ধারা। এই পরিবর্তনের মধ্যে গলন প্রক্রিয়া, বাষ্পীভবন এবং সংকুচিত হওয়া অন্যতম।
গলন
গলন প্রক্রিয়া হলো যেখানে কঠিন পদার্থ তাপ গ্রহণ করে তরলে পরিণত হয়। প্রতিটি পদার্থের একটি নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক থাকে, যেমন বায়ুমন্ডলীয় চাপে বরফের গলনাঙ্ক প্রায় ০°সে।
বাষ্পীভবন
বাষ্পীভবন হলো পানি যখন তাপ গ্রহণ করে গ্যাসে পরিণত হয় যা সাধারণত ১০০°সে তে ঘটে। এই প্রক্রিয়াটি বায়ুচাপ এবং পরিবেশ অনুযায়ী পরিবর্তনশীল হয়।
সংকোচন
সংকুচিত হওয়া হলো গ্যাসীয় অবস্থা থেকে তরল অথবা কঠিন অবস্থায় পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া তাপমাত্রা এবং চাপের হ্রাসের ফলে ঘটে।
পদার্থের অবস্থান্তর বিজ্ঞানের এক মৌলিক অংশ এবং এটি বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে, যেমন ধাতুবিজ্ঞান, রাসায়নিক প্রক্রিয়াকরণ এবং খাদ্য প্রযুক্তিতে ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য।
পদার্থের গঠন
প্রকৃতিতে ১১৮টি মৌলের সন্ধান পাওয়া গেছে যার মধ্যে ৯৮টি স্বাভাবিকভাবে এবং বাকি ২০টি গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়। মানবদেহে ২৬ ধরনের মৌলের অস্তিত্ব রয়েছে এবং সেগুলি যেকোনো রাসায়নিক পদ্ধতি দ্বারা আরো সরল পদার্থে ভাঙ্গা যায় না এটা তাদের মৌলিক সত্তা প্রমাণ করে। যৌগ পদার্থ গুলি যখন ভাঙ্গা হয়, তখন দুই বা ততোধিক মৌল পাওয়া যায়, যেমন জল (H2O) কে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনে ভাগ করা যায়।
আইসোটোপ
আইসোটোপ হলো একই মৌলের ভিন্ন ভিন্ন ভারসাম্যের নিউক্লিয়াসসম্বলিত পরমাণুর ধরন, যেগুলো প্রকৃতিতে ভিন্ন ভিন্ন অনুপাতে পাওয়া যায়। উদাহরণ হিসেবে, ক্লোরিনের পরমাণু সংখ্যা ১৭ এবং গড় আপেক্ষিক পরমাণু ভর হল ৩৫.৫, যা তার আইসোটোপের প্রকৃতি এবং গণিতিক অনুপাতের গণনা করে।
এটমিক মডেল
নিয়েলস বোরের প্রণীত বোর এটমিক মডেলের মাধ্যমে পদার্থের গঠনের গভীরে পৌঁছানো গেছে, যা রাদারফোর্ডের মডেলে উন্নতি এনেছে এবং ইলেকট্রনের শক্তি স্তরের ধারণা, বা কোয়ান্টাম নাম্বার প্রবর্তন করেছে। বোরের মডেলে ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসের চারপাশে সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে অবস্থান করে, তবে পরবর্তীতে আধুনিক আণবিক মডেলের দ্বারা একে প্রতিস্থাপিত করা হয়। এগুলো আমাদের পদার্থের গঠন এবং এটমিক মডেল জানতে ও বুঝতে সাহায্য করে।