সমাজকর্ম কাকে বলে?

সমাজকর্ম একটি বিশেষায়িত পেশা, যেখানে ব্যক্তিগত এবং সম্প্রদায়ভিত্তিক সামাজিক সেবা প্রদর্শনের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়ন-এর লক্ষ্য অর্জিত হয়। এই পেশায় কাজরত বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্ন ধরণের চাহিদাসমূহ, যেমন মানসিক স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা, এবং আইনিসম্মত সহায়তা, একটিভুক্ত করে সমাজের সুষ্ঠু বিকাশে অবদান রাখেন।

মনোবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, স্বাস্থ্যবিদ্যা, এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতো বিভিন্ন শাখা থেকে অন্তঃস্থাপিত তত্ত্ব ও ধারণার উপর ভিত্তি করে সমাজকর্ম সংজ্ঞা তৈরি হয়েছে। এই পেশার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের জীবনমান উন্নীত করা এবং সামাজিক ন্যায্যতা এবং মানবাধিকার অটুট রাখা।

সমাজকর্মের অর্থ ও উদ্দেশ্য

সমাজকর্ম একটি বহুমাত্রিক পেশা যা সামাজিক সেবা, সমাজ উন্নয়ন, এবং সমাজ সেবা সংজ্ঞা সম্পর্কিত নীতি ও তত্ত্বের প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তি, পরিবার, এবং সম্প্রদায়ের উন্নতি সাধন করে। এই পেশা দায়িত্ব নেয় এমন সব সামাজিক ইস্যু সমাধানে যা সরাসরি মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে সহায়ক।

সমাজকর্মের সংজ্ঞা

সমাজকর্মকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এমন একটি ক্ষেত্র হিসেবে যা ব্যক্তির ও তার সামাজিক পরিবেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে সামাজিক উন্নতি সাধন করে। এর মাধ্যমে সমাজের প্রত্যেক সদস্য তার সামর্থ্য অনুযায়ী সমাজের উন্নয়নে অংশ নিতে পারে।

সমাজের উন্নয়নে ভূমিকা

সমাজকর্মীরা সমাজের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তারা দারিদ্র্য, স্বাস্থ্য সমস্যা, শিক্ষার হ্রাস, নিরাপত্তা বিষয়ক চ্যালেঞ্জ এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘনের মতো সামাজিক সমস্যাগুলির সমাধানে কাজ করে থাকেন। তাদের কর্মকাণ্ড সামাজিক উন্নয়ন এবং সামাজিক সেবা এর মাধ্যমে সমাজের সর্বাঙ্গীন উন্নতি সাধনে অবদান রাখে।

  • দারিদ্র্য দূরীকরণ
  • স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন
  • শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি
  • নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করা
আরও পড়ুনঃ  পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যা কত?

সমগ্রভাবে, সমাজকর্মীরা সমাজের প্রত্যেক সদস্যের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে থাকেন, যা শুধু একজন ব্যক্তির কল্যাণে নয় বরং সমগ্র সমাজের উন্নতিতে সহায়তা করে।

সমাজকর্মীর ভূমিকা

সমাজকর্মীরা সমাজের এক অপরিহার্য অংশ। তাদের কর্তব্য সমাজের সব স্তরে উন্নতি আনা এবং সামাজিক কাজের মাধ্যমে মূল্যবান পরিবর্তন নিশ্চিত করা। সমাজকর্মীদের দায়িত্ব স্থাপন করে তারা যে সার্বজনীন সেবার অংশ নেয়, তা ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজের জীবনমান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করে।

সমাজকর্মীর দায়িত্ব

সমাজকর্মীরা যে সামাজিক কাজে নিযুক্ত হন, তার প্রধান কিছু দায়িত্ব নিম্নরূপ:

  • ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক কাউন্সেলিং প্রদান করা।
  • বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক সেবা সুবিধাদি সহজলভ্য করা।
  • মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় দলগত চিকিৎসা প্রদান করা।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজকর্মীরা

সমাজকর্মীর ক্ষেত্র খুবই বিস্তৃত এবং তারা নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে কাজ করে থাকেন:

  1. হাসপাতাল – রোগীদের মানসিক এবং সামাজিক সমর্থন প্রদান।
  2. বিদ্যালয় – শিক্ষার্থীদের সামাজিক এবং শিক্ষাগত ইস্যুতে সহায়তা করা।
  3. সরকারি সংস্থাগুলি – আইনি এবং সামাজিক পরামর্শ দান, নীতি নির্মাণে সহায়তা।
  4. অলাভজনক সংস্থা – সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ও তদারকি করা।

সমাজকর্মীদের এই দায়িত্ব এবং ক্ষেত্রবিশেষে তাদের কর্মসূচি, তাদেরকে সমাজের অন্যান্য পেশাজীবীদের চেয়ে অদ্বিতীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। সমাজকর্মীরা অধিকতর টেকসই এবং শক্তিশালী সমাজ গড়ার লক্ষ্যে নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যায়।

সমাজকর্মের ইতিহাস

সমাজকর্মের বিবর্তনসামাজিক কাজের ইতিহাস আমাদের অতীত এবং বর্তমান সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে কিভাবে ঘটেছে তা বোঝার এক অনন্য উপায় প্রদান করে।

সমাজকর্মের বিকাশ

১৯৮০-র দশক থেকে সমাজকর্মের চর্চা ও শিক্ষা আধুনিকায়নে জোরদার ভূমিকা রাখা হয়েছে। এর ফলে সামাজিক কাজের এক নতুন ধারা তৈরি হয়, যা সামাজিক কাজের মাইলফলক হিসেবে গণ্য হয়।

গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার পরিচিতি

সমাজকর্মের ইতিহাসে অনেক ঘটনা ও উদ্যোগ স্মরণীয় স্থান পেয়েছে। মানবাধিকারের সংজ্ঞা ও রক্ষা, স্বাস্থ্য সমস্যা এবং শিক্ষাগত অভাব নিরসনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির অবদান এই খাতকে আরো গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

আরও পড়ুনঃ  ১ ফুট কত ইঞ্চি?

এই ধারাবাহিক প্রয়াস ও অবদান সমাজকর্মের ইতিহাসকে শুধু পেশাগত ও শিক্ষাগত দিক থেকে নয়, বরং সামগ্রিকভাবে এক প্রশংসনীয় ও অনুকরণীয় মাইলস্টোনে পরিণত করেছে।

সামাজিক সমস্যা ও সেগুলোর সমাধান

সামাজিক সমস্যা হল এমন একটি প্রশ্ন যা সমাজে প্রতিনিয়ত বিবেচনার আলোচনা করে থাকে। এই সমস্যাগুলির মৌলিক কারণ ও প্রভাব বুঝতে পেরে তার উপযুক্ত সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

দারিদ্র্য

দারিদ্র্য বিমোচন একটি অত্যন্ত জরুরি আগ্রহের বিষয় যা সামাজিক সমস্যা হিসেবে কাজ করে। সম্পদ ও সুযোগের সমান বণ্টন না হওয়ায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে এর তীব্রতা বাড়ে।

  • সমাজকর্মীদের উদ্যোগে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • শিক্ষামূলক কর্মশালা ও ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে আর্থিক স্বাবলম্বন প্রচার।
  • স্থায়ী কৃষি ও ক্ষুদ্র উদ্যোগ উন্নয়নে পরামর্শদান।

স্বাস্থ্য সমস্যা

স্বাস্থ্য সমস্যা, বিশেষ করে জনস্বাস্থ্যের সমস্যা, সমাজের ব্যাপক অংশকে প্রভাবিত করে। এর প্রেক্ষিতে সমাজকর্মীদের করণীয়:

  1. স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরামর্শের মাধ্যমে জনগণকে সুস্থ্য অভ্যাস গ্রহণে উৎসাহিত করা।
  2. প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা ও দুর্গম অঞ্চলে চিকিৎসার পৌঁছানো।
  3. স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং পানীয় জল নিশ্চিত করা।

শিক্ষার অভাব

শিক্ষার অভাব সমাজকে অন্যান্য সামাজিক সমস্যা-র দিকে ঠেলে দেয়। এই বিষয়ে সামাজিক কর্মসূচি:

  • অধিকারবাদী শিক্ষার মাধ্যমে সকলের জন্য একটি সমান শিক্ষা প্রাপ্তির সুযোগ তৈরি।
  • ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতির প্রসার।
  • শিক্ষাক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহনের মাধ্যমে অধীনস্থ অঞ্চলগুলিতে শিক্ষার মান বৃদ্ধি।

এই উদ্যোগসমূহ প্রতিটি সামাজিক সমস্যার নিরসনে সমাজকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সমাজকর্মের নীতিমালা

সমাজকর্মের ক্ষেত্রে নীতি এবং নৈতিকতা একটি মৌলিক উপাদান যা এই পেশার গভীরতা এবং প্রশংসা নির্ধারণ করে। সামাজিক কাজের নীতি এমনকি যে কোনও শাখায় কাজ করার সময় সামাজিক কর্মীদের মানদণ্ড এবং প্রক্রিয়া নির্দেশ করে। নিম্নে সামাজিক কাজের নৈতিক প্রসঙ্গ এবং মানবাধিকারের গুরুত্ব উপর আলোকপাত করা হলো:

আরও পড়ুনঃ  Noun কাকে বলে?

নৈতিক দায়িত্ব

সমাজকর্মীদের মূল কাজ হলো নৈতিক দায়িত্বতা এবং সেবা মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠান এবং বহন করা। এই নীতিগুলি ব্যাখ্যা করার মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয় যে প্রতিটি ব্যক্তির প্রতি সমান মর্যাদা এবং সম্মান নিশ্চিত করা হয়।

  • প্রতিশ্রুতি এবং সততা
  • পেশাদারিত্বের মান ধরে রাখা
  • ক্লায়েন্টের প্রতি গোপনীয়তা রক্ষা

মানবাধিকার

সমাজকর্মের এক অপরিহার্য উপাদান হল মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচার। পেশাগতভাবে, সামাজিক কর্মীরা সব মানুষের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং সমর্থন নিশ্চিত করে কাজ করে। তারা ন্যায়বিচার এবং সমানুভূতির সঙ্গে সব মানুষের স্বাধীনতা ও সমানাধিকার নিশ্চিত করা কাজে দায়বদ্ধ থাকেন।

  1. সবার জন্য সমান অধিকারের প্রচার
  2. অবহেলিত ও বঞ্চিতদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ
  3. সমাজের প্রতিটি স্তরে ন্যায়বিচার এবং সহায়তার সুযোগ সরবরাহ

সামাজিক কল্যাণ কর্মসূচি

আধুনিক সমাজে, সরকারি ও বেসরকারি উভয় সংস্থার নিরলস প্রচেষ্টায় সামাজিক কর্মসূচিগুলি নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান বাড়াতে এবং তাদের ঝুঁকি হ্রাস করার উদ্যোগ হিসেবে কাজ করে।

সরকারি উদ্যোগ

সরকারি সামাজিক কর্মসূচি একটি প্রধান কলাম হিসেবে কাজ করে, যা নানা সামাজিক নিরাপত্তা প্রমাণসমুহের মাধ্যমে বৃদ্ধ বয়সের ভাতা, সন্তান ভাতা, স্বাস্থ্যসেবা, পিতামাতার ছুটি, বেকার ভাতা এবং শারীরিক অক্ষমতা ভাতার মতো দিকে বিশেষ নজর দেয়। এর মাধ্যমে 9.1% সমাজকল্যাণ প্রশাসন সম্পর্কিত উপাদান এবং 9.2% প্রশাসনিক উপাদানের গুরুত্ব প্রাপ্ত হয়েছে।

বেসরকারি উদ্যোগ

অপরদিকে, বেসরকারি সংস্থাগুলি গৃহায়ন, শিক্ষা এবং পেশাগত প্রশিক্ষণের মত বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে অবকাঠামো তৈরি এবং বিনামূল্যে সেবা প্রদান করে থাকে। সরকারি সামাজিক সেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তার মূল ধারণা ও উদ্দেশ্য বজায় রাখতে বেসরকারি খাত অত্যন্ত সক্রিয়। 9.3% সামাজিক কল্যাণ প্রশাসনের গুরুত্ব এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্য।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button