SWOT কি?

ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা বা প্রকল্প পরিকল্পনার সাথে সম্পর্কিত একজন ব্যক্তি বা সংস্থার শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ, এবং হুমকিগুলি চিহ্নিত করার অত্যন্ত জরুরি একটি কৌশলগত পরিকল্পনা টুল হল SWOT বিশ্লেষণ। এই ম্যাট্রিক্সের চারটি উপাদান একটি ২x২ ম্যাট্রিক্সে অর্থাৎ সোয়াট ম্যাট্রিক্সে সজ্জিত হয়ে থাকে, যা মূলত সংগঠন বা ব্যক্তির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক কারণগুলির প্রভাব মূল্যায়ন করে।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রাক্কালে, শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ, এবং হুমকি – এই চার ঘটকের বিশ্লেষণ করে SWOT এন্টারপ্রেনারিয়াল বা প্রকল্পের লক্ষ্যগুলির অর্জনে অত্যন্ত কার্যকরী হয়ে উঠে। এই বিশ্লেষণের ফলাফল প্রায়শই ম্যাট্রিক্স বা অনুচ্ছেদ আকারে প্রকাশ পায় এবং এটি পরবর্তী পর্যায়ে কৌশলগত পরিকল্পনায় অন্তর্নিহিত গুরত্বপূর্ণ যে কোনো বিষয়কে বিশেষ মাত্রা দিতে সক্ষম করে।

SWOT এর পরিচয়

SWOT বিশ্লেষণ হলো একটি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত কৌশল, যা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের মজবুত এবং দুর্বল দিকসমূহ সনাক্ত করে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণে সহায়তা করে। এই বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রথম ৩ দশক আগে পরিচিত হয়েছিল এবং এটি এখনো বিভিন্ন শিল্প ও ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি টুল হিসেবে কাজ করছে।

বিশ্লেষণের এই পদ্ধতিটি প্রধানত চারটি মৌলিক উপাদানের উপর ভিত্তি করে—শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ, এবং হুমকি। এই উপাদানগুলো দেখে প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের কৌশলগত অবস্থান বুঝতে পারে এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা তৈরিতে সহায়তা করে।

এই পদ্ধতির মাধ্যমে পরিচয় পেয়ে অর্থ নির্ণয় করা হয় যে প্রতিষ্ঠানের কোন দিকগুলি শক্তিশালী, কোন দিকগুলি দুর্বল, কি ধরনের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে, এবং কোন কোন হুমকিগুলি মোকাবেলা করা প্রয়োজন।

SWOT কি?

SWOT হলো একটি অভিগাম্য কৌশল যা ‘শক্তি’ (Strengths), ‘দুর্বলতা’ (Weaknesses), ‘সুযোগ’ (Opportunities) এবং ‘হুমকি’ (Threats) এর আদ্যাক্ষর নিয়ে গঠিত। এটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক দুই ধরনের কৌশলগত ফ্যাক্টরসমূহ সনাক্ত করে এবং মূল্যায়ন করে থাকে।

আরও পড়ুনঃ  মার্কেটিং এর জনক কে?

SWOT এর ইতিহাস

SWOT বিশ্লেষণের ধারণা ১৯৬০ সালে এডমন্ড পি. লার্নড, সি. রোলান্ড ক্রিস্টেনসেন, কেনেথ অ্যান্ড্রুস এবং উইলিয়াম ডি. গাথ কর্তৃক উদ্ভাবিত হয়েছিল, যারা ব্যবসায়ের কৌশলগত উন্নতির প্রক্রিয়ায় অবদান রেখেছিলেন। যেহেতু এর প্রথম উপযোগ হিসাবে তারা প্রতিষ্ঠানিক গড়ন ও প্রবাহিত ক্রিয়াকলাপের সূচনা করেন, এটি তাদের দ্বারা সৃষ্টির পটভূমি বোঝানো হয়।

SWOT বিশ্লেষণের উপাদান

SWOT বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান তার অভ্যন্তরীণ শক্তি ও দুর্বলতা এবং বাহ্যিক সুযোগ ও হুমকিগুলি চিহ্নিত করে থাকে। এই বিশ্লেষণ মূলত চারটি মৌলিক উপাদানে ভিত্তি করে গঠিত।

শক্তি (Strengths)

প্রতিষ্ঠানের শক্তি হলো সেই সকল অভ্যন্তরীণ সুবিধা যা এটিকে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখে। এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:

  • উন্নত প্রযুক্তি
  • দক্ষ বিক্রয় ও বিপণন দল
  • অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা
  • পণ্যের মান

দুর্বলতা (Weaknesses)

প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা হলো এমন সব অভ্যন্তরীণ অসুবিধা যা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দেয়। এগুলি হতে পারে:

  • উচ্চ উৎপাদন ব্যয়
  • গৃহীত প্রযুক্তিতে পুরনোত্ব
  • কর্মীদের দক্ষতার অভাব

সুযোগ (Opportunities)

বাহ্যিক সুযোগ গুলো হলো সেই সকল উপাদান যা প্রতিষ্ঠানকে উন্নতির দিশা দেখায়, যেমন:

  • নতুন বাজারে প্রবেশের সম্ভাবনা
  • বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় বিস্তার
  • গ্রাহকদের চাহিদা পূরণ

হুমকি (Threats)

প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়ানো হুমকি গুলো হতে পারে বাহ্যিক সব কারণের জন্য যা তার বিকাশে বাধা দেয়, এর মধ্যে রয়েছে:

  • প্রতিদ্বন্দ্বীদের কর্মকৌশল
  • আইনিগত প্রতিবন্ধকতা
  • অর্থনৈতিক মন্দাভাব

SWOT বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিটি উপাদান সুনির্দিষ্ট ভাবে আলোচিত হয়, যা কোম্পানির চারপাশের প্রতিযোগিতার পরিবেশকে পূর্ণ ভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।

SWOT বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া

SWOT বিশ্লেষণের যাত্রা শুরু হয় তথ্য সংগ্রহ দিয়ে। এই প্রাথমিক ধাপে, প্রাসঙ্গিক মার্কেটের গবেষণা, গ্রাহকদের মতামত, প্রতিযোগিতামূলক তথ্য এবং আভ্যন্তরীণ ডাটার বিশদ পর্যালোচনা অনিবার্য। যথাযথ ডাটা বিশ্লেষণ অত্যন্ত জরুরি যা পরবর্তীকালে কর্মপরিকল্পনার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।

তথ্য সংগ্রহ

  • মার্কেট গবেষণা: বাজারের চাহিদা ও ট্রেন্ড বুঝতে অপরিহার্য।
  • গ্রাহকের মতামত: গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়া যা পণ্য বা সেবার গুণগত মান নির্ণয়ে সাহায্য করে।
  • প্রতিদ্বন্দ্বীদের তথ্য: মার্কেট পজিশন এবং প্রতিযোগীদের কৌশলগত পরিকল্পনা জানা।
  • অভ্যন্তরীণ পরিসংখ্যান: সংস্থার সামগ্রিক কর্মক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা বিশ্লেষণ।
আরও পড়ুনঃ  সমবায় সমিতি কাকে বলে?

বিশ্লেষণ এবং মূল্যায়ন

সঠিক গবেষণা এবং তথ্য সংগ্রহের পরে, এবার আসে বিশ্লেষণের পালা। এই পর্যায়ে, সংগৃহীত তথ্যগুলির উপর ভিত্তি করে একটি বাস্তবসম্মত ও কার্যকর মূল্যায়ন প্রয়োজন যা প্রতিষ্ঠানের শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ এবং হুমকিগুলোর স্পষ্ট উপস্থাপন করে থাকে।

  1. শক্তি ও দুর্বলতা নির্ণয়: প্রতিষ্ঠানের আভ্যন্তরীণ ক্ষমতা এবং ঘাটতি চিন্হিত করা।
  2. সুযোগের সনাক্তকরণ: বাজারে নতুন সুযোগ চিহ্নিত করে তাদের দখলের কৌশল প্রণয়ন।
  3. হুমকি মূল্যায়ন: প্রতিযোগিতা এবং বাজারের অন্যান্য চ্যালেঞ্জগুলি সনাক্ত করা এবং প্রতিকার খোঁজা।
  4. কর্ম পরিকল্পনার প্রণয়ন: সংগৃহীত বিশ্লেষণগুলো থেকে সামনের পথের জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি তৈরি করা।

এভাবে SWOT বিশ্লেষণ‌ একটি সংগঠনের বর্তমান স্থিতি এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনার জন্য এক অপরিহার্য প্রক্রিয়া হয়ে উঠেছে।

SWOT ব্যবহার কেন জরুরি?

SWOT বিশ্লেষণ সংস্থার মৌলিক দিকগুলোর এক সুস্পষ্ট ভিত্তি রচনা করে, যা ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নির্ধারণে অপরিহার্য। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের শক্তি এবং দুর্বলতার সম্যক অবলোকন পায় এবং বাজারের সুযোগ এবং হুমকিগুলির সম্যক পূর্বাভাস গ্রহণ করে।

ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তে গুরত্ব

SWOT বিশ্লেষণ প্রাসঙ্গিক কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়নে সাহায্য করে, যা প্রতিষ্ঠানকে সুসংগঠিত ও জোরদার সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করে। এই ধরণের ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত পথচলায় অবদান রাখে।

সমস্যা সমাধানের জন্য কৌশল

যখন আপনি SWOT বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের শক্তি ও দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করেছেন, তখন আপনি সমাধানের জন্য কৌশল গ্রহণের পাশাপাশি পরিকল্পনা গড়তে পারেন। এর ফলে প্রতিষ্ঠান প্রতিকূলতা মোকাবেলায় সঠিক কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে পারে।

SWOT এর সুবিধা

SWOT বিশ্লেষণ ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহণে এক অপরিহার্য কৌশল হিসেবে গণ্য হয়। এর প্রধান সুবিধা হলো এর সহজ এবং কার্যকরী প্রয়োগ, যা যে কোনো প্রতিষ্ঠানের দ্রুত এবং সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

সহজ ও কার্যকারী পদ্ধতি

SWOT বিশ্লেষণ একটি 2×2 ম্যাট্রিক্স পদ্ধতি অনুসরণ করে, যেখানে শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ, এবং হুমকি- এই চারটি উপাদান অন্তর্ভুক্ত থাকে। এই সাধারণ কাঠামোর মাধ্যমে, এটি ব্যবসায়ের সবচেয়ে জরুরি দিকগুলি সনাক্ত করা সহজ হয়, যা কার্যকারিতা বৃদ্ধির পথ দেখায়।

আরও পড়ুনঃ  উপযোগ কাকে বলে?

সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক

  • SWOT বিশ্লেষণ প্রয়োগ করে, প্রতিষ্ঠান তাদের বর্তমান পরিস্থিতি বুঝতে পারে এবং প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে তাদের স্থান নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়।

  • এটি সিদ্ধান্ত সহায়তা করে এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবসায়িক কৌশল নির্ধারণে বিশেষভাবে উপকারী।

  • বিশ্লেষণে উত্থাপিত তথ্য সহায়ক হতে পারে প্রতিযোগিতা অবস্থানে 7 টি দিক নির্ধারণে।

শেষ পর্যন্ত, SWOT বিশ্লেষণ হল একটি মূল্যবান সরঞ্জাম যা যে কোনো সংস্থা বা প্রকল্পের SWOT সুবিধা কে মূল্যায়ন এবং উন্নত করার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে কাজ করে।

SWOT এর সীমাবদ্ধতা

স্বত:স্ফূর্ত ব্যক্তিত্ব এবং সংস্থার উন্নতিকে পরিমাপ করার জন্য একটি সুশৃঙ্খল যন্ত্র হিসেবে SWOT বিশ্লেষণকে প্রচুর গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে। এটি সাহায্য করে শক্তি, দুর্বলতা, সুযোগ এবং হুমকিগুলি চিন্হিত করে তাদের উপর কাজ করতে। কিন্তু প্রতিটি মডেলের মতোই, SWOT বিশ্লেষণের নিজস্ব কিছু SWOT সীমাবদ্ধতা রয়েছে যা এর প্রভাবকে সীমিত করতে পারে।

সব থেকে বড় তথ্য নির্ভরতা হল, যা নির্ধারণ করে বিশ্লেষণের সঠিকতা। এই ধরনের বিশ্লেষণ মূলত যে সমস্ত তথ্যের উপর নির্ভর করে, সেগুলি যদি অপূর্ণ বা বিকৃত হয়ে থাকে, তবে সঠিক সিদ্ধান্তে আসা কঠিন হয়ে যায়।

তথ্যের নির্ভরতা

উদাহরণ স্বরূপ, একটি পিজ্জা দোকানের বিশ্লেষণে, যদি অভিজ্ঞ স্টাফ, অত্যন্ত গুণমানের পিজ্জা বা অনন্য গার্লিক পিজ্জা রেসিপির মতো শক্তির উপাদানগুলি সঠিকভাবে চিন্হিত করা না হয়, তাহলে পরিকল্পনা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। এইভাবে SWOT সীমাবদ্ধতা আবিষ্কার করা যায়, যেমন তৈরি কৌশলের ফাঁক বা বাজারের নতুন প্রবণতা বা আইনের পরিবর্তন যা ব্যবসায়িক অপারেশনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

তাই, SWOT বিশ্লেষণের সফলতা অনেক অংশে নির্ভর করে তার অন্তর্ভুক্ত তথ্যের মান এবং পর্যাপ্ততার উপর। সঠিক এবং নির্ভুল তথ্যের সংগ্রহের প্রতি জোর দিলে, ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত উন্নতির পথে SWOT একটি শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত হতে পারে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button