বাংলাদেশের শিক্ষার হার কত?

শিক্ষা হলো একটি জাতির অগ্রগতির প্রধান হাতিয়ার এবং বাংলাদেশের শিক্ষাগত উন্নয়ন গত কয়েক দশকে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ২০২২ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে সাক্ষরতা হার দাঁড়িয়েছে ৭৪.৬৬% এ, যেখানে পুরুষদের হার ৭৬.৫৬% এবং নারীদের হার ৭২.৮২%। এই হারের প্রচলন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো দ্বারা নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং এটি দেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধির একটি প্রমাণ হিসেবে দেখা হয়।

দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় মোট নিবন্ধন সংখ্যা ২০১৯ সালে ছিল ২৩,৯০৭,১৫১ জন, যার মধ্যে প্রাথমিকে ১৬,২৩০,০০০ জন এবং মাধ্যমিকে ৭,৪০০,০০০ জন শিক্ষার্থীদের ভর্তি সংখ্যাটি দেশের শিক্ষা সেক্টরের বেড়ে উঠার প্রচেষ্টাকে তুলে ধরে। সরকারের বরাদ্দ করা বাজেটে শিক্ষা খাতের জন্য ব্যয় করা হয়েছে ৮১,৪৪৯ কোটি টাকা, যেখানে শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ১২% বরাদ্দ করা হয়েছে। এমনকি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক পদের ৬০ শতাংশ নারীদের জন্য বরাদ্দ করে শিক্ষার উন্নয়নে নারী অগ্রগতিকে গুরুত্ব দিয়েছে বাংলাদেশ।

Contents show

বাংলাদেশের বর্তমান শিক্ষার হার

স্বাক্ষরতা ও শিক্ষায় বাংলাদেশের প্রগতি উল্লেখযোগ্য। বর্তমান সাক্ষরতা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবছর বাংলাদেশের শিক্ষাগত অগ্রগতি ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট স্বাক্ষরতা হার বর্তমানে ৭৮.৭% যাতে পুরুষের স্বাক্ষরতা হার হচ্ছে ৮০.৭% এবং মহিলাদের স্বাক্ষরতা হার হচ্ছে ৭৮.৯%। গ্রামীণ এলাকায় যেখানে সাক্ষরতা-হার অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে শহুরে এলাকায় এর হার আরও উচ্চ।

২০২৪ সালের তথ্য

২০২৪ সালে বাংলাদেশ শিক্ষা হার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, দেশের শিক্ষার অগ্রযাত্রা আরো দৃঢ়তার সাথে এগিয়ে চলেছে। বিগত বছরের তুলনায় শিক্ষার হার লক্ষযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা বাংলাদেশকে আরো সমৃদ্ধশালী ও শিক্ষিত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করছে। বিগত বছরের ৭৪.৬৬% থেকে বাংলাদেশের মোট স্বাক্ষরতা হার এই বছর ৭৬.৮%-এ পৌঁছেছে, যা শিক্ষার উপর সরকারের স্থায়ী বিনিয়োগের ফল।

শিক্ষার হার বৃদ্ধির কারণসমূহ

বাংলাদেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেতে সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষার কার্যক্রম সমানভাবে ভূমিকা রাখছে। এই দুই খাতের সামগ্রিক প্রচেষ্টা এই উন্নয়নকে তরান্বিত করেছে।

সরকারের উদ্যোগ

সরকারি উদ্যোগ বিভিন্ন মাত্রায় বাস্তবায়িত হয়েছে। মূলত শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, তারুণ্যমুখী কর্মসূচি রূপায়ণ, এবং যৌথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে যা শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

বেসরকারি সংস্থার অবদান

বেসরকারি খাত তাদের বেসরকারি শিক্ষার কার্যক্রম এর মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নয়নে অগ্রসর হচ্ছে। বিভিন্ন নতুন শিক্ষামূলক প্রকল্প এবং উদ্ভাবনী শিক্ষার উপায় চালু করে তারা শিক্ষার হার বৃদ্ধি সাধনে ভূমিকা রাখছে।

  • শিক্ষা প্রসারে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার।
  • বৈশিষ্ট্যযুক্ত শিক্ষাগত উদ্ভাবনী কর্মসূচি চালু।
  • শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি।
আরও পড়ুনঃ  ১ লিটার সমান কত মিলিলিটার?

সর্বোগ্রেগভাবে, এই দুই খাতের সম্মিলিত প্রয়াস বাংলাদেশে শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে চালিয়ে যাচ্ছে এবং এর ফলাফল দেশের উন্নয়নের মানচিত্রে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।

শিক্ষা ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ

বাংলাদেশের শিক্ষাগত উন্নয়নে বিভিন্ন ধরণের চ্যালেঞ্জ রয়েছে যা শিক্ষার হার বৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

অর্থনৈতিক বাধা

বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বাধা একটি প্রধান শিক্ষাগত চ্যালেঞ্জ হিসাবে পরিগণিত হয়। অনেক পরিবারের জন্য, শিক্ষার খরচ বহন করা সম্ভব হয় না, যা বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষার হারে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

সামাজিক সমস্যা

সামাজিক অসহিষ্ণুতা যেমন লিঙ্গ, জাতিগত এবং আর্থ-সামাজিক বৈষম্যও শিক্ষার প্রসারে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। অনেক সময় এই অসহিষ্ণুতা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার অধিকার হরণ করে থাকে।

অবকাঠামোগত দুর্বলতা

পর্যাপ্ত শিক্ষাগত অবকাঠামোর অভাব এবং মানসম্মত শিক্ষকদের অভাব শিক্ষার মান উন্নয়নে বাধা হয়ে থাকে। বিশেষ করে দূরবর্তী এলাকাগুলিতে এই সমস্যা অধিক পরিলক্ষিত হয়।

এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করতে হলে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সরকার এবং সমাজের সকল স্তর থেকে এগিয়ে আসা অপরিহার্য।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার হার

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও উন্নতি ঘটেছে। প্রাথমিক শিক্ষা এবং মাধ্যমিক শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মান উন্নয়নের দিকে।

প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সংখ্যা

সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রাথমিক শিক্ষার হার বাংলাদেশে বিগত বছরগুলোতে নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২০ সালের তুলনায় ৯৮% পর্যন্ত পৌঁছেছে। এই সংখ্যার বৃদ্ধি শিক্ষা সেক্টরে বাজেট বরাদ্দের বৃদ্ধি এবং শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের ফলস্বরূপ।

মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার অবস্থান

মাধ্যমিক শিক্ষাতেও একইরকম পজিটিভ চিত্র লক্ষ্য করা যায়। ২০১৯ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে এবং সেই সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মানও বেশ কিছু উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশে এখন প্রায় ৭,৪০০,০০০ শিক্ষার্থী মাধ্যমিক শিক্ষাতে নিবন্ধিত।

এই উত্থানের পিছনে রয়েছে যথাযথ শিক্ষা নীতি, বাজেট বৃদ্ধি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের অবকাঠামোগত প্রচেষ্টা। একইসাথে, শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তিকরণের প্রভাব এবং বিশ্বায়নের প্রসার শিক্ষার পরিধি ও মান বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

উচ্চ শিক্ষার প্রবণতা

বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষা সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, বিশেষ করে নারীর শিক্ষা উন্নয়নের দিক দিয়ে। প্রাক্তনভাবে লিঙ্গ ভিত্তিক শিক্ষার পার্থক্য চলমান থাকলেও, সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হার অনেক বেড়েছে যা শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি সুখকর পরিবর্তন নিয়ে আসছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হার

বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়ায় স্থিরতা দেখা গেলেও, গত কয়েক বছরে নারীরা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখিয়েছে। প্রাথমিকভাবে সামাজিক অন্তরায়ের পরও এই প্রবৃদ্ধি নারীদের শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত করেছে।

নারীদের উচ্চ শিক্ষায় অংশগ্রহণ

নারী শিক্ষার প্রসারে বাংলাদেশ সুস্পষ্ট ধাপগুলি পেরিয়ে যাচ্ছে, যেখানে নারীরা উচ্চতর ডিগ্রি প্রাপ্তির মাধ্যমে তাদের পেশাগত ও ব্যক্তিগত অগ্রগতি নিশ্চিত করছে। একদিকে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হার বৃদ্ধি পেয়েছে তখন অপরদিকে নারীর শিক্ষা দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারে সাহায্য করছে। এর ফলে, শিক্ষিত নারীরা অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে অধিক সক্রিয় হয়ে উঠছেন যা দেশের উন্নয়নে সরাসরি অবদান রাখছে।

আরও পড়ুনঃ  বাংলাদেশের মুদ্রার নাম কি?

শিক্ষার মান উত্তরণ

বাংলাদেশে শিক্ষার মান বৃদ্ধি সাধনের লক্ষ্যে পাঠ্যক্রমের আধুনিকায়ন এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এই দুই সেক্টরে উন্নয়নের মাধ্যমে শিক্ষার গুণগত মান বাড়ানো সম্ভব।

পাঠ্যক্রমের পরিবর্তন

সমসাময়িক প্রয়োজন অনুযায়ী পাঠ্যক্রম পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। বর্তমান পাঠ্যক্রম যেন শিক্ষার মানকে আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে মিলিয়ে তুলতে পারে সে দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বৈশ্বিক দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়।

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ

একজন যোগ্য শিক্ষক হলেন শিক্ষার স্তম্ভ। শিক্ষক প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামগুলো শিক্ষকদের কাছে আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতি ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা উন্নয়নে সহায়তা করে। এর ফলে তারা শিক্ষার্থীদের আরও ভালোভাবে শিক্ষা দিতে সক্ষম হন।

  • প্রশিক্ষণ মাধ্যমে শিক্ষকদের একটি সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
  • শিক্ষার মান বৃদ্ধিতে শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রভাব উল্লেখ করা।

এই সকল প্রযাসের একমাত্র লক্ষ্য হলো উন্নত মানের শিক্ষা প্রদান করা যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবনে সফল করে তুলবে। বর্তমান ধারণা অনুযায়ী, উচ্চতর শিক্ষাগত মান সমগ্র জাতির অগ্রগতির মূল উপাদান হিসেবে কাজ করে।

ডিজিটাল শিক্ষার সুযোগ

বাংলাদেশে ডিজিটাল শিক্ষা এবং ডিজিটাল বিকাশ এর প্রসার ঘটছে যা শিক্ষার মান ও প্রাপ্যতা উন্নত করছে। সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগের অধীনে, বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যা অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম গুলোর মাধ্যমে শিক্ষার সামগ্রিক কাঠামো পরিবর্তন করেছে।

অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম

অনলাইন শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা প্রাপ্তির দরজা খুলে দিয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সব স্তরের শিক্ষার্থীরা সহজেই উচ্চমানের শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে।

ডিজিটাল শিক্ষার বিকাশ

  • ১০,০০০ স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের পরিকল্পনা।
  • শিক্ষকদের ডিজিটাল লার্নিং প্লাটফর্ম মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দেওয়া।
  • ২০২৫ সাল নাগাদ স্থির লাইন ব্রডব্যান্ডের ১০০% প্রবেশযোগ্যতা অর্জনের লক্ষ্য।

এই উদ্যোগগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে ডিজিটাল সংযোগ এবং প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়িয়ে তুলছে, যা শিক্ষার সম্প্রসারণ ও গুনগত মান উন্নয়নে অবদান রাখছে।

নগর ও গ্রামীণ শিক্ষার সমতা

বাংলাদেশে নগর গ্রামীণ শিক্ষা ব্যবস্থায় বিস্তর পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। নগর এলাকায় যেমন উন্নত সুযোগ-সুবিধা উপলব্ধ, তেমনি গ্রামীণ এলাকায় বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এই অসামঞ্জস্যতা দূরীকরণে প্রয়োজন শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।

নগরে শিক্ষার সুবিধা

নগরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা উন্নত অবকাঠামো, যোগাযোগ, পাঠাগার, ল্যাবরেটরি এবং প্রযুক্তির সুবিধা ভোগ করে থাকে। এছাড়াও, বড় বড় শহরে জ্ঞানের পরিবেশ ও মানসিক উন্নয়নের অনেক উপাদান পাওয়া যায়।

গ্রামে শিক্ষার চ্যালেঞ্জ

  • গ্রামীণ এলাকায় গ্রামীণ শিক্ষার বাধা গুলি অনেক বেশি।
  • শিক্ষকদের অভাব, দূরে অবস্থিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এবং অপ্রতুল শিক্ষার উপকরণ প্রধান সমস্যা।
  • ডিজিটাল শিক্ষার অপ্রাপ্যতা এবং ইন্টারনেটের অনুপস্থিতি শিক্ষার মানকে প্রভাবিত করে।
  • যথাযথ পাঠাগার ও ল্যাবরেটরির অভাবে ব্যাহত হয় প্রায়োগিক জ্ঞানার্জন।

এই অসমতাগুলি দূরীকরণের জন্য নতুন উদ্যোগ এবং সরকারি পরিকল্পনার ব্যাপক প্রয়োজন। নগর ও গ্রামীণ শিক্ষায় সাম্য আনয়নের মাধ্যমেই কেবল একটি সুশিক্ষিত ও উন্নত জাতি গঠন সম্ভব।

আন্তর্জাতিক তুলনা

বাংলাদেশের শিক্ষাগত উন্নয়ন বিশ্ব পরিমণ্ডলে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখাচ্ছে। এই প্রগতির সঙ্গে প্রতিবেশী দেশের শিক্ষা এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষাগত উন্নয়নের তুলনা করা জরুরি। এতে করে আমরা আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা হার এবং উন্নয়নের ধারা বুঝতে পারছি, যা বাংলাদেশের শিক্ষানীতি গঠনে অমূল্য অবদান রাখতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  প্রশিক্ষণ কাকে বলে?

প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনা

প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে, বাংলাদেশ শিক্ষার হার বিবেচনায় অনেক অগ্রগামী। বিশেষ করে, মৌলিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এর অগ্রগতি নজরকাড়া। এই অগ্রগতি অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভালো। এই তুলনায় দেখা যায়, বিশেষত দক্ষিণ এশিয়াতে, বাংলাদেশ শিক্ষাগত উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।

বিশ্বব্যাপী শিক্ষার হার

বিশ্বব্যাপী শিক্ষাগত উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্থান উল্লেখযোগ্য। আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা হার পরিচালনায় এই দেশ বিভিন্ন উদ্যোগ এবং উন্নয়নশীল প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যা বহির্বিশ্বের অনেক দেশকে ছাড়িয়ে গেছে। এটি একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত যে, সীমিত সম্পদ নিয়েও উল্লেখযোগ্য শিক্ষাগত উন্নয়ন সম্ভব।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বাংলাদেশের শিক্ষাগত উন্নয়নের পরিকল্পনা নতুন মাত্রা লাভ করেছে সরকারি পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে। এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার প্রসার এবং গুণগত মান বৃদ্ধি করা। সরকার এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থানের সমন্বয়ে এই উদ্যোগ আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

সরকারের নতুন পদক্ষেপ

সরকার শিক্ষাখাতে নানাবিধ নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যা শিক্ষাগত উন্নয়নের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এই উদ্যোগগুলি মূলত ডিজিটাল প্রযুক্তির সমন্বয়, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, পাঠ্যক্রমের উন্নতিকরণ, এবং শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি সুবিধার ব্যবস্থা করা।

আন্তর্জাতিক সহযোগিতা

বিশ্বব্যাপী অনেক দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের শিক্ষা উন্নয়নে সহযোগিতা করছে। এর মাধ্যমে সরকারি পদক্ষেপের পাশাপাশি আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে, যা সমগ্র শিক্ষা খাতকে আরও সমৃদ্ধ করছে।

তাছাড়া নতুন জ্ঞান এবং প্রযুক্তির স্থানান্তর, যৌথ গবেষণা প্রকল্প, এবং শিক্ষা উন্নয়নের জন্য সেরা প্রক্রিয়াগুলো ভাগাভাগি করা বাংলাদেশের এই সেক্টরের জন্য বিশেষ উপকারী হচ্ছে।

শিক্ষায় প্রযুক্তির ভূমিকা

ইউনেস্কো এর মতে, একুশ শতকের শিক্ষা ব্যবস্থায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) দক্ষতার গুরুত্ব অসামান্য। প্রযুক্তি শিক্ষা, শিক্ষায় উদ্ভাবন এবং ডিজিটাল শিক্ষার পদ্ধতি – এসব বিষয় বাংলাদেশের শিক্ষা প্রণালীতে সাবলীলতার সাথে সমন্বিত হয়ে নতুন প্রজন্মকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলছে।

প্রযুক্তির ব্যবহার সহায়তা

শিক্ষা খাতে প্রযুক্তির অগ্রগতি সামাজিক উন্নয়নে এক অপরিহার্য অবদান রাখে। শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, মাল্টিমিডিয়া, টেলিভিশন এবং রেডিও এর মতো হার্ডওয়্যার এবং সফ্টওয়্যারের জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন শিক্ষা খাতে আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে, প্রায় ১,৫০,০০০ মানুষ এই প্রযুক্তির উন্নয়নে প্রভাবিত হয়েছে এবং প্রায় ৪০০ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষায় উদ্ভাবনী প্রযুক্তিগুলি ব্যবহার ও বাস্তবায়নে সক্রিয় রয়েছে।

শিক্ষার উদ্ভাবনী পদ্ধতি

১৯৭৮ সালে শুরু হওয়া স্কুল ব্রডকাস্টিং পাইলট প্রজেক্ট থেকে শুরু করে ১৯৮৫ সালে জাতীয় শিক্ষা মিডিয়া ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের স্থাপন অবধি, শিক্ষায় প্রযুক্তির অভিনব পদ্ধতির উপর জোর দিয়ে আসা হয়েছে। বিভিন্ন কম্পিউটার/ল্যাপটপ, ইন্টারনেট, স্মার্টফোন/ট্যাবলেট, মাল্টিমিডিয়া ইত্যাদি প্রযুক্তিগুলির শিক্ষা খাতে ব্যবহার এবং অনুপ্রয়োগের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যা আমাদের স্টুডেন্টদের টেকনোলজি নির্ভর ক্যারিয়ারের জন্য প্রস্তুত করছে। বর্তমানে শিক্ষা খাতের প্রায় ২০২টি প্রকল্পে এই দিক-নির্দেশনা ও প্রভাবের পরিচয় ঘটেছে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button