প্রশিক্ষণ কাকে বলে?

কর্মজীবনে এগিয়ে যাওয়া, পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি, এবং মানসিক উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যাপ্তি অপরিসীম। বাংলাদেশে, প্রশিক্ষণের ধারণা মৌলিক ভাবে বিস্তৃত হয়েছে যেখানে প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা তরুণ এবং জীবনের অগ্রযাত্রায় এক তুঙ্গ বিন্দু। এই তরুণরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাণবন্ত কর্মশক্তির উৎস হিসেবে চিহ্নিত।

প্রশিক্ষণের সংজ্ঞা স্পষ্ট করে এডউইন বি. ফ্লিপো এবং ডিসেনজো ও রবিন্সের মতে, প্রশিক্ষণ হলো এমন এক ক্রিয়া যার মাধ্যমে কর্মীরা তাদের দক্ষতা, জ্ঞান, এবং মনোভাবের উন্নয়ন সাধন করে থাকেন। প্রচুর সংখ্যক শ্রমিকের নিয়োগ এবং তাদের দীর্ঘ প্রশিক্ষণ ধারাবাহিকতা এই কথা বলে দেয় যে, সঠিক প্রশিক্ষণ সুবিধা এবং প্রোগ্রামসমূহ হলো দক্ষতার বিকাশ এবং ক্ষমতা সঞ্চালনের জন্য অত্যাবশ্যক।

Contents show

প্রশিক্ষণের সংজ্ঞা ও গুরুত্ব

প্রশিক্ষণ হচ্ছে একটি কার্যকর প্রক্রিয়া, যা একজন কর্মীর জ্ঞান এবং দক্ষতা বিকাশে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এডউইন বি. ফ্লিপো অনুসারে, প্রশিক্ষণ হচ্ছে একটি বিশেষ কাজে কর্মীর জ্ঞান এবং দক্ষতা বাড়ানোর ক্রিয়া। ডিকেনজো ও রবিন্স উল্লেখ করেছেন যে, প্রশিক্ষণ মানে দক্ষতা, জ্ঞান, মানসিকতা অথবা সামাজিক আচরণের পরিবর্তন।

প্রশিক্ষণের বৈশিষ্ট্য হিসেবে এটি ব্যক্তির ক্ষমতাবৃদ্ধি এবং পেশাগত উন্নয়নে সহায়তা করে। এর মাধ্যমে একজন কর্মী তার কাজের লক্ষ্যে আরও দক্ষ এবং কার্যকর হতে পারেন।

প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য কী?

প্রশিক্ষণের মূল প্রশিক্ষণের লক্ষ্য হলো দক্ষতা বৃদ্ধি, পরিবর্তনে জ্ঞানের সম্প্রসারণ, কর্মীদের সক্রিয়করণ, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, অপচয় ও ক্ষতি কমানো, অসন্তোষ এবং শ্রম পরিবর্তন হ্রাস, বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ন, কর্মী ও ম্যানেজমেন্টের মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি, সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার, এবং পদোন্নতির জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি।

কর্মশক্তির উন্নয়ন

কার্যকর প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে কর্মশক্তির উন্নয়ন সাধিত হয়, যা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক উপকারিতাকে বৃদ্ধি করে এবং প্রতিষ্ঠানকে তার প্রতিযোগীদের চেয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়।

আরও পড়ুনঃ  এক মাইল সমান কত মিটার?

শিক্ষার্থী ও পেশাদারদের জন্য উপকারিতা

সবশেষে, প্রশিক্ষণ শিক্ষার্থী ও পেশাদারদের জন্য নতুন দক্ষতা অর্জনে ও স্ব-উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করে। এটি তাদের পেশাজীবনে অধিকতর সফল করে তোলে।

বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ

সমৃদ্ধ ও দক্ষ কর্মশক্তি গঠনে প্রশিক্ষণের প্রকারভেদ অপরিহার্য। আধুনিক বৈশ্বিক বাজারে পারদর্শী ও প্রতিযোগিতামূলক হতে হলে, প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ, অনলাইন প্রশিক্ষণ, এবং কর্মস্থলে প্রশিক্ষণ নীতির সাথে সংলগ্ন হওয়া অত্যন্ত জরুরী।

প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ

প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের প্রকারভেদ বিস্তৃত ভূমিকা রাখে যোগ্য কর্মী তৈরিতে। এই ধরনের প্রশিক্ষণ সাধারণত পেশাদারিত্বসূচক ও কারিগরি শিক্ষায় গভীরভাবে জড়িত থাকে। এগুলো বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে হয়ে থাকে যেখানে বিস্তারিত এবং পরিকল্পিত কারিকুলাম মোতাবেক শিক্ষা দেওয়া হয়।

অনলাইন প্রশিক্ষণের উন্মোচন

দূরশিক্ষার সঙ্গে জড়িত অনলাইন প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের নতুন মাত্রা প্রদান করে। এই প্রক্রিয়ায় অন্যান্য প্রশিক্ষণের স্থান, সময় এবং গতির বেধে দেওয়া সীমারেখা ভেঙে দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা নিজেদের সুবিধামতো সময়ে ও স্থানে শিক্ষা গ্রহণে সক্ষম হন।

কর্মস্থলে প্রশিক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

সরাসরি কর্মস্থলে ঘটে থাকা কর্মস্থলে প্রশিক্ষণ কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মদক্ষতার উন্নতির এক অপরিহার্য মাধ্যম। এটি তাদের বর্তমান দায়িত্বগুলোতে আরও সচেষ্ট ও দক্ষ করে তোলে। প্রাত্যহিক কাজের মাধ্যমে আয়ত্ত করা জ্ঞান ও দক্ষতা দীর্ঘমেয়াদী ও স্থায়ী হয়।

প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া

দক্ষ প্রশিক্ষণপ্রশিক্ষণ পরিকল্পনা প্রতিটি সংস্থার জন্য অন্যতম একটি মৌলিক উপাদান। এই প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া কয়েকটি ধাপে বিভক্ত, যা প্রতিটি ধাপের সদ্ব্যবহার একটি সফল প্রশিক্ষণ পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক।

প্রশিক্ষণের ধাপগুলি কী কী?

প্রথমে, পরিকল্পনা পর্বে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য, পদ্ধতি, ও ফলাফলকে সুস্পষ্ট রূপে চিহ্নিত করা হয়। এই পর্যায়ের উপর ভিত্তি করেই বাকি প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়া চালিয়ে নেওয়া হয়।

পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি

  • শিক্ষাদান এবং শিক্ষাগ্রহণের জন্য আবশ্যক উপকরণের নির্ধারণ এবং তা প্রস্তুতি পর্বের একটি বড় অংশ।
  • প্রশিক্ষণের কেন্দ্রস্থল হিসেবে কর্মক্ষেত্র অথবা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিকল্পনা করা।
আরও পড়ুনঃ  যৌগিক শব্দ কাকে বলে?

কার্যকর প্রশিক্ষণ পরিচালনা

পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির পর, কার্যকর প্রশিক্ষণ পরিচালনার পর্ব আসে। এই পর্বে প্রশিক্ষকদের নির্ধারিত গাইডলাইন ও কৌশল অনুসরণ করে প্রশিক্ষণ সাধনা পরিচালনা করা হয়, যাতে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যমাত্রা সফলভাবে অর্জিত হয়।

প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার এই বিবিধ ধাপ সমূহ সুনিপুণভাবে বাস্তবায়িত হলে, এটি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নে প্রচুর সহায়ক হয়। সংস্থাগুলি দক্ষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের কর্মীদের প্রদর্শন ক্ষমতা অবাধে বৃদ্ধি করতে পারে।

প্রশিক্ষণের কৌশল

প্রশিক্ষণ পরিচালনার বিভিন্ন কৌশল ও পদ্ধতি রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের যথাযথভাবে শেখাতে এবং দক্ষ করে তোলার লক্ষ্যে প্রণীত হয়। প্রতিটি কৌশল হলো শিক্ষাদানের স্টাইল ও প্রশিক্ষণের আবেগকে নির্ধারণ করে, যা প্রশিক্ষণে ইমার্জিং প্রযুক্তিকার্যকর প্রশিক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে আরো উন্নত হয়।

শ্রেণীকক্ষে প্রশিক্ষণ

শ্রেণীকক্ষে প্রশিক্ষণ প্রচলিত এবং সাবলীল পদ্ধতি, যেখানে প্রশিক্ষক সরাসরি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ক্রিয়াকলাপ ও সংলাপ স্থাপন করেন। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সাথে তাৎক্ষণিক ফিডব্যাক ও যোগাযোগ সম্ভব হয়, যা কার্যকর প্রশিক্ষণে অপরিহার্য।

ইমার্জিং প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ

নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, যেমন ভার্চুয়াল সিমুলেশন ও অনলাইন গেমিং, প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এই প্রযুক্তিগুলি প্রশিক্ষণ কৌশল উন্নয়নশীল ও বৈচিত্র্যময় করে তোলে, যা আরো ব্যাপক ও গভীরতর শিক্ষা অনুশীলন সুবিধাজনক করে তোলে।

কার্যকর প্রশিক্ষণের জন্য পরামর্শ

  • শিক্ষার্থীদের মোটিভেশন বাড়ানো।
  • শিক্ষার পরিবেশকে আন্তরিক ও চ্যালেঞ্জিং করে তোলা।
  • শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়মিত মতামত ও ফিডব্যাক আদানপ্রদান।

উল্লেখিত কৌশলগুলি প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামকে আরো ফলপ্রসূ ও কার্যকর করতে সাহায্য করে। ইমার্জিং প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং উপযুক্ত কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কৌশলের উন্নতি সাধন করা সম্ভব।

প্রশিক্ষণের সুফল

প্রতিটি পেশাগত পরিকল্পনায় যে বিষয়গুলো জরুরি তার মধ্যে প্রশিক্ষণের সুফল অন্যতম। এই পাঠ্যক্রমের মাধ্যমে না কেবল দক্ষতা উন্নয়ন হয়, বরং পেশাগত স্ব-উন্নতিও ঘটে।

দক্ষতা বৃদ্ধি

উচ্চমানের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, কর্মীরা নতুন দক্ষতা অর্জন করে থাকেন যা তাদের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর প্রধান হাতিয়ার। উদাহরণস্বরূপ, Python Programming Essentials কোর্সের মত কোর্সগুলি শিক্ষার্থীদের জুনিয়র পাইথন ডেভেলপার হিসেবে 58,640 ডলার থেকে শুরু করে বেতনের স্কেলে চাকরি প্রাপ্তির সুযোগ করে দেয়।

আরও পড়ুনঃ  পরিসংখ্যান কাকে বলে?

স্ব-উন্নয়ন

পেশাদার জীবনে সাফল্যের জন্য স্ব-উন্নয়ন অপরিহার্য। শিল্প রোবোটিক্স ও ঢালাই কোর্সের মতো প্রশিক্ষণের পর শিক্ষার্থীদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি, তাদের আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি পায় যা তাদের কেরিয়ারে এক নতুন মাত্রা যোগ করে।

প্রতিষ্ঠানিক শক্তি

একটি প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানিক শক্তি অর্জন করা সম্ভব। দক্ষ ও স্ব-উন্নত কর্মীরা প্রতিষ্ঠানটিকে আরো প্রতিযোগী ও সফল করে তোলে। এটি প্রতিষ্ঠানকে তার লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করে এবং প্রতিষ্ঠানের সাধারণ উন্নয়নে অবদান রাখে।

সব মিলিয়ে, এই প্রশিক্ষণ কোর্সগুলি কর্মীদের কেরিয়ার উন্নয়ন এবং পেশাগত জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধির এক অপরিহার্য অংশ প্রমাণিত হয়েছে।

শিক্ষকদের ভূমিকা

শিক্ষক সমাজের মেরুদণ্ড বলা হয়ে থাকে। এই অধ্যায়ে আমরা দেখবো কিভাবে একজন দক্ষ শিক্ষকের ভূমিকা বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠন মূলক পরিবর্তন এনে শিক্ষা প্রতিক্রিয়া উন্নত করা সম্ভব।

প্রশিক্ষকের দক্ষতা

বাংলাদেশে ১৯৯৬ সালে প্রায় ৭ জন শিক্ষকের প্রশিক্ষণ গ্রহণের তথ্য পাওয়া যায়, যার অনুপাত ছিল ৭.১:১। প্রতিষ্ঠানের ৯৫ জনের মধ্যে, শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ও কারিকুলাম উন্নতিতে জড়িত ছিলেন, যেখানে প্রতি নির্দিষ্ট ব্যাক্তির জন্য প্রতিটি কারিকুলাম উন্নয়ন খাতে ছিলেন ৭.১ জন শিক্ষক। এই তথ্য আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, দক্ষ শিক্ষক কিভাবে শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে অবদান রাখেন।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক

OECD’s Education GPS-এর তথ্য অনুযায়ী, ফ্রান্স, জার্মানি, ইস্রায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ অন্যান্য দেশে শিক্ষকদের উন্নয়নে গুরুত্বারোপ করা হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যেকার সম্পর্ক প্রশিক্ষণের গুণমান নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা পালন করে।

প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া

একাডেমিক চাপ এবং প্রফেশনাল স্ট্রেস শিক্ষকদের জন্য নতুন কিছু নয়। ২০০০ সালের এক গবেষণায় যুক্তরাজ্যে ৪২% শিক্ষক প্রফেশনাল স্ট্রেস অনুভব করেন, যা অন্য পেশাজীবীদের তুলনায় দ্বিগুণ। অন্যান্য ব্যবসায়ীদের তুলনায় তারা উচ্চতর হারে উদ্বেগ, অবসাদ ও মানসিক চাপের শিকার। কিন্তু তথ্য অনুযায়ী, তাদের মানসিক চাপ কমাতে সময়সূচির পরিবর্তণ, সাপোর্ট মেকানিজম, কাউন্সিলিং, এবং বোনাস সহ পদোন্নতি জাতীয় বিভিন্ন সংগঠনিক হস্তক্ষেপ কার্যকর হিসাবে চিহ্নিত হয়েছে।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button