পিরিয়ড হলে কি খাওয়া উচিত

মাসিকের সময়ে মহিলাদের শরীর বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় যা তাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য উভয় দিকেই প্রভাবিত করে। এই সময়ে পিরিয়ডের স্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং আয়রন ও হাইড্রেশনের ঘাটতি পূরণ করা অত্যন্ত জরুরি। স্বাস্থ্যকর খাবারমাসিকের খাবার হিসাবে সামুদ্রিক মাছ, সবুজ শাকসবজি, ডিম, এবং লেন্টিলের মত প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ খাবার জুড়ে দেওয়া উচিত।

পিরিয়ড ডায়েটের জন্য উচ্চ জলীয় সামগ্রীর ফল যেমন তরমুজ, শশা এবং আপেল খাওয়া সহায়ক। ক্যাফেইন যুক্ত চা এবং কফির পরিবর্তে কলা এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন বাদাম এবং বেরি ধরনের ফল শরীরে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ প্রদান করে। এছাড়াও, ডাক্তার ইশরাত জেরিনের মতে, পিরিয়ডের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে জাঙ্ক ফুড, তেল-মশলাদার খাবার, এবং অ্যালকোহলের ব্যবহার সীমিত করা প্রয়োজন।

পিরিয়ডের সময় শরীরের প্রয়োজনীয়তা

পিরিয়ডের সময় শরীরের পিরিয়ড স্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং পুষ্টি চাহিদা মেটানো অত্যন্ত জরুরি। এ সময়ে হরমোনাল ব্যালেন্সে পরিবর্তন আসে, যা বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক প্রভাব ফেলে। এই সময়, শরীরের নির্দিষ্ট পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করার মাধ্যমে এমনকি মূড সুইং এবং ক্লান্তি কমানো সম্ভব।

শরীরের পুষ্টির চাহিদা

পিরিয়ডের সময় আয়রন সমৃদ্ধ খাবার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, যেমন পালং শাক, ব্রোকলি, এবং লাল মাংস। এছাড়াও, ভিটামিন সি যুক্ত ফলমূল, যেমন আমলা, কমলা, এবং টমেটো আয়রন শোষণে সাহায্য করে থাকে। পিরিয়ড স্বাস্থ্য উন্নতিকরণের জন্য উচ্চ-প্রোটিন খাদ্য, যেমন ডিম, মাছ এবং মাংস খাওয়া জরুরি।

হরমোনের পরিবর্তন ও প্রভাব

পিরিয়ড স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে হরমোনাল ব্যালেন্স বজায় রাখা আবশ্যক। এ সময় বিশেষ খাদ্য যেমন কেলা, ডার্ক চকোলেট এবং চিয়া বীজ খাওয়া উচিত, যা মুড সুইং ও মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। এছাড়াও, ব্যালেন্সড ডায়েট এবং নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস হরমোনাল ব্যালেন্স ঠিক রাখতে পারে, যা পিরিয়ডের সময় স্বাস্থ্য উন্নতির জন্য অতিমাত্রিক উপকারী।

আরও পড়ুনঃ  সেলুলাইট দূর করার উপায় - সহজ ও কার্যকরি

খনিজ ও ভিটামিনের ভূমিকা

পিরিয়ডের সময়, শরীরে বিভিন্ন খনিজ ও ভিটামিনের বাড়তি চাহিদা থাকে। আয়রন, ভিটামিন B6, এবং ম্যাগনেশিয়াম এই সময়ে বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ।

আয়রন

পিরিয়ডের সময় আয়রনের চাহিদা বৃদ্ধি পায় কারণ শরীর থেকে রক্তপাত হয়। এই সময়ে দেহের হিমোগ্লোবিন মাত্রা বজায় রাখতে এবং ক্লান্তি এবং দুর্বলতা কমাতে আয়রন যুক্ত খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা, ডাটাশাক প্রভৃতি গ্রহণ করা উচিত।

ভিটামিন B6

  • ভিটামিন B6 পিরিয়ডের দ্বারা সৃষ্ট মেজাজের পরিবর্তন ও ব্যথা হ্রাসে অত্যন্ত সহায়ক।
  • এই ভিটামিনের জন্য ভালো ভিটামিন B6 উৎস হল ডার্ক চকলেট, কলা, বাদাম, এবং সবুজ শাকসবজি।

ম্যাগনেশিয়াম

ম্যাগনেশিয়ামের গুরুত্ব পিরিয়ডের সময়ে অনুভূত হয়। এটি মাংসপেশীর ব্যথা এবং ক্র্যাম্প কমাতে এবং উচ্চাবস্থায় মনোযোগ সহায়তা করে। এর জন্য খাবারের তালিকায় রাখা উচিত ডার্ক চকলেট, বাদাম, এবং শস্য জাতীয় খাবার।

সঠিক খাবারের তালিকা

পিরিয়ডের সময় পুষ্টিকর খাবার খাওয়া খুবই প্রয়োজনীয়, কারণ এটি শরীরকে সঠিক পুঁজি প্রদান করে। যেহেতু শরীর বিশেষ করে এই সময়ে বেশি পুষ্টি দাবি করে, তাই নির্দিষ্ট খাবারগুলির গুরুত্ব বাড়ে।

ফলমূলের গুরুত্ব

পিরিয়ডের সময় ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ ফলমূল খাওয়া উচিত। ফলমূলের উপকারিতা হলো, এগুলি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং আয়রন শোষণে সহায়তা করে যা পিরিয়ডে অপরিহার্য। পেয়ারা, আমলকি, লেবু এবং কমলার মতো ফলমূল ভিসি ভিটামিনে সমৃদ্ধ, যা শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্ত করে।

শাকসবজি

সবুজ শাকসবজি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে, যা পিরিয়ডের সময় খুবই প্রয়োজন। এই শাকসবজি, যেমন ব্রোকলি, পালং শাক, এবং শশা, পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং ফাইবারে ভরপুর, যা ইনসুলিনের স্তর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়ক।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য

পিরিয়ডের সময় প্রোটিন যুক্ত খাবার গ্রহণ খুব জরুরি। মুরগি, মাছ, ডিম, দই এবং ডাল জাতীয় খাবার নিয়মিত খাওয়া উচিত। এই খাবারগুলি শরীরে প্রোটিনের চাহিদা মিটায় এবং ক্লান্তি দূর করে, যা পিরিয়ডের সময় প্রায়ই দেখা দেয়। এছাড়াও, এটি রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

পিরিয়ডের সময় প্রস্রাবের সমস্যা

পিরিয়ডের সময় শরীরের হাইড্রেশন বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় হরমোনের পরিবর্তনের ফলে পানির চাহিদা বেড়ে যায়, যা শরীরের প্রস্রাবের মাত্রাকে প্রভাবিত করে। হাইড্রেটেড থাকার জন্য প্রয়োজনীয় পানীয় ও খাবারের তালিকা জরুরি।

আরও পড়ুনঃ  এইডস এর লক্ষণ ও কারণ

পানি পান ও হাইড্রেটেড থাকা

পিরিয়ডের সময়ে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরের তরল সঞ্চালন সঠিক থাকে এবং বিষাক্ত পদার্থ দ্রুত বেরিয়ে যায়। এটি প্রস্রাব সমস্যার প্রবণতা কমায়। প্রস্রাব সম্পর্কিত সমস্যার সম্ভাবনা কম হয় এবং হাইড্রেশন ভালো থাকে।

ডায়রিটিক খাবারের প্রভাব

ডায়রিটিক খাবার যেমন লেবু, তরমুজ প্রাকৃতিকভাবে শরীরের অতিরিক্ত পানি ও লবণের নিষ্কাশন সাহায্য করে। এই খাবারগুলো পিরিয়ডের সময় শরীরের স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি করে এবং পানি ধারণের সমস্যার প্রতিরোধ করতে পারে। প্রচুর ডায়রিটিক খাবার গ্রহণের ফলে শরীরের পানির স্তর স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়, যা পিরিয়ডের সময় স্বাচ্ছন্দ্য প্রদান করে।

পিরিয়ডের সময় যে খাবার এড়ানো উচিত

পিরিয়ডের সময় অনেকেই সাধারণ শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা অনুভব করেন। এই সময়ে পিরিয়ড আহার সতর্কতা নিয়ে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ কিছু খাবার রয়েছে যা এড়িয়ে চলা উচিত, যেগুলি শারীরিক অস্বস্তি বাড়াতে পারে এবং হরমোনাল ব্যালেন্স বিঘ্নিত করতে পারে।

চিনি ও জাঙ্ক ফুড

চিনি বর্জন এবং জাঙ্ক ফুড প্রভাব মাসিকের সময় শরীরের সম্ভাব্য ক্ষতি কাটানোর দিকে নজর দিতে হয়। অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবারগুলি যেমন মিষ্টান্ন, কোমল পানীয়, চকলেট, বেকারি পণ্য ইত্যাদি শরীরে দ্রুত ইনসুলিন স্পাইক ঘটায় যা পিরিয়ডের সময়ে মুড সুইংস এবং অন্যান্য সমস্যা বাড়ায়। একই ভাবে, ভাজা খাবারগুলি এবং ফাস্ট ফুড যেমন পিৎজা, বার্গার ইত্যাদি বা অতিরিক্ত লবণাক্ত খাদ্য পিরিয়ডের সময় ব্লোটিং বাড়ায়।

ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল

ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল সেবন পিরিয়ডের সময় বিশেষত উপকারী নয়। চা, কফি, এনার্জি ড্রিঙ্কস যেখানে অতিরিক্ত ক্যাফেইন থাকে, সেগুলি হার্ট রেট বাড়াতে এবং অনিদ্রা তৈরি করতে পারে, যা পিরিয়ডের সময় ব্যথা বাড়াতে পারে। অ্যালকোহল হাইড্রেশন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, যা মাসিকের ব্যথা এবং স্প্যাজমগুলিকে আরও খারাপ করতে পারে।

  • চিনি যুক্ত খাবার ও মিষ্টান্ন এড়িয়ে চলুন।
  • জাঙ্ক ফুড এবং ফাস্ট ফুডের ব্যবহার কমান।
  • প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন এবং ক্যাফেইন ছাড়ানোর চেষ্টা করুন।
  • অ্যালকোহলের ব্যবহার সীমিত করুন।

এই জাঙ্ক ফুড প্রভাব এবং অন্যান্য খাবার এড়িয়ে চলে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রায় পিরিয়ডের সময় আরামদায়ক অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব।

আরও পড়ুনঃ  ঘুম না আসলে করণীয় কি?

খাবার প্রস্তুতির উপায়

পিরিয়ডের সময়ে শরীরে বিশেষ যত্ন নেয়া অত্যন্ত জরুরি। এই সময়ে ন্যাচারাল খাবার রেসিপিস্বাস্থ্যকর রান্না পদ্ধতি অবলম্বন করে পুষ্টি নিশ্চিত করা উচিত।

ন্যাচারাল রেসিপি

প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে রান্না করা খাবার শরীরের জন্য বেশ উপকারী। ন্যাচারাল খাবার রেসিপি যেমন কাঁচা হলুদ, আদা, মাশরুম, ব্রোকোলি এবং প্রচুর শাকসব্জি যোগ করা যেতে পারে। এসব উপাদান প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে এবং পিরিয়ডের সময়ের অস্বস্তি হ্রাস করে।

সঠিক রান্নার পদ্ধতি

স্বাস্থ্যকর রান্না এর চাবিকাঠি হলো উপাদানগুলোকে যথাযথভাবে ব্যবহার করা। প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন ডিম, চিকেন, বা মাছ হালকা আঁচে সেদ্ধ করে অথবা গ্রীল করে রান্না করা উচিত। এতে খাবারের পুষ্টিগুণ বজায় থাকে এবং শরীর বাড়তি ক্যালোরি গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। তেল বা ঘি এর ব্যবহার সীমিত রাখা উচিত।

সার্বিকভাবে, খাবার প্রস্তুতির পদ্ধতি এবং ন্যাচারাল খাবার রেসিপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যখন আমরা পিরিয়ডের সময় ভালো থাকতে চাই। এই প্রক্রিয়াগুলো শরীরের জন্য উপযোগী এবং পিরিয়ডের ব্যথা হ্রাসে সহায়ক।

সামগ্রিক স্বাস্থ্য সচেতনতা

পিরিয়ড কেবল একটি জৈবিক প্রক্রিয়া নয়, এটি নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার মূল উপাদান। অনেক নারীই প্রাথমিক অবস্থায় পিরিয়ড সম্পর্কে সচেতন না হওয়ার কারণে পরবর্তীতে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগেন। এর প্রতিকারে, সচেতন ও সুস্‌থ জীবনযাত্রার অভ্যাস এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা-য় বিশেষ জোর দেওয়া হয়।

নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা

নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা, যেমন হরমোন প্রোফাইল টেস্ট, রক্তের জন্য আয়রন ও ভিটামিন মাত্রা পরীক্ষা, হরমোনের পরিমাণ বুঝে সামঞ্জস্য রাখা ও এগুলোতে বৈপরীত্য থাকলে সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর পড়ে খারাপ প্রভাব। তাই, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যে কোনো সম্ভাব্য সমস্যার প্রাদুর্ভাব এড়ানো সম্ভব।

স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গঠনের গুরুত্ব

স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা মানে নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত বিশ্রাম, ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েট, মানসিক চাপ কমানো, এবং মাদক দ্রব্য, ধূমপান পরিহার করা অন্তর্ভুক্ত। এই অভ্যাসগুলি নিয়মিত পালন করা শুধু পিরিয়ডের স্বাস্থ্য রক্ষায় নয়, বরং সর্বজনীন স্বাস্থ্য চর্চার অঙ্গ হিসেবে অপরিহার্য। প্রতিটি নারীর জীবনে এই উপাদানগুলির প্রাধান্য সুনিশ্চিত করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button