প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে?

রক্তচাপের হেরফের আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানাবিধ প্রভাব ফেলে। স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ মিলিমিটার মার্কারি হওয়া উচিত। তবে যখন এই পরিমাপ ৯০/৬০ মিলিমিটার মার্কারির নিচে চলে যায়, তখন নিম্ন রক্তচাপের অনেকগুলো উপসর্গ দেখা দেয়।

এই অবস্থায় নিম্ন রক্তচাপে উপকারী খাবার এবং হাইপোটেনশন ডায়েট মেনে চলাটা অত্যন্ত প্রয়োজন। খাদ্য তালিকায় রক্তচাপ বৃদ্ধির খাবার অন্তর্ভুক্তি করার মাধ্যমে নিম্ন রক্তচাপের প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব। স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসাবে লবণযুক্ত খাবার, লেবু, কমলা, ভিটামিনসমৃদ্ধ শাকসবজি, পুষ্টিবান ডিম ও মাংসের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি ও তরল গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।

প্রেসার কমে গেলে কি ঘটে?

নিম্ন রক্তচাপের প্রভাব শরীরের উপর বিস্তারিতভাবে পরিলক্ষিত হয়, যা বেশ কয়েকটি সাধারণ উপসর্গ দ্বারা চিহ্নিত হয়। এই উপসর্গগুলি জীবনযাত্রায় বাধা দান করে এবং সাধারণ কাজকর্মের প্রভাব ফেলে। এখানে, আমরা শরীরে কি ঘটতে পারে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করছি।

শরীরের ওপর প্রভাব

নিম্ন রক্তচাপের প্রভাব শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। রক্তচাপ হ্রাস পাওয়ার ফলে, মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহ না হওয়ায় মাথা ঘোরা এবং অজ্ঞান হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়াও, হঠাৎ ক্লান্তি অনুভূত হতে পারে, যা দৈনিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটায়।

সাধারণ উপসর্গ

  • মাথা ঘোরা
  • বমিভাব
  • মাথাব্যথা
  • চোখে অন্ধকার দেখা
  • নিম্ন রক্তচাপের উপসর্গ হিসেবে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন

এই উপসর্গগুলি যদি দীর্ঘমেয়াদে বজায় থাকে, তাহলে জটিল রোগের সম্ভাবনা বাড়তে পারে। তাই, নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরী।

রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে খাদ্যাভ্যাসের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। লবণ ও সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তাছাড়া, এটি নিম্ন রক্তচাপের উপসর্গগুলি থেকে মুক্তি পেতে ও সার্বিক স্বাস্থ্য উন্নতি সাধনে সহায়ক।

লো প্রেশারের প্রাথমিক কারণ

নিম্ন রক্তচাপের উপস্থিতি বিভিন্ন উপাদানের প্রভাবে ঘটতে পারে, যা প্রায়ই ব্যক্তির জীবনযাত্রার সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকে। হাইপোটেনশনের প্রাথমিক কারণ গুলি নির্ণয় করা স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুনঃ  ভিটামিন B1, B6, B12 এর কার্যকারিতা কি?

খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব

সঠিক পুষ্টি ঘাটতি ও অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহণ নিম্ন রক্তচাপের এক বড় কারণ। ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব, যেমন আয়রন, ফোলেট ও ভিটামিন B12, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।

  • অপুষ্টি এবং লবণের অভাব
  • একপেশে এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস
  • অত্যধিক পরিশ্রম পরবর্তী পুষ্টির অভাব

জলের অভাব

নিম্ন রক্তচাপের কারণ হিসেবে ডিহাইড্রেশন প্রধান কারণের মধ্যে একটি। পর্যাপ্ত তরল পান না করলে বা তীব্র দাবদাহে শরীর যদি অত্যধিক ঘাম ঝরায়, তবে রক্তাল্পতা বাড়তে পারে।

  • তীব্র গরমে পানি পান কম হওয়া
  • বদহজম বা ডায়রিয়ার কারণে জলশূন্যতা
  • অতিরিক্ত পরিশ্রমের পর তাড়াতাড়ি তরল গ্রহণ না করা

এই কারণগুলি সর্বদা মনে রেখে নিম্ন রক্তচাপ থেকে সুরক্ষা ও নিরাময়ের উপায় গ্রহণ করা উচিত।

ন্যাচারাল খাদ্য সামগ্রী

লো প্রেশারের জন্য ন্যাচারাল খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ন্যাচারাল খাবার হিসেবে লবণযুক্ত খাবার এবং সবুজ শাকসবজি এক অন্যতম উপকারী সমাধান যা লো প্রেশার নিরাময়ে সাহায্য করে। বিশেষ করে, সমুদ্রের লবণ, যার মধ্যে প্রচুর মিনারেল পাওয়া যায়, এটি শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।

লবণযুক্ত খাবার

লবণযুক্ত খাবারের গুরুত্ব নিম্ন রক্তচাপের চিকিৎসায় অনন্য। অপর্যাপ্ত সোডিয়াম লো প্রেশারের একটি কারণ হতে পারে, এবং লবণযুক্ত খাবার, যেমন অ্যানকোভি, সারডিন এবং সামুদ্রিক লবণের মাঝারি পরিমাণ গ্রহণ শরীরের সোডিয়াম মাত্রা সম্ভার করে।

সবুজ শাকসবজি

সবুজ শাকসবজি, যেমন পালংশাক, ব্রোকলি এবং কেল, উচ্চ পুষ্টি মূল্য এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ যা শরীরের চাহিদা পূরণে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিকীকরণে সাহায্য করে। এগুলি ডায়েটারি ফাইবারে ভরপুর যা হজম শক্তি বাড়ায় এবং লো প্রেশারের আপদকালীন সমাধান প্রদান করে।

অতএব, লো প্রেশারের জন্য ন্যাচারাল খাদ্য হিসেবে লবণযুক্ত খাবার এবং সবুজ শাকসবজির গ্রহণ আপনার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। এই খাবারগুলি আপনাকে আরও সুস্থ এবং একটি সুনির্দিষ্ট জীবনযাপন করতে সাহায্য করবে।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার

প্রোটিনযুক্ত খাবারের গুরুত্ব নিরাপদ ও সুস্থ জীবনযাত্রার জন্য অনন্য। প্রোটিন আমাদের শরীরের কোষের গঠন, মেরামত এবং বিভিন্ন হরমোন ও এনজাইমের উৎপাদনে অপরিহার্য। ডিম, মাংস এবং মাছ প্রোটিনের এক অপরিহার্য উৎস।

ডিমের গুরুত্ব

ডিম একটি অলৌকিক খাবার যা প্রায় সব ধরনের দৈনন্দিন আবশ্যক আমিনো অ্যাসিড সরবরাহ করে। প্রোটিনযুক্ত খাবারের গুরুত্বকে উপলব্ধি করে শরীরের সব প্রকারের কোষ তৈরী ও মেরামতে ডিম অপরিসীম ভূমিকা রাখে। এছাড়াও, ডিম ভিটামিন D এবং B12-এর ভালো উৎস।

আরও পড়ুনঃ  মাসিক মিস হওয়ার কত দিন পর প্রেগন্যান্ট বোঝা যায়?

মাংস এবং মাছ

মাংস ও মাছের উপকারিতা হচ্ছে শারীরিক কার্যকলাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নে। গরু, মুরগির মাংস, এবং সামুদ্রিক মাছ যেমন স্যালমন এবং টুনা, প্রোটিনের পাশাপাশি অপরিহার্য ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এবং আয়রন প্রদান করে। মাংস ও মাছ নিয়মিত খাওয়া দেহের শক্তি বজায় রাখতে এবং মাংসপেশীর বৃদ্ধি সাহায্য করতে পারে।

সমস্ত প্রোটিনযুক্ত খাবার, বিশেষ করে ডিম, মাংস ও মাছ শারীরিক ও মানসিক সংহতি বাড়ানো সহ হাজারো উপকারিতা বয়ে আনে। এই খাবারগুলি নিয়মিত গ্রহণ করা জরুরি।

শর্করা এবং ক্যালোরির উৎস

আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য চাল ও গমের উপকারিতা অপরিসীম। এই খাদ্যগুলি থেকে পাওয়া শর্করা ও ক্যালোরি শরীরের শক্তির প্রধান উৎস। তবে সঠিক পরিমাণে এবং বৈচিত্র্যময় খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি।

চাল এবং গম

চাল ও গম বাঙালির প্রধান খাদ্য। এই দুই খাবারের মধ্যে প্রচুর শর্করা থাকে যা আমাদের এনার্জি জোগান দেয়। চাল ও গমের মতো খাবার গ্রহণের ফলে শরীরে গ্লাইকোজেনের মাত্রা ঠিক থাকে, যা শক্তির ভাণ্ডার।

  • চাল: সাদা চাল হজমযোগ্য শর্করা সম্বলিত এবং এটি দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে।
  • গম: গমে থাকা ফাইবার খাদ্যনালীর ক্রিয়াকলাপ ভালো রাখে এবং দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি সরবরাহ নিশ্চিত করে।

ফলমূলের ভূমিকা

ফলমূল ও এর ভূমিকা শর্করা ও ক্যালোরির প্রবাহে সাহায্য করে। বিভিন্ন ধরণের ফলে নানান ভিটামিন ও মিনারেলস থাকে যা শরীরের জন্য উপযোগী।

  • লেবুজাতীয় ফল: এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C থাকে, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং চাল ও গমের আনা শর্করার পরিপাকে সাহায্য করে।
  • টক ফল: টক ফলের অ্যাসিডিক উপাদান পেটের হজম শক্তি বাড়ায় এবং শরীরকে সতেজ রাখে।

এই খাবারগুলির সঠিক গ্রহণের মাধ্যমে আপনি আপনার শর্করা ও ক্যালোরির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারবেন, যা সুস্থ জীবনের জন্য অপরিহার্য।

তরল গ্রহণের গুরুত্ব

হাইপোটেনশনে তরল আহার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ব্যাপার। আমাদের শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য পানি পান করার গুরুত্ব এবং নানাবিধ তরল পদার্থ গ্রহণ এই সমস্যা মোকাবিলায় অপরিহার্য। এর মধ্য দিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা সম্ভব হয়।

পানির প্রভাব

পর্যাপ্ত পানি পান করলে হাইপোটেনশন রোগীদের শরীরে রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় বজায় রাখতে সহায়ক হয়। পানির কারণে রক্তের ভলিউম বৃদ্ধি পেতে পারে, যা রক্তচাপ বৃদ্ধির অন্যতম উপায়।

আরও পড়ুনঃ  বাম চোখ লাফালে কি হয়?

স্যুপ এবং স্টকের উপকারিতা

স্যুপ ও স্টক প্রদান করে সোডিয়াম যা হাইপোটেনশনের লক্ষণ নিরাময়ে সহায়তা করে। বাঁধাকপি, গাজর, এবং মুরগির স্টকে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল ও ভিটামিন থাকে, যা হাইপোটেনশন মোকাবিলায় কার্যকরী। স্টক তৈরির সময় সবজি বা মাংসের অংশবিশেষগুলোতে থাকা স্বাস্থ্যকর উপাদানগুলো স্যুপে মিশে যায়, যা শরীরকে দ্রুত এনার্জি দেয় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করে।

ভিটামিন এবং মিনারেলস

সঠিক পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে ভিটামিন ও মিনারেলস অপরিহার্য। এরা শরীরের বিভিন্ন জৈবিক ক্রিয়াকলাপ সচল রাখতে এবং অনেক রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ভিটামিন B12

ভিটামিন B12 এর গুরুত্ব খুবই বেশি, বিশেষ করে রক্তচাপ ও শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে। এটি রক্তের লোহিত কণিকা তৈরি করে, যা অক্সিজেন সরবরাহে সহায়তা করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।

জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম

জিংক এবং ম্যাগনেসিয়ামের ভূমিকা শরীরের মেটাবলিজম এবং প্রোটিন সংশ্লেষণে অপরিহার্য। জিংক ইমিউন সিস্টেমকে বলবান করে এবং ম্যাগনেসিয়াম হার্ট রেট এবং ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।

  • ভিটামিন B12 নিয়মিত সেবন করলে রক্তল্পতার ঝুঁকি কমে।
  • খাদ্যতালিকায় জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম যুক্ত খাবার থাকা চুল এবং ত্বকের সুস্থতায় সহায়ক।

সবকিছু মিলিয়ে, এই ভিটামিন ও মিনারেলস শরীরের সঠিক ক্রিয়াশীলতা এবং সুস্থতার নিশ্চয়তা দেয়। তাই আমাদের খাদ্যাভ্যাসে এগুলি যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ।

নিয়মিত খাবারের সময়সূচী

স্থায়ী রূপে রক্তচাপ মাত্রা ঠিক রাখতে শুধু খাবারের ধরনভেদে না থেকে, নিয়মিততা জরুরি। খাবার গ্রহণে একটি সুষ্ঠু সময়সূচি তৈরি করে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান নিশ্চিত করা যায় এবং তা লো প্রেশার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।

সকালের সময়ের খাদ্য

সকালের খাবারে ডাবের পানি রাখা ভালো, কারণ, রোগীর শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে এবং ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখে। সাপ্তাহে ২ থেকে ৩টি ডাবের পানির প্রবেশ রক্তচাপ বৃদ্ধি সহায়ক।

বিকেল

বিকেলের সময়ে, চা কিংবা কফির পরিবর্তে ওয়াআরএস মিশ্রিত পানি এবং খাবারে কাঁচা নুনের যোগ করা উপকারী। এই পানীয়গুলো ইলেক্ট্রোলাইটসের ভারসাম্য ফেরায় এবং পর্যাপ্ত জল পান করা লো ব্লাড প্রেশারের জন্য অপরিহার্য। ৩ লিটার জল প্রতি দিন পান করা উচিত। সম্ভব হলে, গ্লুকোজ মিশ্রিত জল পান করলে রক্তচাপ উন্নতির দিকে এগোয়।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button