কিডনি কোথায় থাকে?

মানব দেহের জটিলতা ও অপূর্ব সৃষ্টির অন্যতম উদাহরণ হলো কিডনির অবস্থান ও কার্যক্রম। মানবদেহে কিডনি উদর গহ্বরের মেরুদণ্ডের দু’পাশে অভ্যন্তর পার্শ্বে, প্রায় পিঠের মাঝামাঝি অবস্থানে লুকিয়ে আছে। প্রতিটি কিডনির গঠনমাত্র এক মুঠোফোনের আকারের হয়ে থাকে, যা শরীরের বিভিন্ন প্রদত্ত কর্ম দক্ষতা এবং জীবনরক্ষাকারী কার্যকলাপের জন্য অপরিহার্য।

শরীরে কিডনির জায়গা নির্ধারণ করা রেচন তন্ত্রের সিস্টেমে একটি জটিল ও বিস্তারিত ধারণা। রেচন তন্ত্রের অন্যতম মূল প্রধান অংশ হিসেবে কিডনির অবস্থান নির্ণয়ের মাধ্যমে এমনগুলো নানাবিধ সমস্যা, যেমন কিডনির ব্যথা, পাথর, সংক্রমণ, এবং অন্যান্য রোগের লক্ষণ বুঝতে পারা যায়, যা প্রস্রাব সিস্টেমের মধ্য দিয়ে ষড়যন্ত্র করে। সুস্থ কিডনির জন্য শারীরিক পুষ্টি ও সঠিক জীবনযাত্রা অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।

কিডনির অবস্থান সম্পর্কে মৌলিক ধারণা

কিডনি হলো আমাদের দেহের অতি জরুরি অঙ্গ যার প্রধান কাজ হলো বর্জ্য পদার্থ অপসারণ এবং মূত্র উৎপাদন করা। এই অঙ্গের সম্পর্ক ও কার্যকলাপগুলি বুঝা সহজ হবে যদি আমরা কিডনি অবস্থান এবং তার বৈজ্ঞানিক বৈশিষ্ট্যগুলি সঠিকভাবে জানি।

কিডনির সঠিক অবস্থান

মানবদেহে কিডনি কিডনি অবস্থান সাধারণত উদরগহ্বরের পিছনে মেরুদণ্ডের দুই পাশে অবস্থিত। প্রতিটি কিডনির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ থেকে ৫ ইঞ্চি এবং সাধারণত বাম কিডনি ডান কিডনির চেয়ে সামান্য উপরে অবস্থান করে।

কিডনির কার্যকলাপ

কিডনি মানব দেহে প্রতিদিন প্রায় ৪০ বার রক্ত পরিশোধন করে। কিডনি কার্যকলাপ অবস্থান এবং ক্রিয়াকলাপ গভীরভাবে জড়িত, যা এই অঙ্গকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। এই অঙ্গ ইউরিয়া এবং অন্যান্য বিষাক্ত পদার্থগুলি বের করে এবং পানি এবং ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে।

আরও পড়ুনঃ  শুষ্ক কাশি শিথিল করার উপায়

শরীরের অন্যান্য অঙ্গের সাথে সম্পর্ক

কিডনির অঙ্গ কিডনি সম্পর্ক অপরাপর অঙ্গগুলির সাথে গভীর যোগাযোগ রাখে, যেমন হাড়ের উৎপাদনের জন্য হরমোন তৈরি এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এদের কার্যকলাপের মাধ্যমে শরীরের pH সমতা বজায় রাখা হয়, যা সমগ্র স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।

মানব অঙ্গনে কিডনির গুরুত্ব

মানব দেহে কিডনির প্রাধান্য অপরিসীম। কিডনির গুরুত্ব বুঝতে গেলে এর দ্বৈত কার্যক্ষমতা বিবেচনা করা আবশ্যক। কিডনির প্রধান দুটি কাজ হলো রক্ত পরিশোধন এবং দেহের ভারসাম্য বজায় রাখা।

রক্ত পরিশোধন

কিডনি প্রতিদিন প্রায় ২০০ লিটার রক্ত পরিশোধন করে। এই পরিশোধন প্রক্রিয়ায় রক্ত থেকে উৎপন্ন বিষাক্ত পদার্থ, বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল বের করা হয়, যা শরীরের বিভিন্ন রোগের কারণে সৃষ্ট প্রদাহ ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এর ফলে মানব দেহে কিডনি একটি অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে কাজ করে এবং সুস্থতা নিশ্চিত করে।

পানি এবং ইলেকট্রোলাইটের সঠিক ভারসাম্য

কিডনি দেহের পানি ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষায় নিবিড়ভাবে কাজ করে। ইলেকট্রোলাইট উপাদান, যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম এবং ক্লোরাইড মাত্রার সমঞ্জসা রেখে কিডনি দেহের তন্নতন্নি পানির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয়। এই ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটলে দেহের বিপাকীয় ক্রিয়াকলাপগুলো ব্যাহত হতে পারে, যা শারীরিক দুর্বলতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার হ্রাসের কারণ হতে পারে।

অতএব, কিডনির গুরুত্ব অবজ্ঞা করা উচিত নয় কারণ এটি মানব দেহের স্থিতিশীলতা ও সুস্থতা বজায় রাখার এক অন্যতম প্রধান মাধ্যম। সুন্দর এবং সুস্থ জীবনযাপনের জন্য কিডনির প্রতি সঠিক যত্ন অপরিহার্য।

কিডনি কিভাবে কাজ করে?

কিডনি মানবদেহের জন্য অপরিহার্য একটি অঙ্গ যা শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়া ও বিষাক্ত পদার্থ নিষ্কাশন করে থাকে। বিপাক্রিয়া কিডনিবিষাক্ত পদার্্থ নিসরণ এর মাধ্যমে কিডনি আমাদের সুস্থতা বজায় রাখে।

বিপাক প্রক্রিয়া

কিডনি কাজের নিয়ম অনুসারে, মানব শরীরের বিপাকীয় ক্রিয়াকলাপগুলো সঞ্চালনার জন্য কিডনির ভূমিকা অপরিসীম। প্রতিদিন কিডনি প্রায় ২০০ লিটার তরল পদার্থ পরিশোধন করে, যার মধ্যে ১৯৮ লিটার পুনরায় শোষিত হয় এবং বাকি ২ লিটার মূত্র হিসেবে নিষ্কাশিত হয়।

আরও পড়ুনঃ  হাত পা ঝিমঝিম করার প্রতিকার

বিষাক্ত পদার্থ নিঃসরণ

কিডনি বিষাক্ত পদার্থের নিসরণের ক্ষেত্রে একটি নিবন্ধনযন্ত্রের মতো কাজ করে। এটি বিপাক ব্যবস্থার ফলে উত্পাদিত ইউরিয়া, অমীয় অ্যাসিড এবং অন্যান্য বিষাক্ত উপাদানগুলোকে মূত্রের মাধ্যমে বের করে দেয়। এই কিডনি কাজের নিয়ম গুলোর মাধ্যমে শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় এবং ক্ষতিকর পদার্থগুলো বের হয়ে যায়।

কিডনির ধরণের তথ্য

মানব দেহে ক্রিয়াকলাপের জন্য কিডনি অপরিহার্য। সাধারণত প্রতি ব্যক্তির দেহে দুটি কিডনি থাকে, ডান এবং বাম। এই দুই কিডনির কাজ, কিডনির ধরণ, কিডনির আকার এবং কিডনির গঠন এক অপরের থেকে বেশ সামান্য পার্থক্য রাখে কিন্তু তাদের মৌলিক কাঠামো ও কার্যকারিতা অভিন্ন।

ডান ও বাম কিডনি

ডান কিডনি সাধারণত বাম কিডনির চেয়ে একটু নিচে অবস্থিত হয় কারণ উপরে লিভারের অবস্থান প্রভাব রাখে। বাম কিডনির আকার সাধারণত ডান কিডনির চেয়ে বড় হয়, যার প্রস্থ প্রায় 11.2 সেন্টিমিটার এবং ডান কিডনির 10.9 সেন্টিমিটার।

কিডনির আকার ও গঠন

প্রতিটি কিডনির গঠনে প্রায় 1 মিলিয়ন নেফ্রন থাকে, যা রক্ত পরিশোধনের জন্য অপরিহার্য। কিডনির গঠন অত্যন্ত জটিল, এতে একাধিক নাড়ি, ধমনী, এবং শিরা যুক্ত থাকে, যা কিডনির সকল কার্যকারিতা সচল রাখতে সাহায্য করে। কিডনির এই গঠন নিশ্চিত করে যে মস্তিষ্কে সঠিক সিগন্যাল প্রেরণ হয় এবং শরীরের বাস্তবসম্মত অবস্থান বজায় থাকে।

কিডনির সমস্যার কারণে কিডনি অবস্থান পরিবর্তন

কিডনির সমস্যা বিভিন্ন অঙ্গরূপী উপসর্গ দ্বারা প্রকাশ পায়, যার মধ্যে বিশেষভাবে কিডনি অবস্থান পরিবর্তন এবং কিডনি গঠনগত সমস্যা অন্যতম। এই প্রবন্ধে আমরা কিডনির অবস্থান পরিবর্তনের কারণ এবং গঠনগত সমস্যার ব্যাখ্যা দেব।

কিডনি জ্বালাপোড়া

কিডনির জ্বালাপোড়া অন্যতম একটি প্রধান কিডনির সমস্যা যা ব্যাথা এবং কিডনির কার্যকারিতা হ্রাসকে উদ্দীপিত করে। এই সমস্যাটি কিডনির অবস্থান পরিবর্তনের এক কারণ হিসেবে দেখা দেয় যা অঙ্গটির স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে যায়।

আরও পড়ুনঃ  পুষ্টি কি? জানুন বিস্তারিত

কিডনি গঠনগত সমস্যা

কিডনি গঠনগত সমস্যা কিডনির অভ্যন্তরীণ গঠনে পরিবর্তন ঘটায়, যা কিডনির কার্যকারিতা এবং রক্ত পরিশোধনের ক্ষমতায় প্রভাব ফেলে। এই ধরনের সমস্যা প্রায়ই কিডনির অবস্থান পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

  • কিডনির গঠনগত সমস্যায় কিডনি পাথর এবং ইনফেকশন প্রধান।
  • এছাড়াও, দীর্ঘমেয়াদী ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ কিডনির গঠনগত সমস্যার অন্য কারণ।

কিডনির সমস্যা ও ব্যাহত অবস্থান পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য প্রশ্ন হিসেবে বিবেচিত হওয়ায়, সময়মত চিকিৎসা এবং উপসর্গ সনাক্ত করা জরুরি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসা ও পরিচর্যা কিডনির সাধারণ অবস্থান এবং কার্যকারিতা রক্ষা করতে পারে।

কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষায় করণীয়

সুস্থ জীবনধারার মধ্যে কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষা একটি অপরিহার্য অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়। কিডনি হলো আমাদের শরীরের বর্জ্য নিষ্কাশন এবং পানি সংরক্ষণের মতো কেন্দ্রীয় কার্যাবলীর দায়িত্বে থাকা একটি জীবন রক্ষাকারী অঙ্গ। সুতরাং, এর স্বাস্থ্য ঠিক রেখে দীর্ঘায়ু এবং সবল জীবন যাপনের লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ

পুরুষদের মধ্যে কিডনি সমস্যার সম্ভাবনা যেখানে বেশি, সেখানে নারীরাও অবহেলা না করাই শ্রেয়। এর প্রতিকারে পুষ্টিকর আহার গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। একটি নিয়মিত এবং ভারসাম্যপূর্ণ ডায়েটের মাধ্যমে ক্রিয়েটিনিন লেভেল স্বাভাবিক রাখা সম্ভব, যা কিডনির কার্যকারিতা নির্ধারণ করে। প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের পরিমাণ সচেতনভাবে নির্ধারণ করে সুষম খাবার গ্রহণ করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

পর্যাপ্ত পানি পান করা

পানি পানের উপকারিতা সর্বজনবিদিত। পানি কিডনির মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থ ও বিষাক্ত উপাদান বের করে দিয়ে শরীরকে পরিষ্কার করে। প্রতিদিনের পানি পানের পরিমাণ বয়স, ওজন, এবং শারীরিক কার্যকলাপের উপর নির্ভর করে। সেই সাথে, প্রোটিনের প্রস্রাবে উপস্থিতি, যা কিডনি ক্ষতির একটি নির্দেশক, এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পান একটি সহজ কিন্তু কার্যকরী পদ্ধতি। মনে রাখা দরকার, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম এবং ৩০ মিনিটের ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং বিশেষ করে কিডনির কার্যকারিতা উন্নত করা সম্ভব।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button