পেশীতে খিঁচুনি কেন হয়? – জানুন কারণ

পেশীতে খিঁচুনির সংজ্ঞা বোঝায় এক ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যা পেশীতে আকস্মিক ও অনিয়ন্ত্রিত সংকোচনের ফলে ঘটে। এটি অতিরিক্ত ফিজিক্যাল একজারশনের কারণে, যেমন গার্ডেনিং, ক্লিনিং বা শিশুকে ধারণ করার কাজের মতো পুনরাবৃত্তি ঘটায়, হতে পারে। এই পেশী সংকুচন মানুষের প্রত্যেকটি বয়সের স্তরেই দেখা যায় এবং বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও পুষ্টিগত অসংগতির কারণে ঘটতে পারে।

বুঝতে হবে, পেশীতে শিরটানের মুখ্য কারণগুলি কী কী, যাতে পেশী খিঁচুনির প্রতিকারের উপায় সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। রিডার্স ডাইজেস্ট এবং Risingbd এর মতে, শারীরিক অতিরিক্ত পরিশ্রমের ফলে পেশীতে খিঁচুনি হতে পারে, যদিও পেলভিক আর্টারি ডিজিজয়ের মতো রোগের কারণে পায়ের পেশীতে খিঁচুনির ঘটনা ঘটতে পারে, মধ্যে দেখা যায়। proper ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স ও ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের জন্য জরুরী, বিশেষ করে অ্যাথলিটদের পক্ষে, তারা যাতে পেশী সংক্রান্ত সমস্যা এড়াতে পারে।

পেশীর খিঁচুনির সংজ্ঞা

পেশীতে খিঁচুনি হল একটি অস্বাভাবিক, আকস্মিকভাবে ঘটে যাওয়া পেশীর সংকোচন, যা প্রায়শই ব্যথা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে। এই ব্যাপারটি বিশেষ করে স্পোর্টসম্যানদের মধ্যে প্রচুর দেখা যায়, তবে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এটি ঘটতে পারে।

খিঁচুনি কি?

খিঁচুনি হচ্ছে এক ধরণের পেশীর ক্রেম্পিং, যা পেশীতে খিঁচুনির ফলে ঘটে। এটি হঠাৎ শুরু হয় এবং পেশীতে অস্বাভাবিক সংকোচন ঘটায়। পেশীর এই অচ্ছায়িত সংকোচনের ফলে মাঝে মাঝে তীব্র ব্যথা হতে পারে, যা কখনও কখনও রোগীর চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি করে।

পেশী সংকোচন কীভাবে ঘটে?

পেশীর সংকোচন প্রক্রিয়া ঘটে যখন মাংসপেশীগুলোতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে ইলেকট্রোলাইট অসামঞ্জস্য ঘটে। এই অসামঞ্জস্য হ’ল সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইটগুলোর স্তরে পার্থক্য। মাংসপেশী সঞ্চালনা নার্ভের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়, এবং যখন এই ইলেকট্রোলাইটের ঘনত্বে পার্থক্য ঘটে, তখন পেশীর ক্রেম্পিং ঘটে।

আরও পড়ুনঃ  কিডনির জন্য উপকারী খাবার

সাধারণত, এই সংকোচনের ঘটনা তখনই ঘটে, যখন পেশীর শ্রান্তি, ডিহাইড্রেশন, অথবা পুষ্টির অভাব ঘটে। পেশীর ভেতরের কাঠামোগত ব্যবস্থায় যে কোনো পরিবর্তন এই ধরণের খিঁচুনির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

পেশী খিঁচুনির সাধারণ কারণ

পেশী খিঁচুনির সাধারণ কারণগুলো বুঝতে গেলে তিনটি মৌলিক বিষয় আলোচনা করা জরুরি।

পানির অভাব

পেশীতে খিঁচুনি সবচেয়ে বেশি হয় পানির অভাবে। শরীরে পানির পরিমাণ কমে গেলে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, যা পানির অভাবে খিঁচুনি সৃষ্টি করে। ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি পেশী সঙ্কুচন ও পেশীতে উদ্রেকপ্রাপ্তি ঘটায়।

অতিরিক্ত কাজ

অতিরিক্ত শারীরিক কাজ বা মাত্রাতিরিক্ত ব্যায়াম পেশীতে খিঁচুনির আরেকটি প্রধান কারণ। যখন পেশীগুলো অত্যধিক চাপের মুখোমুখি হয়, তখন তা সহজেই খিঁচুনির শিকার হতে পারে, বিশেষ করে যদি উচিত পুষ্টি ও পুনর্জীবনের সময় না পায়।

পুষ্টির ঘাটতি

শরীরের পুষ্টির ঘাটতি, যেমন ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, এবং পটাসিয়ামের অভাব পেশী খিঁচুনির আরেকটি প্রচলিত কারণ। পেশীতে পুষ্টির ঘাটতি হলে পেশীগুলোর সংকোচন ও শিথিলতা স্বাভাবিকভাবে ঘটতে পারে না, যা খিঁচুনির সৃষ্টি করে।

পেশী খিঁচুনির প্রকারভেদ

পেশী খিঁচুনি হল এক প্রকার যন্ত্রণাদায়ক অভিজ্ঞতা, যা হঠাৎ করে পেশীতে ঘটে যায়। বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ধরনের প্রকারভেদী ক্র্যাম্প চিহ্নিত করেছেন, যা আমাদের পেশীর বিভিন্ন অঞ্চলে প্রভাব ফেলে এবং তাদের স্থায়িত্ব ভিন্ন হতে পারে।

সাধারণ খিঁচুনি

সাধারণ খিঁচুনি সাধারণত ছোট ছোট পেশীর গ্রুপগুলোতে ঘটে, যেমন পা, হাত অথবা পেটের পেশীতে। এই ধরনের খিঁচুনি ক’সেকেন্ড হতে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

ক্র্যাম্পের বিভিন্ন ধরন

  • টনিক ক্র্যাম্প: পেশী শক্ত হয়ে যায় এবং স্থির হয়ে পড়ে।
  • ক্লোনিক ক্র্যাম্প: পেশীতে রিদমিক সংকোচন ঘটে, যা সাধারণত বিশ্রামের সময় হয়।
  • টনিক-ক্লোনিক ক্র্যাম্প: এটি টনিক ও ক্লোনিক উভয় ধরণের ক্র্যাম্পের লক্ষণ দেখায়।

পেশী সংকোচনের সময়কাল

পেশী খিঁচুনির স্থায়িত্ব কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট হতে পারে। বেদনাদায়ক মেরুদণ্ডের পেশীর খিঁচুনি হলে, সময় আরও বাড়তে পারে। যদি খিঁচুনি দীর্ঘস্থায়ী হয়, অর্থাৎ পাঁচ মিনিটের বেশি সময় ধরে থাকে, তবে তা চিকিৎসার প্রয়োজন।

আরও পড়ুনঃ  মাইগ্রেন কি?

জীবনযাত্রার প্রভাব

একজন ব্যক্তির জীবনযাত্রা তার শারীরিক ও মানসিক স্থিতিতে প্রভাব ফেলে, যা আবার পেশী খিঁচুনির মতো সমস্যাগুলিকেও প্রভাবিত করে। সুস্থ জীবনযাত্রার তিনটি মূল উপাদান হলো: সুষমাহার, নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন এবং মানসিক চাপ পরিচালনা।

খাদ্যাভ্যাসের গুরুত্ব

সুষমাহার প্রধানত পেশী খিঁচুনি ও তার প্রতিকারে অত্যন্ত প্রভাবশালী। যথাযথ খাদ্যাভ্যাস পেশী ও নার্ভের কার্যকারিতাকে উন্নত করে, যা প্রাকৃতিকভাবে খিঁচুনি হ্রাসে সহায়ক।

ব্যায়ামের প্রভাব

নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন পেশীগুলির নমনীয়তা ও শক্তি বাড়ায়, যার ফলে পেশী খিঁচুনির ঝুঁকি কমে। একটি সক্রিয় জীবনযাত্রা পেশীগুলিকে টোনড ও স্বাস্থ্যবান রাখার পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালনেও উন্নতি ঘটায়, যা খিঁচুনি প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ।

মন-মনস্তাত্ত্বিক ভূমিকা

মানসিক চাপ পেশীদের উত্তেজনা বৃদ্ধি করে, যা খিঁচুনি হওয়ার সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে। স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে আপনার শরীর ও মনের উপর চাপ হ্রাস পায়, যা উদ্বেগ ও পেশী খিঁচুনি উভয়কেই কমাতে সহায়ক।

চিকিৎসাগত কারণসমূহ

পেশীতে খিঁচুনি আমাদের জীবনে প্রায়শই প্রভাব ফেলে, তবে এর পেছনে অনেক সময় চিকিৎসাগত কারণও জড়িত থাকে। বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা, ঔষধের দুষ্প্রভাব, এবং গর্ভাবস্থা – এই তিন অবস্থা পেশী সংকোচনের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব রাখে।

স্বাস্থ্যগত সমস্যা

বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যাজনিত খিঁচুনি অনেক সময় লক্ষণীয় হয়। আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিংবা ক্রনিক কিডনি রোগের মতো অবস্থাগুলি পেশী খিঁচুনির প্রকোপ বাড়ায়। পেশীর দুর্বলতা, সম্ভবত এসব স্বাস্থ্য সমস্যার ফলে অধিক নোটেবল হতে পারে।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

নির্দিষ্ট কিছু ঔষধের দুষ্প্রভাব হিসাবেও পেশী খিঁচুনি ঘটতে পারে। অস্থিরোগের জন্য নির্ধারিত অনেক ওষুধের সাইড ইফেক্ট হিসেবে পেশী খিঁচুনি উল্লেখ করা হয়। তাই এ রকম ঔষধ সেবনের পর যদি খিঁচুনির অনুভূতি হয়, তাহলে ডাক্তারের সাথে অবশ্যই পরামর্শ করা জরুরি।

গর্ভাবস্থার প্রভাব

মহিলাদের পেশীতে খিঁচুনি, বিশেষ করে গর্ভাবস্থা ও মাংসপেশী খিঁচুনিতে, অনেক সাধারণ। গর্ভাবস্থার সময় শারীরিক পরিবর্তন পেশী উপর চাপ সৃষ্টি করে, যা খিঁচুনির অনুভূতি আনতে পারে। এই সময়ে পুষ্টি ও জলের সার্বিক যত্ন নেয়া অতি আবশ্যক।

আরও পড়ুনঃ  বিড়ালের নখের আচরে কি সমস্যা হয়?

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button