লাইপোমা টিউমার কেন হয়?

মাঝবয়েসী ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণভাবে যে টিউমারটি দেখা যায়, তার নাম লাইপোমা, যা মূলত চর্বি কোষ দিয়ে গঠিত। এই ধরনের টিউমার কোমল এবং মসৃণ হয়ে থাকে, যা ত্বকের নিচে একটি পিণ্ডের মত অনুভূত হয়। উপরন্তু, এগুলি আকারে বিভিন্ন হতে পারে এবং সমগ্র শরীরে বিভিন্ন স্থানে – যেমন জাং, পিঠ, পেট, বাহু এবং গ্রীবায় দেখা যেতে পারে।

লাইপোমা ক্যান্সারজনিত নয় এবং সাধারণত এদের কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন হয় না, যদি না এগুলি অস্বস্তি বা আকারে বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, লাইপোমা সাধারণত পরিবারে দেখা দেয় এবং বয়সের সাথে এর সম্ভাব্যতা বাড়ে; যদিও, কারণ সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায় নি। লিপোসার্কোমা নামক মারাত্মক টিউমার যা চর্বি কোষে হয়, লাইপোমার সাথে গুলিয়ে ফেলা সহজ; এক্ষেত্রে, বায়োপসি, সিটি স্ক্যান অথবা এমআরআই এর মতো পরীক্ষা দরকার পড়তে পারে।

লাইপোমার সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য

লাইপোমা হচ্ছে চর্বির তৈরি এক ধরনের নির্দোষ টিউমার যা মানবদেহের বিভিন্ন অংশে দেখা দিতে পারে। এই টিউমারের প্রচলন ও সাধারণতা, বিশেষ করে মধ্যবয়সী রোগীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

লাইপোমার সংজ্ঞা

লাইপোমা সংজ্ঞা অনুযায়ী, এটি এক ধরনের অক্ষতিকারক টিউমার যা প্রধানত চর্বি কোষ থেকে গঠিত হয়। এরা সাধারণত মৃদু, স্পর্শকাতর এবং ত্বকের নিচে অবস্থিত হয়, এবং সহজে সরানো যায়।

লাইপোমার বৈশিষ্ট্য

  • লাইপোমা সাধারণত ২-৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হয়।
  • বড় লাইপোমা, যা ১০ সেন্টিমিটারেরও বেশি হতে পারে, দুর্লভ কিন্তু সম্ভাবনা রয়েছে।
  • টিউমারের বৈশিষ্ট্যে গুরুত্বপূর্ণ চর্বি পিন্ড একটি নরম এবং চাপলে পিচ্ছিল মনে হয়।
  • চিকিৎসা সাধারণত প্রয়োজন হয় না যদি না তা অস্বস্তি বা অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুনঃ  খাদ্য বিষক্রিয়া কতক্ষণ স্থায়ী হয়?

কেন এগুলো সাধারণ?

লাইপোমা প্রচলন ব্যাপকভাবে বিবেচিত হয় কারণ এগুলি সাধারণভাবে আক্রমণ করে থাকে মধ্যবয়সী রোগীদের এবং পারিবারিক ইতিহাস যদি থাকে তবে ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। এছাড়াও বিশেষ কিছু মেডিকেল কন্ডিশনের সাথে এর সম্পর্ক আছে যেমন গার্ডনার সিন্ড্রোম, কাউডেন সিন্ড্রোম, মাদেলাং রোগ, এবং আদিপোসিস ডোলোরোসা।

লাইপোমার কারণসমূহ

লাইপোমা মূলত একটি নির্দোষ টিউমার যা প্রধানত চর্বি কোষ থেকে গঠিত হয়। এর উদ্ভব ও বৃদ্ধিতে বিভিন্ন জৈবিক, পরিবেশগত এবং জেনেটিক কারণ জড়িত থাকতে পারে।

জেনেটিক প্রভাব

লাইপোমা জেনেটিক প্রভাব লাইপোমা সৃষ্টির এক প্রধান কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়। পারিবারিক ইতিহাসে এই ধরণের টিউমারের উপস্থিতি অনেক সময়ের ভিত্তিতে পরিবারের নতুন সদস্যদের মধ্যেও দেখা দিতে পারে। তাই, টিউমার কারণ হিসাবে জেনেটিক ফ্যাক্টরগুলির গভীর ভূমিকা নির্ণয় করা গুরুত্বপূর্ণ।

জীবনযাত্রার প্রভাব

জীবনযাত্রা ও পরিবেশগত ফ্যাক্টর সাধারণত লাইপোমা জীবনযাত্রার প্রভাব হিসেবে বিবেচিত হয়। দীর্ঘমেয়াদী অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অল্প শারীরিক কর্মক্ষমতা, বা হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স এই টিউমারের বৃদ্ধি অবদান রাখতে পারে। এই কারণগুলি বিশেষ করে মধ্যবয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে টিউমার পরিবর্তন এর একটি প্রধান কারণ হিসেবে দেখা দেয়।

সামগ্রিকভাবে, লাইপোমা উদ্ভবের কারণগুলির সম্যক বোঝা প্রয়োজন যাতে এই ধরনের টিউমার নির্ণয়চিকিৎসা কার্যকরী ভাবে করা যায়। এবং যদিও লাইপোমা সাধারণত নির্দোষ, তারপরেও অস্বাভাবিক পরিবর্তনে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

লাইপোমার প্্রাকরভেদ

লাইপোমা, যা মূলত এক ধরনের বেনাইন (নিরীহ) টিউমার, তার বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। এই প্রকারভেদগুলির মধ্যে সাধারণ লাইপোমাফ্যাসিয়াল লাইপোমা অন্যতম।

সাধারণ লাইপোমা

সাধারণ লাইপোমা হলো সবচেয়ে প্রচলিত ধরনের লাইপোমা, যা মানুষের শরীরের প্রায় যে কোনো অঙ্গে হতে পারে, কিন্তু বিশেষ করে উচ্চ শরীর, হাত অথবা ঊরুতে দেখা যায়। এই ধরনের টিউমার সাধারণত নরম এবং চাপ দিলে সামান্য সরে যায়। এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যথাহীন হয় এবং মধ্যবয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

ফ্যাসিয়াল লাইপোমা

অন্যদিকে, ফ্যাসিয়াল লাইপোমা শরীরের মুখমণ্ডলে বিকাশ লাভ করে। এই ধরনের লাইপোমা বিশেষত গালে বা নিচের চোয়ালের কাছে দেখা দেয়। ফ্যাসিয়াল লাইপোমা যখন আকারে বড় হয়ে যায়, তখন তা চিকিৎসা ছাড়া অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন মুখের চোহা বা নার্ভগুলিকে চাপ দিয়ে।

  • চিকিৎসা: গুরুতর ক্ষেত্রে সার্জারি অথবা লাইপোসাকশনের মাধ্যমে লাইপোমা অপসারণ।
  • লাইপোমা সাধারণত বেনাইন হয়ে থাকে, তবে চিকিৎসক নির্ধারিত পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে এর প্রকৃতি নির্ধারণ করা উচিৎ।
আরও পড়ুনঃ  ওভারি বড় হলে কি বাচ্চা হয়?

এই দুই প্রকার টিউমার বিশেষভাবে তদারকি ও যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন যদি তারা বেশি বড় হয় অথবা কোনো উপসর্গ তৈরি করে।

আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাব্যতা

লাইপোমা ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই যে বয়স এবং জেনেটিক বৈশিষ্ট্য এই টিউমারের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। এখানে আমরা আলোচনা করব কীভাবে বয়স এবং জেনেটিক বৈশিষ্ট্যগুলি এই প্রক্রিয়াটির ওপর প্রভাব ফেলে।

বয়সের প্রভাব

লাইপোমা বয়সের প্রভাব প্রধানত মধ্যবয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে বেশি দৃশ্যমান হয়, যা বয়স অনুসারে টিউমার হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। গবেষণা দেখায় যে ৪০ থেকে ৬০ বছরের মধ্্যেকার ব্্যক্তিদের মধ্যে এর উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।

জেনেটিক্স ও পরিবারে প্রভাব

লাইপোমা জেনেটিক্স এবং জেনেটিক পরিবারের প্রভাব লাইপোমার ঘটনাবলীর মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। যাদের পারিবারিক ইতিহাসে এই সমস্যা রয়েছে, তারা অন্যান্যদের তুলনায় আরও প্রবণ হতে পারে।

লাইপোমা নির্ণয়ের প্রক্রিয়া

লাইপোমা টিউমার নির্ণয়ের প্রথম ধাপ হল শারীরিক পরীক্ষা, যা মাধ্যমে চিকিৎসক টিউমারের ভৌত বৈশিষ্ট্যাবলী পরীক্ষা করেন। এর পরের ধাপে আসে লাইপোমা ইমেজিং টেস্ট যা টিউমারের আকার এবং গঠনের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রদান করতে সক্ষম।

শারীরিক পরীক্ষা

লাইপোমা শারীরিক পরীক্ষার সময় চিকিৎসক ত্বকের নিচে টিউমারটির স্পর্শগত গুণ পরীক্ষা করেন। এটি সাধারণত মসৃণ এবং নড়বড়ে হয়ে থাকে, যা একে অন্যান্য ধরনের টিউমারের থেকে পৃথক করে। এই পদ্ধতিটি টিউমার নির্ধারণে একটি প্রাথমিক ধাপ হিসেবে গণ্য হয়।

ইমেজিং টেস্ট

লাইপোমা ইমেজিং টেস্ট টিউমারের গভীর ভাবে পরীক্ষা করতে সাহায্য করে। X-রে, MRI অথবা CT স্ক্যানের মাধ্যমে এই পরীক্ষাগুলো সাধারণত পরিচালিত হয়, যা টিউমারের আকৃতি, আয়তন এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রদান করে। এই পরীক্ষাগুলো দ্বারা টিউমার নির্ণয় পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা টিউমারের ধরণ নির্ধারণ করতে পারেন।

লাইপোমার উপসর্গ ও লক্ষণ

লাইপোমা এক প্রকারের নরম টিউমার যা শরীরের বিভিন্ন অংশে দেখা দিতে পারে। এর উপসর্গ ও লক্ষণগুলি প্রায়ই স্পর্শকাতর নয়, তবে কিছু বিশেষ লক্ষণ লক্ষ্য করা যায় যা নির্ণয়ে সহায়ক হতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  ঘুম না আসলে করণীয় কি?

সাধারণ উপসর্গ

  • নরম, সহজে চাপে সরণীযোগ্য টিউমার।
  • টিউমার সাধারণত ব্যথাহীন হয়।
  • টিউমার বিভিন্ন অংশে যেমন পিঠ, উরু, বা হাতে হতে পারে।

বিপদজনক লক্ষণ

  • যদি টিউমার ব্যথা অথবা অস্বস্তি তৈরি করে, এটি টিউমার ব্যথার একটি সংকেত হতে পারে।
  • লাইপোমা বিপদজনক লক্ষণ হিসেবে টিউমারের আকারে দ্রুত বৃদ্ধি, ত্বকের উপরে রঙ পরিবর্তন, অথবা টিউমার শক্ত হয়ে যাওয়া উল্লেখযোগ্য।
  • এরকম লক্ষণ দেখা দিলে অবশ্যই টিউমার লক্ষণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

লাইপোমা সাধারণত নিরীহ হলেও প্রারম্ভিক স্তরে সঠিক নিরীক্ষণ ও চিকিৎসা গ্রহণ প্রয়োজন।

চিকিৎসা পদ্ধতি

লিপোমা এমন এক ধরনের টিউমার যা সাধারণত ক্ষতিকর্ঘ নয়, তবে সেগুলি যদি ব্যথা সৃষ্টি করে বা আকারে বড় হতে থাকে, তাহলে লিপোমা চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। চিকিৎসা প্ৰদানের জন্য মূলত দুটি বিকল্প পদ্ধতি রয়েছে: সার্জারি এবং নন-সার্জিকাল।

সার্জারি

যদি লিপোমা ব্যথা সৃষ্টি করে বা শরীরের প্রভাব ফেলে, তাহলে টিউমার অপারেশন এর মাধ্যমে টিউমারকে অপসারণ করা হয়ে থাকে। অপারেশন সাধারণত স্থানীয় অসুস্থতা প্রদান করে করা হয়, যা রোগীর পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে। অপারেশনের পরে রোগীদের অনেক সময় একদিনের জন্য হাসপাতালে অবস্থান করতে হয়, তবে অধিকাংশ রোগীরা অপারেশনের একই দিনে বাড়ি ফিরে যেতে পারেন।

নন-সার্জিকাল পদ্ধতি

যেসব রোগী সার্জারিতে অগ্রসর হতে চান না বা যাদের ক্ষেত্রে সার্জারি প্রয়োজন নেই, তাদের জন্য নন-সার্জিকাল বিকল্পগুলো, যেমন ঔষধ চিকিৎসা বা লিপোমা আকারে ছোট থাকলে অবহেলা করার অপশন রয়েছে। এক্ষেত্রে, নিয়মিত মেডিকেল পরীক্ষার মাধ্যমে রোগীর লিপোমার অবস্থার উপর নজর রাখা হয়।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button