মুখে ব্রণ হয় কেন – জেনে নিন কারণগুলি

মুখে ব্রণের কারণ অনেক আলোচিত এক বিষয়, যা প্রায় প্রত্যেকের জীবনে কোনো না কোনো সময়ে বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠে। ত্বকের সমস্যা হিসাবে বিবেচিত ব্রণ নিয়ে যে কোনো বয়সসীমার মানুষই সচেতন। ব্রণ হওয়ার পিছনে হরমোনের পরিবর্তন, জিনগত প্রবণতা, এবং তেলযুক্ত ত্বকের অবদান অপরিহার্য।

এখানে ব্রণ চিকিৎসার পদ্ধতি ও এর দূরীকরণের উপায়গুলি সম্পর্কে আমরা আলোচনা করবো, যাতে করে পাঠকগণ তাদের জীবনের এই অংশটিকে আরও ভালোভাবে মেনে নিতে এবং পরিচালনা করতে পারেন। ব্রণের সম্যক অনুধাবন ও সঠিক চিকিৎসার দিকে অগ্রসর হওয়া হলো আপনার দৈনন্দিন ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখার মূল চাবিকাঠি।

Contents show

ব্রণের মৌলিক কারণসমূহ

ব্রণের সৃষ্টির পেছনে প্রধান কিছু কারণ রয়েছে যা বিশেষ করে হরমোনের অসামঞ্জস্যতা, জেনেটিক প্রভাব এবং তেলত্বকের অধিক উৎপাদন দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই সমস্যাগুলি ত্বকের স্বাভাবিক অবস্থা পরিবর্তন করে ফেলে যা ব্রণের সৃষ্টিকে উসকে দেয়।

হরমোন পরিবর্তন

যৌবনাবস্থা, মাসিক চক্র, এবং গর্ভাবস্থা হলো কিছু সাধারণ সময় যখন হরমোনের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে থাকে। এই সময়গুলিতে, হরমোনের অসামঞ্জস্যতা ত্বকের সেবাশিয়াস গ্রন্থির মাধ্যমে বাড়তি তেল উৎপাদনের কারণ হতে পারে, যা পরে ব্রণের জন্য উর্বর পরিবেশ তৈরী করে।

জিনগত কারণে ব্রণ

জেনেটিক প্রভাব ব্রণের সম্ভাবনাকে অনেক বৃদ্ধি করে থাকে। যদি পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্রণের ইতিহাস থাকে, তাহলে আপনার ব্রণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এটি ডিএনএ দ্বারা নির্ধারিত হয় যা ত্বকের গঠন এবং কার্যকরী ধরণগুলি নির্ধারণ করে।

স্কিনের তেল বাড়া

অতিরিক্ত তেলত্বক যখন ত্বকের লোমকূপের মুখ বন্ধ করে দেয়, তখন ব্রণ সৃষ্টির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তেলত্বক আরও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণকে আমন্ত্রণ জানায়, যা ব্রণকে আরও জটিল করে তোলে। এমনকি স্বল্প মাত্রায় তেলের উৎপাদনের বৃদ্ধি, যা মেক আপ লাগানোর মতো কার্যকলাপ থেকে উদ্দীপ্ত হতে পারে, ব্রণের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে তুলতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  গলায় কিছু আটকে আছে মনে হয় কেন

ব্রণের প্রভাবিত অন্যান্য ফ্যাক্টর

ব্রণের উপস্থিতি শুধুমাত্র অন্তঃস্রাবী বা জেনেটিক কারণেই নির্ধারিত হয় না, বরং এর সাথে জড়িত আছে বেশ কিছু বাহ্যিক ফ্যাক্টর যেমন খাদ্যাভ্যাস এবং স্ট্রেসের প্রভাব।

খাদ্য ও পানীয়ের ভূমিকা

খাদ্যাভ্যাসের সাথে ব্রণের সম্পর্ক বেশ প্রতিষ্ঠিত। উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্সযুক্ত খাবার যেমন চিনি বা ময়দা থেকে তৈরি খাবার, এবং ডেয়ারি পণ্য ব্রণের সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। এগুলি শরীরের ইনসুলিন মাত্রাও বৃদ্ধি করে, যা ত্বকের সেবেসাস গ্রন্থিগুলিকে বেশি তেল উৎপাদনের জন্য উত্তেজিত করে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনখাদ্যাভ্যাস অবলম্বন করে ব্রণ নিয়ন্ত্রণে অনেক সাহায্য করে।

স্ট্রেস এবং চাপ

স্ট্রেসের প্রভাব ব্রণের মাত্রা বাড়াতে পারে। মানসিক চাপ যখন বৃদ্ধি পায়, তখন শরীর কর্টিসোল নামে এক ধরনের স্ট্রেস হরমোন বেশি পরিমাণে উৎপাদন করে, যা ত্বকের তেল উৎপাদনকে উস্কে দেয়। এতে করে ব্রণ বেড়ে যায়। চাপ কমানোর জন্য যোগব্যায়াম, ধ্যান, হালকা ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম গ্রহণের গুরুত্ব রয়েছে, যা স্ট্রেসের প্রভাব কমাতে ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে সহায়ক।

ত্বকের যত্নের অভাব

একটি কার্যকর ডেইলি স্কিনকেয়ার রুটিন অনুসরণ না করলে ত্বক অপরিষ্কার থাকে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ব্যাহত হয়। ত্বক পরিষ্কারের গুরুত্ব উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ।

অপর্যাপ্ত ক্লিনিং

নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার না করলে মৃত কোষ, অতিরিক্ত তেল, এবং ব্রণের জীবাণু জমা হয়। এই ময়লাগুলি ত্বকের ছিদ্রগুলিকে আটকে দিয়ে ব্রণের সৃষ্টি করে।

ময়শ্চারাইজার ব্যবহার

প্রতিদিনের ত্বকের যত্নে নির্ধারিত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার ত্বককে সতেজ ও সুরক্ষিত রাখে। বিশেষ করে তেলযুক্ত ত্বকের জন্য, সঠিক প্রকারের ময়শ্চারাইজার ব্যবহার একান্ত জরুরি।

ব্রণ বেড়ে যাওয়ার কারণ

ব্রণের সমস্যা বাড়ার পিছনে মূলত দুটি কারণ দায়ী, যা ত্বকের পরিচর্যা কৌশলের অভাবে ঘটে। টিউটোরিয়াল জুড়ে আমরা এই কারণগুলির বিস্তারিত আলোচনা করব এবং কিভাবে এই সমস্যাগুলো থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায় তা জানব।

ব্লকড পোরস

ত্বকের ছিদ্রবন্ধ করা সমস্যা খুব প্রচলিত, যা সাধারণত ডার্ট এবং অতিরিক্ত তেলের জমে থাকার কারণে ঘটে। ছিদ্রগুলো যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন ত্বক নিজের ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারে না, যা ব্রেকআউটস ঘটাতে পারে।

ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ

ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন ব্রণের আরেকটি বড় কারণ। Propionibacterium acnes নামক ব্যাকটেরিয়া ত্বকের ছিদ্রগুলিতে বেড়ে উঠে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা পাপড়ি তৌলিক ব্রণের উৎপত্তি করে। সঠিক ত্বকের পরিচর্যা এবং নিয়মিত স্কিনকেয়ার রুটিন মেনে চলার মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশনের প্রভাব কমানো যেতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  এইডস এর লক্ষণ ও কারণ

ত্বক পরিচর্যা পদ্ধতি

সঠিক ত্বক পরিচর্যা রেজিমেন বেছে নেওয়া আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য। ত্বক পরিষ্কার করা এবং এক্সফোলিয়েশনের প্রক্রিয়া নিযুক্ত করা নিয়মিতভাবে স্কিনকেয়ার রেজিমেনের অংশ হতে পারে।

সঠিক ক্লিনিং পণ্য নির্বাচন

ব্রণপ্রবণ ত্বকের জন্য সালিসিলিক অ্যাসিড বা বেনজয়েল পেরঅক্সাইড যুক্ত ক্লিনিং প্রোডাক্ট খুবই কার্যকর। এই উপাদানগুলি ব্রণজনিত ব্যাকটেরিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ত্বককে পরিষ্কার করে পোরগুলিকে মুক্ত করে।

স্কিন এক্সফোলিয়েশন

নিয়মিত এক্সফোলিয়েশন মৃত কোষ এবং অতিরিক্ত তেল দূর করে ত্বকের ভেতরের ছিদ্রগুলি উন্মুক্ত করে। এটি ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং ত্বকের টেক্সচার উন্নত করতে সহায়ক। মৃদু এক্সফোলিয়েটিং এজেন্ট ব্যবহার করা উচিত, যাতে ত্বক আঘাতপ্রাপ্ত না হয়।

বিভিন্ন ধরনের ব্রণ

ত্বক পরিচর্যায় ব্রণ একটি সাধারণ, তবে কঠিন সমস্যা, যা বিভিন্ন আকার ও ধরনের হয়ে থাকে। এই বিভাগে আমরা তিন প্রকারের ব্রণ – সাদা চোরা, ব্ল্যাকহেডস, এবং হরমোনাল ব্রণ – সম্পর্কে আলোচনা করবো, যেগুলি প্রায়ই বিশেষ ক্ষতির কারণ হয়ে থাকে।

সাদা চোরা

সাদা চোরা হল সেসব ব্রণ, যা ত্বকের মধ্যে স্থান পায় এবং খুব ছোট এবং সাদা দেখতে হয়। এগুলি মূলত মুখ ও নাকের আশেপাশে দেখা যায়। চিটচিটে তেল এবং মৃত কোষের সংমিশ্রণে এই ধরণের ব্রণ সৃষ্টি হয়, যা ত্বকের ছিদ্রগুলিকে বন্ধ করে দেয়।

ব্ল্যাকহেডস

ব্ল্যাকহেডস হল ছিদ্র বন্ধ না হয়ে বাতাসের সংস্পর্শে এসে অক্সিডাইজ হওয়া তেল এবং মৃত কোষ। এগুলিকে কমেডোনস বলা হয় এবং তারা সাধারণত নাক, কপাল, এবং চিবুক জুড়ে দেখা দেয়। এই সমস্যাটি প্রায়ই ত্বকের অগোছালো পরিচর্যার ফল।

হরমোনাল ব্রণ

হরমোনাল পরিবর্তন যেমন যৌবনাবস্থা, গর্ভাবস্থা, বা মাসিক চক্রের পরিবর্তনের সময় দেখা দেয় এই ধরণের ব্রণ। বিশেষ করে, এস্ট্রোজেন ও অ্যান্ড্রোজেনের মতো হরমোনের উত্থান-পতন ত্বকের তেল গ্রন্থির কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে, যা ব্রণ উত্পাদনের প্রক্রিয়াকে প্রচার করে।

চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি

ত্বকের সমস্যা যেমন ব্রণ নিরাময়ে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার পদ্ধতি রয়েছে যা প্রাকৃতিক উপাদান এবং ডার্মাটোলজিকাল সহায়তা উভয়ের মিশ্রণে গঠিত।

প্রাকৃতিক উপাদান

  • টি-ট্রি অয়েল: এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ ব্রণ দূরীকরণে কার্যকর।
  • সবুজ চা এক্সট্রাক্ট: ত্বকের প্রদাহ ও লালচে ভাব কমাতে সহায়তা করে।
  • এ্যালোভেরা: ত্বককে শীতল করে এবং ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।
আরও পড়ুনঃ  কান থেকে তরল দূর করার উপায়

চিকিৎসকের পরামর্শ

ভারী ব্রণের ঘরোয়া চিকিৎসা কার্যকর না হলে, ডার্মাটোলজিকাল সহায়তা গ্রহণ জরুরি হতে পারে।

  • ওরাল অ্যান্টিবায়োটিক্স: ব্রণ নিরাময়ের জন্য প্রায়শই প্রযোজ্য।
  • হরমোন থেরাপি: বিশেষ করে মহিলাদের হরমোনাল ব্রণের ক্ষেত্রে।
  • ইসোট্রেটিনয়িন: গুরুতর ব্রণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত।

প্রিভেনশন টিপস

ব্রণ প্রতিরোধের জন্য কিছু সহজ ও কার্যকরী উপায় রয়েছে, যা স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখতে সহায়তা করে। এই উপায়গুলি মেনে চললে আপনি ব্রণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন এবং আপনার ত্বকের দৈনিক যত্নে নিরাপদ থাকতে পারবেন।

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করার মধ্যে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা অন্তর্ভুক্ত। এই খাদ্য গ্রুপগুলি ত্বকের সঠিক পুষ্টি যোগাযোগ করে:

  • তাজা ফল ও সবজি
  • উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন মুরগি ও মাছ
  • পর্যাপ্ত ফাইবার যুক্ত খাদ্য যেমন মুসুরি ডাল ও ওটস

এই খাদ্যগুলো ত্বকে হৃষ্টপুষ্ট রাখতে এবং ব্রণ কমানোর প্রক্রিয়ায় অবদান রাকে।

পর্যাপ্ত পানি পান

প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা ত্বকের যত্নে অপরিহার্য। পানি:

  • ত্বকের হাইড্রেশন নিশ্চিত করে
  • বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়
  • ত্বককে নরম ও প্রানোজ্জ্বল রাখে

প্রায় ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত প্রতি দিন। এই অভ্যাস শুধু ত্বকের জন্য নয়, সার্বিক শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

সিজনাল পরিবর্তনের প্রভাব

ঋতু পরিবর্তন প্রকৃতির এক স্বাভাবিক ঘটনা এবং এই মৌসুমী পরিবর্তন আমাদের ত্বকের স্বাস্থ্যেও ব্যাপক প্রভাব ফেলে। গ্রীষ্মের তীব্র গরম এবং আদ্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ত্বকে ব্রণের সমস্যা বেড়ে যায়। বিশেষ করে, গ্রীষ্মে ত্বকের যত্ন নিতে গিয়ে বাড়তি ঘাম এবং তেল সেক্রিশন সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। অন্যদিকে, শীত আসার সাথে সাথে বাতাস শুষ্ক হয়ে যায় এবং ত্বকের ন্যাচারাল ময়শ্চার কমে গিয়ে শীতে ত্বকের সমস্যা বৃদ্ধি পায়।

গ্রীষ্মকালীন ব্রণ

গ্রীষ্মের সময় ত্বকের লোমকূপে মৃত কোষ এবং বাড়তি তেলের সম্মিলনে ব্লকেজ তৈরি হয়ে প্রধানত ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। এই সময়ে ঠাণ্ডা ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকা, ঘাম অবিলম্বে মুছে ফেলা এবং অনিয়মিত ক্রিম বা লোশনের পরিবর্তে অয়েল-ফ্রি ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা গুরুত্বপূর্ণ।

শীতকালীন ব্রণের বৃদ্ধি

শীতকালে স্বল্প আদ্রতা এবং বাতাসের শুষ্কতা সহনীয় মাত্রায় ব্রণ হ্রাসের জন্য শুষ্ক ত্বককে পুনরায় সিক্ত করার জন্য হাইড্রেটিং ময়শ্চারাইজার নিয়মিত ব্যবহার প্রয়োজনীয়। এছাড়া, বাহ্যিক উষ্ণতা ও মৃদু পরিচ্ছন্নতা গ্রহণের মাধ্যমে ত্বকের স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় রাখা অপরিহার্য।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button