জিয়াউল ফারুক অপূর্ব: বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় তারকা

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব এক নাম যার সাথে পরিচিত নয় বাংলাদেশের টেলিভিশন দর্শকদের জন্য। এই বহুমুখী প্রতিভাবান অভিনেতা মডেলিং, টিভি নাটক এবং সিনেমা জগতে তার দক্ষতা তুলে ধরেছেন। তার সাম্প্রতিক কাজ “চলচ্চিত্র” টলিউডে তার প্রথম পদক্ষেপ নিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছে। প্রধান চরিত্রে তাঁর অভিনয় আগ্রহ সৃষ্টির সাথে সাথে প্রজেক্টটি বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

অপূর্ব বাংলা অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব জীবনী হিসেবে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি প্রেরণার ভূমিকা পালন করছেন। তার কাজগুলো প্রতিনিয়ত তাকে “বাংলাদেশি সেলিব্রিটি” হিসেবে প্রমাণিত করছে। অপূর্বের অভিনীত পোস্টমডার্ন হিট প্রজেক্ট গ্যাংস্টার রিটার্নস থেকে শুরু করে চলতি বছরের বুকের মধ্যে আগুন পর্যন্ত, প্রতিটি কাজই তার বাহবা কুড়ানোর যথেষ্ট ভিত্তি তৈরি করেছে।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব বাংলা সিনেমার অন্যতম জনপ্রিয় তারকা হিসেবে পরিচিত। তিনি তার অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা ও ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করে রেখেছেন।

জন্মস্থান ও তারিখ

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব ২৭শে জুন, ১৯৮৩ সালে শরীয়তপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মতারিখ উল্লেখযোগ্য কারণ এটি তার প্রথম জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বর্তমানে তার বয়স ৪১ বছর। শুরু থেকেই শোবিজের প্রতি আকর্ষণ প্রবল ছিল। তিনি এএসআই ক্রিয়েশন লিমিটেডের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন।

পরিবার ও শৈশব

অপূর্বের শৈশবকালীন জীবন বেশ রোমাঞ্চকর ছিল। তার মা ছিলেন রাজশাহী বেতারের একজন শিল্পী এবং তার পিতা ছিলেন একজন সঙ্গীত প্রেমিক। এই পারিবারিক পটভূমি তাকে শোবিজের প্রতি ভালবাসা জাগিয়েছিল। শৈশবের কাহিনী তার বর্তমান সফলতার ভিত তৈরি করেছে। অপূর্বের পরিবারের সমর্থন তাকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  অপু বিশ্বাস

শিক্ষাজীবন

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব তার শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের জন্য বেশ পরিচিত। শিক্ষাজীবনে তিনি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে বিবিএ ডিগ্রি লাভ করেন।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করার সময়, তিনি ব্যবসায় শিক্ষা গ্রহণ করেন। এই সময়ে তাকে বিভিন্ন একাডেমিক কার্যক্রম এবং সহপাঠ কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে দেখা যায়।

তার শিক্ষাগত যোগ্যতা তার কেরিয়ারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে, ব্যবসায়িক জ্ঞান এবং বিশ্লেষণমূলক দক্ষতা তাকে নাটক এবং মডেলিং জগতে প্রভাবশালী করে তুলেছে।

শিক্ষাজীবনের সময় থেকেই অপূর্ব প্রমাণ করেছেন যে, অধ্যবসায় এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে শিক্ষার ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ছাত্র জীবন তাকে তৈরি করেছে আরও বড় সফলতায় পৌঁছানোর জন্য।

কর্মজীবনের শুরু

জিয়াউল ফারুক অপূর্বের কর্মজীবনের শুরু খুবই চমকপ্রদ। তাঁর অভিনয়ে প্রথম পদার্পণ ঘটে ২০০৬ সালে, যখন তিনি গাজী রাকায়েতের নির্দেশনায় ‘বৈবাহিক’ নাটকের মাধ্যমে নাট্য অভিনয়ে যাত্রা শুরু করেন। এর পূর্বে তিনি বিশেষ করে মডেলিংয়ে প্রশংসা অর্জন করেছিলেন।

প্রথম নাট্য অভিনয়

অপূর্বের অভিনয়ে প্রথম পদার্পণ ঘটে ‘বৈবাহিক’ নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে। এই নাটকটি পরিচালনা করেছিলেন বিখ্যাত পরিচালক গাজী রাকায়েত, যা অপূর্বের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে। নাটকটি তাঁকে অভিনয়ের জগতে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে এবং অভিনেতা হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।

প্রথম মডেলিং

অপূর্ব মডেলিং ক্যারিয়ারের মাধ্যমে বিনোদন জগতে প্রবেশ করেছিলেন। নেসক্যাফের বিজ্ঞাপনের জন্য তিনি প্রথম মডেলিং করেন। এতে অপূর্বের প্রতিভা প্রকাশ পায় এবং মডেলিং ক্যারিয়ার শুরু হয়। তাঁর মডেলিং ক্যারিয়ার দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি পান।

উল্লেখযোগ্য টিভি নাটক

জিয়াউল ফারুক অপূর্বের অভিনয় দক্ষতা নিয়ে কথা বলতে গেলে, বাংলা টিভি নাটকের জগতে তার অবদান অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। তিনি বিভিন্ন ধরনের জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজে অভিনয় করেছেন যা বিখ্যাত এবং প্রশংসিত। নিম্নে তার উল্লেখযোগ্য কিছু টিভি নাটকের তালিকা উপস্থাপন করা হলো।

আরও পড়ুনঃ  প্রভাস

বড় ছেলে

২০১৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত বড় ছেলে নাটকটি বাংলা টিভি নাটক হিসেবে বিশাল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। এই নাটকে অপূর্বের অনবদ্য অভিনয় দর্শকদের মন জয় করেছিল। নাটকের প্রেক্ষাপট ছিল সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা এবং আবেগের এমন এক গল্প, যা প্রতিটি দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।

গল্পগুলো আমাদের

অপূর্ব অভিনীত আরেকটি জনপ্রিয় টেলিভিশন সিরিজ হল গল্পগুলো আমাদের, যা ২০১৮ সালে মুক্তি পায়। এই নাটকটি বাংলা টিভি নাটকের মধ্যে একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি, যেখানে বিভিন্ন মানুষের জীবনের গল্পগুলি সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে। নাট্যকারের দারুণ রচনার সাথে অপূর্বের অভিনয় দক্ষতা এই নাটককে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়।

সিনেমায় অভিষেক

বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি-তে জিয়াউল ফারুক অপূর্বর চলচ্চিত্র অভিষেক ২০১৪ সালে ঘটে ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। এই অ্যাকশন ড্রামা ছবিতে তার অভিনয়ে দর্শক ও সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর ফলে বড় পর্দায় তার অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়।

গ্যাংস্টার রিটার্নস

এই ছবিতে অপূর্ব প্রথমবার একটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন এবং তার চমৎকার পারফরম্যান্সের মাধ্যমে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি-তে নিজের প্রমাণ করেছেন। এই ছবিটি তাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলে এবং নতুন নতুন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ এনে দেয়। ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’-এ তার ভূমিকা সমালোচক ও দর্শক উভয়ের কাছ থেকেই প্রশংসা কুড়িয়েছে।

বৃষ্টির দিন

‘বৃষ্টির দিন’ ছিল আরেকটি চলচ্চিত্র যেখানে অপূর্ব অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। যদিও চলচ্চিত্রটি পরবর্তীতে বাতিল হয়ে যায়, তবুও এই প্রজেক্টের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রের জগতে নিজের আরও বৃহৎ ভূমিকা প্রতিস্থাপন করেছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি অন্যান্য প্রজেক্টেও কাজ করেছেন, যার মাধ্যমে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তে তার অবস্থান আরও মজবুত হয়েছে। এই চলচ্চিত্র অভিষেক তাকে নতুন এক দৃষ্টিকোণ এনে দিয়েছে এবং ভবিষ্যতে তিনি আরও বড় প্রোজেক্টে তার প্রতিভা দেখাতে সক্ষম হবেন।

Ziaul Faruq Apurba

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব, জন্মগ্রহণ করেন ২৭ জুন, ১৯৮৫ সালে। তিনি তার বহুমুখী অভিনয় প্রতিভা দিয়ে বাংলা নাটক ও সিনেমা জগতে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। অভিনেতা বায়োডেটা অনুযায়ী, তিনি ব্যাচেলর অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) শেষ করেছেন এবং ২০০৪ সাল থেকে বিনোদন শিল্পে সক্রিয় রয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  দিলীপ কুমার

অপূর্ব তার টিভি নাটক ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০৬ সালে “বৈবাহিক” নাটকের মাধ্যমে। এ পর্যন্ত তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় টিভি নাটক, ওয়েব সিরিজ এবং ছবিতে অভিনয় করেছেন। তার অন্যতম সফল চলচ্চিত্র “গ্যাংস্টার রিটার্নস” ২০১৫ সালে মুক্তি পায়। এছাড়া, তিনি “এ এস আই ক্রিয়েশনস লিমিটেড” নামে একটি প্রোডাকশন হাউজ স্থাপন করেছেন এবং ২০১২ সালে “ব্যাকডেটেড” নামে একটি টেলিফিল্ম পরিচালনা করেন।

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব তার ক্যারিয়ারে বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মেরিল প্রথম আলো পাবলিক চয়েস অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ সালে সেরা টিভি অভিনেতা হিসেবে। তার ব্যক্তিগত জীবনেও অনেক উত্থান পতন রয়েছে; তিনি তিনবার বিয়ে করেছেন। প্রথম বিয়ে হয়েছিল সাদিয়া জাহান প্রভাকে ২০১০ সালে, যা একই বছরে বিচ্ছেদে গড়ায়। দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছিল নাজিয়া হাসান অডিটি সঙ্গে ২০১১ সালে, যা ২০২০ সালে বিচ্ছেদে শেষ হয়। বর্তমানে তার তৃতীয় স্ত্রী তৃষা দেওয়ান এবং তাদের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।

জিয়াউল ফারুক অপূর্ব প্রোফাইল যেকোনো বাংলাভাষী দর্শকের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। তার সর্বশেষ কাজগুলোতে তার অভিনয়ের গুণমান এবং জনপ্রিয়তা অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন পরিচালক ও কাহিনীকারদের সঙ্গে কাজ করে তিনি টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র উভয় মাধ্যমে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন।

এ ধরনের আরো আর্টিকেল

Back to top button